নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া নাশকতার প্রভাব পড়তে পারে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। বিশেষ করে অবরোধ-হরতালে টানা তিন মাস ধরে পেট্রোল বোমায় ব্যাপক হতাহতের নৃশংসতার ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে জনমনে। এর আগে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের শেষের কয়েক মাস থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত সারাদেশে সৃষ্ট নাশকতায় প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির চিত্র সাধারণ্যের কাছে এখনও তরতাজা হয়ে রয়েছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নারী-শিশুসহ জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ভয়াবহতা এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে, গত ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আন্দোলনের রেকর্ড ভেঙ্গে এই অবরোধ ‘সেঞ্চুরি’ করেছে, অর্থাত্ একশদিন পার করেছে। এবারের অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধসহ বিভিন্নভাবে মারা গেছেন ১৫৩ জন। এদের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ১৮১ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ২২ জন চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিত্সা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যান ১৪১ জন। নারী-শিশুসহ এখনও ২০ জন চিকিত্সাধীন।
১৪টি মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, পেট্রোল বোমায় দগ্ধদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, কারও হাত ও কারও পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কারও মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে বহু সময় লাগবে। বিশেষ করে তাদের পরিবারগুলোর ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তায় পড়েছে, কারণ নিহত-আহতদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন।
রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষত দুই ধাপে দীর্ঘদিন ধরে চলা বড় ধরনের নাশকতার ক্ষত না শুকাতেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সমাগত। পেট্রোল বোমা-ককটেল আতঙ্কে ভীতসন্ত্রস্ত থাকা ভোটারদের মধ্যে সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব পড়তে পারে ব্যালটে। কেননা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম যখন নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে, তখনও হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দগ্ধ মানুষ, পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে নিহতদের পরিবারে তখনও চলছে নীরব কান্না। সেই ভয়াল দৃশ্য মনে হলে এখনও আঁতকে উঠছেন নিহতদের স্বজনরা। মানুষ হতাহতের পাশাপাশি নাশকতা জাতীয় অর্থনীতিতেও যেই ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছে, সেটিও এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে।
এসবের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব সিটি নির্বাচনে পড়বে।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াত জোটের এবারের অবরোধ-হরতালের প্রথম ৫২ দিনের নাশকতায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই সময়ে কমপক্ষে ১০১ জনের মৃত্যু এবং সহস্রাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়া ১ হাজার ১৭৩টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয় বলেও সংসদে তথ্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, পাঁচ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত এক বছরে মাঠ পর্যায়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বন বিভাগের ১৪ হাজার গাছ হরতাল ও অবরোধের মত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন আদালত ও থানায় এই পর্যন্ত ১৪২টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে।
দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা আন্দোলনের সময় নাশকতা, ধ্বংসাত্মক ও জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ক্ষতি হয় ৭০ কোটি টাকার। গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য দিয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিসি) ক্ষতি হয় ৫৮ কোটি টাকার।
একইদিন সংসদে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছিলেন, সংসদ নির্বাচনপূর্ব নাশকতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্ষতি হয় ৯৪ কোটি টাকার। মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ কোটি এবং একই বছরের নভেম্বর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এবারের অবরোধ-হরতালেও ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছে, টানা হরতাল-অবরোধ, সহিংসতাসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গত ৫ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত আড়াই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্পাদন ব্যবস্থায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে যা মোট জিডিপি’র দশমিক ৫৫ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে সমপরিমাণ পণ্য ও সেবা উত্পাদিত হতো, যা জিডিপিতে যোগ হয়ে এর আকার বড় করতো বলেও মনে করে সিডিপি।
সিপিডি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৮১ দিন অবরোধ ও ৬৭ দিন হরতাল হয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বস্ত্র খাতে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। এরপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পর্যটন খাতে, যার পরিমাণ ৮২৫ কোটি টাকা। সিপিডি এও জানায়, হরতাল-অবরোধে ক্ষতির কারণে বহু কৃষক সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের এসব নাশকতার জবাব দেবে।
সুত্র
গতকাল খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে কে বা কারা হামলা করলো, দৃশ্যটি দেখার পর মনে হলো, গাড়িবহরে হামলা তো বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। গত নব্বই দিনের অবরোধে বিএনপি জামাত এরকম কয়েক হাজার গাড়ি বহরে হামলা, ককটেল, পেট্রোলবোম নিক্ষেপ করে শতাধিক মানুষ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে দিলেন। যে নেত্রীর নির্দেশে এতগুলো মানুষ পুড়িয়ে মারা হলো, হাজারের বেশি গাড়িতে হামলা করা হলো, দেশের হাজার কোটি টাকা অর্থনীতির ক্ষতি হলো, সেই নির্দেশদাতা নেত্রীর গাড়িবহরে ক্ষতিগ্রস্তরা হামলা করলে অবাক হবার কিছু নেই। যাদের স্বজনরা মারা গেছে, কেবল তারাই জানেন, এরজন্য কেবল খালেদা জিয়াই দায়ী।
কাওরান বাজার মূলত ব্যবসায়ীদের এলাকা। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা লাখের উপরে। গত তিনমাসে তাদের পেটে লাথি মেরেছেন খালেদা জিয়া। আজকের মানবজমিন মতে, খালেদা জিয়া যখন কাওরান বাজারে যান তখন কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা তাকে কালো পতাকা প্রদর্শন করেন। কারণ, খালেদা জিয়ার তিন মাসের অবরোধ-হরতালের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দলীয় কিছু লোকও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার নিরাপত্তারক্ষীরা (সিএসএফ) ২-৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্টকে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সিএসএফ সদস্যরা। এ সময় তাকে বাঁচাতে অন্যরা এগিয়ে গেলে এই ঘটনা ঘটে।মানবজমিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিএসএফ সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করতে থাকে। এতে একজনের আঙুল ভেঙে গেছে। একজনের পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি তুলে দেয়া হয়েছে। এরপর স্থানীয় সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গিয়ে সিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলা করে। খালেদা জিয়ার ওপর হামলা করেনি। তিনি বলেন, এ ঘটনায় সাত জন আহত হয়েছে। তাদের ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
উল্লেখ্য, গতকাল বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেমে হামলার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বেশ কয়েকজন যুবক তাকে জুতা ও কালো পতাকা দেখান। হামলাকারীরা খালেদা জিয়ার গাড়িতেও ঢিল ছোড়েন। এতে তার গাড়ির ডান পাশের কাঁচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলোপাতাড়ি ভাঙচুর করা হয় তার নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) তিন-চারটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এতে খালেদার একজন নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন আহত হন। তার গাড়ির সামনের অংশে রক্তের দাগও দেখা গেছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছি।
©somewhere in net ltd.