![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তানভীর আহমেদ, ৬০ সেকেন্ড নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও পেইজেস নামের একটি মাসিক লাইফ স্টাইল পত্রিকা চালাই। আমি বিশ্বাস করি মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু, আজ আপনি একজনের বিপদে পাশে দাড়ান, একদিন আপনার বিপদেও কেউ একজন আপনার পাশে দাড়াবে। আমি আমার দেশ এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন। আমার কাছে দেশপ্রেম মানে, যার যার অবস্থান থেকে সৎ ভাবে কাজ করে যাওয়া, তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে...৭১ আমাদের চেতনার মূল উত্স, তাই ৭১-এর সঠিক ইতিহাস জানা জরুরি। \n
ধরুন, আপনি দূর থেকে দেখছেন, একটি মেয়ের চোখের সামনে তার স্বামীকে হত্যা করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সেই অবস্থায় মেয়েটির মানুষিক অবস্থা কি হবে একবার চিন্তা করে দেখুন ! কোনো কাল্পনিক রূপ কথার গল্প আমি আপনাকে শুনাচ্ছি না । বাংলাদেশের শেরপুর জেলার একটি গ্রাম সোহাগপুর। ১৯৭১ সালে সেই গ্রামেই ঘটেছিল এরকম এক নির্মম হত্যা কান্ড। সেই গ্রামের প্রতিটি ঘর থেকে বিবাহিত যুবক পুরুষদের ধরে এনে এক সাথে ১২০ জনকে হত্যা করা হয়েছিলো, তারপর তাদের স্ত্রীদের পালা করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছিল। আর এই সমস্ত ঘটনার মূল নায়ক যিনি তিনি রাজাকার কামারুজ্জামান।
এই বিধবা মায়েরা তাদের বুকের এই অমানুষিক যন্ত্রণা আর ক্ষোভ নিয়ে আজ ৪৩ বছর ধরে বেচে আছেন। একটিবার চিন্তা করুন তাদের ছোটো ছোটো সন্তানগুলির কথা, যারা দুয়ারে পরে থাকা মৃত বাবার লাশে কাফনের কাপড় না দিয়ে সেই কাপড়ে উলঙ্গ মায়ের শরীল ঢাকার চেষ্টা করছে। জানি, সেই ভয়াবহ দৃশ্যকে আপনি আপনার কল্পনার চোখে আসতে দিতে চাইবেননা। কিন্তু বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল।বিধবা পল্লীর সেই সন্তানরা পেটের খুদা আর দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে আজ ৪৩ বছর ধরে তাদের মায়েদের কষ্টের বোঝা বহন করে চলছে। কি নিদারুন কষ্টের সময় যে তারা পার করেছে, একমাত্র ভুক্তভুগী ছাড়া সেই কষ্টের অনুভুতি বোঝা অসম্ভব !
এরপর বাংলাদেশে এমন একটা সময়ও গিয়েছে যখন, কামারুজ্জামানের ছেলে ওয়ামি দম্ভো ভরে মুক্তিযুদ্ধাদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালি দিতো। আরেক ছেলে ওয়ালী পোস্ট দিত, " হেডাম থাকতে ট্রাইবুনাল করে আমার বাবার বিচার কর"! মনে আছে ২০০৮ সালের মার্চ মাসে যেদিন এই কথাগুলি শুনেছিলাম, সেদিন একা একা কেদেছি, রাতে ভাত খেতে পারিনি কারণ গলা দিয়ে ভাত নামেনি। একজন মানুষ আর তাদের সন্তানরা কত বড় অমানুষ হলে এই ধরনের কথা বলতে পারে !
প্রজন্ম জানা আছে কি, ৭১ এর সেই দিনগুলির কথা, ক্রেক প্লাটুন গ্রুপের মেম্বার আজাদ ছিল এ দেশের অন্যতম ধনী পরিবারের সন্তান। গান শুনার জন্য এলভিস প্রেসলির রেকর্ড কিনতো তখনকার দিনের ১০০০ টাকা খরচ করে। সেই আজাদ যখন পাকিস্থানি আর্মিদের হাতে ধরা পরে, তাকে বন্দী করে রাখা হয় রমনা থানায়। আজাদের মা বহু কষ্ট করে আজাদের সাথে দেখা করতে যায়। আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চায় ! আজাদের মা বাসায় ফিরে সমস্ত দিন ধরে রান্না করে এক বিহারী দালাল কে নিয়ে খাবার দিতে যায়। কিন্তু হায় ! আজাদকে তারা আগের রাতেই মেরে ফেলেছে। দেশ স্বাধীন হবার পর শহীদ আজাদের মা আরো ১৪ বছর জীবিত ছিলেন। কিন্তু এই ১৪ বছরে এক বারের জন্য ও তিনি ভাত মুখে দেননি, বিছানায় ঘুমাননি। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে থাকতেন, যেমনটা আজাদ জেলখানায় থাকত !
বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী লিলি আন্টির সাথে আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম।বিশ্বাস করুন আমি তার চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। তার পা ছুয়ে সালাম করার সময় আমার চোখ দিয়ে পানি পরছিল, তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। পৃথিবীর সকল সম্পদের বিনিময়ে-ওকি এই মহিলার ক্ষতি পূরণ দেয়া সম্ভব?
মেট্রিকে স্ট্যান্ড আর ইন্টারমিডিয়েটে ষ্টার মার্ক পাওয়া রুমি, আমেরিকায় পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছিল। আমেরিকায় না গিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়ে ছিলেন। কিসের আশায় ? কার জন্য ?
প্রজন্ম আজ তোমার কাছে যুদ্ধাপরাদীদের বিচার মানে ৪৩ বছর আগের ঘটনা নিয়ে অহেতুক টানাটানি ! তুমি কি কখনো পারবে সেই দুখিনি মায়ের কষ্টের তীব্রতাকে অনুভব করতে ? সেই স্বামী হারা স্ত্রীর আর্তনাদকে বেথ্যা হীন করে তুলতে ?
দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ ! আজ ধর্মের কল বাতাসে নড়েছে.... যেই মানুষ রুপি জল্লাদ, কসাই আর নর পশুরা এই হত্যাকান্ড আর অন্যায় গুলি করেছে, সেই মীর কাসেম, কামারুজ্জামান, নিজামী, মুজাহিদের বিচারের রায় এই বাংলার মাটিতে হয়েছে। মহান আল্লা পাকের কাছে লক্ষ্য-কোটি শুকরিয়া ! অন্তত জীবনের শেষ বেলাতে এসেও এই দুখিনি মা গুলো একবারে জন্য হলেও স্বস্থির নিশ্বাস ফেলুক......
©somewhere in net ltd.