![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনে পড়ে, ‘ক্ষ’র গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীতটি আমি কখনো শেয়ার করিনি। কারণ আমি সঙ্গীতের দাড়ি-কমা চিনিনা। তাই নিশ্চিত ছিলাম না এটি original সুরে গাওয়া নাকি experiment. তবে এতটা দরদী সুরে জাতীয় সঙ্গীত আমি কখনো শুনিনি।৮তারিখ যখন আমার লক্ষ-ভাইয়ের সাথে প্রচলিত সুরে জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলাম, পুরো শরীর কাপছিল আর চোখ দিয়ে পানি চলে আসছিল। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে এমন অনুভুতি এর আগে কখনো হয়েছিল বলে মনে পড়েনা। মনে হচ্ছিলো মায়ের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ ঢুকে পড়েছে। মা বিষের যন্ত্রনায় কাদছে। ক্ষমতালোভীদের ব্যবহার করে প্রবেশ করানো হয়েছে এই বিষ। আর আমি এত দূর্ভাগা মায়ের এই যন্ত্রণা এতদিন দেখেও নির্বিকার ছিলাম। জানিনা সেই বিষ বের করতে আজ মায়ের কত রক্ত ঝরাতে হবে।
মহাসমবেশের এক পর্যায়ে বিশাল আকৃতির একটি পতাকা আমাদের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। লাল-সবুজ-হলুদের ওই পতাকা যখন আমাদের দিকে আসছিল, মনে হছিল এ কোন বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। পতাকাটি যখন মাথা স্পর্শ করে চলে গেলো, মনে হলো মা আশির্বাদ করে গেলেন। বললেন, "যা বাবা, দোয়া করে দিলাম। তোরা ৭১ কে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। সত্যিকারের মুক্তি তদের হাতেই আসবে।"
মহাসমাবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শপথ পাঠ। আমার অনুভূতির কথা নাইবা বললাম। উপস্থিত সকলের হাত তোলার ক্ষিপ্রতা, ভঙ্গি, শপথ পাঠে স্পষ্টতা, বিশুদ্ধতা বলে দিচ্ছিলো এ শুধু পাঠের জন্য শপথ নয়, এ যুদ্ধের শপথ।
ঐদিন আকাশ দেখে মনে হছিলো, আকাশটা হাসছে। রোদ ছিলনা, ছিলনা মেঘের আনাগোনা। পুরো আকাশ ছিল পরিষ্কার। পরে আবিষ্কার করলাম উজ্জল আকাশের রহস্য . এত আকাশ ছিলনা, ছিল লক্ষ শহীদের হাস্য-উজ্জল মুখ।
মহাসমাবেশের দিন শাহবাগ ও তার আসে পাশের পুরো এলাকা ছিল মানুষে মানুষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। একটি মানষকে ২টি টাকাও দেয়া হয়নি এখানে আসার জন্যে। এর পরও এত মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি, কখনো না। যারা উপস্থিত ছিলো তার ৯০% এর বেশি ছিলো যাদের জন্ম ৭১ এর পর। ৫২ যদি আমাদের সাধীনতার সংগ্রামের শুরু হয়ে থাকে, তবে ২০১৩ হলো রাজাকার মুক্ত প্রকৃত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামের শুরু। ইতিহাস এই দিনটিকে স্মরণ রাখতে বাধ্য .
এই সমাবেশে বেশ কিছু জিনিস আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। তার একটি হলো তথাকথিত বড় রাজনীতিবিদদের অনুপস্থিতি উত্সাহিত করা ও রাজনৈতিক ব্যানার অপসারণ। এত বড় সমাবেশে স্বেচ্চাসেবী ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। এর পর পুরো সমাবেশস্থল ছিল শুসৃন্খল। আর মেয়েদের উপস্থিতি কতটা নিরাপদ ছিল তা অনুমতি না নিয়ে আমার এক বোনের স্টাটাস থেকে কপি পেস্ট করলাম-
"ভিড় ভাট্টায় ধাক্কাধাক্কি হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু সত্যি কথা বলতে আজকে কোনও রকমের অস্বস্তি হয়নাই, একবারও মনে হয়নাই কোনও অসুস্থ হাত এগিয়ে আসছে কোনও দিক থেকে। বাংলাদেশ অভ্যস্ত হোক এরকম জনসমাবেশে, অচেনা অজানা ছেলেও যেন সমবয়সী মেয়েকে বন্ধু ভেবে পথ চলতে সাহায্য করে দিবে, এরকম দিন আসছে, সামনেই! " (বোন্, তোমার অনুমতি না নেয়ায় অপরাধ হলে ক্ষমা করে দিও)
শাহবাগের প্রতিবাদ যেন প্রতিবাদের উত্সব। মূল কেন্দ্র ছাড়াও পুরো এলাকা জুড়ে আছে ছোট ছোট বাহারি রকম প্রতিবাদের ভাষা। মোম বাতি, গণসাক্ষর, মশাল, মানচিত্র, কুশপুত্তলিকা, বন্ধ-খাচা, প্রজেকশন এ চলচিত্র আরো কত কি। অথচ সবার মুখে ছিল একই স্লোগান।
শাহবাগ প্রতিবাদ আজ মানুষকে এই বিশ্বাস দিয়েছে যে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত, রাজাকার মুক্ত, প্রকৃত দেশপ্রেমিক বাঙালির বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.