![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যশোর: ষাটোর্ধ্ব আব্দুল গফ্ফার খাঁ সকাল ১০টার দিকে যশোর প্রেসক্লাবে এসে কেঁদে ফেলেন। যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার ভোটকেন্দ্র সেবাসংঘ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে যাবার সময় তাকে মোটরসাইকেলের কর্মীরা গতিরোধ করে এবং জানতে চায়, কীসে ভোট দেবেন? তিনি বলেন, ভোট দেবো আমার পছন্দের প্রার্থীকে। তারা যখন নিশ্চিত হন ভোট মোটরসাইকেলে পড়বে না-তখন তাকে ধাক্কা মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়।
এই কেন্দ্রের অপর ভোটার শহরের বকুলতলার ময়নুদ্দিনেরও। তাকেও ভদ্রভাষায় বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দেন মোটরসাইকেলের কর্মীরা।
ঠিক এ রকম ঘটনা ঘটেছে শহর, শহরতলী এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
আজ রোববার যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ৮টার দিকে ভোট শুরু হলেও কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।
তবে, শহরের ভেতরকার কেন্দ্র নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেবাসংঘ গার্লস স্কুল, খোলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিএড কলেজ কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুরের হাটবিলা-জামতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁচড়ার মাহিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভায়না প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিমাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রসহ শতাধিক কেন্দ্রে সকাল ১১টার মধ্যেই ভোটগ্রহণ প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন হয়। ভোটাররা ওইসব কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পেরে বিরসমুখে ফিরেছেন।
এদিকে, শাহীন চাকলাদারের লোকজন যশোর সদরের ১৬৬ কেন্দ্রের ১১৭টি দখল করে নিয়েছে মর্মে বেলা সাড়ে ১২টায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাশুক হাসান জয়। তিনি এই ভোটডাকাতির প্রতিবাদে ভোটবর্জন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, শাহীন চাকলাদারের ক্যাডাররা প্রশাসনের উপস্থিতিতে বোমাবাজি-সন্ত্রাসী-ব্যালট ছিনতাই করেছে।
তিনি দাবি করেন, তার কর্মী কমবেশি ৫০জন আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে নিখোঁজ রয়েছেন মোড়লগাতির আরিফ এবং বালিয়া ভেকুটিয়া এলাকার সন্তোষ। শাহীন চাকলাদারের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের অপহরণ করে বলে তিনি দাবি করেছেন। বিষয়টি মৌখিকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
সকাল থেকে যশোরের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে সাংবাদিকরা সরেজমিন দেখতে পান ভোটের নানা চিত্র। খোলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সকাল থেকেই দখলে ছিল মোটরসাইকেলের কর্মী-সমর্থকদের। এখানে বোমাবাজি হওয়ায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ থাকে।
নতুন খয়েরতলা কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া নতুন ভোটার এক নারী ভোটার বাড়ি ফেরেন কাঁদতে কাঁদতে। তিনি বলেন, ওই কেন্দ্রে থাকা লোকজন তাকে বলে, রোদে দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। বাড়ি চলে যাও-তোমার ভোট আমরাই দিয়ে দেবো।
বেলা ১১টার মধ্যে বিএড কলেজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের ভোটার শহিদুল ইসলাম। তিনি ভোট দিতে গেলে তাকে বলা হয়, তোমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, বাড়ি চলে যাও।
ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টায় প্রবেশ করেন এক নারী ভোটার। এই কেন্দ্রে কোন লাইন ছিল না ভোটারদের। সব ফাঁকা। তার স্বামী বসে আছেন, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বাসায় যাবেন। কিন্তু তিনি বের হচ্ছেন না। বিরক্ত হয়ে মোবাইলফোনে আলাপকালে তিনি জানতে পারেন, কেন্দ্রে ব্যালটপেপার নেই। আধঘণ্টা পর হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন তার স্ত্রী এবং বলেন, ভোটটা অবশেষে দিতে পারলাম।
বেলা ১২টার দিকে এই কেন্দ্রসহ পিটিআই স্কুল, আজিমাবাদ স্কুল বিভিন্ন কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে।
এদিকে ভোট চলাকালে যশোর সদরের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেলের লোকজনের বোমা ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৮জন কমবেশি আহত হয়েছেন। তারা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতরা হলেন খোলাডাঙ্গার আনোয়ারা ও শিরিন, রামনগরের জাহিদ, আমবটতলার শাহাদত ও রহিম মল্লিক, পুরাতন কসবা এলাকার ইসমাইল ও গফুর এবং এনায়েতপুরের সাইদুর।
সরেজমিন সাংবাদিকরা জানান, বিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতি মিনিটে ভোট পড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩টি। এই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ২৬৪। সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট পড়েছে এক হাজারের মত। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জিয়াউর রহমান বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে গ্রহণ হচ্ছে।
কেন্দ্রের নাম গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রের পাশে শতাধিক লোক লাঠি-রামদা নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দিচ্ছিল। ভোটারদের তারা কেন্দ্রে না যেতে শাসায়। ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা ফিরে আসছেন-এবং তাদের কষ্টের কথা সাংবাদিকদের তা অবহিত করেন।
মিতুল নামে এক ভোটার তার পিঠে রামদার উল্টো পিঠ দিয়ে বাড়ি মেরে আহতের চিহ্ণ দেখান।
এই কেন্দ্রে আব্দুল্লাহ, খায়রুল, শিমুলের নেতৃত্বে ভোট দখলের বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করানো হয়। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মান্নান বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। তবে, কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ তিনি শুনেছেন বলে জানান।
প্রিজাইডিং অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাইরে কী হচ্ছে-তা জানি না। তবে, ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।
বাহাদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শাহীন চাকলাদারের লোকজন সব দখল করে নিয়েছে মর্মে বিএনপিকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে। বেলা ১০টা ৪৫ থেকে ১১টা ০৫ পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ, বিজিবি ও র্যা্ব গিয়ে অবরোধ উঠিয়ে দেয়। বেলা ১১টার মধ্যে এই কেন্দ্রের ২৯০০ ভোটের মধ্যে ১৮০০ কাস্ট হয়ে যায়। প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হামিদ বলেন, আমার ব্যালট পেপারের বই দেয়ার কথা-আমি তাই দিচ্ছি। বাইরের কিছুই জানি না।
এদিকে, ভোট জালিযাতির অভিযোগ এনেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী গোলাম রেজা দুলু। তিনি সকাল ১০টার দিকে অভিযোগ করেন, ৯টি ইউনিয়নের ৩০টি কেন্দ্র তার প্রতিপক্ষ শাহীন চাকলাদারের লোকজন দখল করে নিয়েছে।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোর সদরের সহকারী রিটার্র্নিং অফিসার ইউএনও মুহাম্মদ সোহেল হাসান বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণই হচ্ছে। তবে, ইছালি ও আড়পাড়া কেন্দ্রে আধ ঘণ্টার মতো সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে আবার তা শুরু হয়েছে। ব্যালটপেপার দখলে নিয়ে ভোট জালিযাতির ঘটনা তিনি শুনেছেন দাবি করে বলেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের কথা তিনি শুনেছেন বলে জানান।
©somewhere in net ltd.