![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতা ব্যক্তিগত মত নয়, বেদনাঘাত বা আনন্দৌন্মুখতা হতে যে উচ্চারণ বেরিয়ে আসে তাই কবিতা। -কাহলিল জিব্রান
জীবনভর যুদ্ধ আর যুদ্ধ, যুদ্ধ আর জীবন, জীবন আর যুদ্ধ, যুদ্ধ ও জীবন দুটো শব্দের একটাই অর্থ হুরমতির কাছে - কয়টা চাল, একমুঠো ডাল, পঙ্গু বাপের জন্য বিড়ি আর বেগুনবাড়ি বস্তির ছোট্ট ঘরটার ভাড়া ৪০০ টাকা, এর থেকে বেশীকিছু কখনোই তাদের চাওয়া পাওয়ার আঙিনাতে মনের ভুলেও প্রবেশ করতে পারেনি। শরীরের রং কাল আলকাতরা থেকেও মিশকালো হওয়াতে গতর নিয়ে কোনও চিন্তাও নেই হুরমতির। চিন্তা, সেওতো তখনি আসে যখন কোনকিছু নিয়ে কারো আগ্রহ থাকে, আকাংখার সৃষ্টি হয়। আগ্রহ, আকাংখা! সশব্দে বড় একটা দম ফেলে হুরমতি। নিজেকে যাচাই করে নিতে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, এপাশে কখনো ওপাশে চুল বেঁধে, খোপা করে, না করে, টকটকে লাল পলাশফুল গুঁজে, না গুঁজে, সূর্যালোতে, সূর্যহীণ সময়ে - কোনভাবেই হয়নি, হয়নি যখন এনিয়ে আর কোন আশা আফসোস কোনটিই মনের ভেতরে ঠাঁয় পায়নি। রাস্তায় চললে ফুড অফিসের সামনে বসা লেংড়া ফকির আতর আলীও একবারের বেশী দুইবার তাকায় না। আতর আলী তো আর যেনতেন লেংড়া না, দুইপা নাই এমন একজন মানুষটাও তার উপস্থিতি গ্রাহ্য করেনা, এনিয়ে হুরমতির বুকের মধ্যের চাপা ব্যাথা কিছুদিন আগেও খানিকটা বেশিরকম চেপে ধরলেও এখন সেটা শরীরের দিন রাত্রি, উঠা বসা শোওয়ার সাথেও মানিয়ে নিয়েছে। এখন কিছুই যায় আসেনা তার, একচিলতে পরিমানেও, প্রথম যৌবনে পা রাখার সময়ের মতো এখন আর দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসগুলিও দীর্ঘতর হয়না। শেষবার যখন প্লাস্টিকের ফ্রেমের ছোট্ট চৌকোণা আয়নাতে তার বাপ দাঁড়ি সাইজ করতে গিয়ে সেটা ভেঙে ফেলল তারপরে হুরমতির আর কখনো আয়নার প্রয়োজনই বোধ করেনি। যদিও তার বাপ টেংরামোল্লা ভাঙা আয়নার টুকরোগুলো থেকে বেছে বেছে বড় দুটি টুকরো রেখে দিয়েছে, কখনো সেটা দিয়েও আলগোছে আলতো করে কপালে নামা চুলগুলি সরিয়ে একবারের জন্য চেহারাবন্দি করার সাধটিও জাগেনা হুরমতির।
