![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
প্রেম কি, মানুষ কেন প্রেম করে, কার সাথে কার প্রেম হয়, কেমনে প্রেমে পড়ে, প্রেম কেমনে হয় এসব প্রশ্নের ধরাবাঁধা কোনো উত্তর নেই। উত্তর কেউ খুঁজে পান না, যিনি প্রেমে পড়েন তিনিও নন, যিনি প্রেম বোঝার চেষ্টা করেন তিনিও নন। প্রেম সে এক আজব জিনিস। দিল্লীকা লাড্ডু বললেও নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা কিংবা ব্যাখ্যা নেই, আছে কিছু উপলব্ধি, আর কিছু সূক্ষ্ম অনুভূতি। জেমস-এর গানে সুর মিলিয়ে বলতে পারি - প্রেম আমার প্রথম দিনের আলো, শেষ বিকেলের পথ, প্রেম আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমারী, তেপান্তরের মাঠ, প্রেম যেন স্বপ্নে পাওয়া তুমি, প্রেম যেন স্বপ্নে দেখা তুমি, প্রেম ও প্রেম..
প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা উভয়ের মনের মধ্যে সবসময় বাজতে থাকে – যেখানেই থাকো তুমি যাও যত দূর, সেখানে পৌঁছে আমার এ সুর, এই গান পাড়ি দেবে প্রয়োজনে, তেরো নদী, সাত সমুদ্দুর! আর একে অন্যকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সবাইকে চিৎকার করে জানিয়ে দিতে চান, জগতের সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বসেন, বিশেষ করে প্রেমিক তাঁর প্রিয়তমার জন্য গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠেন- সুন্দরীতমা আমার, তুমি নিলীমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারো, এই আকাশ আমার, নীলাকাশ রবে নিরুত্তর, মানুষ আমি চেয়ে দেখো, নীলাকাশ রবে নিরুত্তর, যদি তুমি বলো আমি একান্ত তোমার, আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার...
প্রেমিক-প্রেমিকা দীর্ঘ সময় ধরে কোথাও কোন নির্জনে গাছের নিচে বা পার্কের বেঞ্জে বসে থাকেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন না তাঁদের মধ্যে কি কথা হয়, তবুও কথা চলতেই থাকে, কারনে অকারনে তাঁদের হাজারো বার বলা হয়ে যায় – ভালবাসি, আর একটু পর পর হাসি- মুক্ত ছড়ানো হাসি, কিংবা ভুবনডাঙ্গার হাসি! একসময় প্রেমিকার বাসায় ফেরার সময় হয়ে যায়, কিংবা বিশেষ কাজে উভয়কেই উঠতে হয়, কিংবা নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের বাঁশির শব্দে আর সেখানে বসে থাকা সম্ভব নয় – তখনও উভয়ের মনে বাজতে থাকে – আরো কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু? আর কিছু কথা কি হবে? বলবে কি শুধু ভালবাসি তোমায়? বলবে কি শুধু তুমি যে আমার, মুছে ফেলে সব জড়তা...
স্কুলে থাকতে মনের অজান্তেই কখনও কাউকে ভাল লাগেনি এমন ছেলে পাওয়া দুস্কর। সেসময়টা প্রেমের বয়সও নয়, বাবা-মা বা পরিবারের চাপে ভদ্রতা বজায় রাখতে মনের কথা কখনই ব্যক্ত করা হয়না, কিন্তু নচিকেতার নীলাঞ্জনা গানটা মন দিয়ে শুনেনি এমনটা পাওয়া যায় না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে যখন তিনি অনেক বড়, কিংবা পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করে সংসার জীবনও শুরু করেন, তখনও সেই গানের কয়েকটা লাইন তাঁর প্রথম প্রিয়তমার জন্য মনের মধ্যে বাজতে থাকে- যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে, তাকাতো সে অবহেলে দু'চোখ মেলে, হাজার কবিতা বেকার সবই তা, তার কথা কেউ বলে না, সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা...
চশমা পড়ুক আর না পড়ুক, পাড়ার দাদাদের হাতে ধরা খাক আর না খাক, সাইকেলে চড়ে প্রেমিকার বাসার সামনে কোন প্রেমিক ঘুরঘুর করেনি, আর লেখাপড়া শেষে প্রেম যখন পরিণয়ের দিকে গড়াবে তখন কোন প্রেমিককে বেকারত্ব বা আর্থিক অস্বচ্ছলতা গ্রাস করেনি, আর শেষ রক্ষা হিসেবে মাত্র এগারশো টাকার চাকরি পেয়েও প্রেমিকাকে নিয়ে লাল-নীল সংসার করার তীব্র বাসনায় প্রেমিক পাগল-প্রায় হয়ে টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন নাম্বারে কল করা বেলা বোসকে নিয়ে গানটি অঞ্জন দত্তের চেয়েও গভীর সুরে কোন প্রেমিকটি গায়নি তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল!
