![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২১ জানুয়ারি ২০১৪। আমার জীবনে নতুন এক মহানন্দের দিন। আমার বিশ্বাস ছিল, কাজটা হবে। কিন্তু কোথায়-সেটি নিশ্চিত ছিল না।
অামি হৃদয়ের খুব ভেতর থেকে চারজন মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। প্রথমজন আমার খালু, মিজানুর রহমান তোতা। যিনি যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি। কৃতজ্ঞতা রয়েছে যশোরের পুলিশ সুপার মি. জয়দেবকুমার ভদ্রর প্রতি। এরপর শিরিনভাবি; যিনি আমার চলারপথে প্রায় ১২ বছর ধরে নিরন্তর সহযোগিতা করে চলেছেন। সবশেষ কাজটি যিনি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করেছেন তিনি জাহিদ হাসান টুকুন, সহ-সভাপতি প্রেসক্লাব যশোর।
খুব আনন্দ পেয়েছিলাম, ছেলে প্রাইমারি পরীক্ষায় যখন জিপিএ-৫ পেয়ে আমার সামনে এসে দাড়ায়। তার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা আর ভালবাসার স্ফূরণ ঘটে। সেলুট জানাই, তার মাকে। যিনি নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন ছেলের এই সুন্দর রেজাল্টের জন্য।
রেজাল্টপ্রাপ্তির পরই এসে যায়, তাকে কোন স্কুলে ভর্তি করাবো। যশোরের তিনটে সেরা স্কুলে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় আমার নাবালক সন্তানটি। এখন যে তার বাবা-মার কোলের ভেতর ঘুমায়। ভয় দেখায়, যদি যশোরে চান্স না পাও, তবে পাঠিয়ে দেবো দূরে, খুলনায়। হোস্টেলে থাকবে, মাসে একবার যাবো আমরা তোমায় দেখতে।
আমাদের আড়ালে গিয়ে চোখ মোছে অবুঝ ছেলেটি; বাবাকে বলো-আমি হোস্টেলে থাকবো না: মায়ের কাছে আর্তি তার।
সরকারি জিলা স্কুলের অ্যাডমিশন টেস্টে তার ফলাফল-না। পুলিশ লাইন স্কুলে নেই তার নাম লিস্টে। সবশেষ কালেক্টরেট স্কুলে অংশ নেয় ছেলে আমার। সেখানে আটজন বাচ্চা চান্স পাবে; ভর্তিপরীক্ষায় এসেছে ৭৪টি শিশু। হা কপাল! ছেলের রোল নাম্বারটি তন্নতন্ন করে খুজলাম। নাহ্ কোথাও নেই।
৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারবে বাচ্চারা এই স্কুলে। এখানকার অধ্যক্ষ সুলতান আহমদ। অনেকদিনের পরিচয় তার সাথে। ছেলের রোল নাম্বার টুকে রাখেন তিনি। রেজাল্টের দিন দুইবার চেঞ্জ হয়। গিয়েছিলাম তার সাথে দেখা করতে। বললেন, বাবা বসো। কোন সুপারিশের ভর্তি করতে পারছি না। ভেবেছিলাম ডাবল শিফট করা হবে-তাও হলো না।
আমার বিরস বদনে ফিরি; বাসায় ফোন দিই, ছেলে ধরে। এই স্কুলেও তোমার ভর্তি করা গেল না বাবা-জানাই তাকে। ফোনের ওপ্রান্তে গলাভারি হয়ে আসা কণ্ঠ শুনি। বুকের ভেতরটা খা খা করতে থাকে। সেএক নিদারুণ কষ্ট! এত এত স্কুল, আর ছেলেটাকে এখনও কোথাও ভর্তি করাতে পারলাম না। বাবা হিসেবে এমন কষ্ট জীবনে কখনোই পায়নি। আমার আজ বাসায় যেতে চাইছে মন। আমি কীভাবে মুখোমুখি হবো সন্তানের, তার মার?
