![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন মানুষ। হেঁটে চলেছি জীবনের পথে। ভালোবাসি শিশুদের। শিশুদের নিয়েই কাজ করি। ভনিতা ঘৃনা করি। প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।
বিদ্যা যখন হাসে তখন আশেপাশের কিছুই লক্ষ্য করে না। এ হাসির জন্য কম গালমন্দ খেতে হয়নি তাকে। মা প্রায়ই তাকে বকা দিয়ে বলতেন, যত হাসি তত কান্না। বিদ্যা তাতে কান দেয়না। কান দিয়েই কী করবে? হাসিই যে তার একমাত্র বন্ধু। কালের প্রয়োজনে সবই চলে যায়, হাসিটাই রয়ে যায়। এ হাসিটাই তাকে শক্ত করে দাঁড়াতে, নিজের পথে হাঁটতে সাহায্য করে।
দেখতে বিদ্যা ততটা সুশ্রী নয়। আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই কর্ম দক্ষতার চেয়ে শ্রীটাই বিবেচ্য বিষয় হয়ে থাকে। এ নিয়ে ছোট বেলা থেকেই বিদ্যার খুব মন খারাপ লাগা ছিল। আর এ মন খারাপ থেকেই হয়তো বিদ্যা নিজেকে প্রমাণ করার ব্রত নিয়ে নিল। জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিল; আর তাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইল। বিদ্যার অনেকটা সময় কেটে যেত আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে। আলো ঝলমলে শরতের আকাশ। মন খারাপ করা মেঘলা আকাশ। আকাশের কোল ঘেষে যখন মেঘরাশি ভাসতে ভাসতে দূর দেশে যেতে যেতে দিগন্তে মিলিয়ে যেত, তখন বিদ্যার ইচ্ছে করতো সেও ভেসে ভেসে সীমানা পেরিয়ে যাবে। জ্যোৎস্নার আলোয় স্নান করতে করতে চাঁদটাকে দুই হাতের মুঠোয় পুরে নিতে ইচ্ছে করতো। কত রাত বিন্দু বিন্দু তারার ফুলকে মাথায় গুঁজে কাটিয়ে দিয়েছে সারা রাত। স্বপ্ন বুনেছে মনে মনে। বিদ্যা যখন হাসতে হাসতে মাকে বলতো, ``মা, ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখি।" মা হাসতে হাসতে বলতেন, ``পাগলী!"..
মায়ের এ পাগলী কথাটার মধ্যে যে কি আদর আর ভালোবাসা জড়িয়ে থাকতো! আজও বিদ্যার কানে রিনিঝিনি শব্দের মতো মাঝে মাঝে বাজতে থাকে। পাগলী...। সময়ের সাথে চলতে চলতে বিদ্যা জীবনের অনেকগুলো বর্ষা, অনেকগুলো বসন্ত, অনেকগুলো শরৎ পার করেছে। শুধু জেদ করে সামনে এগিয়ে গেছে। পেছনে তাকায়নি কোনোদিন। যদি থেমে যেতে হয়! চলতে চলতে একমসয় যখন ক্লান্ত মনে হতে থামলো, তখনই দেখল পাশে কেউ নেই। তার চির বন্ধু হাসিটাও কখন তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আজ অনেকদিন পর বিদ্যার আবার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করলো। ইচ্ছে করলো মায়ের বুকে মাথা রেখে জোনাকির উড়ে যাওয়া দেখতে। চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা পানি ঝরে পরলো তার। আঙুলের ডগায় পানিটা নিয়ে অদ্ভুত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলোয় স্বচ্ছ পানির ফোটাটা চিকচিক করছে। একি বিদ্যার হৃদয় নিংড়ানো অশ্রু ফোটা? নাকি সারা জীবনের না পাওয়ার প্রতিচ্ছবি?
বিদ্যার হঠাৎ করে ম্যাজিক ম্যানের কথা মনে হলো। বিদ্যুৎ চমকের মতো কেমন একটা শীতল অনুভূতি তাকে নাড়া দিয়ে গেল। আহ..., ম্যাজিক ম্যান! ম্যাজিকের মতো যে তার জীবনটাকে পাল্টে দিতে চেয়েছিল। গল্প, কবিতা, গান, কথা আর ঝগড়ার মালায় জড়িয়ে রাখতো। বিদ্যা তখন উড়তো, ভাসতো, সাঁতার কাটতো। ইচ্ছে হলে ভেসে ভেসে চলে যেত দূরের কোনো এক কসমোপলিটন সিটিতে। এই ম্যাজিক ম্যানই একদিন বিদ্যাকে স্বপ্ন বুনতে শিখিয়েছিল। কীভাবে স্বপ্নকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হয় তাও শিখিয়েছিল। গুড়ো স্বপ্নের টুকরোগুলোকে পেছনে ফেলে বিদ্যা নিয়েছিল সাগর পাড়ের এই নির্জন বাস। গুটিয়ে নিয়েছিল নিজেকে। পেরেছে কি? হয়তো, হয়তো বা না।
জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে বিদ্যা স্বপ্ন ভাঙা-গড়ার খেলায় আজ ক্লান্ত। ইচ্ছে করে জীবনের ফেলে আসা ভুলগুলোকে মুছে দিতে। ঠিক যেমনটা সমুদ্র তার ঢেউ দিয়ে মুছে দিচ্ছে তার ক্লান্ত পায়ের ছাপ।
___________
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪০
ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখি বলেছেন: প্রামানিক ভাইয়া ধন্যবাদ।
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০২
কানিজ রিনা বলেছেন: গল্পটা যেন আমার জীবনের সাথে ছুঁয়ে
গেল। ধন্যবাদ।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৪
ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখি বলেছেন: ধন্যবাদ, কানিজ রিনা। গল্পটি যে আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:০৫
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।