![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতা ব্যক্তিগত মত নয়, বেদনাঘাত বা আনন্দৌন্মুখতা হতে যে উচ্চারণ বেরিয়ে আসে তাই কবিতা। -কাহলিল জিব্রান
শুধু এ সময়ের অন্যতম প্রধান ও শীর্ষকবি নয়, রবীন্দ্রোত্তর সৃষ্টিযুগেও যিনি সবচেয়ে উচ্চকবি, তিনি কবি শঙ্খ ঘোষ। আজ (০৭/০২/১৮) কবির জন্মতিথি।
প্রিয় কবির জন্মদিনে তাঁর অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয় ভক্ত কবি মেহেদী হাসান তামিম জানাই-
♥পুষ্পাঞ্জলি ♥
ও
♥কবিতাঞ্জলি♥
আমার দ্রোহ, আমার প্রেম; আমার কবি- শঙ্খ ঘোষ
-----মেহেদী হাসান তামিম
কবি হিসেবে কতটুকু পারি, কতটুকু জানি সেটা পুরোপুরি না জানলেও, প্রতীতি আমাকে যতটুকু জানান দেয়, তাতে এতটুকু আমি বুঝতে সক্ষম, তাকে নিয়ে দু'কলম লিখবার যোগ্যতা আমার নেই। যোগ্যতা নেই ভেবে চেষ্টাও করব না, তেমন কবিও তো আমি নই। তাকে পাঠকের সাথে আরো একবার, একজন কবিভক্তের চোখে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবার তাগিদ থেকে লিখছি।
কেউ কেউ বলেন আধুনিক কবি, কেউ বলেন ছন্দের কবি। আমি তার সাথে আরো বলি মানবতার কবি, বিপন্নতায়, প্রতিকূলতায়, প্রতিঘাতে যার লেখনী বিশ্বস্ত বাহুর মতো ভরসা করে ভর রাখা যায়- তিনি সেই কবি, বাংলা ভাষার কবি, বিশ্বাস ও প্রেমের কবি, রবীন্দ্রোত্তর কবিতা যুগের অন্যতম সেরা কবি, তিনি শঙ্খ ঘোষ।
তাঁর কিছু কবিতার অবিস্মরণীয় অমোঘ পংক্তিমালা প্রজন্মের কাছে, নতুন কবিত্বের দাবীদারদের কাছে তুলে ধরতে চাই।
কবির প্রথম কবিতাটি নিজ দেশে ছাপার হরফে মুদ্রিত হয়েছিল ১৯৫২সাল। সেদিনের সেই কবির বয়স ৬৮ পেরিয়েও আজ এক্ষণে দাঁড়িয়ে সেই প্রথম কবিতাটির কথাই সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে। যে কবিতাটি বারবার পড়েও মন বলে উঠবে, আরে এতো আমাদের কথা, আমার চারপাশের নিত্যদিনের গল্প।
কবি তো আসলে তিনিই, চোখ খোলা রেখে দেখবেন যা, তা বন্ধ অবস্থায় দেখবেন তার ঢের গুনে বেশী।
নিজের বর্তমান পরিপার্শ্বিক, আর চোখ বন্ধ করলেই তিনি দেখবেন সুদূর ভবিষ্যতের পটে আঁকা জীবন্তিকা ছবি।
প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোতে কল্পনাপ্রবন, আবেগপ্রবন, স্বপ্নপ্রবন আখ্যায়িত করে কবি-সাহিত্যিক সৃষ্টিশীল মনুষ্যদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে 'অযোগ্য' বলে দাবী করেছিলেন। সরদার ফজলুল করিম স্যারের প্রবন্ধে পড়েছি- যে সমাজে কবিরা, লেখকরা, সৃষ্টিমত্ত মানুষেরা বাস্তবিক সমাজচিত্র, রাষ্ট্রচিত্র, সরকারচিত্র, তথা সত্যচিত্র আঁকতে পারেন না, বরং ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে শুধু তাঁবেদারি তোষামুদে সাহিত্য, পুরস্কার-প্লট-ফ্লাট-মেডেল প্রাপ্তিসাহিত্য, রাষ্ট্রীয় কবির আসনলিপ্সুসাহিত্য রচনা করেন, সে সমাজের ধ্বংস অতি আসন্ন, সে সমাজের ভগ্নস্তুপে পরিণত হবার দিন ছোঁয়াচে কাছের দূরের দিনগুলোতেই।
অপার বিষ্ময়ান্বিত হতে হয়, আমাদের রচনাগুলো যখন সুদীর্ঘ অতীতের কোন কবির কাছে মুখ থুবড়ে পরে, নিমিষে মিলিয়ে যায়। আজ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এই নিশুতি রাতিতে আমার লিখার কথা, কিন্তু যখন খুঁজে পাই একি সেই কবিতা বহুযুগ আগে লিখা কোন কবির কলমেই- তখন এটাকে কি নামে ডাকা যায়, দৈবশক্তি না কি জাদু-বাস্তবতা।
কবি শঙ্খ ঘোষ এমনি এক কবি যিনি তাঁর নিজের সময়ে দাঁড়িয়ে সেই সময়ের কথা, সেই সময়ের অনেকানেক পরের কথা- অব্যর্থ দৃঢ়তায়, দ্ব্যর্থহীণ দ্যোতনায় কলমের অপার্থিব আঁচরে সাদাকালোর সময়ে থেকে এঁকেছেন পুর্ণদৈর্ঘ্য রঙিন ছায়াছবি। ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম ছাপানো কবিতাটি -
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে,
আরেকটুকাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে!
