![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা মজার ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। ইমাম সাহেব শুক্রবারদিন যথেষ্ট সময় নিয়ে পুকুরঘাটে গোসল করছেন শরীরে সাবান ঘষে ঘষে । কিছুক্ষণ পর জব্দুল মিয়া সেখানে গিয়ে ইমামের আগেই গোসল শেষ করে উঠে পড়লেন। যাবার সময় ইমাম সাহেবকে বলে গেলেন, ‘হুজুর তাড়াতাড়ি করেন, আজকে নামাজের দিন!’
বাস্তবতা এখন এরকমই। পহেলা বৈশাখ এলেই আমাদের মধ্যে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায় । না হলে যেন বাঙালিই নয় । সারা বছর বিদেশী পোশাক, বিদেশী ভাষা, বিদেশী সংস্কৃতির চর্চা চলে- কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, অথচ এদিন ‘একদিনের বাঙালি’ হওয়ার জন্য ধুন্ধুমার কান্ড বাধিয়ে দেই। এ দেখি জুম্মাবারের নামাজি জব্দুল মিয়ার মতোই হলো । একসময় আমি এই প্রশ্নটির উত্তর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি যে আসলেই কি পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ? আমরা নাকি শেকড়ের টানে দিনটি উদযাপন করি, এই শেকড় কত গভীরে প্রথিত তা বের করার জন্য বহু কসরত করেছি । অবশেষে ফলাফল যা পেয়েছি তা হল- এই সংস্কৃতির কোনো শেকড়-বাকড় নেই, এটি হাল আমলের ফ্যাশন বৈ নয়। কোনো দেশের সংস্কৃতি বলতে সেই দেশের আপামর জনতার নিত্যদিনের কৃষ্টিকে বোঝায় । সেক্ষেত্রে পান্তা-ইলিশ খাওয়াও দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের পুরোনো ঐতিহ্য হওয়ার কথা । তারমানে কি আগে পুকুরে পুকুরে ইলিশ চাষ হতো নাকি তখন বাঙালি জাতি অনেক ধনী ছিল, কালক্রমে গরীব হয়ে গেছে ? তাছাড়া ইলিশের দাম কখনোই কম ছিল না, আর বর্তমানে তো ইলিশের দাম আকাশ ছুঁয়েছে । একসময় এদেশের লোক ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালি’ বলে পরিচিত ছিল শুনেছি, কিন্তু ‘ইলিশে-ভাতে বাঙ্গালি’ ছিল বলে শুনিনি কখোনো । অনেকে বলতে পারেন, ‘এই নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে বাপু, খেলাম না হয় একদিন পান্তা-ইলিশ !’ বলি, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত অধিকাংশ জনতাকে নিয়ে এভাবে ঠাট্টা করবেন না । আজ ভেবে দেখার সময় এসেছে, এই দিন আমরা ঘটা করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে অপমান করছি নাতো ? নুন আনতে পান্তা ফুরায় যাদের তাদের পান্তার সঙ্গে ই-লি-শ ! তাহলেও যদি কিছু সাযুজ্যতা থাকত তবু কথা ছিল, পান্তার সঙ্গে ইলিশ কোনোভাবেই সাযুজ্যপূর্ণ নয় । বুদ্ধিমান বাঙ্গালির এই দেশে এমন জগাখিচুড়ী সংস্কৃতি ছিল বিশ্বাসই হয় না । এ যেন সেই গ্রাম্য প্রবাদ ‘ডাল দিয়ে পোলাও’ এর মতোই। পান্তা এদেশের গরীব জনগোষ্ঠীর একটি সাধারণ খাবার । তার সাথে ইলিশের মতো এরিস্টোক্র্যাটিক মাছের মিশ্রণ আমার কাছে ‘গুরুচণ্ডালী দোষ’ বলেই মনে হয় । সম্প্রতি দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর দেখে চমকে উঠলাম। ইলিশ ছাড়াই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মহোদয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, পান্তা-ইলিশ বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি সাম্প্রতিক আমদানি। এছাড়াও পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার যে হিড়িক পড়ে তার কারণে অনেক জাটকা নিধন হয়। এতে দিনদিন দেশের ইলিশ সম্পদ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। তাঁর এই আশংকা অমূলক নয়। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে অসাধু শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ব্যপকভাবে জাটকা ধরে এবং ইলিশের দামও অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেয়। ফলে দিনে দিনে ইলিশ সাধারণ লোকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কড়া নজরদারির কারণে মৎসজীবীরা ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছে । জেলা প্রশাসক বিভিন্ন বাজার ও ফিসারি ঘাটের উপর কড়া নজর রাখছেন; জাটকা বিক্রি দেখা মাত্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে । তাঁর এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই। সত্যিকার অর্থে তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । অনুমান করতে পারি এই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকলেও আরো কত ধরণের বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়েছে। কাজটা খুব সহজ নয় কিন্তু ! ধারণা করি, তাঁর এই কাজের পেছনে তাড়না হিসেবে কাজ করছে গভীর দেশপ্রেম আর সাংস্কৃতিক মূলানুসন্ধান । আশা করি, তাঁর এই তৎপরতা ফলপ্রসু হবে এবং তা সারা দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে ।
©somewhere in net ltd.