নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমিকা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬

ভীরু চোখে ঋজু খাড়া শরীরের কার্ভগুলো দেখে

রোমাঞ্চিত হই মনে। ভাবি, কোন দামি সেন্ট মেখে

এসেছো আজকে ক্লাসে? পাটভাঙা হলদে পাড় শাড়ি

মোমের শরীর ঘিরে। কয়টায় ফিরবে আজ বাড়ি?

টিফিনের পরে পরে নাকি ঠিক পড়ন্ত বিকেলে

যখন রমনার ঝাউ দেবদারু ছায়া দেবে মেলে?

পেছনের সিটে বসে ভাবি খুব। পদ্ম খোপা চুলে

কী দারুণ সজীবতা! ইচ্ছে করে আস্তে দেই খুলে-

কোথায় সাহস পাবো? বিম্বাধারে একচিলতে হাসি

লেকের ওধারে চলো হেটে পাশাপাশি

বলবো মেয়ে, আহা মেয়ে তোমকে খুব ভালবাসি!

মিথ্যে আশা কুহকিনী। হাতে গুজে দিল এক টাকা

বললো, পথ ছাড়ো-আমি বুকড্ আমি আরেকজনের প্রেমিকা!





(আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের কবিতার অংশ, ভুল থাকতে পারে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০২

