নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তানিয়া লাইজু সুমি

ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখি

আমি একজন মানুষ। হেঁটে চলেছি জীবনের পথে। ভালোবাসি শিশুদের। শিশুদের নিয়েই কাজ করি। ভনিতা ঘৃনা করি। প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।

ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁয়ে দেখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা পীড়ন ব্যবস্থাপনা...

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২৪


আমরা পাঁচ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমরা কী কী কাজ করি? একজন মানুষ হিসেবে আমাদের নানা রকম দায়িত্ব পালন করতে হয়। হাজার কাজের ভেতর হারিয়ে যেতে হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ঘুম ছাদে ওঠে। হাইপার টেনশন হয়। ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। মাথা ঘোরে.......; আরও নানা কিছু। চিন্তা আর কাজের ভীড়ে মাঝে মাঝে জীবনের প্রতি অনিহা তৈরি হয়। মনে হয় ভালোয় ভালোয় ভব লীলা সাঙ্গ করতে পারলে ভালো।
হা.......হা.......হা.........। আসলে এত খারাপ অবস্থাও হয়তো হয়না। কেউ কেউ জীবনের উদ্বিগ্নতা ও পীড়ন খুব ভালোভাবে সমাধান করে ফেলে। যেসব মানুষ জীবনের হাজারো কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারে, উদ্বিগ্ন অবস্থাকে দক্ষ হাতে পার করে সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তারাই জীবনে স্বার্থক।
জীবনে আসলে চিন্তা, উদ্বিগ্নতা বা পীড়ন তৈরি হয় নানা কারণে-
১. ব্যক্তিগত কারণে
২. পারিবারিক কারণে
৩. কর্মসূত্রীয় কারণে
এ কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে ফলাফল কতটা তীব্র হবে জীবনে। একটি কেস এর উদাহরণ দিয়ে বলছি:
‘‘রাজন সাহেবের আটটার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে হয়। তার অফিসে কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হয়। যন্ত্রের কারণে এক মিনিটের দেরী মানে দেরী। উপস্থিত লগে সেটা চিহ্নিত হয়ে যায়। রাস্তায়ও ট্রাফিক জ্যাম থাকে। তাই তাকে এক ঘণ্টা হাতে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে হয়। তার মেয়ের স্কুলও সকাল আটটায়। পৌনে আটটায় স্কুলে পৌঁছাতে হয়। স্কুলের গাড়ি আসে সাতটার সময়। রাজন সাহেবের স্ত্রী গৃহিনী। সকালে তাকে একগুচ্ছ কাজ এক হাতে সাড়তে হয়। তার মেয়েকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করে দিতে হয়। সকালের নাস্তা তৈরি করে মেয়ে ও স্বামীকে খাওয়াতে হয়। তার স্বামীর লাঞ্চ, মেয়ের টিফিন তৈরি করে ব্যাগে ভরে দিতে হয়। আরও নানা ঘরোয়া কাজ করতে হয়। আজ রাজন সাহেবের একটি জরুরী মিটিং আছে অফিসে। মিটিং এ অনেক দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি থাকবেন। তাকে একটি সম্ভাব্য প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। তার প্রেজেন্টেশন এবং আজকের মিটিং এর আলোচনার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতের এ প্রকল্পটি। তিনি এটা নিয়ে খুব স্ট্রেস এর মধ্যে আছেন। সকালে যখন রাজন সাহেবের স্ত্রী তাকে চা দিলেন তিনি তখন টাই পরছিলেন। চা খেয়েই বাবা-মেয়ে বের হয়ে যাবে। হঠাৎ মেয়ের ধাক্কা লেগে চা রাজন সাহেবের গায়ে পরে গেল। তার মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। তিনি মেয়েকে থাপ্পর দিলেন। স্ত্রীকে ধমক দিলেন। মেয়ে কাঁদতে শুরু করল। ফলাফল, মেয়ে স্কুলের গাড়ি মিস করল। রাজন সাহেবকে পুনরায় পোশাক পরিবর্তন করে মেয়েকে নিয়ে বের হতে হলো। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যখন অফিসে পৌঁছালেন তখন নয়টা বাজে। আর একটু পরই মিটিং শুরু হবে। মিটিং এ যাবার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখলেন, তিনি ব্যাগ এনেছেন, কিন্তু, ব্যাগে ল্যাপটপ নেই। তাঁর যে প্রেজেন্টেশনটি দেওয়ার কথা তা ল্যাপটপে রাখা। তিনি মেইলে কোনো কপি রাখেননি বা এক্সটারনাল ড্রাইভেও কপি করেননি। এদিকে সবাই মিটিং এ চলে এসেছেন। তিনি কী করবেন বুঝতে পারলেন না।....”
ওপরের উদাহরণটি একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখতে পাব, রাজন সাহেব সঠিকভাবে স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা করতে পারেননা। তার ব্যবস্থাপনা দূর্বল হওয়ার কারণে অনেক ভুল কাজ তিনি করেছেন এবং এর ফলাফল হাতেনাতে পেয়েছেন। আমাদের জীবনে এমন হওয়া উচিৎ নয়।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা পীড়ন ব্যবস্থাপনার অনেক কৌশল আছে।