আনমনা হয়ে যাচ্ছি বারবার। কোন নিউজ আছে কি না জানতে চাইলো কে যেন? তার দিকে অপলক চেয়ে আছি; যেন নতুন কেউ এই শহরে এসেছে আজ!
আমি হেরে যেতে চাই না। আবার নিজের জন্য সবকিছু করবো-এমন চিন্তাও কোনকালে ছিল না। বাড়ি বলেছিলাম, ছেলে যদি নিজের যোগ্যতায় চান্স পায়, পড়বে; নইলে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে দিয়ে দেবো। জানি তা, পড়াশুনা সব নিজের কাছেই। তবে, ছেলেটার কচিমুখ এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারেনি। আমি অহরহ তাই হারার মধ্যে অবস্থান করছি।
খোলাসা করে বলতে গেলে, বলতে হয় সবকিছুই। সত্যটা হল, কোথাও চান্স হয়নি ছেলে কৌেশিকের। জিলা স্কুলের জন্য বলেছিলাম জাহিদ ভাইকে। তিনি আশ্বস্ত করেন সরোয়ার আর আমার ছেলের বিষয়টি তিনি দেখবেন। তিনি অনেকখানি এগিয়েও যান। কিন্তু সবখানেই ফেউ আছে। বিশেষ করে আমাদের জন্যে যখন কাজ!
জাহিদ ভাই, ব্যথিত-আমরাও মনোকষ্টে। তিনি যেকোন স্কুল বিশেষ করে কালেক্টরেট স্কুলে খর্তি করানোর কথা বললেন। আমার ইচ্ছে ছিল-পুলিশ লাইনে। যাহোক, ফরম ছাড়ার দিন তিনি সকালবেলায় স্কুলে হাজির। ফোন দিয়ে ডেকে আমাকে ফরম সংগ্রহের কথা বললেন।
শিরিন ভাবি অনেক আগ থেকেই পুলিশ লাইনে যোগাযোগ করছিলেন। কিন্তু বরফ গলছিল না হেড মাস্টারের।
সর্বশেষ তোতাখালুর দ্বারস্থ হই। চোখ কান বুজে পাড়ি কথাখান। বলি, কীভাবে করবেন-জানি না। পুলিশ লাইনের হেড মাস্টার আপনার রিলেটিভ, তাকে বলেন নাতিটাকে ভর্তি করাতে হবে।
তিনি সাথে সাথেই কথা বলেন তার সাথে। ওপাশ থেকে আশ্বাস যা আসে তাতে ভরসা পাই না আমি। বলি, এসপিকে বলেন। খালু কোনকিছু না ভেবেই যোগাযোগ করেন এসপির সাথে। যেভাবে বলা দরকার রিকোয়েস্ট করেন তাকে। এসপি মহোদয় সদিচ্ছা পোষণ করেন। জানান, মিটিঙের দিন যেন হেডমাস্টার তাকে বিষয়টি স্মরণে আনেন। ভরসা পাই; বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে।
এমন যখন কথাবার্তা চলছে, ঠিক তেমন একসময়ে ১০ম জাতীয় নির্বাচন। মণিরামপুর আসনে ৬০ কেন্দ্র স্থগিত, মালোপাড়ায় হল ব্যাপক সন্ত্রাসী তাণ্ডব। মিডিয়ায় নিউজ, এসপিকে যশোর থেকে বদলির আদেশ।
বাতাসছাড়া বেলুনের মত দপ করে ফুস হয়ে যাই। খালুকে বলি, শেষ হয়ে গেলাম। তিনি ভরসা দেন; আমি হাল ছাড়ি।
ভরসার কথা, এসপির বদলির আদেশ রহিত হয়েছে। খুব খুশি লাগছিল। কেউ শুনলে কী ভাববে? ভাবুক।
এমন একটা উচ্ছ্বাস নিয়ে মাতোয়ারা হতে চাইছিলাম, কিন্তু সন্ধ্যায় খবর এলো খালু হাসপাতালে। হঠাত করে তার বুকে ব্যথা; যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রেসক্লাব থেকে এক ছুট, ছুটে হাসপাতাল। খালু আমার হুইল চেয়ারে। শীতের মধ্যে পাতলা একটা গেঞ্জি গায়ে। ঘেমে নেয়ে একাকার!
