নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অশুভ শক্তির পাঁয়তারায় গণতন্ত্র প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এখন। দেশ শেষ হয়ে যাক, ক্ষমতা আমার চাই। ‘তোরা যে যা বলিস ভাই / আমার সোনার হরিণ চাই’। রাজনীতির খেলায় ক্ষমতায় আচ্ছন্ন, ক্ষমতার মোহে অন্ধ খালেদা জিয়ার যে কোনো মূল্যে ক্ষমতার সেই সোনার হরিণটিকে চাই। জমি ভাগ করার সেই গল্পটি সবার মনে থাকার কথা। জমি যেভাবে ভাগ করা হোক না কেন ভাই, তালগাছটি আমার কিন্তু আমার চাই। আবার এ কথাটিও মনে করা যায়- যে ব্যক্তি বোঝে না, তাকে আপনার গোয়ালের গরু উপহার দিলেও সে বুঝবে না। খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন তেমনি। আমি একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকাতে চাই। খালেদার দাবি কী? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আবার তার প্রাণের দাবি মধ্যবর্তী নির্বাচন। দুটো দাবিইতো অযৌক্তিক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যখন দেশবাসীর প্রয়োজন ছিল, তখন তাকে কাজে লাগানো হয়েছে। পরবর্তীকালে এই ধরনের সরকার ব্যবস্থা এবং তাদের অধীনে নির্বাচন বিতর্কের মধ্যে পড়ে। অনেকটা ভাল্লুকের হাতে খুন্তা দেবার মতো পরিস্থিতি ঘটেছিল। যাদেরকে বিশ্বাস করে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম সঠিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্যে, ক্ষমতা হাতে পেয়ে সেইসব কুশীলবরা ক্ষমতার মহান অধিপতি হয়ে দেশটাকে ধীরে ধীরে সেনাশাসনের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। আর তাছাড়া পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। এখন পৃথিবীর সবদেশেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবং সেই আধুনিক মডেলটিকেই বর্তমান সরকার শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করেছে। সবাই গ্রহণ করলেও খালেদা জিয়া তা মানতে চান না। এই না মানার পিছনের কারণ এখন আর কারো অবশ্য অজানা নয়।
দীর্ঘ দুমাস ধরে বাংলাদেশে খালেদা জিয়া রক্তের হোলিখেলায় যে লিপ্ত রয়েছেন এর পিছনে রয়েছে মূলত তার ক্ষমতার লিপ্সা। সম্প্রতি তার বক্তব্যের ভিতর দিয়েও এই চিত্র আরো জঘণ্যভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন আন্দোলন চলবে। তিনি আরো রক্ত দেখতে চান। সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদার যে বক্তব্য তাতে তার দলের লোকেরাই এখন তাকে সমালোচনা করছে। দেশবাসী মনে করেছিলেন তার মুখ থেকে হয়তো শান্তির কোনো বাণী আসতেও পারে। কিন্তু সকল আশার বুকে ছুরিকাঘাত করে তিনি ঘোষণা করেছেন, তার অযৌক্তিক আন্দোলন চলবে। মানুষের মৃত্যুর মিছিল তিনি আরো দেখতে চান। ধারণা করা হচ্ছিল সংলাপের একটি রাস্তা হয়তো তৈরি হতেও পারে। কিন্তু খালেদার কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যের পর সেই সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ তার এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি-জামাত এখন দ্বিধাবিভক্ত। দীর্ঘদিনের একটানা গণতন্ত্রবিরোধী কর্মসূচিতে তারা অপরাধী ও সে অপরাধের দায়ে ভীষণ ক্লান্ত। তাছাড়া অযৌক্তিক আন্দোলনে নেই জনগণের সাড়া। জনগণতো দূরের কথা, এখন বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীদের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। নাশকতা করতে গিয়ে গণপিটুনিও খেতে হয়েছে কাউকে কাউকে। সে আতঙ্ক রয়েছে তাদের। তাছাড়া আইনী লড়াইয়েও তাদেরকে লড়তে হচ্ছে সর্বক্ষণ। খালেদা জিয়া পড়েছেন এক মহাসংকটে। যে পথে তিনি আছেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি দুদিন আগেও হয়তোবা ছিল। এখন পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে পড়েছে। ঘরে বসে অবরোধ-হরতালের ডাকে তার দলের লোকেরইতো কোনো সাড়া নেই। বিএনপি-জামাতের বহু নেতাদের গাড়ি-অফিস এখন হরতালে হরহামেশাই চলছে।
আসলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে কীভাবে অকারণ অনিষ্ট করা যায় তার এক অপকৌশল হচ্ছে খালেদা জিয়ার বর্তমান রাজনীতি। কিন্তু তাকে ভাবতে হবে একটি দেশের কথা। তিনিওতো এদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিগত সাধারণ নির্বাচনে খালেদা ও তার জোটসঙ্গীরা অংশগ্রহণ করেনি। এর দায় বর্তমান সরকার নিতে যাবে কেন? ভুলে গেলে চলবে না যে, খালেদা জিয়া এখন কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতাও নন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে কাঁটাতারে ঘেরা ভবনে অবস্থান করে তিনি দেশের মানুষের ভাবনার চিন্তা-জগৎ সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে আছেন বলে মনে হয়। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা থেকেও মানুষ তার জায়গা থেকে, নীতি থেকে অনেক সময় সরে আসেন। কিন্তু তিনি রয়েছে অনড়। স্বাধীনতা বিরোধী অশুভ শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে তার বর্তমান নাশকতার যে ‘আন্দোলন’ তা কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চিত্র হতে পারে না। বিশ্ববাসী কর্তৃকও তা নিন্দিত-ঘৃণিত। দিনের পর দিন বানোয়াট অবরোধ ও হরতাল মানুষ আর কতদিন মেনে নেবে। স্বাভাবিকভাবে যা হবার তাই হয়েছে, আর তাহলো এখন স্বাভাবিক দিনের মতোই হয়ে গেছে হরতালের দিন। সরকারের কঠোর মনোভাব ও দৃঢ় প্রশাসনিক ভূমিকার ফলে দেশে সহিংস-অপতৎপরতার ঘটনা অনেকাংশে কমে এসেছে। কিন্তু একটা শঙ্কা সাধারণ মানুষের মনে থেকেই যায়।
যাই হোক, অপশক্তির দাপট সাময়িক, চিরকাল থাকে না। হতাশায় মিজ্জিত হওয়ার কোনো কারণ নেই দেশবাসীর। অন্ধকারকে সরিয়ে আলো আনতেই হবে আমাদের। বাংলাদেশকে বিপন্ন করবার আর অবৈধ ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে যে সাজানো মহড়া, আর সেই লোভনীয় ক্ষমতার দুঃস্বপ্ন দ্যাখে যে সমস্ত অপশক্তি-দেশবিরোধী তাদেরকে রুখে দেবার দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, সমগ্র দেশবাসীকেও সচেতনভাবে সে দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।সুত্র
©somewhere in net ltd.