![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি বিশ্বাস করি আধুনিক মানুষ হচ্ছে তারাই যে মানুষ অন্য মানুষের প্রতি সম্মান করেন।
'ফিল্ম 'অতর' বলে একটি শব্দ আছে। এই শব্দটি কারো নামের আগে সংযুক্ত করে উপাদি দেয়াটা চলচ্চিত্রে ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে অনেক সম্নানের ব্যপার। খুব কম মানুষই এই উপাধি পেয়েছেন। যারা চলচ্চিত্র দেখে বা ভাষা বুঝে অথবা কোন ক্ষুদে চলচ্চিত্র সৈনিককে যদি বলা হয়— আন্দ্রে তারকভস্কি কে? তাহলে সে আলোর গতিতে তার সম্পর্কে এক গাদা কথা বলে দিতে পারে। রাশিয়ান চলচ্চিত্রকার আন্দ্রে তারকভস্কি ছিলেন একজন সত্যিকার 'ফিল্ম অতর'। যিনি চলচ্চিত্রের এক অদ্ভুত ভাষা আবিস্কার করেছিলেন। Stalker তার এক অনবদ্য সৃষ্টি।
Stalker কাহিনী সংক্ষেপঃ সিনেমার প্রথমে স্টকার তার পরিবারকে কিভাবে দুর্দশায় ফেলে আসে তা দেখতে পাই। তার একটি মেয়ে আছে যে বলতে গেলে পঙ্গু কারন তার সাথে ক্রাচ দেখা যায়। তার স্ত্রী তাকে বের হতে দিতে চায় না। তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই করুন। স্ত্রী তাকে যে খুবই অপছন্দ করে তা প্রথমে আমরা দেখতে পাই। 'জোন' নামে একটি যায়গা আছে যেই যায়গায় এই সিনেমার প্রটাগনিস্ট স্টকার বিশ্বাস করে যে সেখানে 'রুমে' কোন বিশেষ ইচ্ছে বিশ্বাস করে করলে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়। সে আরও ২ জন (লেখক ও শিক্ষক) কে বিষয়টি সম্পর্কে বুঝায় এবং তাদেরকে সেখানে নিয়ে যায়। জায়গাটিতে যাওয়া অনেক দুর্লভ ব্যপার। কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয়না কোন এক অদ্ভুত কারনে। স্টকার, লেখক ও শিক্ষক নেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেয়ে অবশেষে 'জোন' নামক যায়গাটিতে পৌঁছায়। তারা ইচ্ছে পূরণ করার জন্য 'রুম' খুজে। 'রুমে' ঢোকার আগে লেখক তার ইচ্ছে প্রকাশ করে বলে— "আমি নোবেল পুরস্কার পেতে চাই"। সবাই যার যার ইচ্ছে নিয়ে রুম খুজতে থাকে। কিন্তু, রুমে ঢোকার আগেই তারা সন্দেহ করা শুরু করে রুমের ইচ্ছে পূরণ বা অলৌকিক ক্ষমতার সম্পর্কে। জোনে যখন তারা ঢোকে তখন একটি কুকুর তাদের কে পিছু নেয়। আবার স্টকার স্বপ্নে দেখে সেই কুকুরটিকে। লেখক নিজে ৫টি কুকুর পালেন সেটা আমরা লেখকের মুখে শুনতে পেলাম।স্টকার তাদেরকে মনজোরে রুম সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলে। কিন্তু, তারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তারা স্টকারের এই অলিক চিন্তা ভাবনার সাথে শেষ পর্যন্ত একমত হতে পারে না। তার সাথে দুর্ব্যবহার করে। শেষে হতাশ হয় স্টকার। সে এই আধুনিক বিশ্বাসহীনতার মানুষদের বিশ্বাস করাতে পারেনি যে— সেখানে স্পিরিচুয়াল একটা ক্ষমতা আছে কিন্তু তার উপর আগে বিশ্বাস আনতে হবে। সিনেমার শেষ অংশে তার স্ত্রীর রুপ সম্পুর্ন পরিবর্তন হতে দেখা যায়। সে স্বীকার করে যে সে যেনে শুনেই স্টকার কে বিয়ে করেছিল এবং তার উপর স্ত্রীর প্রবল বিশ্বাস। শেষ দৃশ্যে তার পঙ্গু মেয়েকে টেবিলের উপর রাখা বস্তুগুলোকে স্পর্শ ছাড়াই নারাতে দেখা যায়।(শেষ)
এই হচ্ছে এই সিনেমার কাহিনী। যার থেকে ছেকে মূল ব্যপারটা বের করতে হবে কারন হচ্ছে সিনেমাটি বানিয়েছেন তারকভস্কি। আসলে, সিনেমার মূল সোল বা বক্তব্য হচ্ছে বিশ্বাস স্থাপন। ঐ সময়ে রাশিয়াতে প্রচুর পরিমাণে নাস্তিকতা গ্রাস করেছিল। মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে তত তারা যুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। নাস্তিকতার সংখ্যা বেরেই যাচ্ছে। বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে। এই মহাবিশ্ব কোন অলৌকিক স্পর্শ ছাড়া কিভাবে সৃষ্টি হল সেটা মানুষকে তাড়িত করার উচিৎ। যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুরই সমাধান করা যায়। কিন্তু, সব কিছুর সমাধান বা ব্যখা এখনও মানুষ যুক্তি দিয়ে করতে সক্ষম হয়নি। এই সিনেমাতে ওই কুকুরটিকে বার বার জোনে দেখানো হচ্ছিল। স্টকার কুকুরটিকে স্বপ্নে দেখল। আমরা জানি, কুকুর হচ্ছে বিশ্বস্ত বা বিশাসের প্রতিক। রুপক অর্থে কুকুরটিকে জোনের আশে পাশে দেখা যায় কারন— বিশ্বাস স্থাপনের চেস্টা যা পরিচালক তারকভস্কি স্টকারের চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন। শেষে স্টকার যখন হতাশ ঠিক তার পরের সিকুয়েন্সেই তার স্ত্রীর ভিন্ন রুপ আমরা দেখতে পাই। কারন তার স্ত্রী তাকে বিশ্বাস করে এবং জোন কেও বিশ্বাস করে। তাদের আর্থিক অবস্থা হয়ত দূর হয়নি কিন্তু জোনের স্পিরিচুয়াল ক্ষমতার প্রভাব তাদের পঙ্গু মেয়ের উপর পরতে দেখা যায় সিনেমার শেষ দৃশ্যে যেখানে কোন স্পর্শ ছাড়াই মেয়েটি সব কিছু নারাতে পারে। সিনেমাতে যে যায়গাগুলো দেখানো হচ্ছিল সেগুলো মনে হচ্ছিল বিধ্বস্ত। যার অর্থ, আধুনিক মানুষ এখন কি বিপর্যস্ত পর্যায় আছে। 'জোন' বা বিশ্বাস স্থাপনের যায়গাটি হচ্ছে এখন একটি পরিত্যক্ত জায়গা যেখানে মানুষ যেতে পারে না। আবার, লেখক ও শিক্ষক খুব কাছ থেকে ঘুরে আসে কিন্তু তারা কুসংস্কার কে কেন বিশ্বাস করবে এই যুগে। সিনেমার শেষের অংশে স্টকারের স্ত্রী তাদের কুকুরটিকে খাওয়াতে দেখা যায়। যার মানে রুপক অর্থে যে তারা তাদের বিশ্বাসকে বাচিয়ে রাখছে।
©somewhere in net ltd.