![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৪৭ থেকে ৭১-এর পাকিস্তানীদের কেন ঘৃনা করি
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাবার পর পরই পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদেরকে তাদের আসল চেহারা দেখাতে বেশি সময় নেই নাই। অতি অল্প সময়ে আমরা বুঝে গেছি নামেই আমরা পাকিস্তানের অংশ; আদতে ওরা কখনো আমাদেরকে তাদের অংশ মনে করে নাই। তাই ক্রমাগত শোষন করে গেছে ৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত। এই শোষনের গল্প আমাদের প্রতিটি শিক্ষিত ছেলে মেয়ে অবশ্যই পড়ে আসছে। সেই ক্লাস সিক্স থেকে মেট্রিক/ইন্টার পর্যন্ত এমন কেউ নাই যে এই শোষন বঞ্চনার ইতিহাস না জানে। তাও আবার পুরাতন কাসুন্দি ঘাটতে বসছি। কারনটা একটু পরে বলি। আগে একটু শোষনের গল্প শুনে নেই।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা মোট বাজেটের ২৯% এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হয় বাজেটের ৭১ % অর্থ।অথচ জনসংখ্যার ৫৬% বাস করতো পূর্ব পাকিস্তানে।
সব দপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। অনেক পদে নিয়োগ হতো কোন বিজ্ঞাপন ছাড়াই। তাতে শতভাগ পশ্চিম পাকিস্তানিদের চাকুরি পাওয়া নিশ্চিৎ হতো। সামরক বাহিনীতে লেঃ কর্নেল (অব) ওসমানী ছিলেন সর্বোচ্চ সামরিক অফিসার মুক্তিযুদ্ধের সময়। এর উপরে কেউ যেতে পারেনি। বেসামরিক প্রশাসনে বাংলাদেশ থেকে কোটা ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতো, মাত্র ৩ জন যুগ্ম সচিব, ১০ জন উপসচিব আর ৩৮ জন উপসচিব হন বাংলাদেশ থেকে।এর বিপরীতে পঃ পাকিস্তনা থেকে ৩৮ জন যুগ্ম সচিব, ১২৩ জন উপসচিব আর ৫১০ জন সহকারী সচিব এর পদ পেতো।
সেনাবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান, অর্থ মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে হয়েছে ২৪ জন করে; পূর্ব পাকিস্তান থেকে একজনও হয় নাই। ১ম শ্রেনীর সরকারি কর্মচারি পঃ পাকিস্তনা থেকে ২৭৬৯ জন; পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৮১১ জন।
নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে পঃ পাকিস্তানিরা এগিয়ে আসেনি বাঙ্গালিদের সাহায্য করতে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরন ১৯৭0 সালের ১২ নভেম্বরের ঘুর্নিঝড়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ২৫অ কিমি বেগে ধেয়ে আসা সাইক্লোনের ছবি দেখেও তারা প্রথমে ১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত দিয়ে তা প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে ১৪ নভেম্বর নাগাদ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় সরকারি হিসেবে পায় ২ লক্ষ; বেসরকারি হিসেবে ১০ লক্ষ। উদ্ধার তৎপরতায়ও তারা নানা গাফিলতি চালায়। পাশ্চাত্যের উদ্ধারকারী দল অচলে আসে সাহায্য করার জন্য; কিন্তু তখনো পাকিস্তান সরকার আসে নি।ফ্রান্সের হেলিকপ্টার মিললো কিন্তু পাকিস্তানি আর্মির কোন হেলিকপ্টার মেলেনি।
