নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

নববর্ষের দীপ্ত শপথ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৫

জীবপালিনী পৃথিবীতে অন্যান্য জীবের সঙ্গে মানবজাতির প্রভেদ থাকার প্রধানতম কারণ, মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব এবং সূ² ধীশক্তির দ্বারা যথাযথভাবে মানবীয় মূল্যবোধের প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম। কিন্তু মানবেতর প্রাণী জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি পরিচালিত হয় সহজাত প্রবৃত্তির আচরণ পদ্ধতি দ্বারা। এই পাথর্ক্যরে জন্যই মানুষ প্রতিক‚ল পরিবেশে আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। অন্তবিহীন সময় ধরে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ বিচার বিশ্লেষণে নিরন্তর ভেবে চলেছে জীবন জগতের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে। তবে মানবজাতি কেবল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণীকুল নয়। সৌন্দর্য এবং আনন্দলাভের আসঙ্গলিপ্সাও সদা জাগ্রত রয়েছে তার হৃদয়াবেগে আর গভীর চেতনায়। নিজের মনকে সৌন্দর্য উপভোগের সাধনায় নিয়োজিত রেখে আদ্যন্ত পূর্ণতা নিয়েই তাই সে তৃপ্ত করতে চেয়েছে তার আকাক্সক্ষাকে। পাশাপাশি অনাদিকাল ধরে এই সমাজবদ্ধ জীব শান্তি, প্রেম, সম্প্রীতি এবং নির্ভয়তার নিশ্চয়তাও অনুসন্ধান করে ফিরেছে বরাবর। তাই বিভিন্ন সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনে সে যেমন সৃষ্টি করেছে অতুলনীয় সৌন্দর্যবোধ এবং মেধার সমন্বয়ে নগর, সভ্যতা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি কিংবা ইতিহাসের বিচিত্র বাঁক, তেমনি বাস্তব পৃথিবীতে তাদের কৃষ্টি অবিস্মরণীয় করে রাখতে, পারস্পরিক সংঘাত ভুলে সম্প্রীতি সম্মিলনের জন্যও তৈরি করেছে বিচিত্র সব উৎসবের শুভ সূচনা। আঞ্চলিকতা ভেদে সভ্যতার ঊষাকাল থেকেই মানব সভ্যতায়, মানব সমাজে নানান রূপে উৎসব তাই উদযাপিত হয়েছে জীবনের অঙ্গীভূত হয়ে।

সভ্যতা সংস্কৃতির নিত্যনতুন মহাস্রোতে মানুষের এই আকুলতার কারণেই আজো আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে উৎসবের নব নব সৃষ্টিশীলতার দিক। অনুশীলিত অভিজ্ঞতা, জীবনদর্শন আর জীবনরসে সঞ্জীবিত হয়ে যা ক্রমান্বয়ে নানা বৈচিত্র্যে উৎসারিত। যেমন কবিতা উৎসব, ইতিহাস উৎসব, প্রযুক্তি উৎসব, বিজ্ঞান উৎসব, শিল্প উৎসব, সঙ্গীত উৎসব, বাণিজ্য উৎসব, ফুল উৎসব, বই প্রকাশনার উৎসব ইত্যাদি। তবে নতুন বছরকে শুভ সূচক ও নিরবধি কল্যাণের ধারক হিসেবে অভিনন্দনযোগ্য করে তোলার ধারণাগুলো আরো অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান অথবা কৃষি উৎসবের মতো একান্তভাবেই প্রাচীনকালের। এই ধারণা প্রথম আনুষ্ঠানিকতা লাভ করেছিল রোমান দেবতা জেনাসের সন্তুষ্টি সাধনের লক্ষ্য হয়ে ধর্মীয় বিধিবিধানের নিয়ম মেনে। পরবর্তীতে পরিবর্তিত সমাজ সভ্যতায় আঞ্চলিকতার গণ্ডি ভেঙে সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নানা আবর্তনে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ উৎসবের নতুন বাস্তবতায়। তবে শুভ নববর্ষ উদযাপনের পদ্ধতি অনুসরণ, অঞ্চল বিশেষের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যে পৃথক রূপ যেমনই পাক, সহস্র বছর পেরিয়ে তার অন্তর্নিহিত প্রতিবেদনের মর্মার্থ প্রায় একই মানসিকতা থেকে আজো উৎসারিত। অর্থাৎ নতুন বছরটি যেন সবার জীবনে সমস্ত অশুভ দূর করে আনন্দপূর্ণ ওঠে সব প্রতিক‚লতা প্রতিরোধ করে। সবার জীবনে বয়ে আনে সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। শান্তিময় করে তোলে মানুষের অশ্রান্ত সংগ্রামের পথ।

