নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় মামা পর্ব-২

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

তখন আমি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস টু’তে পড়ি। মামা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে সৈয়দপুরে এসেছেন। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে মামা আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইলেন। স্কুলের তেমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না, বিশেষ করে ওয়ান ও টু ক্লাসে। মামাতো ভাইটার অনেক খেলনা, সেই সব দিয়ে খেলার লোভে আমি মামার সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। আম্মাও আমার অমত হলেন না।



মামাতো ভাইটা নার্সারি ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। তার অনেক বই। অনেক লেখা পড়া। মামি তাকে ধরে ধরে পড়ায়। সেও পড়ে। তাকে পড়ানোর সময় মামি আমাকে পাশেই রাখতেন। আমি তখন বইগুলো নেড়েচেড়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখতাম। বেশির ভাগই ইংলিশ বই। আর সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভরা। বার বার মনে হতো যদি এই সব বইয়ের লেখাগুলো পড়তে পারতাম!



মামাতো ভাইটাও পারে না, ওকে মামি দেখিয়ে দেখিয়ে পড়ায়, কিন্তু সেতো দেখেই না, জানবে কি করে। আমি যদি ওর কাছে জানতে চাইতাম, এটা কি? এখানে কি লেখা আছে? ও উত্তরে শুধু বলতো, আমি জানিনা। তখন আমি নিজে নিজে আমার এ বি সি ডি জ্ঞান দিয়ে শব্দগুলো বানান করতাম, কোনো কোনোটার উচ্চারনও করতাম, কিন্তু মানে করতে পারতাম না, সেগুলোর যে কি অর্থ ছিল তা মামি আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতো না।



মামিকে জিজ্ঞেস করতে আমার লজ্জা লাগতো, কারন আমি বড় হয়েও ছোট ভাইয়ের বই পড়তে পারিনা! এই কথা ভেবে যদি মামি হাসে? সেই লজ্জা আমি সইতে পারবো না। সেই ভয়ে মামিকে বলতাম না। আর আল্লাহতো নিরাকার, তিনি কি আর সেই সময়ের সমস্যার সমাধান তাৎক্ষণিক করবেন? তাতো তিনি কখনোই করেন না। মামির কাছে জানতে চাওয়ার লজ্জাটা আমি যদি কাটিয়ে উঠতে পারতাম তাহলে আল্লাহ নিশ্চয় আমাকে এতো দিনে আরও সহায় হতেন।



ইংলিশে আমার বড় এক গুন বা প্রতিভা ছিল। সেটা হলো ‘দি কাউ’ প্যারাগ্রাফ–এর দশ লাইন আমি মুখস্থ বলতে পারতাম, এমন কি লিখতেও পারতাম। আম্মা আমাকে শিখিয়েছিলেন। আমার ক্লাসের আর কেউ পারতো না। মামার বাসা গিয়েও আমি আমার প্রতিভা দেখাতে লাগলাম। মামাতো ভাইটা একটা ডাক্তারি প্যাডে ছবি আঁকলে আমি অন্য একটা প্যাডে দি কাউ লিখতাম। এভাবেই দিন যাচ্ছিলো।



হটাৎ একদিন মামা হাসপাতালে গেলেন না। তিনি আমাদের দুজনকে নিয়ে বসে আছেন, ভাইটা ছবি আঁকছে, আমি আমার প্রতিভা দেখাচ্ছি। আমার প্রতিভা দেখে মামা খুব খুশি হলেন। মামাকে খুশি করতে পেরে আমারও খুব আনন্দ হলো।



দুপুরে এক রোগী বাসায় এলেন, মামা প্রেসক্রিপশন লিখবেন এরকম কোনো অব্যবহৃত প্যাড পুরো বাসায় খুঁজে পেলেন না। কারন সব প্যাডেই আমরা ছবি এঁকেছি নয়তো দি কাউ লিখেছি। মামাতো বেজায় রাগ। পরে মামির বের করে দেয়া একটা কাগজে প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীকে বিদায় করলেন। বিকেল থেকে মামা আমাকে দি কাউ বলে ডাকতে শুরু করলেন। পরবর্তী যে কয়দিন ছিলাম, মামা আমাকে সেই নামেই ডেকেছেন। আমার সে যে কি লজ্জা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.