নোটন নোটন পায়রাগুলি
খাঁচাতে বন্দী-
দুয়েক মুঠো ভাত পেলে তা
ওড়াতে মন দিই!
হায় তোকে ভাত দেবো কী করে যে ভাত দেবো হায়
হায় তোকে ভাত দিই কী দিয়ে যে ভাত দিই হায় "
আবার,
"যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে
যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে
বিষের টোপর নিয়ে!
যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ-পথ দিয়ে
দিয়েছে পথ গিয়ে !
নিভন্ত এই চুল্লিতে বোন আগুন ফলেছে ! "
এক কিশোরীর গল্প সে কবিতা।আমাদের খুব চেনা কোন প্রতিবেশী নারী, যার মৃত্যু রচিত হল পুলিশের গুলিতে ভুখা মিছিলে সমবেত থেকে। গরম নির্জলা ধোঁয়ামেদুর ভাতের সন্ধান তাকে এনে দিল গরম কিছুই, ধোয়া তোলানোই- তবে তা লাল রং বিষনীল করা, খাদ্যনালী ভেদী তাম্রবুলেট । বারুদের কাছে, মৃত্যু এসে সালাম ঠুকে, নুইয়ে দেয় মস্তক। নিভন্ত চুল্লি সেই কিশোরীর দহনে সমাজ হতে আরেক সমাজে নিরবধি বয়ে চলা দাউদাউ আতপ্ত চিতার অগ্নিময়তা, লেলিহান লালস্য শিখা।
শঙ্খ লিখলেন আরো বেশকিছু পরে,
"ভয়াবহ শব্দধূমে ভরে গেছে পৌষের বাতাস
আর সেই অবসরে কোনও কোনও পিশাচ স্বাধীন
রাজপথ থেকে নারী তুলে নিয়ে চলে যায় ট্রাকে ।"
সমাজকে কোমল পেলব মোমমোলায়েম ভাষায় দেখিয়ে দিলেন নারীত্বের অসম্মান ও অবমাননার গীতিকবিতা। এ সময়েও সে যে পূর্ণসমান প্রসঙ্গিক । নারী আজো ধর্ষিত হয় পাবলিক বাসে, ব্রিজের আড়ালে , প্রকাশ্য রাজপথে, বনানী, ধর্মতলায়।
নিজের কাছে কবিত্ব প্রাত্যাখ্যাত হয়ে বিপন্ন বিষন্ন বোধ উঠে জেগে, যাকে অনুভব করা সম্ভব নয় আবার তাকে এড়িয়ে চলতে পারা সর্বকাঠিন্যভরা অসহায়রকমে অসম্ভব। জাগে যখন তিনি লিখেন-
" আজকাল কবিমাত্রে অনায়াসে জঙ্ঘা বলে যাকে
শব্দের প্রকৃত বোধ কুয়াশায় একা পড়ে থাকে "
কি নির্দ্বিধায় আত্মবিশ্বাসী সে সংজ্ঞায়ন -
" মত কাকে বলে, শোনো । মত তাহাই যা আমার মত,
সেও যদি সায় দেয় সেই মতে তবেই সে মহৎ "
বিশ্বায়নের টালমাটালে বাতাসে গণতন্ত্র তো আমার কথা, আমার সরকার, আমার রাষ্ট্র। সবকিছু আমার। তবেই সব ঠিকঠাক। নয়তো সব বেশুমার ধুন্দুমার ভুল। ভুল আর ভুল- যেন কভু কোনকালে ফোটেনি কোন ফুল। এরপরে আরো স্পষ্টভাষ্যে লিখলেন - 'ন্যায় অন্যায় জানিনে' কবিতাটি
"ন্যায় অন্যায় জানিনে
তিন রাউন্ড গুলি খেয়ে তেইশ জন মরে যায়, লোকে এত বজ্জাত হয়েছে !