তৌহিদ জামান73 বলেছেন: আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন

কথাশিল্পী আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনকে [২০ এপ্রিল, ১৯৩৪-২০ সেপ্টেম্বর, ২০০২] স্মরণ করা হয় অনুল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ তার লেখার যে পরিধি ও ব্যাপকতা সে অনুযায়ী তিনি কিন্তু আমাদের নিকট আরও বেশি কিছু দাবি করতে পারেন। পত্রিকার সাহিত্য পাতাগুলো তাকে বেমালুম ভুলেই গেছে। এদের এ ভুলেযাবার পেছনের কারণটা কি? এরা কি আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনকে পশ্চাদপদ লেখকের কাতারে ফেলেন?
হালকা গীতল মেজাজের গল্প লিখে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। সাহিত্যের বাজারে এই লেখক কেবল গল্পকার হিসেবেই পরিচিত নন। সারাজীবনে তিনি সাহিত্যের প্রায় সকল অঙ্গনেই সুস্পষ্ট হাতের ছাপ রেখেছেন। উপন্যাস, গল্প, ছোটদের জন্য ছড়া, কবিতা, লিখেছেন দু’হাতে। ছোটদের প্রিয় একজন লেখক ছিলেন তিনি।
অসাধারণ এক গল্পের হাত ছিল আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের। তার গল্পের পাত্র-পাত্রীগণ কখনও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, আবার কখনও রোমান্টিক পাখনা মেলে ঘুরে বেরিয়েছে। অসংখ্য ভালো গল্পের জনক এই লেখক। অনাহূত অতিথি, পরবর্তী, উত্তরাধিকার, উপদংশন, জনক, ডোম, পাষাণের ক্রন্দন, প্রতিভূ, অবিচার, সুঁই, ভ্যানিটিব্যাগ, জলকুমির, ডা-াবেড়ি, কোচ, ডাকাত বউ, লোরা ফ্যাশন হাউস, জনক, কুসুম কেন কাঁদে? প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গল্প। আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনের লেখার হাত ছিল খোলামেলা। যখন যে পরিবেশে যে শব্দটি উপযুক্ত; গল্পে তিনি ঠিক সেই শব্দটিই ব্যবহার করেছেন। গল্পের আবহে শব্দ ব্যবহারে তিনি আপসহীন। শ্লীল-অশ্লীল বাছ-বিচারের ধার ধারেননি তিনি। এক্ষেত্রে তার গল্পের গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে- না হ্রাস পেয়েছে সে বিচার করবে সময়।
গীতল ভাষা ব্যবহারে এই লেখক বেশ পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। হতে পারে তার এ পারঙ্গমতা তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ছোট ছোট সাবলীল শব্দগুলো পাঠকের চিত্ত জয় করেছে সহজেই। এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের দু-একটি উদাহরণ টানা যেতে পারে : ‘ওপরে নীল অম্বর মেঘ মুক্ত। সে রং চেনে আনিস। সে রংয়ে রঞ্জিত বলেই নাম নীলাম্বরী। নীলাম্বরী শাড়ি খুব প্রিয় গ্রামের মেয়েদের। আনিসেরও। সে কারণেই বোধহয় ওর একটা উপন্যাসের নাম রেখেছে নীলাম্বরী’ [কালো নীলাম্বরী]। আবার ‘অনেকে চলে গেছে নৌকা আর জাল নিয়ে মেঘনার দিকে। মুন্সীগঞ্জ পার হয়ে মেঘনায় পড়েছে ধলেশ্বরী। ধোরা সাপের মতো কোমর মোড়াতে মোড়াতে সোজা বড় নদী। এখানে সেখানে বাঁকে রূপালী ইলিশ ধরবে ওরা রাতভর জাল পেতে। নিকারির কাছে বেচে মোটা টাকা পাবে। তাছাড়া ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরার মজাও অনেক। দূর অঞ্চল থেকে আসে জেলেরা। নদীর বুকে সে কি কোলাহল। সে কী গল্প, বিড়ি-সিগারেট খেতে খেতে। রাতভর ভাটিয়ালি গান আর বাঁশির মুর্ছনা নদীর বুক জুড়ে।’ [ধলেশ্বরীর বাঁক]
এভাবে ছোট ছোট শব্দ ব্যবহার করে লেখক গীতল আবহের সৃষ্টি করেছেন এবং পাঠক তা লুফে নিয়েছে সহজেই।