বাঙালি সংস্কৃতি অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। বাঙালি জীবনের মর্মবাণী জীবন মাধুর্যে এবং মানসিক ঐশ্বর্যের সমন্বয়ে সম্ভবত নিঃসংশয়ে এই দিনটিতেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করে। কেননা পহেলা বৈশাখে উদযাপিত নববর্ষের অনুষ্ঠানটি জাতি-ধর্ম-বর্র্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উৎসব। যেখানে চলমান গণজীবনের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি জীবন বৈচিত্র্যের ভিন্নতাকে কেন্দ্র করে, নগর এবং গ্রাম সভ্যতার সংমিশ্রণে নির্মল জ্যোস্নার মতোই প্রতিফলিত হয় দেশ জুড়ে। এই উৎসব তাই আবহমানকালের অসাম্প্রদায়িক গণচেতনার পদক্ষেপ। এক অকৃত্রিম সমাজবোধের চিরবাঞ্ছিত প্রেরণা। যেখানে অন্তরের স্নিগ্ধ পরশ আনন্দের সরসতায় কানায় কানায় সঞ্চারিত। কিন্তু বৈশাখী উৎসব পালন, বৈশাখী মেলার আয়োজন আজ আর শুধু ঐতিহ্যের অনুসরণকারিতা নয়। জীবন চেতনার উত্তরণের পথ ধরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির মানস সভ্যতার ক্রমবিকাশেরও এক লক্ষণীয় অভিযাত্রা। সেই কারণেই সময় পরিক্রমার গাণিতিক মাপকাঠির সুনির্দিষ্ট অর্থ ছাপিয়ে সভ্য পৃথিবীর কাক্সিক্ষত আদর্শ, সুন্দর ভবিষ্যতে বসবাসের আকুলতা নববর্ষের উৎসব ঘিরে প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজ করে। সংঘাতক্ষুব্ধ জীবনযাপনের অবসান চেয়ে সৌন্দর্যসচেতন আনন্দপিয়াসু মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয় সাম্যচেতনার কোমল বিচ্ছুরণ। বর্ষ শুরুর প্রথম প্রহরে প্রভাত সঙ্গীতের সুরে সুরে, রঙে রঙিন উৎসবের পোশাক পরিচ্ছদের ধরন ধারণে, নাট্য মেলা, যাত্রা পালা, শোভাযাত্রার সম্মিলনে যেন অনুচ্চারিতভাবে সেই কথাই তাই ঘোষিত হয় বারবার।

নতুন বছর মানেই জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। নতুন অধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে এই বিশ্বাস নিয়ে বাঙালি অবশ্যই পারেন তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের পথ নির্ধারণ করে নিতে। যে লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে বিগত দিনের সমস্ত নষ্টামি, বিচ্যুতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেই ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিজ্ঞা এখনই তারা করতে পারেন, যেখানে হৃদয়ের পাতায় পাতায় লেখা থাকে- এই শুভময় অনুষ্ঠান রূপায়ণের ভেতর দিয়ে আমাদের কাক্সিক্ষত ভবিষ্যকেই এবার কামনা করি এসো। যার পথরেখা ধরে চলতে চলতে বিগত দিনের জীর্ণ পুরতান ঝেঁটিয়ে ফেলে, ভুলভ্রান্তি দূরে ঠেলে, সাম্প্রদায়িকতার অটল অচলায়তন ভেঙে কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ। এগিয়ে চলে সেই ভবিষ্যতের সমাজরূপের দিকে যেখানে শাশ্বত মানুষের মানবিক চেতনা আনন্দঘন সহাবস্থানে বাঁচিয়ে রাখে ‘মনুষ্যত্ব’। যেখানে বছরের প্রতিটি দিনই হয়ে ওঠে চলমান বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। কেননা সেখানেই উদারতার সহানুভূতিতে মুক্তি মিলবে বাঙালি চিত্তের! আর তাতেই সার্থকতা পাবে নববর্ষে অনুষ্ঠিত বৈশাখী উৎসবের মর্মবাণীর।

কিন্তু বড় বন্ধুর এই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছনোর দুর্গম পথ। এখানে সফলতা অর্জন যতখানি সম্ভব, অসাফল্যের পরিমাণ তার চেয়ে কম নয়। কারণ সব বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের চেতনাই সভ্যতার রক্ষাকল্পে অনুক‚ল শক্তি হয়ে ধরা দিতে পারে না, যদি না তাতে শুভ চেতনার মূল্যবোধ উজ্জীবিত থাকে। তাই জগৎ জুড়ে অনুক‚ল শক্তির সমান্তরাল বয়ে চলে প্রতিক‚ল শক্তির বিকৃত জান্তবরূপ। যারা উল্টো পথের উন্মাদনায় দ্ব›দ্ব সংঘাতের অস্থির জটিলতায় দেশে দেশে, কালে কালে বিধ্বস্ত করতে চায় সমসাময়িক পৃথিবীর সভ্যতার সংস্কৃতিকে। এ ক্ষেত্রে ঘটনার বিস্তার না ঘটিয়েও এই কথা বলা চলে, এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই পৃথিবীর ইতিহাসে। বাংলাদেশেও এর নজির সৃষ্টি হয়েছে বিগত দশক ধরে। সাম্প্রদায়িকতার উন্মত্ততা, মানবতাবিরোধী সংঘাত বারবারই বৈরী হয়েছে অসাম্প্রদায়িক বাঙালিচেতনার বিরুদ্ধে নির্মম প্রতিপক্ষ হয়ে। সেটা রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় নষ্টামির ভেতর দিয়ে যেমন, তেমনি এর মননশীল সংস্কৃতিকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলার ধৃষ্টতায়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিÍত্বকে ক্ষতবিক্ষত করতে সে কারণেই ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ২০০১ সালে আক্রান্ত হয়েছে ছায়ানট আয়োজিত রমনা বটমূলের নববর্ষ উৎসব। উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা নিক্ষেপও সেই একই উদ্দেশে সংঘটিত। রামুর ঘটনা, সারা দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিভিন্ন উপাসনালয়ের ধ্বংসসাধন, মুক্তমনের প্রগতিশীল মানুষ নিধনসহ শত শত নিষ্ঠুরতা ওই একই সূত্রে গ্রথিত।

