নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

যশোরে বাওড়ের পাশ থেকে দেদারসে বালু উত্তোলন: আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ মানুষ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৫

যশোর: বাওড়ের পাশে ধানক্ষেতে সেচ দিচ্ছিলেন রবিউল ইসলাম নামে একজন কৃষক। বললেন, বেলা ২টা পর্যন্ত সেচ দেবার পর জমিতে বেশ পানি থাকে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর এসে দেখা যায় তাতে একফোঁটা পানিও নেই।

কথাগুলো বলছিলেন যশোর সদরের মঠবাড়িয়া গ্রামের ওই কৃষক। বুকভরা বাওড়ের কোল ঘেঁষে বাণিজ্যিকভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এ ধরনের নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর ভুক্তভোগী কৃষকরা এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাওড়টি হচ্ছে বুকভরা বাওড়। প্রায় ১৫৩ হেক্টর জমির উপর রয়েছে জলাশয়টি। ইউনিয়নের চান্দুটিয়া, আরিচপুর, হালসা, ইছাপুর, নারাঙ্গালি, মঠবাড়িয়া গ্রামের ২১৩ পরিবার এই জলাশয়ে মাছধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সম্পূর্ণ গায়েরজোরে কতিপয় ব্যক্তি প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করে চলেছেন। আর প্রতিদিন সেই বালি পরিবহন করা হচ্ছে শ’ শ’ ট্রাকে। যার ফলে একদিকে ফসলিজমি বিনষ্টের শঙ্কাও রয়েছে, তেমনি ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন গ্রামের লোকজন।

বর্তমানে প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপর ৬টি মেসিন বসিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। আর ধানিজমি পানিতে বিলীন হয়ে গেছে আরও ৫০ বিঘার মত। এসব জমিতে আগে বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৬ মণ ধান হতো, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। বাওড়ের পাশে হালসা থেকে মঠবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিমি বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু বালি পরিবহনের কারণে বেড়িবাঁধের সেই রাস্তাখানিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জমিতে বালির কারণে ধানের উৎপাদনও কমে এসেছে। এধারা চলতে থাকলে বাওড়ের পাশে ধানিজমি আর থাকবে না-আশঙ্কার কথা জানান তারা। আর বালি উত্তোলনের এই অবৈধকাজে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তারা। আর ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যেও রয়েছেন সবদলের মানুষ।

বাওড়ের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত মৎস্যজীবীরাও বললেন তাদের হতাশার কথা। মৎস্যচাষী শীতল বিশ্বাস বলেন, বালু তোলার ফলে বাওড়ের গভীরতা বেড়েছে অনেক। ‘এখন দুইটা বড় বাঁশ জোড়া দিয়েও ঠেই (তল ) পাওয়া যায় না। সেকারণে আগের মত মাছও ধরতে পারছিনে।’ বলেন তিনি।

মঠবাড়িয়া গ্রামের কৃষকরা জানান, ফরিদপুর অঞ্চলের মনসুর, আমির ও হাবিব, মঠবাড়িয়ার হজরত, আনার, রাজ্জাক, শফি, সাইফুলরা বাওড়ের পাশে মেসি বসিয়ে বালি উত্তোলন করছেন। তাদের বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা ক্ষান্ত দেননি।

এই গ্রামের যুবক আকতার ও ডাবলু জানান, বালি উত্তোলনকারীরা প্রতারণার মাধ্যমে এলাকার লুৎফরসহ কয়েকজনের জমি লিজ নিয়ে এই সর্বনাশা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এই বালি উত্তোলন ও বিপণনের জন্য প্রত্যহ শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি যাচ্ছে এসব গ্রামের রাস্তা দিয়ে। যেকারণে কয়েকটি দালান বাড়িতে ফাটল, কালভার্ট ভাঙন, রাস্তাঘাটও বিনষ্ট হয়ে গেছে।

গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, বালি উত্তোলনের সাথে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মিঠুও সম্পৃক্ত। সেকারণে ‘বালিদস্যুদের’ কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

বুকভরা বাওড়ে কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি দেশি সকল মাছের চাষ হতো। এখানকার জেলেরা মাছ আহরণের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এভাবে অনৈতিকপন্থায় এবং পরিবেশবিনষ্টের কারণে তাদের পৈতৃক এই পেশা অনেকটা বিলীনের পথে। কেননা প্রত্যহ বালি তোলার ফলে বাওড়ের পলিমাটির স্তরটি বিনষ্টের পথে। গভীরতা বাড়ছে। এসব কারণে মাছের প্রাকৃতিক ফুড সোর্সও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই মাছের চাষও হুমকির মুখে পড়েছে।

কথা হয় বুকভরা বাওড় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি অভিমন্যু বিশ্বাসের সাথে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বালি উত্তোলনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। গতবছর তার হস্তক্ষেপে কিছুদিন বালি উত্তোলন বন্ধও ছিল। কিন্তু, আবারও যা ছিল তাই। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পথে বসা ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারী এমন একজন আব্দুর রাজ্জাক। বালি উত্তোলন যে দোষনীয় বিষয়- এমনটা ভাবেননা তিনি। বেশ দম্ভভরেই কথা বলছিলেন তিনি। প্রায় দুই বছর ধরে এখান তেকে তিনি বালি উত্তোলন করছেন।

তিনি বলেন, ৬টি মেসিনের মধ্যে তার রয়েছে একটি। প্রতিদিন তার ১০-১২ গাড়ি বালি তোলা হয়। তিনজন শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাওড় বুজে (ভরাট) যাচ্ছিল; আমরা বরং তা খনন করছি। এতে জেলেদেরই লাভ হচ্ছে।

এসব বিষয়ে আলাপকালে দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মিঠু তার বিরুদ্ধে বালি উত্তোলনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কাজটি অবৈধ এবং পরিবেশ বিপর্যয়কারী। আমি বালি উত্তোলনকারীদের বিপক্ষে সবসময় লড়ছি। সেকারণে তারা অনেকেই আমার প্রকাশ্যে শত্রুতা করছেন।’

তিনি বলেন, বাওড়ের পাশে আমাদের প্রায় ৮ বিঘা জমি অন্যায়ভাবে দখল করে বালি তুলছেন রেজাউল মোল্যা। শুধু বাওড় সংলগ্ন স্থান নয়, ইউনিয়নের আরও তিন-চারটি স্থানে এভাবে বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এসব বন্ধে ইউএনও, ডিসি সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোহেল হাসান বিষয়টি জানেন না বলে জানান। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ তাকে লিখিত জানালেই তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তার কাছে ইউপি চেয়ারম্যানের কোন চিঠি আসেনি কিংবা তাকে এ ব্যাপারে কোন প্রকার তথ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।





১৮.০২.১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.