প্রেম ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রেম ও রোমান্টিকতার মাত্রা যিনি বুঝতে চেয়েছেন তিনি যেন আরও গভীরে ডুবে গেছেন, একটা গানেই তার কিছুটা আভাস দেয়া যেতে পারে - আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন, দিল ওহি মেরা ফাস গ্যেয়ি, বিনোদ বেণীর জরীণ ফিতায়, আন্ধা ইশক মেরা কাছ গ্যেয়ি। সকল বয়সের লাখোলাখো প্রেমিক এই গানে তাঁর প্রেমিকাকে কল্পনায় বা বাস্তবে পেয়ে মশগুল হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য, আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখি। কারন কবি প্রেমিকাকে বিজয়িনী ভাবতেন, প্রকাশ করেছেন এভাবে – হে মোর রানী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে, বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।
যিনি হলেন প্রেমের ও মানব মনের অন্যতম দার্শনিক, যাকে ছাড়া বাংলা ভাষায় প্রেমের কিরন উদিত হয়না, বলা যায় সম্পূর্ণতা পায়না, তিনি হলেন আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রেমিক-প্রেমিকার দুটি হৃদয় একই ছন্দে চলার জন্যই হয়ত তিনি একসময় গেয়েছেন - ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে, আমার নামটি লিখো – তোমার, মনের মন্দিরে, আমার পরানে যে গান বাজিছে, তাহার তালটি শিখো- তোমার, চরণমঞ্জীর।
আবার অন্যসময় ভালবাসাকে ভাবনা ও যাতনাও উল্লেখ করেছেন - সখী, ভাবনা কাহারে বলে? সখী, যাতনা কাহারে বলে? তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’, সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়? কোনো এক মহা প্রলয়ে যদি কখনও প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কে মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে সেই স্মৃতিটুকু যে হাতের নয় পরানের রাখী হয়ে থাকে, সেটাকে কবি গেয়েছেন - সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা, সেই স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে, যেন জাগে মনে, ভুলো না...
সম্প্রতি দূর দেশ থেকে ছেলেদের প্রেমে পড়ে এবং ভালবেসে বাংলাদেশে চলে আসছে অনেক বিদেশী নারী। তাঁদের সেকি প্রেম! একসময় কিংবা এখনও এদেশের ছেলেরা পড়াশুনার জন্য বিদেশে গিয়ে বিদেশিনীদের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করে সেখানেই সংসার গড়েন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন – তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত, কম স্বচ্ছল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়েসেও ছোট এমন ছেলেদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে প্রেম করে সেই প্রেমের টানে এসে বাংলাদেশী ছেলেকে বিয়ে করেছেন।
থাইল্যান্ডের সুপুত্তো ওম (৩৬), যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ (২১), ব্রাজিলের সেওমা বিজেরা (৪৭), অস্ট্রেলিয়ার আসান ক্যাথরিনা, ব্রাজিল জেইসা সিলভা (২৯), মালয়েশিয়ার ফাতেমা-সহ অস্ট্রেলিয়ার এমিলি রেবেকা যথাক্রমে নাটোরের অনিক খান (২২), ঝিনাইদহের মিঠুন বিশ্বাস (২২), হবিগঞ্জের আবদুর রকিব (২৬), মাগুরার চন্দন, রাজবাড়ীর সঞ্জয় (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশিকুর এবং বরিশালের সাইদুল আলমকে বিয়ে করে সংসার পাতেন।
ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে অতি সহজে এদেশের ছেলেরা – আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী, তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী – বলে বিদেশিনীকে মন সঁপে দিলেও দুজনকে দুদেশের সীমানা পেরিয়ে পরিবার ও সমাজের সকল বাধা উপেক্ষা করে বিয়ে পর্যন্ত সেই তাঁদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সহজ ছিলনা। ভবিষ্যতে সংসার জীবনে চলার পথে তাঁদের সম্পর্কে কোনো বাধা আসতে পারে, তাই তাঁদের পবিত্র প্রেম ও স্নিগ্ধ ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস রাখতে অনুরোধ জানিয়ে জেমস-এর আর একটি গান মনে করিয়ে দিতে চাই – আরও দুঃখের পথ পাড়ি দিতে হবে, যেতে হবে বহুদুর, পুরনো বাঁশিটা সুরে বেধে নাও, তুলতে হবে নতুন সুর! আরও দুঃখের পথ.. যেন দুঃখেই মুক্তি, দুঃখেই ঈশ্বর, বিশ্বাস রেখো বন্ধু সারাটি জীবনভর...
©somewhere in net ltd.