![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
বড় মামা ডাক্তার হয়েও হার্ট এটাক্ট করায় আজ তিনি হাসপাতালে ভর্তি। হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। রিং পরানো হয়েছে। এখন সুস্থ হওয়ার পথে। কিন্তু 'ভয়'টাতো রিং হিসেবে পরিয়েই নিয়েছেন। যেটা তাঁকে আর কোনোদিন পূর্বের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিবে না।
কত তারাতারি যে আমাদের জীবনের কত সময় চলে যায় তা আমরা টেরই পাইনা। টের পাই তখন যখন দেখি সময় ফুরিয়ে গেছে, কিংবা যখন সময় আর বেশি নেই।
কিন্তু মামারতো সময় ফুরিয়ে যাওয়ার সময় এখনও হয়নি। বয়স মাত্র ৫৫ বছর। কিবা এমন বয়স হয়েছে ওনার! জীবনের পঞ্চাশ বছর বয়সে হলিউডের নায়করা পূর্ণতা লাভ করে। দেখাতে থাকে তাঁদের অভিনয় শৈলী। সেই হিসেব করলেতো মামার এটি পূর্ণতার বয়স। করে দেখানোর বয়স। দেখিয়ে দেয়ার বয়স। যদিও আমাদের ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত আঠেরো বছর বয়সকে দেখিয়ে দেয়ার বয়স বলেছিলেন!
সে যাইহোক, আমার মামাও হলিউডের পরিশ্রমী নায়কদের থেকে কম পরিশ্রমী নয়। মামাতো রিয়াল হিরো। তিনি পরিশ্রমী একজন চিকিৎসক। ক্লান্ত হোন না বললেই চলে। কাজ আর কাজ। মামার বাসায় যতবার গিয়েছি, দেখেছি তিনি সবার পরে ঘুমালেও উঠেছেন সবার আগে।
মানুষের উপকার করে তিনি যেন খুব মজা পান। সেজন্য সৃষ্টিকর্তা তাঁর পেশাটাও এমন করে দিয়েছেন নিশ্চয়, নাহলে তিনি ডাক্তার হবেন কেন? তাঁকে হাসপাতালে যেতে দেখেছি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে। অনেক দিন সিডি এইট্টি মোটর সাইকেল চালিয়ে জাপানি সুজুকি নেন। সেটা নেয়ারও একযুগ হলো প্রায়। গত তিরিশ বছর ধরে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে চাকরী করলেও ওনার এবং ওনার পরিবারের ট্রান্সপোর্টেশন হিসেবে এই একটি সুজুকি মোটর সাইকেল।
সৎ মানুষেরা নাকি অনেক রাগী হয়, মামা তার উৎকৃষ্ট প্রমান। একটু উল্টাপাল্টা, দুই নম্বরি বা মিথ্যার আভাস পেলেই ওনার রাগ আর দেখে কে? কিন্তু বাকি সময় তিনি খুব হাসিখুশি। ‘জীবন’ বোঝাতে তাঁর কত যে গল্প, কত যে সত্য ঘটনার আলোকে উদাহারন, কাউকে বোঝালে ওই ব্যাক্তি বা রোগী না বুঝে পারবেনই না।
তিনি যে আমার জীবনে কত ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছেন তা উনিও জানেন না। তাঁর কিছু কিছু ঘটনা ভাগাভাগি করতে চাই আমার এই লেখার মাধ্যমে।
আমার তখনো পড়াশুনা শুরু হয়নি, তাই হাতে অফুরন্ত সময়। মামা তখন রাজশাহী মেডিকেলে কর্মরত। আর নানা সরকারি ডাক্তারের চাকরী থেকে মাত্র অবসর গ্রহণ করেছেন। আমি খুব আয়েস করে নানার বাসা বেরাতে এসেছি। বাসার ভিতরে থাকা পেয়ারা ও তেজপাতা গাছে চড়ে, ছোট মামার ছোট বাগানের ফুল গাছগুলোতে সকাল বিকাল পানি দিয়ে দিন আমার ভালোই কেটে যাচ্ছিল। এমন সময় আমাকে নিয়ে নানা-নানি কি যেন বুদ্ধি করলেন। আর তারপরের দিনেই খুব সকালে নানা-নানি আমাকে নিয়ে ট্রেনে রওনা দিয়ে দিলেন।
নানি অবশ্য আমাকে আগের রাতেই বলে রেখেছিলেন, তোর বড় মামার বাসা রাজশাহী যাব আগামীকাল। তাই খুব সকালে - অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠতে হবে, দেরি করে উঠলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে, তখন কিন্তু আর রাজশাহী যাওয়া হবে না। আমিতো খুব টেনশন নিয়ে রাতে খাওয়ার পরে সময় নষ্ট না করে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু খুব সকালে নিজে টের না পেলেও নানি আমাকে ঠিকই ডেকে দিলেন।