হুরমতির ডিউটি বলতে ছিল বহুদিন আগে বল্লভ দারোয়ানের কাছে বানিয়ে নেওয়া ঘুণে ধরা কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি লেগে পচন ধরা কেরোসিন কাঠের চেয়ারটি যার নীচে দুইদিকে তিনটি করে পুরান রিক্সার বলবিয়ারিং লাগানো হয়েছিল সেটার উপরে বাপকে ধরে বসিয়ে পিছন থেকে উদ্দেশ্যহীনভাবে সামনের দিকে ঠেলা। অবশ্য যতই সামনের দিকে ঠেলেছে কিন্তু কখনো সামনে যাওয়া হয়ে উঠেনি তাদের। বরং লালচে দগদগে মরচেপড়া বিয়ারিং এর উপরে ভর করা চেয়ারগাড়ি আর তারও উপরে ভর করা টেংরামোল্লা বারবার থমকে দাঁড়িয়েছে ঢাকা শহরের কিছু নির্দিষ্ট প্রমান সাইজের বিলবোর্ডগুলোর সামনে এসে। অন্য কোন বিলবোর্ড নিয়ে তার বাপের বিন্দুমাত্র আহ্লাদ আগ্রহ না থাকলেও কয়েকটি মোড়ে যেখানে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের ছবি দেওয়া থাকে সে রাস্তাগুলো ধরেই তার বাপের এগুনোর সাধটা বেশী, এরপরেও ওসব বোর্ডের সামনে যেতে না যেতেই টেংরা আওয়াজ তোলে,
- আম্মা একটুভি থাইমবা, বিশাল কিলান্তি ঠিকতিছে।একটুভি জিরায়া লই।
তারপর কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে বিলবোর্ড জুড়ে থাকা ফর্সা রমনীগুলোর দিকে। মনে সন্দেহ জাগে হুরমতির, যে বাপেরে দেখল অকালে বৌ মরার পরেও যৌবনকালে কোন নারীর দিকে চোখ তুলে তাকালনা, সেই বেটাছেলের এই পড়তি বয়সে এসে ভিমরতিতে ধরল নাকি!
বিয়ারিংগুলোর ভিতর থেকেও সম্ভবত কয়েকটি করে বল পড়ে গিয়েছে, তাইতো এখন আর আগের মতো অত সহজে ঠেলতে পারেনা হুরমতি। অবশ্য একবার রাস্তায় নেমে গেলে আর কষ্ট-টষ্ট কিছুতে খেয়াল থাকেনা। চারিদিকে চোখকান খোলা রাখতে হয়।
- কহন কার মইনটাভি যে নরম হইয়া যাইবো উপরওয়ালাভি কইতে পারবনা রে মতি মা। খেয়াল রাগবার হইব। খুব খেয়ালগো আম্মাজননী।
যদিও বাপের দীক্ষা এটাই কিন্তু টেংরামোল্লাও এখন আর এসবে কেনজানি খেয়াল রাখেনা। এমনকি রাস্তায় নামার পরে আগের মতো সুরেলা গমগমা আওয়াজে গান ধরতেও পারেনা তার বাপ। খুব মনে পড়ে হুরমতির বাপ যখন কোন এক উকিল সাহেবের একটা গান ধরত,
ভিখারী দুয়ারে খাড়া ভিক্ষা দিয়া বিদায় কর
আমার ঘরের মালিকরে...
ক্ষুধায় ভিখারী মরলে কলংক তোর।।
ও মালিকরে...
বানাইয়া রংমহল ঘর করতেছো বসতি
ভিক্ষা চাইলে কথা কওনা এই কি তোমার রীতি?
এই অভাগা যেদিকে যায় বলেগো সর সর
কোর আনে প্রমান দিয়াছ কেউ নাই তোমার পর।।
ক্ষুধায় ভিখারী মরলে...
ও মালিকরে...
তোমার কাছে আছে জানি মধু আর চিনি
শরাবনতহুরা আছে কাওসারের পানি
হুর গেলমান আছে মালিক করিতে আদর
আমি তোমার তুমি আমার একটু হও অগ্রসর।।
ক্ষুধায় ভিখারী মরলে...
ও মালিকরে..
নাম বড় যার কাজ বড় তার সঠিক হওয়া চাই
নইলে তোমার কলংক নাম রটিবে ঠাঁই ঠাঁই
ভিক্ষার ছলে
কাঙাল উকিল ছাড়ল বাড়ি ঘর
একদিনওতো লইলে না তুই দু:খিনীর খবর।।
ক্ষুধায় ভিখারী মরলে....
