নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপালী আলোর পথে

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

একরামুল হক শামীম

http://www.facebook.com/samimblog আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ব দেখতে এবং স্বপ্ন দেখাতে চাই আজীবন।

একরামুল হক শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুয়েজ খাল

২৭ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

কৌশলগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাল হচ্ছে সুয়েজ খাল। এ খালের জন্যই ইংরেজরা ইজিপ্ট দখল করে নিয়েছিল। সুয়েজ খাল বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ কৃত্রিম খাল। সিনাই পেনিনসুলার পশ্চিমে অবস্থিত সুয়েজ খাল লম্বায় ১৬৩ কিলোমিটার এবং প্রশস্তে ৬০ থেকে ৩০০ মিটার। এটি ভূমধ্যসাগরের পোর্ট সৈয়দ এবং রেড সির সুয়েজের মধ্য দিয়ে প্রবহমান।

সুয়েজ খালের ইতিহাস

অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথে সংযোগ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ইজিপ্ট অভিযানে আসেন নেপলিয়ন বোনাপার্ট। তিনি প্রথম ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরের সংযোগ করার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বুঝতে পারেন। ইজিপ্ট অভিযানে নেপলিয়নের সহযাত্রী ইঞ্জিনিয়ার লেপিরে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। সে সময় নেপলিয়ন একটি প্রজেক্ট চালু করেন। কিন্তু প্রথম জরিপের পর তার এ প্রজেক্ট বাদ দেয়া হয়। জরিপে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের চেয়ে লোহিত সাগর ১০ মিটার উচু। ফলে এদের মধ্যে সংযোগকারী খাল করতে অনেক খরচ হবে। পাশাপাশি এটি বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে সে সময় ফরাশি বুর্জোয়া গ্রুপ এ প্রকল্পের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। ১৮৫৪ সালে ইজিপ্টে সাইদ পাশা ক্ষমতাসীন হলে সংযোগ খালের ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সুয়েজ খাল প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ফর্দেন্যা দ্য লেমে। সুয়েজ খালের নকশা বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলীরা মিলে তৈরি করেন। এ কাজে ইজিপ্ট সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন দুজন ফরাশি প্রকৌশলী।

সুয়েজ খাল খনন করতে ১৮৫৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল কম্পানি গঠন করা হয়। সে সময় এ কম্পানির মোট মূলধন ছিল ২০ কোটি ফ্রা। বেশ কিছু শর্ত নিয়ে কাজ শুরু করে এ কম্পানি। খাল খননের প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির পাচ ভাগের চার ভাগই ইজিপ্ট সরকারকে সরবরাহ করতে হয়। খালের উভয় তীরে দুই কিলোমিটার জমি কম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে হয়। এছাড়া জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুয়েজ খালকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং চুক্তির মেয়াদ ৯৯ বছর নির্ধারণ করা হয়।

১৮৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল ভূমধ্যসাগর এবং মানজাল হ্রদের মধ্যবর্তী এলাকায় খনন কাজ শুরু করা হয়। জানা যায়, ৩০ হাজারের বেশি লোক দিয়ে খাল খননের কাজ করানো হয়। সাইদ পাশা মারা যাওয়ার পর ইজিপ্টের দায়িত্ব পালন করেন ইসমাইল। তিনি কম্পানির কঠিন শর্ত পছন্দ করতেন না। ২০ হাজার শ্রমিকের পরিবর্তে তিনি মাত্র ছয় হাজার শ্রমিক সরবরাহের কথা বলেন। এটি নিয়ে ইসমাইল এবং কম্পানির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। এ কারণে সুয়েজ খাল খননের কাজে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ইসমাইল সম্রাট তৃতীয় নেপলিয়নকে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেন। অবশেষে ইসমাইলের ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হয়। বিবাদ মীমাংসার পর খাল খননের কাজ দ্রুত চলতে থাকে। ১৮৬৮ সালের মধ্যে খাল খননের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর সুয়েজ খালকে ট্রাফিকের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে ১৮৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

