![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
কোথায় আছো? আমি জানি যে সে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার গেছে। তবুও জিজ্ঞেস করলাম বেশি কিছু জানার জন্য। কিন্তু সে বেশি কিছুই জানালো না। উত্তরে বললো, এখন বাসাতে। ঢাকা চলে এসেছি আজ সকালেই। ফেসবুকে দেখিছি, ওরা বেশ মজা করেছে। তবে কয়েকজনকে চিনতে পারিনি, তাই জিজ্ঞেস করলাম, কে কে গিয়েছিলে? সে সংক্ষিপ্ত পরিচয়ে পরিচয় করালো। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও কখনও আমাদের সম্পর্কের সম্মোধন তুমি থেকে তুই-এ নামেনি।
মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগের কথা যখন আমরা ছয় বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম কক্সবাজার! কোন মেয়ে বান্ধবীও ছিল না। আর এখন দুজন বাদে চার জনেই বিবাহিত। বিয়ের আগে থেকেই কর্ম ব্যস্ততার জন্য একে অন্যের খোঁজ খবর একটু কমই হতো, তবে মাসে একবার করে আমরা কোন না কোন বাহানায় মিলিত হতাম। কিন্তু বিয়ের পর সে ফুসরত মেলা বেশ ভার হয়ে গেছে।
অতীত রোমন্থন করার মজাই আলাদা আর সেটা যদি ভাল কিছু হয় তাহলে তো কথাই নেই। বন্ধুমহলে অনেক বন্ধু থাকলেও কক্সবাজার আমরা সেবার ছয়জনেই গিয়েছিলাম। আর সেটা ঠান্ডার সময়েই। দারুন ছিল সেই যাত্রা। দুটো ডাবল বেডের রুম নিয়ে ছিলাম ছয়জন। একরুমে তিনজন করে। সেটাও যেন এক মজার ঘটনা। দুটো বেড জোড়া লাগিয়ে যে তিনজনের মধ্যে একটু বেটে তাকে শোয়ালাম দুজনের মাঝখানে। বড় দুজন লেপ টানাটানি করে ঠিক করে নিয়েছি এমন সময় ছোট জন বলে কিনা ঠান্ডা লাগছে, আমি মাঝখানে থাকবো না।
দুজনে ওর কথায় পাত্তা দিলাম না, হাসতে শুরু করলাম। একটু পরে সে বলা শুরু করলো, সিরিয়াসলি আমার ঠান্ডা লাগছে। আসলে হয়েছে কী, সে তো দুই বেডের মাঝ খানে শুয়েছে, সেই মাঝখান দিয়েই ঠান্ডা ঢুকছে! সে মাঝখানে থাকবে না বলে বিছানার কোণায় গিয়ে বসে বলতে থাকলো সারারাত সে ওভাবেই থাকবে। কি আর করার, বাধ্য হয়েই আমাদের লম্বা দুজনের ব্যাগ থেকে শীতের কাপড় বের করে বেডের মাঝখানের ঠাণ্ডা প্রবাহ বন্ধ করতে হল। নিজে শুয়ে দেখালাম দুজনের চেয়ে সেই বেশি আরামে থাকবে - এমনটি বুঝিয়ে আশ্বস্ত করার পরেই তাকে শোয়ানো গেল। আর আমাদের শয়ন লীলার পুরো কথাবার্তা শুনে পাশের রুমে থাকা বাকি তিনজনের হাসির ইতি ঘটলো।
সকালে উঠে নাস্তা খেতে, সমুদ্র সৈকতে হাটতে, ঘোড়া বা মোটর বাইকে করে চড়ে বেরাতে, সমুদ্রের লোনা পানিতে গোসল করতে, গোছলের পর প্যান্টের পকেটে বালি জমেছে দেখতে, তীরে ভেজা বালিতে ঘুগরি পোকার নিপুন শৈলী দেখতে, দুপুরের খাবার খেতে, পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সমুদ্রের শেষ সীমা দেখার বৃথা চেষ্টা করতে, তীরে মাঝারী বা বড় প্রবালের উপর বসে থাকতে, শান্ত নিশ্চুপ সেই ক্ষণে একমনে সূর্যাস্ত দেখতে, সাফারি পার্কের গহীনে গিয়ে প্রানীদের দেখতে, রাতের খাবার খেয়ে তারপর হোটেলের রুমে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে নিতে কত শত স্মৃতি যে অলিখিত থেকে যাবে কক্সবাজারের মাত্র ঐ তিন দিনের ট্যুরে সে শুধু উপরওয়ালাই জানেন।
