নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ ২০ দলের টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল এবং এমন রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তদের ছুড়ে মারা অগি্নবোমা ও ককটেল হামলায় একের পর এক নিরীহ মানুষের প্রাণহানী ঘটছে_ এমনি এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভেতর সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গ্রেপ্তারের কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমে তার দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই জোড়া ফোনালাপে দেশের অরাজকতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকার উৎখাতের আলামত ছিল সুস্পষ্ট। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের কর্মকা-কে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হয়_ যা দেশের প্রচলিত আইনে দ-নীয় অপরাধ। গ্রেপ্তারের পর মান্নার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছে যথারীতি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বর্তমান দশা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, এটা দুঃখজনক বটে, কিন্তু এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ায় আজ তার এ অবস্থা। এক সময় মান্না সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। পরে জাসদ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত হয়েছিলেন। পরে জাসদ ছেড়ে বাসদে যোগ দেন। একপর্যায়ে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আওয়ামী লীগে আসেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদকও হন। সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেও তার নিজ এলাকা বগুড়ার একটি আসন থেকে জয়লাভে ব্যর্থ হন। এরপর বিগত মহাজোট সরকার আমলে তিনি টেকনোক্রেট কোটায় কোনো প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কিংবা কোনো লোভনীয় সরকারি পদ না পেয়ে একটু ক্ষুণ্ন্ন হন। তার জের হিসেবে প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের টকশোতে সরকারের বিরূপ সমালোচনাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে মান্নার দলীয় আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েও তার কিছু বক্তব্য ছিল দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। ফলে মহাজোট সরকার আমলে স্থগিত হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পাননি। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল তাকে না দিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে মেয়র পদে সমর্থন দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মান্না বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নির্বাচনী সীমানা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু মান্নার সঙ্গে দলের যে ফাটল ধরে তা আর জোড়া লাগেনি। দিন দিন ফাটল বেড়ে যায়। পর্যবেক্ষক মহলের মতে দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মান্না টিভির টকশোসহ নানা অনুষ্ঠানে এমন সব বক্তব্য রাখতে থাকেন_ যা ক্ষেত্র বিশেষে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপি-জামায়াতকে ছাড়িয়ে যায়। বক্তব্যের পাশাপাশি পত্রপত্রিকায় তার লেখা কলামে বা মন্তব্য প্রতিবেদন পড়েও অনেকে বিস্মিত হতো। কারো কারো মনে প্রশ্নও জাগত_ মান্না কি সত্যিই আওয়ামী লীগ করতেন? রাতারাতি মানুষ এমন করে পাল্টে যায় কিভাবে? ড. কামাল হোসেনসহ রাজনীতিতে দলছুট নিয়ে সরকার-বিশেষত আওয়ামী লীগবিরোধী প্লাটফর্ম গড়ারও চেষ্টা চালান। নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে কর্মকা- চালালেও ৬ জানুয়ারির পর বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচি শুরু হলে মান্নার বর্তমান অবস্থান ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। তার বক্তব্য শুনে কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত তার কলাম পাঠ করে কারো বুঝতে বাকি থাকে না, তিনি বিএনপি-জামায়াতের অঘোষিত মিত্র হয়ে উঠেছেন। এরই অংশ হিসেবে একাধিকবার খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সংহতি প্রকাশ করতেও দ্বিধা করেননি। বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাকে বক্তব্য রাখতে দেখে কেউ কেউ এটাও ধরে নিয়েছিল যে মান্নার বিএনপিতে যোগ দেয়াটা এখন যে সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে শেষ পর্যন্ত, অর্থাৎ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিএনপিতে যোগ দেয়ার মান্নার পক্ষে সম্ভব না হলেও তিনি যে ওই দলটির সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। চাঞ্চল্যকর ফোনালাপ গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে মান্না ছাত্রদের সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। সরকার উৎখাতের জন্যই যে তিনি এই আহ্বান করেছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া তার ফোনালাপ_ বিশেষ করে বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় তিনি ছাত্রদলকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলের কথা বলেন। এতে দুই-তিনটা লাশ পড়লে সরকার বেকায়দায় পড়বে বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারিতে তার গণমিছিলে লোক পাঠানোর জন্য খোকাকে অনুরোধ করেন। প্রেসক্লাবের সামনে শুরু হওয়া ওই গণমিছিলের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করা। এসব কিছু সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই করার কথা ছিল। কিন্তু মান্নার দুর্ভাগ্য, তিনি জানতেন না তার টেলিফোনে আড়িপাতা হয়েছে। সেই সূত্রে তার ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বর্তমান সরকার উৎখাত তো দূরের কথা, উল্টো নিজেই রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে উৎখাত হয়ে আপাতত পুলিশি হেফাজতে ২ দফা ১০ দিনের রিমান্ড শেষ করে জেলহাজতে ঠাঁই নিতে চলেছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না যে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি নেতা খোকাসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেটা এখন বিভিন্ন সূত্রে ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মান্না জানতেন, বিএনপির চলমান টানা অবরোধ ও হরতালের প্রতি জনগণের সমর্থন নেই। হরতাল ও অবরোধ কোথাও পালিত হচ্ছে না। অবরোধ ও হরতালের নামে বিএনপি-জামায়াত বাসে, ট্রাকে অগি্নবোমা হামলাসহ যে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তাকে আর যা-ই হোক রাজনৈতিক আন্দোলন বলা যায় না। তারপরও মান্না সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা বা নাশকতা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অগি্নবোমায় দগ্ধ হয়ে তারা প্রাণ হারাচ্ছে। তবু মান্না সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এ ধরনের দুষ্কর্ম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে মান্না ভালো করেই জানতেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সহিংসতা চালিয়ে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। তাই তিনি বিকল্প পথ হিসেবে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সুযোগে সেনা অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালিয়ে গেছেন। আর তার গ্রেপ্তার হওয়ার পেছনে এটাই অন্যতম কারণ বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। সেনা অভ্যুত্থানের জন্য মান্না যে সেনাবাহিনীকে উসকানি দেয়ার কাজে লিপ্ত তার আলামত হলেন অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে তার ফোনালাপ। গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া মান্নার ওই ফোনালাপ থেকে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের জন্য মান্না উচ্চপদের দুই সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা অজ্ঞাত ব্যক্তিটি সেনা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিগত ওয়ান-ইলেভেন পটপরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। ওই সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে মান্না আরো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি গুরুতর এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মান্না বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। যদিও অসাংবিধানিক পন্থায় সরকার পরিবর্তনের তার অপচেষ্টা সফল হয়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাকে আটক করা হয়। পরে গুলশান থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দ-বিধির ১৩১ ধারায় মামলা হয়েছে। ওই ধারায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহের উসকানি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হলে মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমা- মঞ্জুর করা হয়। পরে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আরেক দফা রিমা-ে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গোয়েন্দারা মান্নার কাছ থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র বিষয়ে কী তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়_ তা এখন দেখার বিষয়। রাজনীতিতে বার বার অবস্থান পরিবর্তন করা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে বর্তমানে যে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এটা আদালতে প্রমাণিত হলে তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। একথা বলা নিশ্চয় অত্যুক্তি হবে না, সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহের উসকানি দেয়ার অপরাধ কোনোমতেই উপেক্ষা করার মতো নয়। Click This Link
©somewhere in net ltd.