নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির সন্ত্রাস : বিচারের আওতায় কবে আনা হবে?

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

আনুষ্ঠানিকভাবে হরতাল-অবরোধের সমাপ্তি ঘোষণা না করলেও বিএনপি-জামায়াতের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ৫ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা প্রদান এবং জামিন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আপাতত অবসান ঘটেছে বলে মনে হয়। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের দাবিতে অবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করার জন্য আন্দোলনের নামে গত তিন মাস যাবত যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চলল তার একটি মূল্যায়ন বিশেষভাবে দরকার। কারণ জনমনে এ নিয়ে অনেক ক্ষোভ এবং জিজ্ঞাসা। সাধারণ মানুষের জন্য এটা ছিল এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন এবং অসহনীয় দুর্ভোগ।
টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমা, ককটেল জ্বালাও-পোড়াও, উপড়াও ও ভাঙচুর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে পেট্রলবোমা ও অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৭৫ জন। প্রায় ১ হাজার ২০০ জন অগি্নদগ্ধ এবং আহত হয়েছেন। আগুন ও পেট্রলবোমায় পুড়েছে ১২শ' গাড়ি এবং ভাঙচুরের শিকার হয়েছে ৮০০ যানবাহন। নানা ধরনের নাশকতায় রেলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা। ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেখা যায় অবরোধ-হরতালের ৫২ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
সিপিডি বা ঈবহঃবৎ ভড়ৎ ঢ়ড়ষরপু ফরধষড়মঁব-এর সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত আড়াই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শুধু উৎপাদন ব্যবস্থায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির দশমিক ৫৫ শতাংশ। তাদের মতে এটি একটি রক্ষণশীল হিসাব, যা শুধু জিডিপির ক্ষতিটুকু পরিমাপ করেছে। এটা সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতির চিত্র নয়। আর দ্য ডেইলি স্টারের গবেষণা অনুযায়ী ৯১ দিনের (৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল) অবরোধ-হরতালে দেশের মোট ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকা (দ্য ডেইলি স্টার ৬-৪-১৫)। আর এই হলো বিএনপির মানুষের জন্য আন্দোলনের ফলাফল। অন্যদিকে তাদের 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও' সেস্নাগানটির অন্তঃসারশূন্য তাও মিথ্যাচারের নমুনাটি স্পষ্টতই ফুটে উঠে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও শিক্ষার যে ক্ষতি ঘটেছে সেটাও ভাববার বিষয়। বহু বিলম্বের মধ্যে সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষটির বারবার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। মহাউদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে যেমন দেশের ১৫ লাখ কিশোর-কিশোরী পরীক্ষা দিতে হয়েছে, তেমনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করেছে তাদের অভিভাবকরা। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়টির ব্যাপারে বেগম জিয়া যে বেশ সজ্ঞাত তা বোঝা যায় যখন তিনি সদ্য প্রয়াত পুত্র কোকোর স্ত্রীকে তাদের দুই সন্তানের চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। শুধু অজ্ঞাত এবং নীরব থাকলেন দেশের ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাপারে। এর মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি গেল। গেল ২৬ মার্চ। জাতীয় জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে খালেদা জিয়া গুলশানের আরামদায়ক কার্যালয়েই কাটালেন। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রীর এ জাতীয় অবহেলা দেশপ্রেমের পরিচায়ক কিনা সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক।
এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফ্যানেজ ট্রাস্টের মামলার আরেকটি তারিখ পড়ে। যথারীতি তিনি আদালতে যাননি। অজুহাত তোলেন তার অনিরাপত্তাবোধ এবং আদালতের প্রতি অনাস্থার। এর আগেও তিনি নিরাপত্তার অভাব এবং আদালতের প্রতি অনাস্থার অজুহাতে বহুবার আদালতে হাজির হননি। এবারের তার এক আইনজীবীর বক্তব্য ছিল তার মক্কেল বেগম জিয়া আদালতে যাওয়া এবং দলীয় কার্যালয়ে ফেরার নিশ্চয়তা পেলেই আদালতে হাজির হবেন। এরই মধ্যে মাননীয় বিচারক ২৫ ফেব্রুয়ারির অনুপস্থিতির কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। জানা মতে, মামলাটির ৬৪টি তারিখের মধ্যে বেগম জিয়া মাত্র ৭ দিন আদালতে উপস্থিত থাকেন। আর উপরোক্ত পরোয়ানা দেখা গেল ৩৯ দিনেও বকশীবাজার থেকে গুলশানে পেঁৗছাল না। এ রকম শর্ত দিয়ে আদালতে উপস্থিতি-অনুপস্থিতির ব্যাপারটি এবং গ্রেফতারি পরোয়ানার শম্ভুকগতি আইনের শাসনকে বেজায় প্রশ্নবিদ্ধ করে মানুষের মনে। প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণ আছে যে দেশে আইন সবার জন্য সমানভাবে চলে না, বিশেষ করে দেশের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের ক্ষেত্রে। মামলাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকও বলা যাবে না। কারণ মামলাটি করা হয় ২০০৮ সালে ৩ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