মুসলেহউদ্দিনের গল্প বলার ভঙ্গিতেও রয়েছে একটু আলাদা কারুকাজ। যেন গল্পের কথক সম্মুখে দাঁড়িয়ে গল্পটি বলে যাচ্ছেন। তবে তার বলার ভঙ্গি এমন যে, মনে হয় কথক গল্পের সংশ্লিষ্ট কেউ নন। এখানে পাঠকের সাথে বোধ হয় একটু দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। পাঠকের নিকট গল্পটিকে কোন সুদূরের গল্প বলে মনে হয়।
লেখক মানব মনের গহীনে ঢুকে পড়েছেন অবলীলায়; একইভাবে মানব চরিত্রেও। লেখকের হাতে আছে যেন এক লক্ষ্যভেদী ছুরি। সেই ছুরি দিয়ে তিনি যেন কেটে-ছিঁড়ে ফেলেন মানুষের রহস্যময় চরিত্র। তার কাটাকুটির পর মানুষের সেই চরিত্র আর রহস্যে ঘেরা থাকে না। খোলাসা হয়ে যায় পাঠকের চোখের সামনে। ‘কুসুম কেন কাঁদে’, গল্পটির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক : কুসুম এতিম একজন বালিকা। বাবা-মা মারা গেছে অনেক আগে। কিন্তু তাহলে কী হবে বড় ভাই সুলতান ওকে বাবা-মার অভাব বুঝতে দেয়নি। জান-প্রাণ দিয়ে আগলে রেখেছে ওকে। গল্পের ভাষায় : ‘বাপের মতোই আদর-¯েœহ দিয়ে বড় করেছে বোনকে। কখনও একটা কড়া কথা বলেনি। মক্তবে পাঠিয়ে পড়তে-লিখতে শিখিয়েছে, ঘাগরা কিনে এনেছে হাট থেকে, লালনীল পুঁতির মালা কিনে দিয়েছে বেদেনীর কাছ থেকে। লাকসামের হাটে গেলে সস্তা জিলিপি নিয়ে এসেছে।’
এমন আদরের বোনটিকে বিয়ে দেয় সুলতান। কিন্তু বিয়ে সুখের হয়নি। অভাবের সংসার। স্বামীর কাজ-কর্ম নেই। সারাদিন জুয়া খেলে দিন কাটায়। রাতে এসে ভালোবাসার বদলে মারধোর করে। দিনে দিনে কুসুমের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাই অগত্যা বড় ভাইয়ের নিকট কুসুমের আবদার মিয়াভাই, তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো। আমি এখানে আর একদিনও থাকতে পারব না। এক মুহূর্তও না। এমন একটা বেদিল-বেরহম মানুষ- অসম্ভব মিয়াভাই।’ ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে সুলতান আদরের বোনকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে উদ্যত হয়। দুঃখ আর যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ যে সংসার সে সংসারে আদরের বোনকে রাখতে চায় না। কুসুমও ভাইয়ের সাথে বাড়ি যাওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। গল্পের ভাষায় : ‘সামান্য কিছু জামাকাপড়। একটা ছোট পুটলি একহাতে। অন্য হাতে লালী। ডিমগুলো একটা বাঁশের খাঁচায়।
- চলো মিয়াভাই।
মুক্তির আনন্দে পিঠ টানটান করে দাঁড়ায় কুসুম। মাথায় ঘোমটা তুলে দেয়।
- তোর জেওর আত্তি নিবিনে? বিয়েতে যে মার হাঁসুলি, খাড়– আর কানফুল দিয়ে তোরে সাজিয়ে দিলো সেতারা, সেগুলো?
শুনে মাথা হেঁট হয়ে যায় কুসুমের। তিরতিরে ঢেউয়ের মতো ঠোঁট কাঁপতে থাকে। চুপ করে শূন্যে চেয়ে থাকে।
- নেই। সব বেঁচে দিয়েছে মানুষটা। বেঁচে তা দিয়ে জুয়া খেলেছে।’
সুলতান বোনকে নিয়ে বের হয়। নৌকায় চড়ে দুই ভাই-বোনে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। নদী আর নদীর চারপাশের দৃশ্য দেখে সে নতুন করে মুগ্ধ হয়- ‘একটা জলচৌকিতে চুপচাপ বসে কুসুম। চুপ করে ওর কোলে লালী।
জোড়ায় জোড়ায় ডুবোচ্ছে কালো কোড়াকোড়ি। বৈচা মাছ ধরছে ডুবিয়ে। পেট ভরলে মাছ খেয়ে উড়াল দেবে দূরের গ্রামে। কুসুমদের গ্রাম পরানপুরে।’
এরই ভেতর কুসুমের মানসিকতা যায় পুরোপুরি পাল্টে। সে স্বামীর বাড়িতে এখনই আবার ফিরে যেতে চায়। সে সুলতানকে ডেকে বলে- ‘মিয়া ভাই। নাওটা ফেরাও।
-ক্যান? কী হয়েছে? কিছু ফেলে এসেছিস?
- হুঁ।
কাঁদছে কুসুম নীরবে। গাল বেয়ে আঠাআঠা অশ্রু নামছে ওর। বোঝে না কিছু সিধে-সাধা মানুষ সুলতান। ওবেলা সশব্দে কেঁদেছে কুসুম। এবেলা কাঁদছে নীরবে। কী হয়েছে? কেন কাঁদছে মেয়েটা?
-মিয়াভাই। আমাকে তুমি বেলতলি ফেরত দিয়ে এসো।
