![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যশোর
তখন শীত; বেশ শীত। চাষাবাদে ভূঁইতে (জমি) বাসই (মই) দেবার বলদ নেই। হাড় কাঁপানো শীতে কচি দুটি শিশু গরুর ভূমিকায় টেনে যাচ্ছে মই। একজনের উদোম গা, অন্যজনের পরণে হাফপ্যান্ট হাফ শার্ট। বরফের মত হিম আর পা ডোবানো কাদায় উল্টো হাতে প্রাণপণে মই টেনে যাচ্ছে রমজান আর নূরুন্নবী।
গত জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হওয়া এই ছবিটি দেখে ওই বয়সী সন্তান আছে এমন বাবা-মায়েদের মন নিশ্চিতই কেঁদে উঠেছিল।
বিমানের একটি ফ্লাইটে সেদিন ঢাকা থেকে যশোর আসছিলেন শিল্পপতি সাইদুর রহমান লিটু। বিমানে বসেই তিনি ছবিটি দেখেন। অন্যান্যদের মত তাকেও এটি আলোড়িত করে। তবে পত্রিকা ভাঁজ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেকের মত বিষয়টি তার মাথা থেকে মুছে গেল না। তিনি অনুভব করলেন এদের জন্য দ্রুত কিছু করতে হবে। এই বয়সে শিশু দুটির তো স্কুলে থাকার কথা!
যশোরে নেমেই নিজের অফিসকর্মীদের শিশু দুটির খোঁজ-খবর নিতে বলেন।
জানা গেল, সম্পর্কে তারা খালাতো ভাই। প্রথমজন চতুর্থ শ্রেণি, অপরজন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। দুজনের বাবা যথাক্রমে মজিদ ও শফিকুল। একজন দিনমজুর, অন্যজন ভ্যান চালান।
যশোর শহরের খড়কী দক্ষিণপাড়ায় বাবা-মা, নানা-নানির সঙ্গে বসবাস নূরনবী আর রমজানের।
দুজনেরই পড়ালেখার ভার নিলেন ‘নওয়াপাড়া গ্রুপে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান লিটু।
শুক্রবার (৩০ মে ২০১৪) দুপুরে খড়কী দক্ষিণপাড়ায় নূরনবী আর রমজানদের ভাড়া বাসায় আসেন লিটু। টিনের ছাপড়ার দুটি ঘরে থাকে পরিবার দু‘টি। ঘরপ্রতি ভাড়া মাসিক ৫ শ’ টাকা। টিনের এই ছাপড়ার মধ্যে বৃষ্টির পানি জমে; তা রুখতে রয়েছে বেশ কিছু পলিথিন ব্যাগ। ঘরে খাট ছাড়া নেই কোন আসবাব। ঘর আর খোলা বারান্দায় মিলে গাদাগাদি করে থাকেন ছয়জন। সরেজমিনে পরিবার দুটির হাল-হকিকত দেখে শিশু দুটির পড়ালেখার খরচের বাইরে দিলেন একটি গাইগরু।
রমজানের মা ফাতেমা জানান, তাদের আদিবাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হাজিপুরে। বছর পনের আগে তারা যশোরে আসেন।
নূরনবী আর রমজানের মা এবং তাদের নানা-নানির সাথে কথা বললেন লিটু। জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথার ওপরে বসে নাশতা করলেন বিস্কুট আর আম দিয়ে। অভিভাবকদের বললেন শিশু দুটির পড়াশুনা যেন কোনওরকম বন্ধ করা না হয়। তাদের শিক্ষার জন্য সব খরচ তিনিই বহন করবেন বলে জানালেন। পরিবার দুটির অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দের জন্য দুধেল গরুটি ছাড়াও একটি ইঞ্জিনচালিত রিকশাভ্যানেরও ব্যবস্থা করতে বললেন তার কর্মচারীদের।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাইদুর রহমান লিটু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “ছবিটি দেখার পর মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। ভাবি, এই বয়সী শিশুরা পড়াশুনা করবে, খেলাধুলা করে সময় কাটাবে। অথচ, তীব্র শীতের মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রমে লেগে আছে স্রেফ পরিবারের অনটনের কারণে। তাই ‘এই সামান্য’ ব্যবস্থা করলাম।“
তিনি আরও বলেন, “দেশের উন্নয়নে শিল্পপতিদেরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। তারাই শিল্প-কারখানা গড়ে তোলে; সেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করে। তাদের ঘর-সংসার চলে। তাই, শিল্পপতিদেরই উচিৎ সাধারণ মানুষদের কল্যাণে কিছু করা। এভাবে যদি সবাই এগিয়ে আসে-তবেই দেশের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে।“
তিনি বলেন, ”মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই; শিশুদের উন্নয়নে সামর্থ্য অনুযায়ী হাত বাড়াতে চাই।“
কৃতজ্ঞচিত্তে তার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন উপস্থিত সবাই। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করলেন শিশুদের অভিভাবকরা। দুপুরের খাবার খেয়ে যাবার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করলেন তারা। কিন্তু ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে সাইদুর রহমানের। যাবার সময় বলে গেলেন, “ফের দেখা হবে।“
নূরনবী আর রমজানের ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন যশোরের ফটোসাংবাদিক ফিরোজ গাজী। তার তোলা একটি ছবি দুটি পরিবারের এবং একই সঙ্গে দুটি শিশুর কষ্টকর জীবনে কিছুটা স্বস্তির মুখ দেখিয়েছে, একইসঙ্গে দেশের ধনী মানুষদের একজনকে এতটা আলোড়িত করেছে যে তিনি নিজেই ছুটে গেছেন হতদরিদ্র পরিবারের ওই শিশু দুটির ঘরে, বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত- এটা তাকে বেশ শান্তি দিয়েছে, আনন্দিত করেছে। একজন সংবাদকর্মীর জন্য এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না, বললেন গাজী।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৪ সকাল ৭:২৮
সকাল হাসান বলেছেন: সাইদুর রহমান লিটুর মত আরো কিছু শিল্পপতি দরকার। তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সংবাদপত্রে শিশুদের কাজ করা চিত্র কমে আসবে।
আর কমাটাই আমাদের দেশের জন্য ভাল হবে।