![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমিই
এমন কোন মানুষ আমি দেখিনি যার হলুদ রঙটা বেশ করে পছন্দ। এমনও হতে পারে হলুদ পছন্দকারী মানুষের সাথে দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয় নি। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের রঙ সম্ভবত নীল। কারো গাঢ় নীল পছন্দ, আবার কারো কাছে আকাশী নীল যুতসই মনে হয়।
আবার সাদাপ্রেমী মানুষের সংখ্যাটাও কিন্তু নেহায়েত কম না। মেয়েদের মধ্যে কারো কারো কাছে লাল বা গোলাপিটাও পছন্দের। কিন্তু হলুদ রঙ ভালো লাগে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কিছুটা দুষ্কর।
আসলে মানুষ যা হাতের কাছে পায়, তা তার কাছে অতটা প্রিয় হয়ে ওঠে না। নদীর ওপারের মানুষ সর্বদা এপারের মানুষগুলোকে হিংসা করে। এপারের বেলায়ও একই ঘটনা প্রযোজ্য। দূরের জিনিসের প্রতি মোহ মানুষের মজ্জাগত। তাই নীল রঙের প্রতি মানুষের ফ্যাসিনেশন একটু বেশিই। উপরে নীলাকাশ দেখে তাই অনেকের মধ্যে কবিসত্ত্বা জেগে ওঠে। কিন্তু আকাশের ঐ রঙটা কি আদৌ ধরা সম্ভব? এই নীল রঙের 'অধরা' ব্যাপারটাই বোধ হয় তাকে সবচেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
বেশির ভাগ মানুষই পছন্দের রঙ খুঁজে পায় শপিং করার সময়। আমার ছোটবেলায় মার্কেটে গেলেই সাদা রঙের জামাটাই মনে ধরতো। তাই ভাবতাম, সাদা বুঝি আমার মনের রঙ। আবার বোনগুলাকে দেখতাম লাল রঙের জামার প্রতি তাদের অতি মাত্রার আগ্রহ। অনেক ছেলেরা নীল পাঞ্জাবী পরতে পছন্দ করে। তাই ভাবে এ জগতে 'নীল'ই সব। হুমায়ুন সাহেবহিমুর গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি তুলে দিয়েছিলেন। হিমুর ভক্তের অভাব না হলেও কিন্তু হলুদ ভক্তের অভাব থেকেই গেলো।
দূরের জিনিসের প্রতি মোহ সেগুলোকে আমাদের পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে তুলে দেয়। আর কাছের জিনিসগুলো কিন্তু অবহেলিতই থেকে যায়। হলুদের প্রতি তাই হয়ত আমরা সচরাচর মোহগ্রস্ত হই না।
তবে হলুদ কিন্তু আমাদের একেবারে আপন রঙ। ব্যাপারটা আমি ছোটবেলায় বুঝতাম না। ভাবতাম সাদাই সব। সাদার মাঝে সব রঙের সমাহার। তার মানে সাদাই সর্বেসর্বা।
হলুদ তাহলে 'আপন' বললাম কেন? শুধু আমার কাছে আপন না, সৃষ্টিকর্তার কাছেও আপন। সৃষ্টিকর্তা তার 'সূর্য' থেকে যে সাতরঙা আলো পাঠান আমাদের কাছে তার মধ্যে হলুদ টাই আমাদের চোখে ধরে পড়ে সবচেয়ে ভালভাবে। মৌলিক রঙ হিসেবে আমরা জানি কেবল তিনটা রঙকে - লাল, সবুজ ও নীল। লালের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি আর নীলের সবচেয়ে কম। আর হলুদের মাঝামাঝি। তাই হলুদটা দেখতেই আমরা সবচেয়ে স্বাছন্দ্যবোধ করি। আগেই বলেছি, যা সহজে পাওয়া যায় তা আরাধ্য নয়। হলুদের কপালেও তাই যথার্থ আরাধনা জোটে নি।
হলুদ রঙের পাখি দেখে যে পুলকিত হয়ে ওঠে না তাকে 'ব্যাপক আনরোমান্টিক' স্বীকৃতি দেয়াই যায়। হলুদ রঙের মুনিয়া পাখিগুলো কত্ত আদুরে! হলুদ রঙা 'সোনাবৌ' পাখির নাম শুনেছেন? আর সাদা চোখ পাখি? হলদেটে পাখি নিয়ে তো আর এমনি এমনি গান হয় নি - "হলুদিয়া পাখি, সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে"
এইযে নারীসমাজ, হ্যা তোমাদেরই বলছি, তোমরা হলুদ এত অপছন্দ কর আর তোমাদের সবচেয়ে পছন্দের তো ঐসব গহনাগাটি, তাই না! সোনার রঙ বিশ্লেষণে কোন রঙ পাওয়া যায়, জানো? হলুদ! হলুদ! হলুদ!