(উকিল মুন্সী, ১১ জুন ১৮৮৫ - ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৮ একজন অনন্য, অনুপম বাঙালি বাউল সাধক। তার অসংখ্য গানের মধ্যের আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে, সোনা বন্ধুয়া রে এতো দুঃখ দিলে তুই আমারে উল্লেখযোগ্য।)
একটা সময় ছিল তার বাপ যতবার এই গানটা ধরত তার মায়ের দিকে হুরমতি আড়চোখে তাকালে দেখতে পেত মার চোখবেয়ে টপটপ করে বৃষ্টিফোটা পড়ছে, তারপর নিজেও লুকিয়ে ওড়না দিয়ে মুখটা মুছে নিত নিজের।
হুরমতির কোনকিছু নিয়ে অতটা আফসোস নেই যতটা না বাপের গলাটা নিয়ে। সে যখন আট-দশ বছর আগেও ডিউটিতে বের হত বাপের গলায় গান শুনে তার মনে হতো রাস্তারপাশের কোন এক চা বিস্কুটের টোঙ দোকানের পাশে নিবিষ্টমনে দাঁড়িয়ে রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে কোন দুঃখভরা গান শুনছে।
- আব্বা তুমার গলাডা কুনানদিয়া যে এত পইড়া গেল। ইস কি সোন্দর যে ছেল তুমার গলা, শুনলেই আমার চক্ষে পানি আইয়া পড়ত।
টেংরামোল্লা উত্তর দেয়,
- দূরো পাগলি মাইয়া। আমগো বয়েসভি কি আর হেই আগের মত্তন আছে। চিরকালভি কারো গলা থাকেরে আম্মাজননী!
বাপের গলার যে মিনমিনে অবস্থা হুরমতিকেও এখন তার সাথে গান ধরতে হয়, নইলেযে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়না। এনিয়ে বাপের আরেকটা বাণীর কথা মনে পড়ে হুরমতির,
- হাবলিকভি হালায় চালাক হয়া গেছে। এহেন হাছা হাছা কাইন্দা গান গাইতি না হারলে ফিইরাওভি চাইবোনা কেহও।
তার বাপের আরেকটা ব্যাপারেও ভীষণ আপত্তি হুরমতির, শত অভিমান, কপট রাগ দেখিয়েও বিড়ি খাওয়ার অভ্যাসটা ছাড়াতে পারেনি মতি। একসময়ে হুরমতি বিড়ি কিনে দেওয়া বন্ধ করলে টেংরামোল্লা পাশের ঘরের একচোখা জরিনাখালার সাথে ব্যাপক পিরিতি জমায়, সারাদিন গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর, দিনশেষে বাপের পোকায় ধরা, হলদে, আধক্ষয়িত ভাঙা দাঁতগুলো বের করে হুরমতির দিকে কেলিয়ে গা জ্বালা ধরানো হাসি মেরে আকিজ বিড়ির ধোঁয়া ভকভক করে কুন্ডলী বানিয়ে ছাড়তে থাকে আর রুক্ষশুষ্ক দাড়িগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে রাগে কন্যার কপালের দুপাশের কপালের রগফুলেউঠা মুখের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।
