নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু সীমার কোলে আরেক শিশু ‘দুখু মিয়া’, কোথায় এখলাস মোল্যা?

২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:০০

যশোর।। বয়সে এখনও সে শিশু। ষোল বছর না পেরোলেও সীমা খাতুন এখন ১৭ মাস বয়সী এক সন্তানের মা। ছেলের নাম রেখেছে দুখু মিয়া। নামের সঙ্গে প্রচণ্ড মিল রয়েছে দুই শিশুরই (সীমা ও তার ছেলে) জীবনকাহিনীর। সন্তানের পিতৃস্বীকৃতি না পেয়ে বাপেরবাড়ি উঠেছে। কিন্তু, গ্রামের কতিপয় ব্যক্তির রোষানলে পড়ে ‘একঘরে’ হয়ে থাকতে হচ্ছে তার পরিবারকে।

সীমা যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। দিনমজুর বাবার পক্ষে সন্তানকে শিক্ষিত করা অসম্ভব কাজ। তাই পাশের ইউনিয়নের হাগড়া গ্রামে মামা মনিরুলের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া সীমাকে। তখন সে ক্লাস টু’র ছাত্রী।

২০১২ সালে সীমা পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠে। মামাবাড়ির গ্রামের এক সরকারি স্কুলে পড়ে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে পরিচয় এখলাস হোসেনের সঙ্গে। সে হাগড়া দরিজাফরপুরের জহর মোল্যার ছেলে।

ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র এখলাস তাকে নানা স্বপ্ন দেখায়। ভালোবাসার গল্প শোনায়। ডানহাতে উল্কি এঁকে লেখে সীমার নাম। তারা একে অপরের সাথে জড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার বন্ধনে। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়; সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে সীমা। এখলাস জানায়, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে করবে বলে জানায়। এভাবে সময় পার হতে থাকে। একসময় সীমার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে দুখু মিয়া।

সীমা জানায়, গত বছরের পৌষমাসে তাদের সন্তান দুখু মিয়ার জন্ম। সে হিসেবে ছেলের বয়স এখন ১৭ মাস।

সন্তান জন্ম নেবার পর এখলাস তাকে বলেছিল, মা-বাবা না মানলেও তাদের নিয়ে ঢাকায় পাড়ি দেবে সে। কিন্তু, কথা রাখেনি। এখন তার খোঁজই পায় না সীমা।

সন্তান জন্ম নেবার পর কয়েক দফা এখলাসদের বাড়িতে গেছে সীমা, ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন শেয়াল-কুকুরের মত ব্যবহার করেছে। শাসিয়েছে, আর কখনো এ বাড়ি এলে দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে ফেলা হবে।

সীমার পিতা রফিকুল ও মা নিসারুন জানান, দুখু ভূমিষ্ট হওয়ার পর এখলাসের সঙ্গে তাদের কয়েকদফা কথা হয়েছে। সে এই সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকারও করেছে। কিন্তু তার পরিবার মেনে নিতে চাইছে না।

বিষয়টি তারা স্থানীয় গণ্যমান্যদের জানিয়েছেন। তাদের এলাকার মেম্বর ফিরোজ হাসান ভুট্টো বিষয়টি সমাধানে চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু, ছেলে পক্ষ মোটেও কর্ণপাত করেনি তাদের কথায়। শেষমেষ তারা থানা-পুলিশও করেছেন। রফিকুল বাদী হয়ে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেছেন; মামলা নং-৯, ১৩.০৭.১৩। এরপর অভিযুক্তরা তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দেয়ায় একটি জিডি করা হয়। কিন্তু, পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

তারা জানান, এখলাস এখন কোথায় কেমন আছে– তা জানেন না তারা।

রফিকুল জানান, এ ঘটনার পর থেকে মেয়ে তাদের সঙ্গে আছে। বিষয়টি গ্রামের মোড়ল-মাতব্বররা সহজে মেনে নিতে পারছে না। তাই, সমাজে তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। যে বাড়ি থেকে খাবার পানি আনতেন, তারা নিষেধ করে দিয়েছে।