স্কুলের যে ছেলেগুলো চৌকাটেই ধ্বসে গেলো, অবশ্যই তারা ছিল
সমাজবিরোধী।
ও দিকে তাকিয়ে দ্যাখো ধোয়া তুলসিপাতা
উল্টেও পারেনা খেতে ভাজা মাছটি আহা অসহায়
আত্মরক্ষা ছাড়া আর কিছু জানেনা বুলেটরা।
দার্শনিক চোখ শুধু আকাশের তারা বটে দ্যাখে মাঝে মাঝে।
পুলিশ কখনও কোনও অন্যায় করে না তারা যতক্ষণ আমার পুলিশ।"
কি অবলীলায় শঙ্খ কত দুর্দান্ত। কবিতার লাইন কতটা প্রতিবাদী হতে পারে মাত্র সে ক'টি লাইনেই তা দেখিয়ে দিলেন -
'তিন রাউন্ড গুলিতে তেইশ জনের মৃত্যু। '
অথবা
'পুলিশ কখনও কোনও অন্যায় করে না তারা যতক্ষণ আমার পুলিশ' - এর থেকে বড় চপেটাঘাত আর কি হতে পারে!
বাম প্রশাসশাসকের রাজ্যে, জ্যোতি বসুর প্রিয় পাত্র হয়ে আর দশজনে শতজনের মতো ক্ষমতাশালীদের পদযুগল লেহন ও সযতনে বক্ষে ধারণ করে নিয়ে, কাজী নজরুল ইসলামের 'মোসাহেব' কবিতার সেই ধুরন্ধর মোসাহেব হবার সুযোগ তাঁরই ছিল সবথেকে বেশী অবারিত। তিনি তো কবি, আবার তিনি হলেন কবি শঙ্খ ঘোষ, সে পথ হাঁটা লোক তিনি নয়। যে কোন অন্যায়ে রাজ্য সরকারের বা হোক কেন্দ্র সরকারেরই অথবা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ গং- কারো রক্তচক্ষু তাকে পিছু হটাতে পারেনি কভু। বরং অন্যায় যত বড় দেখেছেন তার কলম ততবেশী বিধ্বংসী বিনাশী বর্ষণ করেছে। কলমের ডগার শব্দবুলেট করেছে ছিন্নভিন্ন বিধ্বস্ত। সে সময়ের ক্ষমতার কেন্দ্র বাম সরকারের ভীতির কারণ, বিরোধীদল যতটা ছিল তারচেয়ে যোজনক্রোশ দূরত্ব বেশী, ভয় পেত সুশীল সমাজকে। যার অন্যতম কারিগর কবি শঙ্খ ঘোষ। তাঁর লেখনীতে বাম সরকারের পরিণতির আগাম হিসেবে শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে কবি লিখলেন -
" বাম-রাজত্বের শেষে আসবে বোধহয় বামা-রাজ্য "
আবার,
"অধিকার আছে তোমার রাতুল দুপায়ে
আমার গলে যাওয়া শিরদাঁড়া ছুঁড়ে ফেলবার "!
বা,
"গায়ের জোরে আমার হাবা বোনকে তুমি ধর্ষণ ক'রে গেলে
আমার অধিকার আছে তাকে মিথ্যে ব'লে প্রমাণ করবার
গুলির জোরে আমার বেকার ভাইয়ের হৃৎপিণ্ড তুমি ছিঁড়ে নিলে
আমার অধিকার আছে তোমারই কাছে দুহাত পেতে ভিক্ষে নেবার
ক্ষতিপূরণের আর প্রতিপূরণের..."
