নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্য ও নস্টালজিয়া

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

ভাল ছাত্র কোন ক্লাসেই ছিলাম না। তবে ভাবতাম পড়া দরকার! এসএসসি পরীক্ষার পর হাতে ছিল অগাধ সময়, খেলাধুলা আর বাকি সময়টা গল্পের বই পড়েই কাটিয়ে দিতাম। পুরো তিন মাস ওভাবে কাটার পর এইসএসসি-র দ্বিতীয় বর্ষের মাঝ অবধি আমি কিছু লেখককে তাঁদের লেখার মাধ্যমে চিনতে শুরু করি; রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, জাফর ইকবাল, জহির রায়হান, সত্যজিৎ, সমরেশ, শীর্ষেন্দু, সুনীল, নিমাই, বিভূতিভূষণ, ফাল্গুনী, তসলিমা, ডেল কার্নেগী, মেক্সিম গোর্কী। তখন থেকেই সাহিত্যের প্রতি একটা আলাদা ভাললাগা-ভালবাসার সৃষ্টি হয়।

অনার্সে বাংলা নিয়ে পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু পড়া হয়নি, পড়েছিলাম সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকতায় পড়তে গিয়ে সাহিত্য পড়ার জন্য অনেক সময় পেয়েছি। একটি জাতীয় পত্রিকার ক্যাম্পাস পাতায় আর একটি ওয়েব পোর্টালে বিনোদন সেকশনে কাজ করেছি। সেসময় আমার সাহিত্যের শিক্ষাটা অনেক কাজে দিয়েছে। জানি লিখতে হলে অনেক বেশি পড়তে হয়। সেই পড়া যে কাজ করতে গিয়ে এতোটা কাজে লাগে ভাবিনি।

সাহিত্য পড়ে মানুষের প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতি, অবস্থান, পরিস্থিতি এসব মানবিক দিকগুলো সহজেই অনুমান করতে পারতাম। লিখতেও পারতাম। লিখে বেশ শান্তি পেতাম। যা এখন খুব একটা পারি না। এটা পারিনা শুধু সাহিত্য থেকে দূরে থাকার কারনেই। নানান ব্যস্ততায় সাহিত্য থেকে দূরে সরে যেতে হয়। সাহিত্য থেকে দূরে থাকা মানে যেন নিজের কাছ থেকেই দূরে সরে থাকা। নিজের কাছ থেকে সরে থাকা মানে নিজেকেই ফাঁকি দেয়া, নিজের মনকে, নিজের আত্মাকে ফাঁকি দেয়া। সে কঠিন এক কাজ। নিজের উপর যেন এক সীমাহীন চাপ সৃষ্টি করা। প্রেমিকা থেকে দূরে থাকার মতই অনেকটা।

কলেজে পড়া অবস্থায় আমার মাথার চুলগুলো একটু বড় হতেই কোকড়া হতে শুরু করতো, অনেক চেষ্টা করেও সোজা বা বসাতে পারতাম না চুলগুলো, কানের উপর দিয়ে ফুলে ফুলে থাকতো। তা দেখে মনে হতো যেন আমার চুলগুলো বইয়ের মলাটে দেখা হুমায়ূন আজাদের মতই হতে চলেছে, বয়স হলে - চুলগুলো শুভ্র হলে হবে সেম টু সেম। আর ভবিষ্যতেও কি তাঁর মতই লেখক হতে চলেছি নাকি, আল্লাহ্‌ই জানেন! উনি আমার প্রিয় লেখক ছিলেন বলেই এমনটা ভাবতাম। কিন্তু সেই সময়টাতে দেশের অস্থির এক পরিস্থিতির মধ্যে শুনতে পেলাম দুর্বিত্তের হাতে তাঁর আহত হওয়ার কথা। খানিক সুস্থ হয়ে তার কিছুদিন পরেই মৃত্যু। এঘটনা আমার কিশোর লেখক মনটাতে বড় এক আঘাত দিয়েছিল তা বোঝান যাবে না। তাঁর স্বাধীন মনোভাব, স্বচ্ছ লেখা, স্পষ্ট স্বীকারোক্তিমূলক লেখনী - যা কিনা আমাকে লেখক হতে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেছে তাঁকেই এভাবে শেষ করা হলো। যেন আমার লেখক মনটাও তখন একবার মরে গিয়েছিল।

যাহোক এখন বুঝি তাঁর মত পন্ডিত হওয়া আর মনে মনে মন কলা খাওয়া একি কথা! আর উনি বেঁচে থেকেও আমাকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন আর সমাজ ওনার কাছ থেকে কতটুকু গ্রহণ করতে পারতো তা উপর-ওয়ালাই ভাল জানতেন। যাক সে কথা, আর শরৎচন্দ্র পড়ে বারবার ভেবেছি ইনি কোন যাদুকর নয়তো, তা নাহলে এতো সুন্দর করে গল্পের শুরু ও শেষ করেন কি করে!

বর্তমানে আনিসুজ্জামান, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আনিসুল হক, এমদাদুল হক মিলন, সেলিনা হোসেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাকারিয়া স্বপন, সুমন্ত আসলাম-সহ আরও অনেকের লেখা বই ও কলাম পড়ে শান্তি পাই। তবে আগের শান্তিটা এখন আর পাইনা এটা হয়তো সময়ের দোষ, নয়তো আমার বয়সের দোষ। ভাষা ও সাহিত্য পরিবর্তনশীল তাই এটা মেনে নিয়েই জীবন নদীতে এগিয়ে যেতে হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫২

রিভার্স বলেছেন: শরৎ, রবীন্দ্ররা বারবার আসে না। যে শতাব্দীতে আসে ঐ শতাব্দীটা লাকি। সাবলীল লেখা। পড়ে আরাম পেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.