১. স্টেফেন কোভে মডেল: একটি কৌশল আছে যেটি জনপ্রিয়। তিনি বলেছেন:
প্রথমত: কাজগুলোকে আর্জেনসি/জরুরী এবং গুরুত্বের ভিত্তিতে ক্যাটাগোরাইজ করে ফেলতে হবে।
- যে কাজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্জেন্ট/জরুরী সেগুলো এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
- যে কাজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু আর্জেন্ট/জরুরী সেগুলো এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
- যে কাজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আর্জেন্ট/জরুরী নয় সেগুলো এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
- যে কাজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণও নয়, আবার আর্জেন্ট/জরুরীও নয় সেগুলো এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
এবার গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্জেন্ট কাজগুলো প্রথমে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং করে ফেলতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু আর্জেন্ট কাজগুলোকে পারলে ডেলিগেট করে দিতে হবে, অর্থাৎ, অন্যকে দিয়ে কিছু কিছু কাজ করাতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আর্জেন্ট নয় কাজগুলো ধীরে ধীরে সময় নিয়ে করতে হবে এমনভাবে যাতে করে কাজগুলো পেন্ডিং হয়ে বা বাতিলের তালিকায় চলে না যায়। গুরুত্বপূর্ণ নয় আবার আর্জেন্টও নয় কাজগুলো কি আদৌতে এ তালিকায় রাখব কিনা তা চিন্তা করে পুনরায় তালিকাবদ্ধ করতে হবে। যদি আসলেই এগুলো গুরত্বহীন এবং অজরুরী হয় তা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেব। এভাবে পীড়াহীনভাবে পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে কাজগুলো সম্পন্ন করলে জীবন নিশ্চিন্তময় হবে।
২. ট্রানজাক্শনাল মডেল: রিচার্ড লেজারাস এবং সুজান ফোকম্যান ধারণা দিয়েছেন যে, কাজের ক্ষেত্রে তখনই পীড়া বা স্ট্রেস তৈরি হয় যখন কাজের চাহিদা বা পরিধি এবং রিসোর্স বা ক্ষমতার মধ্যে অমিল হয়। যেমন, ``দোলা আর মিলা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকে। দুইজনকেই গৃহস্থালী কাজ করতে হয়। সারাদিনে তাদেরকে ঘর মুছতে হয়, কাপড় কাচতে হয়, রান্না করতে হয়, ছেলেমেয়েকে পড়াতে হয়, ছেলেমেকে গান-নাচ-ড্রয়িং ক্লাসে নিয়ে যেতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। দোলার ঘর মোছার মব আছে, কাপড় কাচার ওয়াশিং মেশিন আছে, রান্নায় সহায়তা করার লোক আছে, ছেলেমেয়েকে ক্লাসে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। কিন্তু মিলার এগুলো কিছুই নেই। ফলে দোলা সব কাজ করে নিজে বই পড়ার সময় পায়, টেলিভিশন দেখার সময় পায়। কিন্তু, মিলা সব কাজ করে উঠতে পারেনা। ফলে মিলার মধ্যে তৈরি হয় স্ট্রেস। সংসারে হয় অশান্তি। এক্ষেত্রে দোলার কাজের চাহিদা এবং উপকরণ বা রিসোর্সের মধ্যে মিল আছে কিন্তু মিলার নেই। ফলে পুরো পরিবেশটি মিলার জন্য স্ট্রেসর হিসেবে কাজ করছে। অল্প সময়ের মধ্যে মিলার এতগুলো কাজ করার ক্ষমতা নেই। এখানে মিলাকে কোপিং কৌশল নিতে হবে। মিলাকে ঠিক করতে হবে প্রতিটি কাজই প্রতিদিন করতে হবে কিনা। প্রতিটি কাজ নিজেকেই করতে হবে; নাকি তার স্বামী বা সন্তানদের কাজে লাগানো যাবে। এমন কোনো উপকরণ কেনা যায় কিনা যা কস্ট ইফেকটিভ কিন্তু কার্যকরী। তাকে সমস্যার ওপর ভিত্তি করে সমাধান কৌশল বের করে ফেলতে হবে এবং নিজেকেও কিছু সময় দিতে হবে তার নিজের বিশ্রামের জন্য। তার নিজের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে তার লালন করতে হবে। এভাবে সে যত ভালোভাবে তার বিরূপ পরিবেশকে তার উপযোগী করে তুলতে পারবে তত বেশি স্ট্রেস দূর হবে।
এছাড়াও স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার জন্য এক্সারসাইজ, সফট মিউজিক শোনা, মেডিটেশন, মুভি দেখা, বই পড়া, আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি খুব কাজ করে। পরিশ্রমের পাশাপাশি নিজের জন্য সময় রাখা খুব প্রয়োজন। সবার মধ্যে নিজেকে ব্লেন্ড করে না দিয়ে নিজেকে আলাদা ব্যক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.