হুরমতির বাপের নিজস্ব কায়দায় বানানো ভাষাটা খুব প্রিয়, একটা সোলেমানী ভাব আছে, চারপাশে তাদের যত পরিচিত সহকর্মী আছে কেউ এত সুন্দর করে কথায় কথায় জায়গামতো শব্দে ভি লাগিয়ে কথা বলতে পারেনা। মতি মাঝেমাঝে দাঁতিলাগা অবাক হয়ে যায় বাপের মেধা দেখে, লোকটা কি যে আজব রকমের মেধাবী একবার মুখ দিয়ে কোন কথা বলে ফেললে আজ হোক কাল হোক তা ফলবেই। আজকাল তাদের আয় রোজগার অনেক বেড়ে গেছে, আগে যেখানে দিনশেষে ভাত জুটাতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হতো, এখন ভাত তরকারী নিয়ে আর চিন্তা করতে হয়না। দু'একদিন কর্মে না গেলেও তাদের চলার মতো অর্থ বাপের জামার ভেতরের দিকের পকেটে জমা থাকে, যে পকেটটিতে হাত দেবার এখতিয়ার হুরমতিরও নেই। এই প্রসঙ্গেও টেংরামোল্লার বাণী আছে, বহুদিন আগে হাইকোর্টের সামনে দুপুরবেলায় চোখ বন্ধ করে জিরিয়ে নেবার সময় পাশ থেকে কেউ একজন তাদের পিতলের বাটিটিতে একটাকার একটা কয়েন দিলে ঢং করে শব্দ হয়, এতে তার মাত্র লেগে আসা ঘুমটা ধ্বক করে ভেঙে যায়। বিরক্তি নিয়ে সে পাশের ফুটপাতে বসে লাল ইটেরখোয়ার দাগ কেটে ঝড়া চিকন ডাল ভেঙে গুটি বানিয়ে নিজমনে কাটাকুটি খেলা হুরমতিকে আচমকা বলে উঠে,
- বুঝলিহ মা মতি, দেহিস একদিন আইবভি কেউ আর এই কয়েনহয়েন দিয়া ঝনঝননা আওয়াজভি তোলবনা। নোট দিবহ। সবাইভি খালি নোট দিবহ।
হুরমতি দিন শেষে ঘরে ফিরে যখন ক্যাশ নিয়ে হিসাবে বসে, কালেভদ্রে দু'চারটা কয়েন পায় অথচ একসময় এই চিত্রটা ছিল পুরোটাই উল্টা। ইদানীং সে একটা পরিবর্তন লক্ষ করছে বাপের ভিতর, সুযোগ পেলেই যাকে তাকে তার বিবাহসাদীর ব্যাপারে সেধে কথা বলে,
- আমগো মাইয়াডাভি কালা হইলে কি হইবো, হের মনডাভি আসমানের সমাইনা। যে বেডায় হেই ছেরিরে বিয়া করব তারভি কপালডা খুইল্যা যাইবোহ।
এই ব্যাপারটা মতির একেবারেই পছন্দ না, এখন আর বিয়ে সাদীর ব্যাপার নিয়ে মোটেই ভাবতে চায়না সে। ভালোকরেই বোঝে সে বেজায় কালো বলে তার বাপের মনে বেজায় দুঃখ। আতর আলীকে পর্যন্ত তার বাপকে একদিন বলতে শুনল,
- বুঝলাভি মিয়া আতর, তুমি হইলা লেংড়া খোড়া মানউষ, তোমারভি দিন একরকেম থাইকবনা। তারউপর আল্লার কি বিচারভি কও, তোমার দুইডা ঠ্যাংভি নাইকা। বিবাহসাদীভি কইরা হালাও। কতা কওনের লাগি তো ভি কাউরে লাহে।
আতর আলী সরাসরি জিজ্ঞেস করে,
- ও কাহা কি কইবার চাইচছো,কয়া ফালাওত।
- না কইবার চাইহিলামভি, তুমারতো দুই ঠ্যাংভি নাই, তুমারে কিডাভি মাইয়ে দিবহ। তাও আমি তুমারে ছুডো থাকা চেনি, আয়রোজগারভি ভাল করবার লাইগছ, আমিভি চিন্তা কইরবার পারি তুমারে হুরের লাগি বিয়া দিয়া দেইভি। তুমারারে একডা চেয়ারভি বানায়া দেহনের শক আছিল।
- এইডা তুমি কিতা কইলা টেংরামোল্লা তোমহার হেই বেশুমার কালা মাইয়ারে কিঢা নিকাহ করবো। আমররে গাড়ী দিবার চাইলেও তো হেইয়া কালা ছুড়ির লগে নিকাহ কর্তাম ন।