তবে প্রত্যাশার কথা, যুগের হাওয়ায় বিগত শতাব্দীর সমাজরূপের বাস্তবতা ক্ষয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতা ছেড়ে সভ্যতা সংস্কৃতির শরীর ঘিরে এখন বৈচিত্র্যের গভীর পরশ। আদিম যুগ থেকে অগ্রসরমানতার পথ ধরে এভাবেই উত্তরণ ঘটেছে জীবন এবং জগতের। যুগের আনুগত্য অনুসরণ করে প্রাচীন সভ্যতার চিন্তাচেতনা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ম্যাজিক ছোঁয়ায় তাই বদলে গেছে বহুবার। বদলে গেছে সমাজ ভাবনার পরিপ্রেক্ষিত। বদলে গেছে রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, দর্শনসহ প্রচলিত ধর্ম ধারণার অনুশাসিত পথগুলো। এই পরিবর্তিত গতিপথের নিশানা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানবসন্তানরাই তৈরি করেছেন যুগে যুগে। কেননা মহাকালের নিয়ম মেনে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এঁরাই সমুখের পথে এগুতে পেরেছেন আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ ধরে। আর এই আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ তখনই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যখন তাতে প্রতিক‚ল শক্তির অশুভ উদ্যোগের কুৎসিত অন্ধকার দূর করার শক্তিশালী প্রতিশ্রæতি থেকেছে। আশা করি এমন প্রতিশ্রæতি আজ তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মন আর মননশীলতায়। কারণ ভবিষ্যতে এরাই হবেন জন্মভূমির কর্ণধার।

নতুন বছরের প্রথম পদধ্বনি পহেলা বৈশাখ আবারো সমাগত প্রায় শুভঙ্করের সময় ধরে। কিন্তু কেবল নয়নাভিরাম দৃশ্যসৌন্দর্যে রূপায়িত করে কিংবা তাত্তি¡ক ভাবনার প্রতীকী ভাষার বর্ণনা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে নববর্ষের উৎসব উদযাপনের অভ্যাস দ্বারা যে বাংলাদেশের সমগ্র মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করা চলবে না, সে রকম বাস্তবতা এখন যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের ভূখণ্ড জুড়ে। নতুন বছরের প্রথম পদক্ষেপেই তাই প্রয়োজন, জীবনরসে সঞ্জীবিত দীপ্ত শপথ গ্রহণের। যা হবে বাঙালির জন্মবৃত্তান্তের অতীত ইতিহাসে উজ্জীবিত হয়ে, পরিবর্তিত সমাজ সংস্কৃতির স্রোতধারায় প্রবহমান থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার এক দৃঢ়বদ্ধ অঙ্গীকার। যাতে অসাম্প্রদায়িক উৎসবের ঐতিহাসিক বাস্তবতা প্রস্ফুটিত হতে থাকে জাতিধর্ম নির্বিশেষের মানসলোকের গভীরে। যাতে মানবকল্যাণ মুখরিত এই শুভ উৎসবের মর্মবাণী, ক্রমে ক্রমে স্পর্শ করে গণচেতনার মর্মলোক। সব বৈষম্য ভুলে সব মানুষের বাংলাদেশ আবার যাতে একাত্ম হতে পারে তাদের সর্বজনীন স্বাভাবিক পরিচয়ের ঐক্য সূত্রের বন্ধন পরে, সেই জন্যই এখন তীব্রভাবে প্রয়োজন, নববর্ষের প্রথম পদক্ষেপেই এই দীপ্ত শপথ গ্রহণের- বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা চিরতরে নিপাত যাক! চিরজীবী হোক সব মানুষের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

কবি আলমগীর গৌরিপুরী বলেছেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক এটা আপনি কই পাইলেন? আমরা হিন্দু পল্লীতে থাকি কোনদিন তো মনে হলোনা যে এটা হিন্দু পল্লী না মুসলিম পল্লী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.