রাতে ডাক্তার বললেন, মাইল্ড স্ট্রোক। মাথার খেতরে নার্ভের নালি সরু হয়ে গেছে; রক্ত চলাচল করতে পারছে না। তার এই অবস্থা এখনও।
২০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফোন করেন জাহিদ ভাই। বললেন, দুদিন পরে স্পেশাল ওয়েতে ভর্তি হবে ছেলে। কালেক্টরেট স্কুলে। আমি টোটালি কনফিউজড। বললাম, ভাই কোথায় আপনি? তিনি জানান, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢুকছেন। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলি, ভাই তোতাখালু এসপিকে আমার ছেলের ভর্তির ব্যাপারে বলেছিলেন। তিনি তাকে কথা দিয়েছেন পজিটিভলি। আপনি যদি তার রেফারেন্সে একটু স্মরণ করিয়ে দেন-আমার জন্য ভাল হয়।
১০ মিনিট পর জাহিদ ভাই কল করে বললেন, তোমার কপাল ভাল। হেডমাস্টারও ছিলেন। এসপি সাহেব তাকে বলে দিয়েছেন। কাল সকালে ছেলেকে পুলিশ লাইনে ভর্তি করে দিও।
কয়েক সেকেন্ডে পৃথিবীটাকে খুব সুন্দর লাগছিল। চারিদিকে অজস্ত্র রঙের ফুল তার সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে যেন। রামধনু কি উঠেছে এই শীতাকাশে?
আমি হাওয়ায় উড়তে থাকি। আধঘণ্টা আগেও বাড়ি যেতে চাইছিল না পা দুটো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দ্রুত চলে যাই। বাসায় খবরটা দিই।
নানা রকমভাবনার মধ্যে শিরিনভাবিও ফোন দিলেনস। বললেন, হেডমাস্টার তাকে খবরটা দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় খালুর কাছে যাই। তার অবস্থার ইতরবিশেষ হয়নি। কথা কম বলার নির্দেশ ডাক্তারের। চোখাচোখি হলো তার। জড়ানো গলায় বললেন, আই'ম অলরেডি ইনফরম্ ড। আমি কিন্তু সাত-পাচ ভাবছি। তিনি বললেন, এসপি সাহেব বিকেলে এসেছিলেন। তাকে খবরটি দিয়েছেন।
সাত-পাচ ভাবছিলাম মানে উল্টাপাল্টা একটা বিষয়। খালু ইনকিলাব পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি। আগেরদিন সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছে। আটক করা হয়েছে বার্তা সম্পাদকসহ তিন সাংবাদিককে। ভাবলাম, এই খবরটি তিনি জেনেছেন; অথচ আমরা বলিনি! তার এ অবস্থায় একজন সাংবাদিকনেতা অবশ্য সকালে ৩২ পাটি কেলিয়ে তা জানিয়ে এসেছেন তাকে তাকে। ওই কথায় ভাবছিলাম, এখন কী হবে? যাক তাও ভাল এসপি সাহেব এসেছিলেন।
পরে অবশ্য খালা সবিস্তার জানালেন কে হাসপাতালে গিয়ে ইনকিলাব বন্ধের কথা তাকে জানিয়ে এসেছেন।
এখন একটাই চাওয়া, খালু আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আসুন আমাদের মাঝে।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৩
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: প্রতিটি বাচ্ছা যে স্কুলে পড়তে চাইবে, সেই স্কুলে সেই সাবজেক্টে পড়বে: এটা করা কস্টকর কিছুই নয়; যারা এসব পারবে, তাদেরকে সামনে নিনি।