হুরমতি কিছুটা আড়ালে থেকে যখন চুপিচুপি কথাগুলো শুনছিল বাহিরে চেহারায় কোন পরিবর্তন লক্ষ করা না গেলেও ভেতরে মনটা ক্ষণিক সময়ের জন্য হলেও চমমন করে উঠেছিল। আতর আলীর ওই কথাটা শুনে বাপের উপর ভীষণ রাগ হলেও সেটা দেখাবার সুযোগই পেল না। কারণ তার আগেই তার বাপ যেভাবে আতর আলীর উপর রেগে উঠেছিল, বাপের অমন রাগ কোনদিন আর দেখেনি সে। সমানে আতর আলীর উপর চেঁচাতে শুরু করল,
- হালা চুতিয়া, আল্লাহ এমনিভি তরে কি লেংড়া খোড়া বানাইচছে, ভালো হইছেভি দুই ঠ্যাং............(বাকীটা মুদ্রনযোগ্য নয়)
এরপর থেকে টেংরামোল্লা আর ফুডঅফিসের ওমুখো হয়নি। তিনমাইল ঘুরে ফুড অফিসের পিছন দিয়ে যায় তবু আতর আলীর মুখ দেখতে রাজী নয় সে। বাপের কষ্ট ভীষণরকম ব্যথিত করে হুরমতিকে, মাঝেমাঝে রাতে বাপকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে একা একা নিঃশব্দে কাঁদে, নিজের বিয়ে হচ্ছেনা বলে নয়, তাকে নিয়ে বাপের কষ্ট হচ্ছে সেটা ভেবে। আবার বেশ রাগ হয় বাপের উপর, কন্যার বিবাহের জন্য চেয়ার বানিয়ে দেবার মতোও মিছা কথা বলা শুরু করেছে যে।
কয়েকদিন হলো হুরমতির বাপের শরীরটা ভীষণ খারাপ যাচ্ছে, কর্মেও বেরোতে পারছে না, অনেক জ্বর তার। চোখখুলে তাকাতে পারেনা ঠিকমতো, কিছু খেতেও পারেনা, পানিভাত কাচামরিচ দিয়ে চটকিয়ে কন্যা আদর করে মুখে তুলে দিলে দুএকবার, মুখে নেয়। ব্যস ওই পর্যন্তই। জরিনা খালা একপাতা ট্যাবলেট দিয়ে গিয়েছে, সাদা কাগজের পাতায় স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা বড় গোল সাদাবড়ি, কিন্তু কোন উন্নতির কক্ষন নেই। শুধু কয়েকদিনের পড়ে থাকা জামাটা পাল্টে দিতে খুলতে গেলেই ধড়মড়িয়ে উঠে, কোনভাবেই কাউকে জামা ধরতে দিবেনা। জেগে থাকলে সারাক্ষণ বিড়বিড় করে কি যেন বলে।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হুরমতি অভ্যাসমতো বাপকে ডেকে টিনের মগভরা পানি দিতে গিয়ে দেখল টেংরামোল্লার দেহ নিথর, শত ডাকাডাকিতেও সে চোখ মেলেনা আর। প্রতিবেশীরা তাদের ঘর থেকে সেদিনের সকালে গগনবিদারী চিৎকার আর কান্নার আওয়াজে বুঝল আবার কেউ একজন চলে গেল।
পাড়াপ্রতিবেশী টেংরামোল্লার মৃতদেহকে গোসল করাতে নিলে তার বহুদিনের না ধোওয়া, নোংরা, কালচে তিলাপড়া, মরা ইদুরের গন্ধছড়ানো জামাটা খুলতে গিয়ে তার শরীরের এক জায়গা থেকে হঠাৎকরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল একটা হাতরাঙানোর মেহেদী টিউব, একটা ফেয়ার এন্ড লাভলী রং ফর্সা করার ক্রিম আর ছোটবড় নোট মিলিয়ে মোট ৮৭৬২ টাকা।
#tamimbooks
প্রচ্ছদ শিল্পী - ধ্রুব এষ
©somewhere in net ltd.