![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুন থেকে আগস্ট-এই তিন মাসে যশোরে জেলায় ১৫ নারী-শিশু ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছে। যদিও মানবাধিকার সংগঠন ও সরকারি কর্মকর্তা-সকলেই বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি। ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের শিকারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী থেকে দু’সন্তানের জননী রয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ও আত্মহত্যা করেছে দুই স্কুলছাত্রী ও এক যুবতী।
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের ডকুমেন্টেশন সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জুন থেকে আগস্ট মাসে পাঁচটি করে মোট ১৫টি ধর্ষণ ও যৌনপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও কেশবপুর উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক প্রতিবন্ধী যুবতী, স্কুলছাত্রী ও এক যুবতী। এদের মধ্যে লজ্জায় অভিমানে একজন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেশবপুর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় অন্তঃসত্ত্বা দু’গৃহবধূ ধর্ষণ ও যৌনপীড়নের শিকার হয়েছেন। পীড়ক হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক।
সেলের দেয়া তথ্য মতে,অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়েছে যশোর সদর ও শার্শা উপজেলার এক শিক্ষার্থীসহ দুজন। উল্লিখিত তিনমাসে ধর্ষণ ও যৌনপীড়নের শিকার হয়েছে ৮ শিক্ষার্থী এবং তিনজন গৃহবধূ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যশোর সদরে ৪, কেশবপুরে ২ এবং শার্শা ও মণিরামপুরে একজন করে। এরা স্কুলশিক্ষক, প্রতিবেশী এবং প্রেমিক ও তার বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষণ বা যৌনপীড়নের শিকার হয়। এছাড়া ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগরে একজন করে গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়। এ সময়ে যৌনপীড়নের শিকার হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূসহ ৬ শিক্ষার্থী।
জুন মাসে ঝালমুড়ি বিক্রেতা কর্তৃক যৌনপীড়নের শিকার হয় প্রথম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী। স্থানীয় জনতার হাতে আটক ওই যুবককে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের দ- দেন।
বেশিরভাগ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে বলে সেল সূত্রে জানা যায়।
রাইটস যশোরের সাইকো-সোশাল কাউন্সিলর শাওলী সুলতানা বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে শিশুরা তার স্বজন বা প্রতিবেশী বা বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। এরা এসব কথা কাউকে বলতে পারে না, বললেও অভিভাবকরা অনেক সময় তা বিশ্বাসও করে না। উল্টো তারা ধমকের শিকার হয়। মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধু বা প্রেমিকদের দ্বারাও ধর্ষণ বা যৌনপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সকিনা খাতুন বলেন, ধর্ষণের সব ঘটনা প্রকাশ পায় না। পত্রিকায় প্রকাশ বা মামলা হয় খুবই কম সংখ্যক ঘটনার। সামাজিক অবস্থান এবং ধর্ষণের শিকার মেয়ে বা তার পরিবারের লোকজন এসব বিষয় যতটা পারে, লুকিয়ে রাখে। কেননা বিষয়টি সারাজীবন তাকে তাড়িত করে, সমাজের মানুষকে তাকে বা তার পরিবারের লোকজনকে ঘৃণার চোখে দেখে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, সঠিক বিচার না পাওয়া কিংবা ধর্ষকের সাথে মীমাংসা অথবা তার সাথে বিয়ের কারণেও ধর্ষকরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এসব নির্যাতনের পক্ষে জোরাল মতামত সংগঠিত এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার পক্ষে তিনি মতামত ব্যক্ত করে বলেন, তবেই হয়তো সমাজ থেকে এই রোগটি হ্রাস পেতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পিপি শরীফ নূর মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে মামলা থানায় হলে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এবং পরে তা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসে।
তিনি বলেন, চার্জশিট প্রদানে বিলম্ব, ভিকটিমের আলামত বিনষ্ট, বাদীর মামলা পরিচালনায় অনীহা এবং দীর্ঘসূত্রতা ও আসামিপক্ষের সাথে আপসের কারণে অনেক মামলার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না।
গত তিনমাসে ধর্ষণ মামলায় তেমন সাজাপ্রদানের ঘটনা তার জানা নেই বলে তিনি জানান।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র এএসপি রেশমা শারমিনও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের সংখ্যা যাই হোক না কেন, এটি বড় ধরনের ক্রাইম। পুলিশ বিষয়টি কোজলি মনিটরিং করছে।
তিনি বলেন, ধর্ষণ এবং যৌনপীড়নের মামলাগুলো আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয় তদারকি করে থাকেন।
শিশুরা কেন বেশি যৌনপীড়ন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা এবং তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা না করে এটি বলা সম্ভব হচ্ছে না।
©somewhere in net ltd.