দুই অঞ্চলে ফসলের মূল্যস্তরে ছিল বিশাল ফারাক। প্রধান দুটি খাদ্য শস্য ধান এবং গমে পূর্ব -পশ্চিমেরব্যবধান ছিল লক্ষণীয়। পশ্চিম পাকিস্তানে যখন ১৮ টাকা মন দরে চাল বিক্রি হোতো তখন পূর্বপাকিস্তানে তার দাম প্রায় তিন গুন বেশি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। গমের মূল্য যখন পশ্চিম পাকিস্তানে১০ টাকা মন তখন পূর্ব পাকিস্তানে এর মূল্য ৩৫টাকা মন।
এখন আসি আমি কেন পাকিস্তানিদের ঘৃনা করি। ৪৭ সাল থেকে ৭১-এর আগ পর্যন্ত এই যে পূর্ব পাকিস্তান নামে দেশটার উপর এইভাবে শোষন করা হলো। লাভের ফলটা কে ভোগ করেছে? অবশ্যই পশ্চিম পাকিস্তানিরা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কোন বীর পুরুষ কেউ কি একজন তার প্রতিবাদ করেছে? কারো মনে কি একটু উদয় হয়েছে এই চিন্তা যে ওইপারে আমাদের মতোই কেউ বাস করে। তাদের উপর এইভাবে শোষন করা ঠিক না। ৫২-তে ভাষা আন্দোলনে আমাদের ভাইদের গুলি করে মারা হলো তাতে কি কোন প্রতিবাদ শোনা গেছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে? মোটেও না। উনারা ঘি ভাজা দিয়ে পরোটা খেয়ে গেছেন; উনাদের চিকনাই বেড়েছে। আমাদের কথা চিন্তা করতে উনাদের বয়েই গেছে। ২৪ টা বছর একটা দেশ তার স্বজাতিকে চরম শোষন করে গেল; কিন্তু কেউ একজন প্রতিবাদ করলো না পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। উনারা লাভের গুড় খাবেন কিন্তু দোষের ভাগীদার হবেন না এইটা কেমন কথা। এই কারনে পাকিস্তানি জাতিটা আমি ঘৃনা করি।
৭১-এর পরের পাকিস্তানিদের কেন ঘৃনা করি
১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমাদের দেশে চালিয়ে ইতিহাসের ঘৃন্যতম হত্যাকান্ড। গত শতকের নিকৃষ্টতম ৪টা হত্যাকান্ডের মধ্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের হত্যাকান্ড একটি। নিরীহ নিরস্ত্র লোকদের উপর যে তান্ডব তারা চালিয়েছে তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। মাত্র নয় মাসে ৩০ লক্ষ হত্যা; ৩ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রব হানি করে তারা তাদের চরিত্রের পশু দিকটা উম্মোচিত করেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার পুরা ৯টা মাস আমরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমরা কোন প্রতিবাদের শব্দ শুনি নাই। রবি শংকর আর জর্জ হ্যারিসনের কল্যানে যখন আমেরিকা বসে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ চলছে তখন পশ্চিম পাকিস্তান ছিল আশ্চর্যরকম বধির। বিদেশি সাংবাদিকরা তাদের অসীম সাহসিকতার প্রমান রেখে হত্যাকান্ডের কথা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে তখন পশিম পাকিস্তানকে মনে হচ্ছিল ভীন গ্রহের কোন দেশ; যাদের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের এই হত্যাকান্ডের কোন সম্পর্ক নাই। আসলে লোভের ভাগ কে হাতছাড় করতে চায়? পূর্ব পাকিস্তনা শোষন করে উনারা উনাদের পেট ভরে আসছেন; পুর্ব পাকিস্তানের কামাই খেয়ে আসছেন। কে চাবে এই আরাম হারাম করতে। সাড়ে নয় মাস পর যখন পাকিস্তান পরাজয় স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে নত স্বীকার করে এই দেশটাকে চুরমার করে বিদায় নিলো; করে গেল ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যা করে দেশটাকে মেধাশূন্য করে।