![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকায় থাকি। জন্ম বাংলাদেশের শ্যামল গ্রামে। শাহবাগে আড্ডা দিই মাঝেমাঝে। কবিতা লিখে আনন্দ পাই। লেখার চেষ্টা করি।
বিল বাঘিয়ার ঐতিহ্য ফিরে আসুক
তপন বাগচী
পেশায় জেলে না হলেও মাছ ধরে আর মাছ বেচেই জীবন চলে তাঁদের। কিন্তু বিলে এখন মাছ কমে গেছে। বিলের শামুক ধরেও কেউ কেউ দু-পয়সা আয় করত। দূরের চিংড়ি ঘেরে বেচত সেই শামুক। শামুকও এখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই বিলের নাম বাঘিয়া। একসময়ে জলজ প্রাণবৈচিত্রে ভরা ছিল বিল। পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে এখন তা বিলুপ্তির পথে।
বিল বাঘিয়ার অবস্থান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নে। এই বিলে প্রায় দুই শ বছর আগে থেকেই চলে আসছে নৌকাবাইচ। দুর্গাপূজার পরে পূর্ণিমায় এই নৌকা বাইচে বৃহত্তর ফরিদপুর ও বৃহত্তর বরিশালের অসংখ্য বাচারী নৌকা অংশ নেয়। নৌকাবাইচকে ঘিরে নৌকায় বসে ভাসমান মেলা। বিলের পাশের ছোট্ট খালে এখনো নৌকাবাইচ হয়। বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেই মেলা এখন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
বিলের উত্তর কোণের গ্রাম রামনগরের অধিবাসী প্রকৌশলী গোপালকৃষ্ণ বাগচী ঢাকায় থাকেন। সুযোগ পেলেই বাড়ি আসেন। বিলের এই দুর্যোগ মোকাবেলার কর্মপন্থা নিয়ে তিনি ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষার শুরু থেকেই কিছু লোক শামুকের সন্ধানে সারা বিল চষে বেড়ায় ফলে শামুক এখন দুষ্প্র্রাপ্য হয়ে ওঠেছে। আবার বর্ষার শুরুতেই পোনা মাছ শিকার ও শীতে পাখি শিকার চলে নির্বিচারে। হয়ত দু’পয়সা রোজগার করছে তাঁরা। কিন্তু পরিবেশের তির বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না বা আমলেই নিচ্ছেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু একাজ করে আয়-উপার্জন হচ্ছে তাই নিষেধ করে একাজ থেকে তাঁদের বিরত রাখা কঠিন। বরং এদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করাই উত্তম।’
রামনগর গ্রামের বািসন্দা, সরকাির হাসপাতােলর ডা. হরষিত হালদার বলেন, ‘এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে লোকজন স্বাস্থ্যসেবা এবং শিাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লোকজনের মধ্যে সচেতনার অভাবে এখানে বাল্যবিবাহ এবং যৌতুক প্রথাও চালু রয়েছে। এঁদের সচেতন করার কর্মসূচি জোরদার করা দরকার।’
গ্রামের প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বিলে এক সময় শাপলা, শালুক, শোলা, ধইঞ্চা, কলমি, বাদাবন, ঘাস, আজালিঘাস, ধাপদল, কচুরিপানা, মালঞ্চ, হেলেঞ্চা, ডুটকুরা, শেওলা, বলজগাছ, বন্যাগাছ, বিষকাটালি, ঘেচু, নলখাগড়া, বলুঙ্গা-সহ নানা গুল্ম ও জলজ উদ্ভিদ ছিল। মাছের মধ্যে বড় কৈ, শিং, মাগুর, চিতল, শোল, গজার, ভেইলসা, খইলসা, পুটি ও সরপুটিসহ নানা জাতের মাছ ছিল। পাখি ছিল সারাবছর ধরেই। পাখির মধ্যে ছিল চিল, শালিখ, বাবুই, টুনটুনি, বক, কোড়া, কাইম, কাঁদাখোচা, মাছরাঙা, কাজলা, বুনোহাঁস, পানকৌড়ি, সূইচড়া, নলঘোঙরা, কাক্কু, ডাহুক ইত্যাদি।
