নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন আর বাস্তবতা- ঘুমভাঙা সকালের মতো

তৌহিদ জামান73

বাইসাইকেলও কখনো কখনো সুখকর স্মৃতি হয়ে যায়!

তৌহিদ জামান73 › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বর্ণজয়ী শিলা নৌবাহিনীতে স্থায়ী চাকরি চান

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১১

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬

বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ২০১৩ সাল থেকে অস্থায়ীভিত্তিতে (চুক্তিভিত্তিক) চাকরি করছেন মাহফুজা খাতুন শিলা। সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে তার কৃতিত্বের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে নৌবাহিনীর অবদান। তাদের কারনেই এতদূর আসতে পেরেছেন তিনি। তিন বছরের ট্রেনিংসহ সব ধরনের খরচ বহন করেছে নৌবাহিনী। ‘এই সংস্থার কারনেই এসএ গেমসে অংশগ্রহণ এবং সোনা জয়’, দৃঢ়কণ্ঠে বললেন শিলা।
২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। নৌবাহিনীতে অফিসার পদে আবেদনও করেছেন। শিলা এখন আশা করছেন, নেভিতে একটা স্থায়ী চাকরির।
১২তম এসএ গেমসে দুটি সোনা জিতে আনা যশোরের মেয়ে মাহফুজা খাতুন শিলা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তার ব্যস্ততা তুঙ্গে। আশপাশের মানুষ আসছেন হীরের টুকরো এই মেয়েটিকে দেখতে। শুক্রবার দুপুরে এই ব্যস্ততার মাঝেই তিনি কিছুটা সময় দেন বাংলা ট্রিবিউনকে।

গল্পের শুরুটা তেমন সুখকর নয়...
১৯৯৮ সালে মাহফুজা তখন অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন। স্কুলের প্রধানশিক্ষক তাকে নিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। কিন্তু অনুষ্ঠানে যাবেন কী পড়ে, জুতো নেই । পরে অন্য একজনের কাছ থেকে একজোড়া স্যান্ডেল নিয়ে তারা রওয়ানা হন প্রতিযোগিতায়।গিয়ে দেখেন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রায় সব ইভেন্ট শেষ। মানে উচ্চ লাফ, দীর্ঘ লাফ, দৌড় ইত্যাদি সব শেষ হয়ে গেছে; আছে কেবল সাঁতার!
প্রধান শিক্ষক তাকে জিজ্ঞেস করেন- সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিতে চান কি না। হাঁ সূচক জবাব দেন এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ‘সোনার মেডেল দিয়েই শুরু’ বললেন শিলা।

শৈশব-কৈশোর...
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলী আহমেদ গাজী এবং করিমননেছার মেয়ে শিলা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। প্রাইমারি পড়েছেন স্থানীয় সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ভর্তি হন নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০২ সালের শেষদিকে অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালে ভর্তি হন বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শিলা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হন। ২০০১ সালে জাতীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ২০০২ সালে ৭ম বাংলাদেশ গেমসে সাঁতারের দুটি ইভেন্টে তিনি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ২০০১ সালে তাকে বর্ষসেরা সাঁতারু নির্বাচিত করে এবং ২০০৭ সালে যশোর প্রেসক্লাবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুয়াল হোসেন তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

মেডেলের সোনা বিক্রি করে পিতার চিকিৎসা...
শিলার বড়ভাই হাসান আলী গাজী জানান, তার বোন সাঁতারে বিভিন্ন সময়ে সোনা, রূপা আর ব্রোঞ্জ মিলিয়ে ৫২টি মেডেল পেয়েছেন। তাছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্রেস্টও।
অভাব অনটনের সংসার তাদের। ৬ শতক জমিতে ৫ ভাইবোন আর মা-বাবাকে নিয়ে থাকেন তারা। বাবা পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছেন গাভি। সেই গাভির দুধ বিক্রির টাকা, আর শিলা যা দেন- তা দিয়ে চলে সংসারের খরচ।
হাসান আলী গাজী আরো বলেন, অভাবের কারণে সাঁতারে পাওয়া সোনার মেডেল বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল।

বাড়িতে ঢুকেই কাঁদলেন...
মাহফুজা খাতুন শিলা বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে সোনা জিতলাম দেশের জন্যে। কিন্তু আবেগ ততো বেশি কাজ করেনি। বরং যশোরে বাস থেকে নামার পর বিশেষ করে অভয়নগরে আসার পর সেই আবেগ ঠেকাতে পারিনি। চোখে জল এসে গেছে আমার; আশেপাশে তাকিয়ে দেখি- যারা আমাকে দেখতে এসেছেন তারাও কাঁদছেন। এ কান্না সুখের, এ কান্না আবেগের, এ কান্না আমার প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের ভালবাসার।’
১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শিলা তাদের বাড়ির আঙিনায় পৌঁছে দেখেন আঙিনা ভরে গেছে অগণিত মানুষে। এ সময় আবেগ তাড়িত হয়ে হয়ে পড়েন তিনি। কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছিলেন না। থেমে থেমে বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমি আজ এ অবস্থানে আসতে পেরেছি। আমার অর্জন নওয়াপাড়াবাসীর অর্জন, গোটা দেশের অর্জন।’
দুপুরে ঢাকা থেকে যশোরে পৌঁছালে সেখানে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর বিকেলে প্রেমবাগ মোড়ে এবং সোয়া ৫ টার দিকে পাঁচকবর এলাকায় পৌঁছালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, এলাকাবাসী ও কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং বাদক দল ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানায়।
শিলার আগমন উপলক্ষে যশোর-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। নওয়াপাড়ায় বিভিন্ন রাস্তায় পাশে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার, প্লাকার্ড ও পতাকা।