তবে গুলশানের আরামদায়ক অফিসে নিরাপদে বসে অগি্নসংযোগ, পেট্রলবোমা এবং ককটেল ছুড়ে মানুষ মারার মহোৎসবটি তার মদতে ভালোভাবেই চলছিল। ফলে মারা গেল শতাধিক নিরীহ নির্দোষ সাধারণ মানুষ। আর দেশের ক্ষতি হলো লাখ কোটি টাকা, যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আগেই দেয়া হয়েছে। সন্ত্রাস এবং নাশকতার মাধ্যমে দেশব্যাপী ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে বেগম জিয়া এবং দলের নেতা-নেত্রী কাউকে মিটিং, মিটিং, সভা, শোভাযাত্রা, মানববন্ধন, অনশন ধর্মঘট এবং স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে দেখা গেল না। অথচ রাজনৈতিক আদর্শ এবং উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘ কারাজীবন, এমনকি জীবন বিসর্জনের ঘটনাও ইতিহাসে কম নয়। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানীসহ পাকিস্তান আমলে বহু রাজবন্দির নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী, প-িত নেহেরু, মওলানা আজাদ ত্যাগ ও সংগ্রামের অনন্য কয়েকটি নাম। আলোচ্য বিএনপির তথাকথিত আন্দোলনটি না ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, না ছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। অথচ ১৩ মার্চের সংবাদ সম্মেলনে তাদের চলমান আন্দোলনকে আদর্শিক এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বলে দাবি করেন।
আদর্শ এবং উদ্দেশ্যবিহীন আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস যেমন ছিল না তার নিজ দলের সমর্থন এবং অংশগ্রহণ তেমনি অতি সামান্যভাবেও ছিল না জনসমর্থন। বরং উল্টো ছিল মানুষের নিন্দা এবং ধিক্কার। বলার অপেক্ষা রাখে না, কোন রাজনৈতিক আন্দোলনকে জনগণের আন্দোলনে পরিণত না করলে সে আন্দোলন কখনো সফল হয় না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হলে বিষয়টি হতে হবে সত্যিকারের গণদাবি। বিশেষ ব্যক্তি, পরিবার বা দলের দ্রুত ক্ষমতা লাভের আদর্শ এবং উদ্দেশ্যকে জনগণের দাবি বলে চালানো যায় না। জনগণকে পুড়িয়ে বা পেট্রল বোমা মেরে, দিনের পর দিন অবরুদ্ধ এবং হরতাল করে কার অধিকার এবং কোন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তামাসায় বেগম জিয়া নেমেছিলেন, তার জবাব তাকে দিতে হবে। তাই বিএনপির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তথাকথিত আন্দোলনের এই ব্যর্থ এবং করুণ পরিণতি। তবে যে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য এ যাত্রায় রেখে গেলেন তাহল রাজনীতির নামে নাশকতা, নৈরাজ্য এবং পেট্রলবোমার সংস্কৃতি। কেড়ে নিলেন বহু জীবন, ধ্বংস করলেন বহু পরিবার তাদের করুণ আর্তনাদ আমরা গত তিন মাসে বহুবার দেখেছি এবং হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের মতো গরিব দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বেগম জিয়া তার আপ্তবাক্য 'উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি'র কথা কি ফের দেশবাসীকে শোনাবেন? বরঞ্চ যারা এই হত্যাযজ্ঞ এবং ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তাদের এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তার যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন। ২৩ ফেব্রুয়ারি (২৩-২-১৫) প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, তারা (অর্থাৎ সন্ত্রাস এবং নাশকতাকারীরা) বীর যোদ্ধা বা ধিৎ যবৎড়বং হিসেবে দেশবাসীর কাছে সম্মানিত হবেন।
পরিশেষে বেগম জিয়ার ১৩ মার্চের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটির উল্লেখ করতে হয়। তাতে তিনি তাদের চলমান আন্দোলনকে আদর্শিক এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বলেই ক্ষান্ত হননি। দেশবাসীকে চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তার সঙ্গে আরও আহ্বান জানান, 'যারা এখনও নিষ্ক্রিয় আছেন, তারা সক্রিয় হোন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সাময়িক কষ্ট স্বীকার করুন।' তার মহা নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞে সামিল এবং সক্রিয় হয়ে সাময়িক কষ্ট স্বীকার করা এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান যে একেবারেই একটি নৃশংস পরিহাস ছিল এবং ছিল অর্থহীন এবং হাস্যকর পাগলের প্রলাপের মতো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিন মাস ধরে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চালিয়ে দেখা গেল ৫ এপ্রিল তিনি আাদলতে হাজিরা দিয়ে এবং জামিন নিয়ে গুলশানে স্বগৃহে ফিরে গেছেন। এখন দেশবাসীর জিজ্ঞাসা, তার তথাকথিত আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তাকে কি পরিণতি দিয়ে তিনি ঘরে ফিরলেন? পরিণতি যা দেখলাম তাহলো পেট্রলবোমার আগুন তিন বছরের শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মা এবং ৮৪ বছরের বৃদ্ধ পুড়ে মারা গেল। মানুষ চায় এই মহা অন্যায়ের বিচার হোক। বিচারের আওতায় তাদের কবে আনা হবে?
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.