নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরতি মরণ সানাইওয়ালার!

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

মরতি মরণ সানাইওয়ালার-কথাখান জীবনে বহুবার শুনেছি। কিন্তু এর পেছনের কারণ জানা ছিল না।

কিছুকাল আগে ওই কথাটির শানে নযুল জানতে পারি এক বড়ভাইয়ের কল্যাণে। রসিক বড়ভাই বিবৃত করলেন কথাখানের এক নির্মম ইতিহাস। গল্পটা হচ্ছে এমন, রাজদরবারে মহারাজের প্রবেশকালে সেখানে উপস্থিত শিল্পী, যন্ত্রী সকলেই তাকে স্বাগত জানাতেন সংগীত কিংবা যন্ত্রসংগীতের মূর্চ্ছনায়। তো একদিন মহারাজের সাথে মহারাণীর মনোমালিণ্যে সকাল থেকেই মেজাজ খিঁচে ছিল জাহাপনার। মহারাজ যথারীতি দরবারে প্রবেশ করছেন-আর যন্ত্রীরা সব শুরু করলেন তাদের সুরের মূর্চ্ছনা। আসন গ্রহণের সাথে সাথেই ক্ষিপ্ত মহারাজের হুংকার, যে যা বাজাচ্ছে তা যেন যন্ত্রীদের স্ব স্ব পশ্চাৎদেশে প্রবেশ করানো হয়। নির্দেশনা দিয়েই তিনি সভা ত্যাগ করেন।

রাজার নির্দেশ! তখুনি তামিল হবে। কিন্তু যন্ত্রীদের প্রায় সকলেই মুখ টিপে হাসছেন। শুধু কান্নাকাটি করছেন একজন; যিনি সানাই বাদ্যটি বাজান।

উজির-নাজিররা তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসিল, ওহে! রাজা বাহাদুরের নির্দেশে সবাই যখন হাসছে, তখন তুমি একা কেন কাঁদো?

সানাইওয়ালার কান্নাকণ্ঠেই জবাব, জনাব, উনারা হাসছেন কারণ তাদের বাদ্যযন্ত্র ঢোল-তবলা-সেতার সেগুলো তাদের পশ্চাৎদেশে প্রবেশ করবে না। কিন্তু আমারটা সহজেই ঢুকবে-ব্যথা তো কেবল আমিই পাবো।



গল্পটা এখানে বেমানান, তবু আনা হল।

আমাদের এক ছোটভাই। সে দীর্ঘদিন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে আছে। ক্যামেরার কাজ ভাল করে, নিউজও তেমন। দৌঁড়ঝাপ করার মত শক্তি-মনোবল সবই আছে। বছর দুয়েক সে দেশের ডাকসাইটে এক টিভি মিডিয়ার সাথে যুক্ত। ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেলে দেখেছি বহু কষ্ট করতে। কী শীত, কী গরম কী বর্ষা আর দিন-রাত? সবসময় সে ছুটছে। কখনও সরাসরি কথা বলছে-আমরা দেখছি, লাইভ! সকালে শহরে দেখছি তো দুপুরে বেনাপোলে। এই রকম একটা চাকরি তার। ভাগ্য ভাল, এখনও সে বিয়ে করেনি!

এই ছেলেটা গত দু'বছর ধরে ভুতের বেগার খাটছে সেই টিভি চ্যানেলে। এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও তাকে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়নি; তবুও মন খারাপ নেই। তার বিশ্বাস হচ্ছে অনেক বড়। চ্যানেলটি তাদের প্রতিনিধি পরিচয়েই তার কাছ থেকে সংবাদসমূহ প্রচার করে থাকে।

এ রকম ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেলে কাজ করতে প্রতিদিনই খরচ হয়ে যায় অনেক টাকা। গড়ে প্রতিমাসে কমপক্ষে১২-১৪ হাজারের মত (নিজের সম্মানি বাদেই!)। জিজ্ঞেস করেছিলাম, গত দু'বছরে তোকে কত টাকা দিয়েছি প্রতিষ্ঠানটি। তিন দফায় সে পেয়েছে ৭ হাজার টাকা। হা কপাল!

এই মিডিয়াতে কাজ করতে এসে ক্যামেরা কিনেছে দুটি, ল্যাপটপ একটি, মোটরসাইকেল একটি। দুটি মোবাইলফোন সচল, মডেমও কিনতে হয়েছে। যশোরের বাইরে যাতায়াতে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হয়। অলরেডি এরই মধ্যে ৬-৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে সে।

দু'বছরের এত ত্যাগ-তিতিক্ষার একটা দারুণ পুরস্কার সম্প্রতি তার কপালে জুটেছে। ১০ম জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিনে। এখানকার একটি আসনের স্থগিত নির্বাচনের ফলাফল সেদিন ঘোষণা হচ্ছিল। নির্বাচন পরবর্তী এক নিদারুণ ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা শহরে আসেন তার মিডিয়াসহ অন্যান্য মিডিয়ার স্টার পারফরমাররা। সরেজমিন তারা চষে বেড়ান গোটা এলাকা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি তথ্যের বিভ্রান্তিকে কেন্দ্র করে ঘটে আরেকটি বিচ্ছিরি ঘটনা।

এই বিচ্ছিরি ঘটনাকে নিয়েই দাঁনা বাঁধে পলিটিক্স, ভেতরে ঢুকে যায় আরো কিছু নোংরামি। যার বলি হয় সেই সানাইওয়ালা! মানে এই গল্পের ছোটভাইটি।

সেদিনের সেই ঘটনাটির জন্য অনুতপ্ত হন সবাই-যারা সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন বা ছিলেন না-সকলেই। কিন্তু কারো কোন অনুতাপই কাজে আসেনি। যিনি ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, তাকে ভুলে গেলেও স্টাররা ক্ষমা করেননি ছোটভাইটিকে।

ফলাফল: এখন তার কোন নিউজ প্রচার করছে না সেই প্রতিষ্ঠানটি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.