নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৫ ঘণ্টা কাজের মজুরি ৯০ টাকা!

০১ লা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫

চাতাল শ্রমিক গোলাপী রাণী মণ্ডলের বয়স ৫০। গত তিন বছর কাজ করছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ এলাকায় মীর মিজানুর রহমানের মিলে। গোলাপীর বাড়ি খুলনার দাকোপ থানার চালনা বাজার-সাহেরাবাদ এলাকায়। সেখানে থাকেন মা-বোনসহ চারজন। নিজে মিল মালিকের চাতাল লাগোয়া খুপড়িতে বাস করেন। দিনে ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, আর মজুরি পান ৯০ টাকারও কম। গত এক বছরে গোলাপী মাংস খেয়েছেন মাত্র একদিন। মিলে কাজ করার পর বাজার, রান্না সব নিজে করেন। বাগানের বিভিন্ন শাক তুলে খান; আয়ের টাকা সাশ্রয় করে মা-বোনের জন্য পাঠান।
শুধু গোলাপী নন; যশোরে তার মতো এমন শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। কাজ থাকলে আয় হয়, নইলে বেকার। কাজহীন সময়ে তাই ধারদেনা বা দাদন নিয়ে চলতে হয় তাদের। গোলাপী জানান, এখন তার ঋণ নয় হাজার টাকা। এই টাকা আর শোধ দেওয়া হয় না।
যশোর খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, যশোর জেলায় প্রায় চার শ’ চাতাল মিল রয়েছে। এখানে কাজ করেন প্রায় চার হাজার শ্রমিক। এদের মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
চাতাল মিল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমে তারা মাসে চার থেকে পাঁচবার চাতালে ধান ফেলেন। প্রতিবার এক শ’ থেকে সর্বোচ্চ দেড় শ’ মণ। তাদের কাজ হলো ধান সিদ্ধ, সেগুলো শুকানো এরপর ধান থেকে চাল ভাঙানোর পর মসৃণ করা। এসব কাজ সম্পন্ন করতে পাঁচ-ছয়জন শ্রমিকের তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। এই কাজের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় মজুরি। তারা মণপ্রতি ধান থেকে পান ২৮ টাকা।
মিল শ্রমিক পারুল, জোহরা জানান, অসুস্থ হলে কাজ বন্ধ। তাই আয়ও হয় না। মিল মালিকরা অসুস্থ হলে চিকিৎসা খরচ, মজুরি কিছুই দেন না।
এসব বিষয়ে মিল মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আমদানি করায় মিলারদের বেশ ক্ষতি হচ্ছে। ভারতীয় মোটা চাল দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা দরে, সেখানে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ টাকা। চাল বিক্রি করতে না পারায় মিলে ধানও ভাঙানো কম হয়, সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের উপার্জনও কমে আসে।’
তিনি দাদন দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার এখানে যারা কাজ করেন তারা ঋণ নিয়েছেন। এগুলো কাজের সিজনে অল্প অল্প শোধ দিয়ে দেন।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, তিনি পাঁচ হাজার টাকা দাদন নিয়েছেন মাসিক ১০ টাকা সুদে। এই টাকা শোধ করতে করতে আরেক সিজন চলে আসে বলে তিনি জানান।
যশোরের অভয়নগরে মিল শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ জানান, অভয়নগরে ৩৩টির মধ্যে তারা ২২টি মিল থেকে এক শ’ জন শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে নারী ৮৩ এবং ১৭ জন পুরুষ। তাদের তথ্যে উঠে এসেছে, মিল শ্রমিকরা দৈনিক গড়ে ১৪ দশমিক ৩৯ ঘণ্টা কাজ করেন; কিন্তু মজুরি হিসেবে গড়ে পান প্রায় ৯৪ টাকা। অথচ, তাদের সাংসারিক খরচ দৈনিক গড়ে ২১৩ টাকার কিছু বেশি। শ্রমিকরা গড়ে আড়াই শ’ টাকা করে মজুরি প্রত্যাশা করেন।
অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, দুই-তিন মাস প্রায় বেকার থাকার কারণে তারা মিল মালিকসহ আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে ঋণ ও দাদন নিয়ে থাকেন; ঋণ বা দাদন নেওয়া শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ।
এসব বিষয়ে কথা হয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর যশোরের লেবার ইন্সপেক্টর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিলে শ্রমিকদের কর্ম ঘণ্টা ও মজুরির বিষয়টি দুঃখজনক। মিলে গেলে মালিকরা বলেন তারা এটি চালাচ্ছেন না; বেপারিরা চালাচ্ছে। এ নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।
তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের সঙ্গে বসে কিছু শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি রফা হয়েছে। দু’বছর আগে শ্রমিকরা মণপ্রতি ধানে পেতেন মোটে ৯ টাকা। এখন আগের তুলনায় বেড়েছে।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.