বাংলা কবিতা নতুন করে ধ্রুপদী নান্দনিকতার ছাঁচে ফেলে সুনিপুন হাতে নবতর ইমারত গড়লেন তিনই। শব্দ হলো দুরন্ত উচ্ছ্বল হরিণ, পদ্যেররা বারুদের থেকেও শক্তিশালী কাব্যবাণ। তা দিয়ে সকল জরাকে, জীর্ণতাকে নিমিষে চুড়মার করে বাঁচতে শেখায় - সেতো সেই শঙ্খের কবিতাই।
"শব্দ হরিণ ধরবে বলে
পদ্য মাখা ফাঁদ
দিন রাত্তির বিছিয়ে রাখে
এ’টাই অপরাধ
লোকটা সে দোষ স্বীকার করেও
সংযত নয় মোটে
সমস্তক্ষণ শব্দ সাজায়
সুখে ও সংকটে
বিষণ্ণ এই পৃথিবী ছোঁয়
জ্যোৎস্নামাখা চাঁদ
মরতে মরতে মানুষ মাখে
বাঁচার অপরাধ।
কলম যখন আঁচড় কাটে
অস্ত্র বোধ হয় ওটা
গড়িয়ে পড়ে অমৃত আর
আগুন বিষের ফোঁটা
লক্ষ হাজার অযুত ফোঁটায়
বর্ণমালার নদী
দিনযাপনের পাপগুলো সব
ভাসায় নিরবধি
তাই তো তাকে শাস্তি দিলাম"
"অজ পাড়াগাঁয় শহর মফসসলে
তুচ্ছ এখন জ্বরের আলোচনা
টিভির বাক্সে সন্ধ্যে সকাল দোলে
সংস্কৃতিময় সিরিয়ালের ফণা।
মন তো খারাপ হচ্ছে প্রতিদিনই
আমরা বরং কবিকে নিই চিনে
শব্দভেদী বান পাঠালেন যিনি
পুব পশ্চিম উত্তরে দক্ষিণে..."
কখনো কলমে ঝড়ল -
"যুদ্ধারম্ভে পড়ে নেবো গীতা
আপাতত শান্তি বড় প্রিয়
বাজেটের প্রতিরক্ষাখাতে
জমা থাক নির্ভেজাল দেনা
আমি জানি তোমার লেখাতে
ঘুম ঘুম শান্তিটি মেলে না
রোজ দিন ক্লান্ত মনে দেহে
তবু তুমি আমারও বিবেক
নেতা বলে ‘শঙ্খ ঘোষ কে হে?’
আমি বলি ‘আগে বাংলা শেখ্’!"
তার আরেকটি অনবদ্য কবিতা -
"কাটআউট ভরা বিজ্ঞাপনের রাজা এবং রাণী
মুখ ঢাকা এই শহর বোঝে সমস্ত শয়তানি।
মাঝ দুপুরে শহর জুড়ে বৃষ্টি নেমেছে
রাস্তার তো ভেজার কথাই। আর কে ভিজেছে?
ভিজল হয়তো কাগজ কলম কবিতা একপাঁজা।
কবি নিজেও ভিজল বুঝি? মেজাজটাই তো রাজা।
না থাকলে সে, যমুনাবতী জন্মাতে পারতো না।
সেই তো দেবে শেষ বিকেলের বাবরকে প্রার্থনা।"
আহা কি সব সহজ শব্দে সর্বোচ্চ কঠিন প্রতিবাদ, আমার সীমিত অধ্যয়নে কাজী নজরুল ইসলামের পরে শুধু শঙ্খকেই পড়লাম যারা কলমে এত সাবলীলতায় দ্রোহ আর প্রতিবাদ রচনা করতে পেরেছেন। বিস্ময়াপন্ন না হয়ে থাকতে পারার কোন কারন না যখন পড়ি -
"তোমাকে অনেক দিতে সাধ হয়, ভাঁড়ারে শব্দ নেই তাই
তোমারই বাগান থেকে তুলে আনি, যত্ন করে গাঁথি সুতো দিয়ে
চিনতে পেরেছো হয়তো, কিম্বা সেই গ্লানিমাখা শব্দ অভিলাষ
আমাকে তেমন করে ছুঁতেই পারেনি কোনওদিন
তবু শোনো ধার চাইছি, কথা দিচ্ছি যথাকালে শোধও দিয়ে দেব
বিধিমত দাবী করলে সাথে অতিরিক্ত দেব বিক্রয় কোবালা "
বারবার মগ্নচৈতন্য নেশাতুর হবেই যে কেউ যখন শঙ্খকে পড়বে-
"আমার ধ্বংসবীজ জন্মাবধি এখানে প্রোথিত। ঠিকমত মাটি জল পেলে
চিৎকারশব্দে এক নতুন অঙ্কুরমালা জ্বলে উঠতে পারে
পাথরে শেকড় গেঁথে কথাবৃক্ষ উঠে যাবে আকাশের দিকে
এমন প্রার্থনা করলে, চেনা দুর্যোগের মত ঘুর্ণি পাঠিওনা
ঝিমধরা সময়কে চোখে চোখ হৃদয়ে হৃদয় রেখে বলতে দিও
তোমার সমস্ত নিতে সাধ হয়। "