কারা সেই মাথাওয়ালা লোকজন? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আব্দুল আজিজ, হামিদসহ কয়েকজন। রফিকুলের অাপনভাই শফিও তাদের বাড়ির সামনে বেড়া দিতে চেয়েছে। কিন্তু, থানা থেকে এক দারোগা এসে তাদের নিবৃত করেছেন।

রফিকুলের প্রতিবেশী দূরসম্পর্কের ভাই আক্তারুজ্জামান জানান, একঘরে করে দেবার বিষয়টি সত্যি। এলাকার লোকজন রফিকুলকে দুষছে; তারা বলেছে, এমন মেয়ে নিয়ে এখানে থাকা যাবে না।

তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক মানুষ। অনেক কিছুই করতে পারেন। ভাই, এদের ব্যাপারটা যাতে ভালভাবে ঠিক হয়ে যায়-সে ব্যবস্থা করুন।

সীমা-এখলাসের প্রেম, তাদের সন্তান দুখুর বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় এখলাসের বড়ভাই এরশাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সীমার সঙ্গে আমার ভাইয়ের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমার ভাই কোনওদিন তার বিষয়ে আমাকে বলেনি।’

এমন কথা বড়ভাইকে বলা যায় কি না– প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না তা বলে না। কিন্তু, সীমার সন্তান আমার ভাইয়ের না।’

বলা হয়, আপনার ভাই এখলাস এসব স্বীকার করেছে এবং সীমাকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছে। কিন্তু আপনারা তাকে জোর করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন– এমন খবর আমাদের কাছে আছে। একথার জবাবে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাকে কেন বলছেন? তার কাছেই দিয়ে দেন।’

এরশাদ একপর্যা‌‌‌য়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই, প্রায় দেড় বছর ধরে নিখোঁজ। আশঙ্কা করছি, রফিকুলের লোকজন তাকে গুম করে দিয়েছে।’

সীমাকে মারধর বা হুমকি-ধামকির কথা অস্বীকার করেন তিনি।

কথা হয় দেহাকুলা গ্রামের গণ্যমান্যদের একজন, আব্দুল আজিজের সঙ্গে। রফিকুল ইসলামের পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘রফিকুলের মেয়ে এক জারজ সন্তান নিয়ে পাড়ায় থাকছে। বিষয়টি এলাকার লোকজন ভালো চোখে দেখছে না। তাছাড়া সে ও তার বউ দুজনই বেয়াদব। তারা এই বিষয়টি সামাজিকভাবে কাউকেই অবহিত করেনি।’

‘আমি একদিন ওর মেয়ের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সে আমাকে বলে, আমাদের বিষয় আমরাই ভালো বুঝবো, আপনার টেনশন করার দরকার নেই।’– বলেন আব্দুল আজিজ।

সবশেষে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘মেয়েটারও দোষ আছে। তবুও আপনারা দেখেন যদি মেয়েটাকে ওই ছেলের সংসারে ফিরিয়ে দিতে পারেন, ভাল হয়।’

সীমার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বাঘারপাড়ার একটি এনজিও’র (গণঅধিকার ফাউন্ডেশন) নির্বাহী পরিচালক একরামুল হাসান মিঠু। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এসেছে এবং এখলাসের বড়ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে– এমন সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়েছেন এখলাসের বড়বোন ডলি। তিনি ওই পরিবারকে ফের হুমকি দিয়েছেন এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে।’

তিনি জানান, এ মাসের ২০ তারিখে আদালতে চার্জ গঠন করা হবে– এমন তথ্য দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি। কোর্ট বসলেই তা হবে।

যোগাযোগ করা হলে যশোরের বাঘারপাড়া থানার ওসি কাইউম আলী সরদার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এ থানায় যোগদানের পর কেউই এসব বিষয়ে কোনও অভিযোগ দেননি।’



প্রকাশিত: ১১:১৩ অপরাহ্ন, জুলাই ১৮, ২০১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.