![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
অঘোর ভট্টাচার্য বা অঘোর দাদু ছিলেন বড্ড কৃপণ। পেশায় পণ্ডিত, ঘরে ঘরে পূজা দিতেন, যা পেতেন – টাকা-পয়সা- সোনার মোহর সবই রেখে দিতেন সিন্দুকে, এমনকি খাওয়ার পানটিও। আর তিনি প্রায় বলতেন, কড়ি দিয়ে সব কেনা যায়। বুঝতে পারতো না ছোট্ট দীপু। জীবনের বাঁকে বাঁকে চলতে চলতে শিখতে থাকে অনেক কিছু। মেশে অনেকের সাথে। ভাবতে থাকে - সত্যি কি কড়ি দিয়ে সব কেনা যায়? যদি কড়ি দিয়েই সব কেনা যায়, তাহলে মনুষ্যত্ব জিনিসটি কী? সেটাও কি কড়ি দিয়ে কেনা যায়?
বিমল মিত্রের এক অনন্য সৃষ্টি ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’। এই উপন্যাসের প্রতিটি পাতায় রয়েছে জীবনের চরম প্রতিচ্ছবি। দীপঙ্কর এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হলেও সতী, লক্ষ্মী, অঘোর ভট্টাচার্য, ছিটে, ফোঁটাসহ অসংখ্য চরিত্র ও বিংশশতাব্দীর সময়কালকে কেন্দ্র করে মূল কাহিনীকে নিয়ে গেছে একটি অন্যরকম মাত্রায়। এই উপন্যাস লিখে লেখক যেন নিজ হাতে রামায়ণ লেখার ইচ্ছাটা পূরণ করেছেন। এটি দুই খণ্ডের বিশাল উপন্যাস । আর সেই দুখণ্ড মিলে কমপক্ষে পনেরশ পৃষ্ঠাতো হবেই। লেখাগুলোও ছোট – কিন্তু পাঠক পড়ার সময় মোটেও অধিক পৃষ্ঠার ক্লান্তি অনুভব করবেন না, বরং উপভোগ করতে থাকবেন পরতে পরতে নানান পটভূমি।
দিপুর বাবা ছিল না। বাবা ডাকাতের হাতে মারা যাওয়ার পর থেকেই মা-সহ অঘোর দাদুর বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকতো। মা সেই বাড়িতে রান্না ও ঘরসংসারের কাজ করতো। অঘোর দাদু তাঁর নিজের নাতী ছিটে ও ফোঁটাকে আশ্রয় দিত না, তারা বাড়িতে এসেছে বুঝতে পারলে লাঠি নিয়ে তাদের তাড়া করতো। তবুও তারা ওই বুড়োর অগোচরে দিপুর মার কাছ থেকে খেয়ে পালিয়ে যেত। তাকে অঘোর দাদু ভালবাসলেও মুখে প্রকাশ করতো না।
এভাবেই তার শৈশব জীবন কেটে যাচ্ছিল এমনসময় তার সমবয়সী সতী ও লক্ষ্মী নামের দুই বোন অঘোর দাদুর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসে। তাদের সাথেই জীবনের অনেকগুলো বছর কেটে যায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। সমাজ, রাজনীতি ও দেশের নানান পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা প্রতিহিংসাসহ ইতিহাসের বিশ্বযুদ্ধের মতো অনেক ঘটনা ঘটতে থাকে তাকে সাক্ষী রেখে। দিপু আর ছোট্ট দিপু থাকেনা, হয়ে ওঠে মিস্টার দীপঙ্কর সেন। ব্রিটিশ রেল কোম্পানির একজন বড় সাহেব।
নিজ যোগ্যতায় রেল কোম্পানিতে কেরানী থেকে বড় সাহেব পদ পর্যন্ত যাওয়া তার নিজের কাছে কল্পনাই লাগতো। নিজেকে সেই ছোট্ট দিপুই ভাবতো। সে কোনদিন অর্থের অভাবে পড়েনি কিংবা অর্থাভাব তাকে ছুঁতে পারেনি। লক্ষ্মী বয়সে বড় হওয়ায় তাকে লক্ষ্মীদি ডাকতো। আর সতীকে তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভাল লাগলেও কখনও বলা হয়নি তার। বলতে পারেনি সে নিজের নিজস্বতাকে বাঁচাতে। মনের কষ্ট সে প্রকাশ করেনি কারো কাছে। তবুও অন্যের উপকার করে গেছে যথাসাধ্য। তবুও যেন তার কাছের মানুষগুলো একসময় ক্রমে ক্রমে দূরে সরে যায়। অর্থাভাব না থাকলেও মনের দিক থেকে সে একা হয়ে যায়।
‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ উপন্যাসে লেখক সাধারন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। দিপুর চোখেই বর্ণনা করেছেন প্রতিটি মুহূর্ত। বিশ্বযুদ্ধ সমন্ধে সাধারন মানুষ জানতে পারেনি কেন এই যুদ্ধ, কেন এই শত্রুতা। তারা জার্মান দেখেনি, ইটালী দেখেনি, আমেরিকা দেখেনি, জাপানও দেখেনি। তারা বোঝেনি কেন জার্মানী তাদের শত্রু, আবার কেন আমেরিকা তাদের বন্ধু। তারা শুধু দেখেছে, প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ, দেখেছে প্রাণঘাতী মৃত্যু। যা কেড়ে নেয় বেঁচে থাকার আশাটুকুও। দিপু ভেবেছে এসবের জন্য দায়ী আমেরিকার ডলার, ইংলন্ডের পাউন্ড, ইটালীর লিরা, জার্মানীর মার্ক, ফ্রান্সের ফ্রাঙ্ক, জাপানের ইয়েন, আর ইন্ডিয়ার টাকা। কিন্তু দিপু অর্থাৎ দীপঙ্করকে কখনও হতাশ হতে দেখা যায়নি।