কলাবাড়ী গ্রামের কবি ও সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘বিল বাঘিয়ার আয়তন প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। বছরের জ্যৈষ্ঠ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ নয় মাস এ বিলে পানি থাকে। বাঘিয়াকে ঘিরে প্রায় ২০ হাজার লোকের জীবন জীবিকা নির্বাহ হয়। রামনগর, কলাবাড়ী, কাফুলাবাড়ী, হাজড়াবাড়ী, কদমবাড়ী, লখণ্ডা, গোবিন্দপুর, বৈকুণ্ঠপুরসহ ছোট ছোট গ্রামের ভূমিহীন কৃষক আর দিনমজুরদের একমাত্র আয়ের উৎস এই বিল। কিন্তু এখন আর সেই আগের অবস্থা নেই।
বিলের পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে রাজৈর-কোটালীপাড়া পাকা সড়ক। বাকি তিন দিকে বিল, সরু খাল ও নিচু জমি। বিলে একসময় সাপ, গুইসাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, আরজিনা, কাঙলাস (গিরগিটি প্রজাতির), কেঁচো, জোঁক, বিছা, জারাইল, ঘুঘরা ও অন্যান্য পোকা-মাকড়, শামুক, ঝিনুক, ফড়িং, কচ্ছপসহ নানা ুদ্র প্রাণীর বসবাস ছিল যা প্রকৃতিগতভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রা হত। এখানে মাটির উর্বরতার কারণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ধান, শাক-সব্জি, মসল্লা ও মাছ চাষ হয়ে থাকে বলে এর স্বাদও অন্যরকম।
দিনদিন বিলটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। মাছের প্রাচুর্য নেই, কর্মহীন হয়ে পড়েছে লোকজন, হারিয়ে ফেলেছে তাদের পৈত্রিক পেশা ও উপার্জনের পথ। বছরের ৯ মাস পানি থাকে। তাই এক বার বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসলের আবাদ করা যায় না। সে জন্য বছরের ৬ মাসই অধিকাংশ লোকের কোন কাজ থাকে না।
বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন কাজ বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তা হলো, বর্ষাকালে কচুরিপানা দিয়ে ২৫-৩০ হাত লম্বা ও ৮-১০ হাত চওড়া আইল বা ধাপ (স্থানীয় ভাষায় বাইড়া) তৈরি করে তাতে মসল্লা ও সবজি চাষ করা। ভাসমান এ ধাপে উচ্ছে, ঢেড়স, শসা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, তরই, ডাটা, বরবটি, শিম, পুইশাক, চুপরিশাক, কচু, বাঙ্গি, হলুদ চাষ করা যায়। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও লোকজন স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে লাভবান হতে পারে। সবজির দাম ভালো থাকায় এর থেকে যা আয় হবে তা শামুক বিক্রি থেকে বেশিই হবে। বস্তুত এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ আগের থেকে প্রচলিত থাকলেও ব্যপকভাবে তা হচ্ছে না। প্রকৌশলী গোপালকৃষ্ণ বাগচী জানান, ‘খাচাঁয় মাছচাষ, ঘরে বসে জালবোনা, মহিলাদের জন্য সূঁচিশিল্প ও গবাদিপশু পালনসহ নানা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে এলাকাবাসী সচেতন হবে ও পরিবেশ ধ্বংসকারী কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।’
বি.দ্র. লেখাটি আজকের দৈনিক প্রথম আলো-য় ছাপা হয়েছে। এখানেও পড়তে পারেন: Click This Link
২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:১৬
নষ্ট কবি বলেছেন: ভাল লাগলো
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৪৩
তপন বাগচী বলেছেন: লেখাটি আজকের দৈনিক প্রথম আলো-য় ছাপা হয়েছে। এখানেও পড়তে পারেন: Click This Link