কবিরা অবশ্যই কল্পনা প্রবন, তবু প্রতিটি কল্পনারাজ্যের একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে। শঙ্খ হলেন সেই প্রজাতির যার সে রাজ্যপাটের সীমানার কোন শেষ নেই, সে জগতের গভীরতা অতল পর্যন্ত বিস্তৃত। যেমন-
"রাত্রির ভিতরে এসে আরো রাত্রি মিশে যায় যদি
অন্ধকার থেকে যদি জেগে ওঠে আরো অন্ধকার"
অথবা,
"কল্পনারাজইচ্ছে হলে দিনগুলোকে কচকচিয়ে মেঘ মাখিয়ে খাবো।
আঁশ থাকলে ছিবড়ে হবে। সেটুকু ঝুঁকি সবসময় থাকে।
দাঁতের ফাঁকে কবিতাকুচি খোঁচাতে হবে গোপন টুথপিকে
তবেই সেই দন্তরুচি ভদ্রভাবে প্রকাশ করা যাবে
ট্রাফিকরুল ভঙ্গকারী কঠিনতম শাস্তি পাবে জেনেও
অশ্বমেধে চলেছে তবু কবির দল দেশে ও সন্দেশে
উল্টোদিকে ডাস্টবিনের আড়াল থেকে জাতভিখিরি যারা
খাবলে খায় গায়েও মাখে গতরাতের উদবৃত্ত ব্যথা
তরকারিও সেইটুকুই দরকারি যা ভাষ্য মেনে চলে
মনোমোহন মোহনভোগ দেবার আগে রোজ দু'বার ভাবে।
কথাটা ঠিকই কবিতা নয় সুলভ যদি---
অ্যাফ্রোডিসিয়াক
অ্যাণ্টাসিড সহযোগেও। তবু কিছুটা সহজপাচ্যতা
দাবী করেছে কলমহাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক যুবতীরা।
কালিতে নয় ---কলমে নয় --কি-বোর্ডের নকল কথকতা
ছদ্মবেশে যজ্ঞভূমি বিনা আয়াসে দখল করে আছে।
ওদের আজ প্রশ্ন কর। দখল কর কবরখানাগুলি।
দৈর্ঘ আর প্রস্থ মাপো। খুঁড়তে থাকো নিজের উচ্চতা।
সবাই যেন উঠতে পারে, নিজেই ---শেষ কেয়ামতের দিনে।
প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিচারসভা সাজিয়ে রাখা আছে
সাজান আছে সওয়াল আর নিজের মত তীক্ষ্ণ যুক্তিও।
আর তা'ছাড়া সবাই জেনো লক্ষ্যভেদে ততটা পটু নয়।
মুখোশদের দাঁত থাকে না। আড়াল থেকে নিজের উদ্যোগে
ইচ্ছে হলে চিবিয়ে খাবো প্রাত্যহিক দিনযাপনগুলি
বাঁচুক শুধু ঝড়ের মত শর্তহীন কবিতা কল্পনা"
যাদের কবিতা রচনা করে দ্রোহ, করে প্রতিবাদ তারা কি প্রেম করতে জানেনা! জানে বৈকি, আমার তো মনেনেহয় সবচেয়ে দ্রোহী মানুষটিই সবচেয়ে বড় প্রেমিক, প্রতিবাদী মানুষটার অন্তরে থাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা। তা নাহলে কিভাবে শঙ্খ লিখতেন-
"কিছু শব্দ কটা দিন উচ্ছলতা পায় মুখে মুখে
তার পরে মরে যায় আমরা তার শব নিয়ে ঘুরি
দুহাতে তাকেই তুমি সাজাও যে রাগে অনুরাগে
ছন্দের ভিতরে এতো অন্ধকার জেনেছ কি আগে
নির্জন সংলাপ,মুখোমুখি কিছু বিনিময়।বাকি কথা কবিতা বিষয়। "
আবার লিখলেন-
"আমার বড়ই জ্বর। এসো তুমি। বসো এই ঘরে।
কবিতাপ্রপাত এনে ঢেলে দাও আমার শিয়রে।
ভয়ের তরাসে জ্বর। এ’ অসুখ দারুণ ছোঁয়াচে।
প্রতিবেশীরাও নাকি নিত্যদিন পোড়ে এরই আঁচে।
শরীরে কাঁপুনি ওঠে। জড়োসড়ো হয়ে থাকে মনও।
তবুও বুঝতে পারি পাণ্ডুলিপি গাঢ় আর ঘন
কুয়াশার মত ঝরছে মেলে রাখা খাতায় কাগজে
তুমি যা বলতে চাও সবই ওই বর্ণমালা বোঝে
সবুজ হলুদ লাল অস্যার্থে পুরো ভিবজিওর
রাত কিছু রঙ ঢালে, বাকি সব রঙ জানে ভোর।
পাকদণ্ডী বেয়ে উঠে আকাশে ছড়িয়ে যায় রঙ
একে কি স্বপ্ন বলব? কবিতাই বলছি বরং
বুঝি না জ্বরের ঘোরে যা দেখেছি, সবই কি কবিতা?