তারপরে ৪২ বছর পার হয়েছে। আমাদের দেশটা নানা রকম সংঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে এখন এই অবস্থায় আসছে। কিন্তু এখনো পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটা আমাদের কাছে সামান্য ক্ষমা পর্যন্ত চায় নাই। যেখানে তাদের আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিপূরন দেয়া উচিৎ। এই জন্য আমি পাকিস্তানি জাতিটা ঘৃনা করি। এখনো ওদের ইতিহাসে পড়ানো হয় বাংলাদেশ নামক দেশটার জন্ম হয়েছে ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্রে। নিজেদের করা ক্রমাগত শোষন আর অত্যাচারের কথা বেমালুম চেপে গিয়ে তারা বাংলাদশের জন্মকে ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে তাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে। থু তু দেই তাদের এই মিথ্যাচারিতাকে; তাদের এই ভন্ডামিকে। ইন্টার্নেটের কল্যানে যেখানে সারা দুনিয়ার মানুষ তাদের অত্যাচারের কাহিনী জানে সেখানে শহীদ আফ্রিদি; ওয়াশিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস অধ্যুষিত পাকিস্তান এইটা না জানার ভান করে আছে গত ৪২টা বছর। পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নাই; কিন্তু তাদেরকে আমি ঘৃনা করি তারা পাকিস্তানি বলে। এই ইতিহাস জানার পরও আমাদের দেশের যেই সব কুলাঙ্গার; হারামি পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায় তাদেরকে করুনা আর ঘৃনা। নিজের মায়ের মরদেহের উপর দাঁড়িয়ে তোরা পাকিস্তান সাপোর্ট করিস। তোদের এই শহীদ আফ্রিদি; ওয়াশিম আকরাম; ওয়াকার ইউনুসের পূর্ব পুরুষেরা আমাদের শোষন করা সম্পদ ভোগ করে গেছে মুখে কুলুপ এটে; আর এখন তাদের উত্তারিধীকারীরা মুখে কুলুপ এটে আছে আমাদের কাছে ক্ষমা চাবার ব্যাপারে। ধিক তোদের! ধিক তাদের।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টার্নেট।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়। অথচ ২৪ বছর ধরে শোষণ, বঞ্ছনা আর ১৯৭১ সালে নৃশংস গনহত্যা, বিভৎস ধর্ষণ, লুন্ঠন, বুদ্ধিজীবিসহ ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে জাতিকে একপ্রকার পঙ্গু বানিয়ে পাকিস্তানীরা বীরের বেশে নিজেদের দেশে ফিরে গেল। এত জুলুম করার পরেও ক্ষমা করার এত অন্যায় উদারতা সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই।
১৯৭১ সালে পৈশাচিক গনহ্ত্যা পরিচালনার পরও পাকিস্তানীদের অতি যত্মের সাথে তাদের নিজ দেশে পৌছে দিয়ে তাদের অন্যায়কে এক প্রকার সমর্থন দেওয়াই হয়েছে। সৈন্যদের কোন শাস্তি না হওয়ায় পাকিস্তানি নাগরিকদের সামনে অন্যায়ের বিষয়টি সেভাবে ফুটে উঠেনি। বলা যায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে একটি অন্যায়কে প্রোশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে। কথায় আছে অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃনা যেন তারে তৃনসম দহে। পাকিস্তানিদের এত অন্যায়ের পর সসম্মানে ছেড়ে দিয়ে যে অন্যায় বাংলাদেশ বা ভারত করেছে তার জন্য যারা দেশের জন্য প্রান দিয়েছে, মৃত্যুবরন করেছে, সম্মানহানির শিকার হয়েছে তাদের ঘৃনাও আমরা বাংলাদেশীরা সারাজীবন পেয়ে যাব।
পাকিস্তানীরা তাদের অভিশপ্ত কাজের জন্য চিরকাল আমাদের নিকট থেকে ঘৃনা পেয়ে যাবে। তবে পাকিস্তানীদের আপোষে ছেড়ে দিয়ে আমরাও ঘৃনা পাওয়ার উর্ধে নেই।