সুয়েজ খাল খনন ও তৎকালীন ইজিপ্টের সমস্যা

সুয়েজ খাল খননের শুরু থেকেই বৃটিশ সরকার নানাভাবে এ খনন কাজের বিরোধিতা করেছে। এর প্রধান কারণ ফরাশিদের উদ্যোগে প্রস্তাবিত খাল সুয়েজ। তবে বৃটিশরা এক পর্যায়ে গিয়ে সুয়েজ খালের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। সেটা সুয়েজ খাল খননের শেষের দিকে। বৃটিশরা নানা দিক বিবেচনা করে সুয়েজ খালের শেয়ার নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। ১৮৭৫ সালে এ সুযোগটি আসে। আর্থিক সমস্যার কারণে শাসক ইসমাঈল নিজের শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ শেয়ার কিনে নেন শিল্পপতি রথচাইল্ড। এ শেয়ার কেনার মাধ্যমে বৃটিশরা সুয়েজ খালের ওপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। শেয়ার বিক্রির কারণে ফরাশিরা খুব ক্ষুব্ধ হয়। সুয়েজ খালকে ঘিরে ইজিপ্টে নানা রকমের দ্বন্দ্বের শুরু হয় এভাবে।

খাল খনন করতে ইজিপ্টকে ১৮,০০০,০০০ পাউন্ড ব্যয় করতে হয়। শেয়ার কেনা ছাড়া কম্পানির ক্ষতিপূরণ এবং উদ্বোধন উপলক্ষে প্রায় ৪,০০০,০০০ পাউন্ড ব্যয় করা হয়। এগুলো ইজিপ্টকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করে। ইংরেজদের ইজিপ্ট দখলের অন্যতম কারণ এ সুয়েজ খাল।

সুয়েজ সঙ্কট

১৯৫৬ সালে ইজিপ্টের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন। এটি করা হয় বৃটেন এবং আমেরিকার আসওয়ান বাধ নির্মাণে সাহায্য প্রত্যাহার করার পরের প্রেক্ষাপটে। জাতীয়করণের উদ্দেশ্য ছিল খালের রেভেনিউ থেকে নির্মাণ কাজের অর্থ সরবরাহ করা। কিন্তু এটিই ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সঙ্কট তৈরি করে। তখন বৃটেন, ফ্রান্স এবং ইসরেলের যৌথ সেনাবাহিনী ইজিপ্ট দখল করে নেয়। ১৯৫৬ সালের ৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্র শান্তির পক্ষে মত দেয়। অপরদিকে আমেরিকা অর্থনৈতিক দিক থেকে বৃটেনের ওপর চাপ দেয়। অবশেষে এ যৌথ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। এ সুয়েজ সঙ্কটের কারণেই ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুয়েজ খাল বন্ধ রাখা হয়।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরেল যুদ্ধের পরও সুয়েজ খাল বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ৫ জুন পর্যন্ত এ খালে চলাচল বন্ধ থাকে।

সুয়েজ খালের গুরুত্ব

১৯৫৫ সালের দিকেই ইওরোপের মোট তেলের দুই-তৃতীয়াংশই সুয়েজ খাল দিয়ে পরিবহন করা হতো। বর্তমানে বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের শতকরা ৭.৫ ভাগই সুয়েজ খালের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইজিপ্ট সুয়েজ কানাল অথরিটি (এসসিএ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৩ সালেই ১৭ হাজার ২২৪টি জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে পার হয়েছে। অর্থাত পৃথিবীর শিপিং ট্রাফিকের শতকরা ৮ ভাগই হয়েছে খালটি দিয়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫-এর জুলাই থেকে ২০০৬ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩.২৪৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাওয়া গেছে সুয়েজ খাল থেকে। এসব পরিসংখ্যানই সুয়েজ খালের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮

হাসান তারিক বলেছেন: সংশ্লিষ্ট ছবি দিতে পারলে ভালো হতো

২| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪

একরামুল হক শামীম বলেছেন: কিছুক্ষণের মধ্যে ছবি আপলোড করছি।

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ছবি আপলোড করলাম।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৮:৩৪

হাসান তারিক বলেছেন: দেখলাম , ধন্যবাদ

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৮:৪৩

পোলাপান বলেছেন: জানার জিনিস!ধন্যবাদ।

৬| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৯:৩৫

ভাইটামিন বদি বলেছেন: গুগল আর্থ এ খালটি দেখে নিতে ভুলবেন না....
পুরোটা দেখলে অবাক হতে হয়...
ধন্যবাদ তথ্যমূলক পোস্ট এর জন্য...

৭| ২৭ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ৯:৩৮

রাশেদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.