আমাদের মধ্যে এক বন্ধুর ছিল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, আর একজনের ছিল সাইবার শট। এদুটো দিয়ে অনেক ছবি তুলেছি আমরা। সদ্য কেনা ক্যামেরার উদ্যমতা, আর এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে শিক্ষক কিংবা বড় ভাইদের কাছে বেশ কিছু ক্যামেরার ব্যাকরণ শিখে সেগুলোর পুরো ইস্তেমাল করা হয়েছে। ক্যামেরার মেমরি ফুল করা হয়েছিল। আর আমাদের পাঁচ জনের হাতেই তখন ছিল ক্যামেরাওয়ালা ফোন, এসব দিয়েও কম ছবি তোলা হয়নি। অবশ্য একজনের ছিল টাচ ফোন। সেটারও একটা কাহিনী মনে পড়ছে, ধীরে ধীরে বলছি।
রাতে আমাদের মধ্যেই একজন কথায় কথায় জানালো তার একটা বান্ধবী কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে আগামীকাল কক্সবাজারে আসছে। অচীন জায়গায় এসেও চেনা বান্ধবীর দেখা হবে, সে তো দারুন ঘটনা। এমন ভাবতে ভাবতে সুখ সুখ ভাব নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে তার পৌঁছার সংবাদ পেলাম। কিন্তু ছাত্রীদের বাইরের কারো সাথে যোগাযোগ করে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে দুপুরে স্যারেরা সমুদ্র স্নানের জন্য সবাইকে নিয়ে যাবেন, তখন দেখা হওয়ার একটা সবর্ণ সুযোগ রয়েছে বলে জানালো।
গোছল করতে করতে এগিয়ে এলো আমাদের কাছে। দেখা হলো। ছবি তুলে চাইলো। অনেক ছবি তোলা হচ্ছে, ডিএসএলআর দেখে ঐ বান্ধবী তার আরও বান্ধবী-ম্যাডামকে ডেকে ডেকে ছবি তুলতে শুরু করলো। সমুদ্রের দিকে দু-এক পা করে এগিয়ে যেতে যেতে আমাদের বন্ধু তাদের ঢেউয়ের মধ্যে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে তুলতে পকেটে যে টাচ ফোনটা ছিল তা বেমালুম ভুলে গেল। একটু পরেই টের পেলেও ঢাকায় ফিরে ডাক্তার দেখিয়েও সেই ফোনের শেষ রক্ষা হয়নি। বান্ধবীরা ফোনের এই ট্রাজিক কাহিনী জেনেছিল অনেক পরে। সরি বলেছিল। তবে ঢাকায় ফিরেই ক্যামেরা দিয়ে তাদের তোলা ছবি পৌঁছে দেয়া হয়েছিল আন্তরিকভাবেই।
দুপুরে সমুদ্রে গোছলের পর রাতে দেখা করতে গিয়েছিলাম ঐ বান্ধবীর হোটেলের নিচে। স্যার ম্যাডামদের কড়া শাসন আর বিধিনিষেধ থাকায় নামতে পারেনি। দেখা করতে পারেনি ঢাকা থেকে এতো দূরে আসা কাকতালীয়ভাবে ভ্রমনের দিনক্ষণ মিলে যাওয়া আপন বন্ধুটির সাথে। সে বেলকনিতে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে আর নিচে চায়ের দোকানে সামনে দাড়িয়ে আমার বন্ধু ওভার ফোনে কথা বলছিল। আমি চা খাচ্ছিলাম। তাদের অনেকক্ষণ ধরে কথা হলো তবে দেখা হল না। তারা পরদিন রাঙ্গামাটি চলে যায়। অনেক সকালে যাওয়ায় আমাদের সাথে দেখা হয়নি।
এরপর থেকে আমার বন্ধুর ঐ বান্ধবীর সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হয়নি। দেখা হবে কিনা তাও জানিনা। ঐবারের মত করে ঐ ছয়বন্ধু মিলে কক্সবাজার আর যাওয়া হয়নি, যদিও অন্যভাবে (বিয়ের পর শুধু বউকে নিয়ে হানিমুনে) যাওয়া হয়েছিল। যদি সুযোগ হয় তাহলে সবার বিয়ে সম্পন্ন হলে বউ নিয়ে একসাথে যাব একবার বলে আশা করছি। যদিও এরই মধ্যে দুজনের বাচ্চাও ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সমস্যা নেই, আশা যখন করেছি, পূরণ হতে শুধু সময় প্রয়োজন।
©somewhere in net ltd.