দীপঙ্কর একসময় সংসার ত্যাগী হয়ে যায়। বলে- ‘আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। তোমরা মনে করোনা এই এত বড় পৃথিবীতে আমার কোনও আশ্রয় মিলবেনা। পৃথিবী অনেক বড়। তোমরা যত কল্পনা কর তার চেয়েও বড়। আমি একদিন আর এক জায়গা থেকে এখানে এসেছিলাম। আবার এখান থেকেও চলে যাবো। প্রয়োজন হলে পৃথিবীর সব জায়গায় আমি খুঁজবো- দেখবো - কোথায় মানুষ পাই। আমি হতাশ হইনা, হতাশ হবোনা। আমি আশা নিয়ে সারা পৃথিবী খুঁজবো – কোথাও না কোথাও মানুষ পাবোই।
আদিবাসী নেটিভ আমেরিকানদের একটি প্রবাদ অনেকটা এরকম- ‘যখন শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, যখন শেষ মাছটি খেয়ে ফেলা হবে, যখন শেষ বিন্দু পানিও বিষাক্ত হয়ে যাবে, তখন বুঝবে টাকা খাওয়া যায়না। অর্থাৎ টাকাও মুল্যহীন।’ আসুন টাকা নয়, পৃথিবীতে মানুষকে খুঁজি। তাঁদের সম্মান করি। এটাই মনে শান্তি নিয়ে আসবে। আমি আমার মামির সৌজন্যে বইটি ওনার কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়েছিলাম, তাই ওনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। উনি না হলে এতো সুন্দর উপন্যাস এতো দিনেও পড়া হতো কিনা সন্দেহ। তবে অনলাইন পাঠকদের জন্য খুশির সংবাদ এই যে, উপন্যাসটির পিডিএফ ফাইল এখন অনেক সাইটেই পাওয়া যায়। একই নামে কলকাতা বাংলার একটা সিনেমাও আছে। তবে উপন্যাসের মতো নিখুঁত নয় - তা হলফ করেই বলা যায়। বড় বড় সমালোচকরাই যেখানে এই উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করেন, সেখানে এ উপন্যাস নিয়ে লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস পাঠক মাত্রই আমাকে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন।
১৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
তৌফিক বলেছেন: অবশ্যই আছে বস। আমি যে তেমন কিছুই লিখতে পারিনি।
২| ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৪
পথিক তুমি বলেছেন: ওনার লেখা পড়া কঠিন। আমি পুরা পাতা পড়ি না, প্রতি para ৪-৫ টা লাইন পড়লে বুজতে পারি ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে। কড়ি দিয়ে কিনলাম মনে হয় ৪-৫ দিনে পড়ছিলাম। ওনার বইয়ের মানুষ বেশি সৎ তাই কষ্ট পায় আর কষ্ট দেয়. ওনার সব কাহিনীর এক অবস্থা। কাহিনীর শেষে একেবারে লেজেগোবরে করে ফেলেন। বেগম মেরি বিশ্বাস তো ultimate একেবারে চিতায় তুলে তারপর শান্তি। তবে গল্প বলেন ভালো, কাহিনীর সুন্দর করে বলতে পারেন কিন্তু সারমর্ম দুর্বল। সিনেমা লিখলে যা হয় আর কি। আমি tragedy পছন্দ করি না কিন্তু উনি খালি বেহুদা ট্রাজেডি নিয়ে মাতামাতি করেন।
১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:১৮
তৌফিক বলেছেন: ট্রাজেডি আপনার ভাল লাগেনা, আর উনি যদি এতো ট্রাজেডিই না করতেন তাহলে কি আর এতো বড় বড় উপন্যাস লিখতে পারতেন! যাহোক নিঃসন্দেহে ওনার অনেক সময় ছিল, উনি লিখেছেন। কিন্তু আপনি বড্ড তাড়াতাড়ি পড়েন মশাই।
৩| ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৬
পথিক তুমি বলেছেন: শেষে বলবো আপনি সুন্দর লিখেছেন।
১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:১৯
তৌফিক বলেছেন: ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
৪| ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:০৩
ঢাকার লোক বলেছেন: বহু বছর আগে পড়েছিলাম, আজও মনে পড়ে প্রায় সবই, আজও যখন চারিদিকে ছিটে ফোটা আর ঘোষাল বাবুদেরদের কাছে দিপু প্রমথনাথ বাবুদের প্রতিনিয়ত পরাজয় দেখি তখন মনে হয় বিমল মিত্রের এ লেখা কেউ কি পড়ে ?
১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:২৪
তৌফিক বলেছেন: ছিটে, ফোঁটারা আঙুল ফুলে কলা গাছ, সেই যুগেও এই যুগেও। সমাজে যারা একটু ভাল থাকতে চায় তাঁরাই নানানভাবে প্রতারিত হয়। আমারও মনে হয় যেন - সবার দাড়ে দাড়ে গিয়ে এই বইটা পড়তে অনুরোধ করি।
৫| ১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১২:২০
কানিজ রিনা বলেছেন: হ্যা কলেজে উঠে পড়েছিলাম করি দিয়ে
কিনলাম। আপনার লেখায় মনে পরেগেল।
ভাল লাগল বিবল মিত্রের বেশ কয়েকটা
বই পড়া আছে বইগুল আমার ঘরেই আছে।
ধন্যবাদ,
১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:২৫
তৌফিক বলেছেন: আমার কাছেও কয়েকটা আছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার এই লেখার পর, বই পড়ার কোন প্রয়োজন আছে?