আচ্ছা কেউ কি কখনো ভেবে দেখছেন, আমাদের হজমকৃত পাচিত খাদ্যের রঙ কেন হলুদ টাইপেরই হয়? কারো হয় হালকা হলুদ, কারো আবার কালচিটে হলুদ। কেন এই বর্জ্যের রঙ পার্পেল বা পিংক কালারের হইল না? সৃষ্টিকর্তা খুব করেই চেয়েছেন এই 'হলুদ' যেন আমাদের ভেতরে খুউব করেই বাস করে।
হলুদের সবচেয়ে বেশি কদর দেখা যায় চায়নায়। কিং সাম্রাজ্য আর মিং সাম্রাজ্য চৈনিক সভ্যতায় হলুদের প্রতীক হয়েই আছে। 'হলুদ সম্রাট' বলে হুয়াংদির গুণকীর্তন এখনো ওদের সংস্কৃতির অংশ।
ক্রিসানথেমামের কথা জানেন? জাপানিরা এই হলুদ রঙের ফুলের শপথ নিয়েই যুদ্ধে নেমেছিল। আবার মেক্সিকোর অ্যাজটেকরা হলুদকে মনে করে খাদ্যের আরেক রূপ। শস্যদানার রঙের সাথে হলুদের মিলটাই তাদের এই ধারণার জন্ম দিয়েছে।
মনোবিজ্ঞানীরাও মনে করেন পৃথিবীর সব থেকে সুখী রঙ হলো হলুদ। হলুদ রঙের নান্দনিক পাথরের নাম বলে শেষ করা যাবে না। এম্বার, বেরিল, টোপাজ, জ্যাস্পার আরো কত কি!
একটা মজার পরিসংখ্যান কি জানেন? প্রতি বছর আমেরিকাতে যে পরিমাণ পেন্সিল বিক্রি হয় তার ৭৫ শতাংশই হলুদ রঙের। মনে করে দেখুন তো, ট্যাক্সি ক্যাব আর স্কুল বাসগুলোর রঙ কী?
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড থেকে শুরু করে ম্যাকডোনাল্ড সব ব্রান্ডের ছবিতে হলুদ দেখা যায়। হিন্দু ধর্মানুসারীগণ যে চক্রে বিশ্বাস করেন তাও কিন্তু ঐ হলুদই।
হলুদ যে গায়ে কিছু কালিমা মাখে নি, তা কিন্তু না। অনলাইন পোর্টালগুলোতে 'হলুদ সাংবাদিকতা' দিয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশনের হিড়িক দেখা যায়। বাইবেল মতে হলুদ হলো লালসার প্রতীক। প্রাচীন গ্রীসে হলুদ ছিল বিষাদের চিহ্ন আর ফ্রান্সে ছিল ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ।
হলুদের প্রতি ভাললাগা থেকেই হলুদের কেচ্ছা-কাহিনী নিয়ে এত ঘাটাঘাটি। মানুষের ভাল লাগা বা মন্দ লাগা আসলে কোনো নিয়ম মেনে চলে না, কোনো যুক্তি দিয়েও একে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তবু যে জিনিসটা পছন্দের তার নাড়িনক্ষত্র জানতে কার না ভাল লাগে।
যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলি, চোখে পড়ে যায় হলুদ জামা গায়ে কোনো দুরন্ত বালিকা। অথবা রাস্তার ধারে কিলোমিটার পোস্টে কিম্বা পোলিও টিকার ব্যানারে হলুদ রঙ আমায় মুগ্ধ করে। বিয়ের কনের গায়ে হলুদ রঙ সোনার মত জলজল করে। বাড়ির পাশে কাঁঠালীচাপা ফুলে সাদার বুকে হলুদ আমায় চমকে দেয়। এভাবেই কীভাবে যেন হলুদাসক্ত হয়ে পড়ি।
আমার শুধুই মনে হয়, সবখানেই সবকিছুই মেখে আছে হলুদের ছাপ!
২| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০৯
তানভীর আলম ৪৯ বলেছেন: আমায় মনে রাখার দরকার নাই। হলুদকে মনে রাখলেই চলবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪০
আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: হলুদ জনপ্রিয় করণে তোর এই অবদান জাতী মনেরাখবে