অসুস্থ সময়কে আরোগ্য এনে দাও পিতা।"
পৃথিবীর সবথেকে যুদ্ধবাজ শাসক, রুদ্র, রুক্ষ, কর্কশ, দুর্মর মানুষটিও প্রেমের সাগরে নিশ্চিতভাবেই উড়ে উড়ে ভাসবে, যখন পড়বেন -
"দুপুরে-রুক্ষ গাছের পাতায়
কোমলতাগুলো হারালে
তোমাকে বক্ব,ভীষণ বক্ব
আড়ালে।--
মেঘের কোমল করুণ-দুপুর
সূর্যে আঙুল বাড়ালে
তোমাকে বক্ব,ভীষণ বক্ব
আড়ালে ।"
এ অরুপ রত্নভান্ডারের গল্প পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফন্টে দিস্তা দিস্তা কাগজে লিখে ফেললেও তার কীর্তিমান শব্দসড়কের কথা হয়ত ফুরোবে না। যে জাতি যুগ যুগ ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে কবিতার লালন পালনকারী সে জাতিতেও কবি শঙ্খ ঘোষেরা কালে ভদ্রে জন্মে।
যে আমাকে কবিতার বর্ণমালা শিখাল, যে আমায় কবিতা পড়তে শিখালো, যে আমাকে শিখাল কবিতা - সে এই শঙ্খ। সে যে আমার প্রাণের কবি, হৃদয়ে বাস করা প্রাসাদ প্রাচুর্য্য, সে বালিশের নীচে অনেক যত্নে লুকিয়ে রাখা আমার।ঈদের জুতো, আামার ধীরে ধীরে আয়েসে রসাস্বাদন করা বহ্নিসখা বহ্বাশী মহাসমুদ্র, সে কবি শঙ্খ ঘোষ, সে ই আমার ছন্দের বারান্দা। রাত্রি ছিনতাই করা ঘুমশিকারী কবিকে এই ক্ষুদ্রের সর্বনিম্ন এককের ক্ষুদ্র আমি কবি বড়জোর কয়েকটি লাইন দিতে পারি। তুমি পেলে কিনা জানিনা, কখনো পাবে কিনা তাও জানতে পারবনা কখনো, তুমি পেলে কি না পেলে সে নিয়ে আমি বিন্দুস্থ চিন্তিতও নই, আজ আমি দিতে পেরপি মহা সুখী।
আমার কবি ; শঙ্খ ঘোষ
---------------- মেহেদী হাসান তামিম
শঙ্খ ঘোষ মানে নব কিছু
শঙ্খ মানেই তো ছন্দ পিছু
শঙ্খ মানেই শব্দভ্রমর
শঙ্খ মানে জীবন মুখর।
কবিতারা কথা বলা বাগ্মীনদী, লিখে শঙ্খ যদি
পেখম বিছায় বর্ণ যত শব্দে করে ভর
বাক্যকণ্ঠে তাল, শব্দ তরী, লাইনগুলো যে জ্যান্ত ছবি,
অন্যায় বিরুধে কবিতাই অস্ত্র সবি, শঙ্খ হলে কবি।
(অক্ষরবৃত্ত)
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯
মেহেদী হাসান তামিম বলেছেন: কবি শঙ্খ ঘোষের জন্মদিনে নিরন্তর শুভেচ্ছা।