![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতা ব্যক্তিগত মত নয়, বেদনাঘাত বা আনন্দৌন্মুখতা হতে যে উচ্চারণ বেরিয়ে আসে তাই কবিতা। -কাহলিল জিব্রান
*রবীন্দ্রনাথ নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী ছিলেন?
*নজরুল কেন রবীন্দ্রনাথকে খুন করতে চেয়েছিলেন?
*রবীন্দ্রনাথ কেন নজরুলকে তরোয়াল দিয়ে দাঁড়ি কাটতে নিষেধ করেছিলেন?
*নজরুলের সাহিত্য চুরি করে কি রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছিলেন?
*শোনা যায়, নজরুলের অসুস্থতার পেছনে রবীন্দ্রনাথের গভীর ষড়যন্ত্র ছিল?
*হিন্দু নারী প্রমীলা দেবীকে রবীন্দ্রনাথ ষড়যন্ত্র করে নজরুলের প্রতিভাকে অবরুদ্ধ করতে নাকি তাঁর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন?
* রবীন্দ্র-নজরুলের সম্পর্ক আদৌতে ছিল নাকি শত্রুতাপূর্ণ ?
* একজনের সাহিত্য নিয়ে অন্যজনের মন্তব্য কেমন ছিল?
এমন শতশত অবোধের মতো প্রশ্ন মাথায় খেলা করত একসময়। বহুবার ভেবেছি খুঁজে দেখি আসলে সত্যটা কি! কিন্তু সাহসে কুলায়নি কখনো, এত বড় সাহিত্যিকদের সম্পর্কে জানতে গিয়ে না জানি তলিয়ে যাই।
যখন দেখলাম, আমারি চারপাশে আমার মতো আরো অনেকের, আমার পরবর্তী প্রজন্মের, আমার সমাজের এ দুজন মহা কবি-সাহিত্যিককে নিয়ে,
একটা দ্বিধার মধ্যে অবস্থান, বিশ্বাসহীনতা যে অবস্থানের মূলে, ভ্রান্তিবিলাসিতা যখন সেই সম্পর্ককে, সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করছে-
তার থেকে যা আরো বেশী ভয়ানকরুপে বাঙ্গালীর মনন, চেতনায় জাতিগত বিভ্রম বৃক্ষের বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য লালিত হচ্ছে, আগাছা হয়ে জন্ম নিয়ে ধীরেধীরে মহীরুহতে পরিণত হতেই তার খোলস ছাড়তে শুরু করেছে-
যখন দেখি বড় মানুষ বয়সে, মননে, চেতনায়, দায়িত্বে, শিক্ষার আলোতে উদ্ভাসিত মানুষ, এমনকি কবি সাহিত্যিকগণ দুই কবির মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে অবান্তর, অসম্ভব, অভব্য, অসভ্য, অরুচি ধরানো বিষয় টেনে আনছেন -
তখন কিছুটা দুঃসাহসী হয়ে উঠতেই হলো। তাঁদের দুজনকে নিয়ে মনের অজান্তে, গোপনকোণে চলা দ্বৈরথকে পরাজিত করতে, নেমেই পড়লাম।
আমি আমার উত্তর খুঁজে পেয়েছি শতভাগ। আপনার মনের কোণে এমন কিছু চলতে থাকলে সঙ্গী হতে পারেন -
ইতিহাসের সত্য ও সুন্দর কিছু অকাট্য দলিলে আমার সাথে, আমার লিখালিখির ফেসবুক ব্লগে,
♥রবীন্দ্রনাথ vs নজরুল; ইতিহাসের আলোয়, সত্যের দামামায়♥
------------মেহেদী হাসান তামিম
পর্ব -১.
বিশ্বকবি একজন, অন্যজন বিদ্রোহী কবি। গুরু-শিষ্য।দুইজনই বাংলা সাহিত্যে অনস্বীকার্য। আমাদের মাঝে তাদেরকে নিয়ে যতটা ঠুনকো, ভঙুর তাদের সম্পর্ক ছিল ঠিক ততটাই দৃঢ়। কি এক আজব কারণে আমরা এই দুইজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। দুধর্মের মৌলবাদী গংয়েরা তাদের জীবদ্দশাতেই রংটা চড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু সে সময়ে ফলাফল ছিল একটা প্রকান্ড শূণ্য। তিক্ততা তো বহু দূর কি বাত, সামান্যতম চিরও তাদের সম্পর্কের মাঝে দেখা মিলেনি।
আমরা যে সকল কম জানা লোকজন না জেনে, না বুঝে, না পড়েই ম্যাহ্ ম্যাহ্ করে চলেছি তারো একটা ইতিহাস আছে।
পর্ব - ২.
অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিল, তাদের ছাপোষা ছাত্র সংগঠন এনএসএফ কর্মীদের মাধ্যমে, স্বাধীন বাংলাদেশেও নানা রকম প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল- রবীন্দ্রনাথ নাকি নজরুল ইসলামকে হিংসা করতেন। রবি ঠাকুরের কারনেই নাকি নজরুল নোবেল পুরস্কার পাননি, আর শেষ বয়সে নজরুলের অসুস্থতা নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ষড়যন্ত্রেরই কারণ। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় আমি ১৯৯৮ সালে যখন এইচএসসি পরীক্ষা দেই সে অবধি ওই রবি বুড়োর উপরে আমার কি রাগটাই না ছিল! মনেপ্রাণে তানে তাকে ঘৃণা করতাম। হ্যা শব্দটি 'ঘৃণা'-ই। আমি জানি শুধু আমার নয় আমার প্রজন্মে, এমনকি তার পরবর্তী প্রজন্মের আরো অনেকে মাঝেই এই ধারণাগুলো পোক্ত হয়ে স্থান গেঁড়েছে।
নিন্দুকেরা, ষড়যন্ত্রের সেবাকারীরা রবি - নজরুল সম্পর্কে ফাটল ধরাতে সাফল্য না পেলেও আমার মতো অনেক কোমলমতি প্রাণে হিন্দুকবি আর মুসলিক কবি নামক দূষনীয় প্রপঞ্চগুলো ঠিকঠিক গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
আমি আমার এ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ - নজরুলকে নিয়ে যত রকম কুৎসা, ধোঁয়াশা, অন্ধকারচ্ছন্নতা, কূপমন্ডুকতা- প্রতিটি বিষয়ে একটা স্বচ্ছ ও সত্য আলোচনা করার চেষ্টা করব। আমরা, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানেরা একটা অসত্য, বানোয়াট, মিথ্যা ধারণা নিয়ে বড় হবে সেটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।
#রবীন্দ্র_নজরুল
#tagore_islam
পর্ব - ৩.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা আলোচনা করার আগে রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য সম্পর্কটা জানা প্রয়োজন।
কে বড়ো কবি, রবীন্দ্রনাথ নাকি নজরুল ?
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কবির জীবদ্দশা অথবা তাঁর মৃত্যুর পরেও এহেন সস্তাদরের প্রতিতুলনামূলক বিষয়ে আলোচনা কোন কবিকে নিয়ে কখনো হয়নি, যতটা না আমার রবীন্দ্রনাথ, আমার নজরুলকে নিয়ে হয়েছে। কে বড়ো কবি, সে প্রশ্নের উত্তর পেতেতে হলে আগে আমাদের তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ও একে অন্যের রচনাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত একটা স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ এবং মৃত্যু ১৯৪১ খ্রি: যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ ও মৃত্যু ১৯৭৬খ্রি:।
অর্থাৎ নজরুলের যেদিনটায় জন্ম হল সেদিনে রবীন্দ্রনাথ ৪০বছর বয়স্ক একজন আদ্যপ্রান্ত যুবক। আর রবি যখন মারা যান ঠিক তার বছর খানিক পরেরে ১৯৪২ সালে নজরুল বাকশক্তি হারিয়ে প্রায় নিশ্চল হয়ে পড়েন। সালগুলো আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই এখানে উল্লেখ করেছি যা আমাদের পরবর্তী কিছু আলোচনায় গুরুত্ববহ ভূমিকা রাখবে।
এবারে রবীন্দ্র-নজরুলের সাহিত্য ভাবনা ও তাঁদের লেখালেখিতে নিজস্ব দর্শন কেমন ছিল তা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করব।
রবীন্দ্রনাথের যা সাহিত্য আমরা পেয়েছি তাতে স্পষ্টত পরিলক্ষিত হয় তিনি তার লেখনি দিয়ে মানুষের মনের ভেতরে লালন করা হতাশা দূর করতে চেয়েছেন কখনবা অসাম্প্রদায়িক বিশ্বনাগরিক হওয়ার মন্ত্রে মানুষকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন, বলা যায় স্বর্গীয় ভাবাদর্শে পরিপূর্ণ। কিন্তু একজন পরাধীন দেশের কবি হয়ে তাঁর কলমে সে বিপ্লবী সুধা, প্রতিবাদের বীজমন্ত্র, স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করার মতো শব্দমালা দেখা যায়নি, যা কিনা নজরুলের লেখনীতে আমরা পেয়েছি অভাবনীয় ক্ষুরধারতায়। কী তেজোদীপ্ত, কী তারুণ্যশক্তিতে বলীয়ান, কী সেই অসম্ভব শক্তিধর একটি শব্দ।