- মানে? ফের বেলতলি যাবি তুই? আবার মার খেতে যাবি?
মাথার ওপর দিয়ে একঝাঁক টিয়ে পাখি উড়ে যায়। দিনভর আধাপাকা ধান খেয়েছে। এখন গিয়ে ঘুমোবে দূরের কোনো বন বাদাড়ে।
- হুঁ। রাতে বাড়ি ফিরে এসে মানুষটা আমাকে না দেখলে কেয়ামত বাধিয়ে বসবে মিয়াভাই। ফাটাফাটি শুরু করবে বাড়ির লোকদের সাথে। শেষটায় না খেয়ে উপোস শুয়ে থাকবে। থালাবাসন সব ভেঙে চুরমার করে ছাড়বে।
কুসুমের এ আচরণে আমরা বিস্মিত না হয়ে পারি না। যে স্বামীর সাথে তার এতো তিক্ততা, অসহিষ্ণুতা; যে স্বামী তাকে দিয়েছে কেবল লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা; সেই স্বামীকে সে ত্যাগ করে যেতে পারল না। তাই বলা যায়, কুসুম চিরায়ত বাঙালি নারীর প্রতিরূপ। বাঙালি নারী বুঝি যুগে যুগে এমনই মমতাময়ী হয়। আর এখানেই শিল্পী হিসেবে আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন সার্থক। এর উল্টো চিত্রও এঁকেছেন বিদগ্ধ এই জীবনশিল্পী। ‘ডাকাত বউ’ গল্পটির কথাই ধরা যাক, গল্পে রমজান নামকরা ডাকাত সর্দার। পতিতালয়ের এক পতিতাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে আনে। তার নামে অতি সুদৃশ্য ও ব্যয়বহুল একটি বাড়িও কিনে দেয়। ঘটনাচক্রে রমজান ডাকাত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে যায়। কিন্তু স্ত্রী মালতি ওর জন্য অপেক্ষা না করে সাথে সাথে সে অন্য তাগড়া এক পুরুষকে বিয়ে করে। মালতির মনে সামান্যতম মানবিকতা আশা করা যায় না। মালতির জবানিতে, রমজান কোনদিন ছাড়া পাইবো? মামলা শেষ হইতে তো দশ-বিশ বছর। তারপর ফাঁসিতে ঝুলাইয়া দিবেন না হেরে আপনারা? শক্ত যুক্তি মালতির, ‘তদ্দিন বইস্যা বইস্যা ভেরে-া ভাজুম আমি?’
একই গল্পের আরেকটি চরিত্র মৌরি। স্বামী তাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। উচ্চবিত্ত গোত্রীয় স্বামী-স্ত্রী ওরা। স্বামী উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার। এদের সংসারে নেই কোন অভাব-অভিযোগ। তবু কোন খেয়ালে জানা যায় না, মৌলি স্বামীকে চরমভাবে অবহেলা করতে থাকে। অবশেষে স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে মৌরি নিজের নামে স্বামীর ক্রয় করা বাড়িটি বিক্রি করে স্বামীকে ডিভোর্স লেটার দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। লেখকের ভাষায় : ‘উনিতো নেই। উনি তো এ বাড়ি বেঁচে দিয়েছেন। আমরা কিনে নিয়েছি।’
-‘বাড়ি বেঁচে দিয়েছেন? আপনারা কিনে নিয়েছেন? বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় আশরাফ। দোতলার বাচ্চাটার দিকে চেয়ে থাকে হা করে।
-হ্যাঁ। আটচল্লিশ লাখ টাকায় সাফ-কবলা করে দিয়েছেন উনি’। এভাবে মানুষের কদর্য মনের অভিব্যক্তিগুলো পরিচ্ছন্নভাবে তুলে ধরেছেন এই লেখক। এসব কিছু মিলিয়ে লেখক আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনকে প্রকৃত জীবন শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তিনি মানব মনের গভীরে প্রবেশ করে অনেক রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবন কী? জীবনের গভীরতা, জীবনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায় তার লেখায় সুস্পষ্টভাবে। সুতরাং আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনকে আমরা ভুলে যেতে পারি না। বরং তার সৃজন কর্মগুলোকে ছড়িয়ে দিতে পারি নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে। নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে তাকে পৌঁছে দিতে পারলে বাংলা সাহিত্য উপকৃত হবে বৈকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.