![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হালখাতা আমাদের সংস্কৃতিতে বেশ জনপ্রিয়। প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখ বা তাদের বাকি দেওয়া টাকা-পয়সা ফেরতের সুবিধাজনক সময়ে এই হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
বছর দশ-পনের আগে যশোরের স্থানীয় একটি পত্রিকায় হালখাতার এক অভিনব আয়োজন পড়তে পেরে বেশ সুখানুভূতি জাগ্রত হয়। সেইসময় একজন শিক্ষক বাসায় প্রাইভেট পড়াতেন। ছাত্রদের অধিকাংশই তাকে মাসশেষে মাইনার টাকাটা দেয়নি। বছরশেষে তাই তিনি বাসায় হালখাতার আয়োজন করেন। বিষয়টি বেশ চমতকৃত করে আমায়।
বহুদিন পর আরেকটি হালখাতার সংবাদপাঠে চিত্ত বেশ চঞ্চল হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হালখাতা বেশ পরিচিত, অল্প টাকার মাদক হিসেবে গাঁজারও বেশ নামডাক আছে।
কথিত আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের একজন শিক্ষকের আমেরিকাতে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করাকালীন তিনি গাঁজা সরবরাহে ঘাটতি হওয়ায় কিঞ্চিত দু:খ পান এবং পড়াশুনা সম্পন্ন না করেই দেশে চলে আসেন। তার ছাত্রদের কাছ থেকে এই সংবাদটি তখন বেশ দেশপ্রেমিক দেশপ্রেমিক ভাবের উচ্ছ্বাসটা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে-
যাহোক, ধান ভানতে শিবের গীত নয়, মূল কথাতেই আসা যাক। যশোরে ব্যাপক হারে মাদকসেবন ও ব্যবসা- দুটোরই সুখ্যাতি রয়েছে। মাদকসেবনকারীরা যেমন সহায় সম্বল হারিয়ে পথের ভিক্ষুক হয়ে যান, তেমনি সহায়সম্বলহীন অনেক মানুষের মাদকব্যবসায়ের ফলে আলিশান বাড়ি গাড়ি দেখে আমরাও তাজ্জব বনে যায়। অনেকে আবার সমাজে হোমরাচোমরাদের পর্যায়েও রয়েছে।
সুদীর্ঘকাল ধরে এই মাদকের ব্যবসা চলে আসছে, চলছে এবং চলবে। মাদক মানে আমি গাঁজার কথা বলছি না; ফেনসিডিল, হেরোইন আর ইয়াবার কথা বলা হচ্ছে। এসবের আবার নানা ধরনের কোড নেমও আছে। সেগুলো মাদকব্যবসায়ী, মাদকসেবী আর তাদের কাছ থেকে বখরা তুলে খাওয়া মানুষের বিবেক কিংবা মানুষের বন্ধুরা জানেন!
তো বলছিলাম হালখাতার কথা! হালখাতা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে লুচি, বন্দে, মিষ্টি আবার মাংস-পোলাওয়ের চিত্র উঠে আসে।
কিন্তু হালখাতায় এক পোটলা গাঁজার সাথে একটু মিষ্টি- শুনেছেন কি কেউ?
না শুনলে বলি সে কাহিনী। বিরাট কোন কাহিনী নয়, খুব সামান্য।
গত শুক্রবার রাতে আনিসুর রহমান নামে এক ভদ্রলোক যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মধুপুর এলাকায় আয়োজন করেন হালখাতা অনুষ্ঠানের। তবে, সেটি প্রকাশ্য কোন স্থান নয়- একটা বাগান। আর দিনের বেলা নয়, রাত ১০টার দিকে। অনুষ্ঠানে একদল পুলিশ হানা দেয়। ভাববেন না, পুলিশ হালখাতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছিল। সেখানে গিয়ে তারা
জয়নগর গ্রামের সেলিম, মাছনা গ্রামের জসীম, নাসিম, হোগলাডাঙ্গা গ্রামের শহীদ, বাহাদুরপুর গ্রামের ত্রিনাথ, তরিকুল, অশোক, উত্তর বাহাদুরপুর গ্রামের আদম, রহমান এবং মধুপুর গ্রামের আনুকে আটক করে।
যাদের আটক করা হয়েছে, তারা সবাই দিনমজুর। কাজ শেষে রাতে বাগানে হালখাতা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এ সময় আনিসুর তাদের আপ্যায়ন করেন মিষ্টি এবং কয়েক পোটলা গাঁজা দিয়ে।
গাঁজাকে নিরীহ একটা নেশা বলা যায়। প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি ফকির শওকত আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একদা বলেছিলেন, যুবদের মাদক থেকে রক্ষা করতে চাইলে বাংলা মদ, গাঁজা অার শীতকালে তাড়ি পানে শিথিলতা আনা প্রয়োজন।
তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, গাঁজা ব্যবসায়ী বা সেবনকারীকে ধরতে বিশাল বিশাল অভিযান পরিচালনা না করে বরং ওইদিকে নজর দেন- যেগুলো আমাদের যুবসমাজকে অকেজো, মেধাহীন, চোর, সন্ত্রাসী, সমাজবিরোধী করছে!
©somewhere in net ltd.