শার্ট-প্যান্ট-জুতো পরিয়ে রিক্সা করে আমাকে নিয়ে যখন নানা-নানি রেলষ্টেশনে পৌছালো তখনো সূর্য ওঠেনি। তবে আবছা আলোর মধ্যদিয়েও দেখলাম অনেক মানুষ রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছে। আমরাও তাঁদের একপাশে দাড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন ট্রেন আসলো তখন চারপাশ পরিষ্কার। দেখলাম ট্রেন অনেকটা বাসের মতো কিন্তু তার অনেক চাকা, আর বিশাল বড় লম্বা। মনে হয় হচ্ছে অনেক গুলো বাস লোহার শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে। আর লাইন দিয়ে চলার জন্য লোহার চাকা লাগিয়েছে। মনের মধ্যে খুব উত্তেজনা কাজ করছিলো, এতো বড় একটা জিনিসের ভিতরে ঢুকে নীলফামারী থেকে রাজশাহী যাব, কি মজাই না হবে!
নানার কোলে করে ট্রেনে উঠলাম। পরে নানির কোলে জানালার পাশে বসলাম। আমি নাকি ছোট, তাই আলাদা করে টিকেট কাটা হয়নি। সে বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালাম না। নানি আর আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, দেখছি বাইরের গাছ, মাঠ, পুকুর, খেত, গরু, ছাগল, এমনকি মানুষ - সবই ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু আর নানি স্থির। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকার খেলায় নানি মাঝে মাঝে নানার সাথে পান খাওয়ার বিরতি নিলেও আমি নিচ্ছি না। এই হিসেবে আমি ফার্স্ট আর নানি লাড্ডু।
রাজশাহী পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। স্টেশন থেকে বড় মামা এসে আমাদের নিয়ে গেলেন তাঁর বাসায়। রিক্সায় যেতে যেতে মনে হল সেখানে ঠাণ্ডার পরিমান বেশি। সেখানকার যেন বাতাসটাই ঠাণ্ডা। তবে আমি মনে মনে উষ্ণ অনুভব করলাম, কারন আমি গিয়েছি দেখে মামা অবাক হয়েছেন এবং খুশি হয়েছেন। মামাতো ভাইটার সাথে এবার খেলা জমবে জম্পেশ! শুনেছি তার নাকি রিক্সা গাড়ি আছে। যদিও সে চালাতে পারে না। কিন্তু আমি নিশ্চয় পারবো, আমিতো তার চেয়ে দুবছরের বড়!
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমাকে দেখিয়ে মামা নানিকে জিজ্ঞেস করলেন, এ আসার সময় কাছাল (ঝামেলা) করে নাইতো আম্মা? প্রশ্ন শুনে আমি একটু অবাকই হলাম। আমি ঝামেলা করতে যাব কেন, বরংচ নানিই মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে তাকানোর খেলায় অযথা বিরতি দিয়ে অনেক কিছু দেখার মিস করেছেন। নানি মামার প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে বললেন, না কোনো কাছাল করেনি। শুধু কয়েকবার ঘুমিয়ে পড়েছিল, এই যা। নানির উত্তর শুনে আমিতো আরও অবাক হয়ে গেলাম। আমি কি আমার লেন্সকভার ভাঙ্গা প্লাস্টিকের দূরবীনটার মতো নাকি যে - সবসময় হা করে তাকিয়ে থাকবো!
২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৪
চড়ুই বলেছেন: "কত তারাতারি যে আমাদের জীবনের কত সময় চলে যায় তা আমরা টেরই পাইনা। টের পাই তখন যখন দেখি সময় ফুরিয়ে গেছে, কিংবা যখন সময় আর বেশি নেই।"
ভালো।
৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
আহমেদ আলিফ বলেছেন: ভালো লেগেছে , পরের পর্বগুলোও তাড়াতাড়ি চাই!
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৯
আজীব ০০৭ বলেছেন: ++............