পর্ব - ৪
রবীন্দ্রনাথ জানতেন এবং তাঁর কর্মের মধ্য দিয়েও দেখিয়েছেন, নজরুলের লিখা তাঁর পরাধীন ভারতবর্ষের জন্য কতটা প্রয়োজন, কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের আলো সাক্ষী দেয়, নজরুলকে তিনি চেয়েছেন লালন করতে, তার অগ্নিদাহ সাহিত্য সৃষ্টিতে উৎসাহ দিয়েছেন প্রবলভাবে।রবীন্দ্রনাথ মনেপ্রাণে চাইতেন ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ অধ্যায়কে মুছে দিতে। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ব্রিটিশ তাড়ানোর জন্য ভারতবর্ষের মানুষের মনে বিপ্লব জাগানো, ঘুম ভাঙানিয়া যোগ্য কবি নজরুল ইসলাম, এটা মানতে রবির মনে বিন্দুবৎ দ্বিধা ছিল না। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাঁর কিছু কর্ম এটা অকাট্য ভাবেই প্রমান করে।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সরাসরি দেখা হয়েছিল ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে। তখন নজরুলের বয়স ২২ বছর। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর নজরুল অনেকবারই শান্তিনিকেতনে যেতেন এবং খুবই কোলাহল মুখর ছিলেন। হৈচৈ করে মাতিয়ে রাখতেন বলে তাকে “হৈহৈ কাজী” নামে ডাকতেন রবীন্দ্রনাথ।
১৯২১ সালের দিকে প্রথম বিশ্বযোদ্ধত্তর বিশ্বব্যাপী চরম অবক্ষয়, নৈরাজ্য, একাকিত্বজীবন এবং রাষ্ট্রীয় যন্ত্রে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা নজরুলকে তীব্রভাবে যন্ত্রনাদগ্ধ করে। সামষ্টিক বোধের চেয়ে মানুষ ব্যক্তি স্বার্থে খুব বেশীরকমে মনোনিবেশ করে। ঠিক সে সময়ে নজরুলের প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটে 'বিদ্রোহী' কবিতার মাধ্যমে।মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত ছন্দের মাঝেও কোমল ও গীতলতাপূর্ণ শব্দের প্রয়োগ এক অবিসংবাদিত মেধাবী কবিকে পৃথিবীর সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিল।
আধুনিক বাংলা কবিতা বিবর্তনের হাত ধরে এগিয়েছে সবসময়। বিবর্তন ঘটেছে মূলত ধরণে, কবিতার আঙ্গিকে। যার প্রধান অনুষঙ্গ ছন্দ-উপমা-চিত্রকল্পের অভিনবত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অক্ষরবৃত্তকে পয়ারের চাল দিয়ে কবিতাকে করে তুলেছিলেন গীতিময়ী। রবীন্দ্র বলয়ের বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন স্বাদ মেজাজে নজরুল লিখলেন 'বিদ্রোহী' কবিতা।
নজরুলের বজ্রনিনাদপূর্ণ উচ্চারণেরর 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রাবীন্দ্রিক কোমল স্বভাব থেকে পুরোটাই বিপরীত। ১৯২১-এর ডিসেম্বর মাসে বিদ্রোহী কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে হাতে পত্রিকা নিয়ে নজরুল সরাসরি চলে যান জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। পৌঁছেই শুরু করেন হাঁকডাক, উচ্চকণ্ঠে ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ গাইতে গাইতে নজরুল ঠাকুর বাড়িতে প্রবেশ করেন, "গুরুদেব তুমি কোথায়, আমি এসেছি।"
রবীন্দ্রনাথ দোতালা থেকে বললেন কি হয়েছে, এত হৈচৈ কিসের। তিনি রবীন্দ্রনাথকে বলেন,
" গুরুদেব আমি আপনাকে খুন করবো। নিচে আসুন।"
তারপর রবীন্দ্রনাথের সামনে উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতে থাকেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ ‘বিদ্রোহী’ কবিতা শুনে কবিতার প্রশংসা করেন এবং নজরুলকে জড়িয়ে ধরে বলেন ‘সত্যিই তুই আমাকে খুন করেছিস’। তখন নজরুলকে উদ্দেশ্য করে রবি গান বাঁধলেন, "তোমার হলো শুরু আমার হল সারা।"