পথে পথে সংবর্ধনা...
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সবার ভালবাসা আর শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন শিলা। যশোর থেকে শুরু করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আর সংবর্ধনার জবাবে জাতীয় পতাকা নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
১৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে সোনাজয়ী জলের মেয়ে মাহফুজা খাতুন শিলার সংবর্ধনা দেওয়া হয় তার নিজ এলাকা অভয়নগর উপজেলায়।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় নওয়াপাড়া শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে।
ভালবাসায় সিক্ত শিলা বলেন, ‘কখনও ভাবিনি যশোরের মানুষ আমাকে এত ভালবাসা দেবে। খবর পেয়েছি আমাদের বাড়ির যে সমস্যা ছিল তার সমাধান হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী তার দায়ভার নিয়েছেন এতে অভিভূত শিলা বলেন, ‘যে সম্মান আমি বাংলাদেশের জন্য এনেছি, তারচেয়ে বড় সম্মান দিয়েছে আমাকে দেশ।’
তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেশবাসীকে স্মরণ করেছেন। বিশেষ করে তার মামাতভাই রেজাউল হোসেন বিশ্বাস, যিনি বিকেএসপিতে পড়াশুনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের খরচও দিয়েছেন। তার অর্থনৈতিক সাপোর্টের কথা তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করেন। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাঁতারে তার যশোরের কোচ আব্দুল মান্নানের প্রতিও।
যশোরের জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘মাহফুজা এখন শুধু যশোরের নন, তিনি সারাদেশের মেয়ে-আমাদের গর্ব। তার সুবিধার্থে তাদের গ্রামের বাড়িতে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির তাকে একটি নতুন বাড়ি করে দেওয়া হবে।’

বাড়িতে বিদ্যুৎ বাতি...
১৭ ফেব্রুয়ারি শিলার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার সালাহউদ্দিন আল বিতার জানান, প্রধানমন্ত্রী ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈনউদ্দিনের জরুরি নির্দেশে জলকন্যা মাহফুজার বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়।

আগামীর স্বপ্ন...
শিলা বলেন, ‘১৯৯৮ সালে প্রথম সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে সোনা জিতেছি। আজ এসএ গেমসেও সোনা জিতেছি।’
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কলম্বোতে এসএ গেমসের ২০০৬ সালের আসরে সাঁতারে তিনি ব্রোঞ্জ পান। পরের বার ২০১০ সালে ঢাকায় পান রৌপ্য এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে জয় করলেন সোনা। ‘ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি’-হাসতে হাসতে বলেন মাহফুজা।
ইচ্ছে আছে পরের (২০১৮ সালে নেপালে অনুষ্ঠেয়) এসএ গেমসের। দুটি সোনা অক্ষুণ্ন রেখে তৃতীয় আরেকটি জয় করার ইচ্ছে রয়েছে। আর প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন অলিম্পিক আসরে খেলার। ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার তীব্র বাসনা রয়েছে শিলার।
অলিম্পিকে খেলতে হলে অবশ্য প্রয়োজন লং টার্ম ট্রেনিংয়ের। এ লক্ষ্যে তিনি দেশের বাইরে ট্রেনিংয়ের প্রতি জোর দেন। তার মতে, ‘এবারের অলিম্পিকে কী হবে জানি না। তবে, সিলেকশনের সময় পেরিয়ে যায়নি। দুজনকে ট্রেনিংয়ের জন্যে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট চাইলে এখনও আমাকে নিতে পারেন।’
তিনি মনে করেন, স্কলারশিপে ইংল্যান্ড, কানাডা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে গেলে ভাল হয়। ভারত বা পাকিস্তানের সাঁতারুরাও ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
শিলা বলেন, ‘যদি বাইরের দেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা নাও যায়, তবে দেশে কোচ পার্ক টেগুনের তত্ত্বাবধানে এই মুহূর্তেই তা শুরু করা প্রয়োজন। তিন মাসের ট্রেনিংয়ে কোচ হিসেবে উনি (পার্ক টেগুন) থাকলে ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা নিয়ে আমার চিন্তা করা লাগবে না।’

শিলার রেকর্ড...
২০১৪ সালে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল গেমে কলম্বোর রেকর্ড ভাঙেন শিলা। ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সেসময় রেকর্ড ছিল ৩৪ দশমিক ৯৭ সে. আর শিলা করেন ৩৪ দশমিক ৮৫ সে। আর ২০১৬ সালের এসএ গেমসে এই রেকর্ড দাড়ায় ৩৪ দশমিক ৬৬ সে.
শিলা জানান, এবারের ইভেন্টটি তাদের জন্যে ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। ১০০ মিটারে কে প্রথম হবে- আমরা বুঝতে পারছিলাম না। প্রায় সবারই ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড ও সেকেন্ডের ভগ্নাংশের সামান্য একটু।
তিনি আশা করেন. পরের বার আরও ভাল করতে পারবেন। প্রশিক্ষণ পেলে ২০০ মিটারেও অংশ নিতে প্রস্তুত তিনি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: সরকারি সহযোগীতা পেলে এ দেশকে আরো সোনা এনে দিতে পারে শিলা। মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.