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বিশ্বকবিকে আমি শুধু শ্রদ্ধা করে এসেছি সকল হৃদয়-মন দিয়ে, যেমন করে ভক্ত তার ইষ্টদেবতাকে পূজা করে। ছেলেবেলা থেকে তার ছবি সামনে রেখে গন্ধ-ধূপ, ফুল-চন্দন দিয়ে সকাল সন্ধ্যা বন্দনা করেছি। এ নিয়ে কত লোক ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে।’ কথাশিল্পী মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায় একদিন নজরুলের এই ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বললেন নজরুলের উপস্থিতিতেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেসে বলেছিলেন, যাক আমার আর ভয় নেই তাহলে। নজরুল সঙ্কোচে দূরে গিয়ে বসলেও রবীন্দ্রনাথ সস্নেহে তাকে কাছে ডেকে বসিয়েছেন। নজরুল নিজেই লিখেছেন, ‘তখন আমার মনে হতো আমার পূজা সার্থক হলো, আমি বর পেলাম।’
নজরুল ইসলাম যৌবনে রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব ভাল গাইতেন। গীতাঞ্জলির সবগুলো কবিতা তাঁর মুখস্থ ছিল। কমরেড মোজাফফর আহমেদ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “নজরুল ইসলাম বহু রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। তিনি কি করে যে রবীন্দ্র সঙ্গীতগুলো মুখস্ত করেছিলেন, তা ভেবে অবাক হই।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কথা জানার পর খুব খুশি হয়ে বলেছিলেন, “আমারই তো মুখস্থ নেই।”
১৯২২-এর ২৫ জুন কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরিতে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সদ্য দুটি বই বের হওয়া নজরুল সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। বসেছিলেন একদম পিছনে, নিভৃতে, সবার অলক্ষ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠিক তাঁকে দেখে ফেলেছিলেন। নজরুলকে ডেকে ডান পাশের আসনটিতে বসিয়েছিলেন। নজরুল সেখানে আবৃত্তি করেছিলেন ‘সত্যকবি’ কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মধ্যস্থিত এমন মায়াডোর স্নেহবন্ধন সে সময়ে অনেক কবি-সাহিত্যিকদের ঈর্ষান্বিত করত।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজী নজরুল পরম ভক্তি করেছেন রবীন্দ্রনাথক। রবীন্দ্রনাথ স্নেহ করেছেন, সম্মান করেছেন সবসময় ৩৮ বছরের ছোট নজরুলকে। একটি অদ্ভুত মিল লক্ষ করা যায় এই দুই কবিতে। বাংলার দুই মহান কবির কণ্ঠ প্রায় একই সময়ে রুদ্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন রচনায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নজরুল অনেক কিছু লিখেছেন। রবিকে নিয়ে লেখা তাঁর কবিতাগুলো হলো, নতুন চাঁদ- গ্রন্থে ‘অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি’ ও ‘কিশোর রবি’, শেষ সওগাত- গ্রন্থে ‘রবি জন্মতিথি’। এছাড়াও রবির মৃত্যুর পর শোকাহত নজরুল, ‘সালাম অস্তরবি’ এবং ‘মৃত্যুহীন রবীন্দ্র’ নামে দুটি কবিতা রচনা করেন।
রবীন্দ্রনাথের বয়স আশি বছর পূর্তি হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে। তখন কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে লিখেন, ‘অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি’। সে বছরই রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে নজরুল যে গভীরভাবে শোকাভিভূত হয়েছিলেন তার পরিচয় রবীন্দ্রনাথের পরলোকগমনে তাৎক্ষণিকভাবে রচিত নজরুলের বিভিন্ন কবিতা ও গানে পাওয়া যায়। এই দিন (৭ই আগস্ট, ১৯৪১) কাজী নজরুল ইসলাম আকাশবাণী বেতার কেন্দ্র থেকে ধারাবর্ণনা প্রচার করেন। তিনি আবৃত্তি করেন ‘রবিহারা’ কবিতা এবং রচনা করেন ‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে’।
রবির মৃত্যুতে মানসিকভাবে চরম আঘাত পাওয়া কবি নজরুল এক বছর পর নিজেও অসুস্থ হয়ে চিরতরে নির্বাক হয়ে যান।
(চলবে..)
© মেহেদী হাসান তামিম
#রবীন্দ্র_নজরুল
#tagore_islam
(ছবি - অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত)
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১৩
সুখী মানুষ বলেছেন: পড়লাম, মুগ্ধ হলাম। আপনার কিছু লাইন রিরাইট করে নিজের ফেসবুকেও একটা লেখা লেখলাম। ধন্যবাদ বাই।