![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
ছোটবেলাটা সবার যেমন অনেক চমৎকার কাটে ঠিক তেমনি আমারো কেটেছিল। যেন স্বপ্ন, কত নিমেষে পাড়ি দিয়ে এসেছি সেই স্বপ্ন! এতো তাড়াতাড়ি এতোগুলোদিন ফেলে এসেছি ভাবলেও কষ্ট লাগে, মনে হয় যেন সামনে আর বেশিদিন নেই। ছোটবেলায় বেশ কতকবার ভুল করেই ভেবেছিলাম বড় হলে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা। লোকে বড়দের কথা শোনে, আমার কথাও শুনবে, আমার টাকা থাকবে, আমি ইচ্ছামত খেলনা আর চকোলেট কিনতে পারবো। সে আর হল কই – বড় হয়ে দেখি ছোটবেলাই ভাল ছিল, ছোট হয়ে বড়দের কাছে যা চাইতাম কমবেশি তাই পাইতাম। শুধু চকোলেট খাওয়ার জন্য বড় হওয়ার কোনো দরকারই ছিলনা।
আমি বেড়ে উঠেছি গ্রামে। যেখানে বিদ্যুত ছিলনা, পাকা রাস্তা ছিলনা, ঘরেঘরে টিভি ছিলনা, কিন্তু সুখের জন্য কোনো কিছুর যেন কমতি ছিলনা। গ্রামের সবাই সবাইকে চিনতো-জানতো, এমনকি কে কবে কি করেছে, কার কত বড় ক্ষতি হয়েছে, কার বিপদে কে এগিয়ে এসেছে, কে কাকে ঠকিয়েছে, কার কিসে কত লাভ হয়েছে, কার কার মধ্যে এখনও দ্বন্দ্ব আছে, কবে কার বাড়িতে ডাকাত আর কার বাড়িতে চোর ঢুকেছে, কার পুকুরে মাছ মারা হয়েছে, কার বাড়িতে কয়টা আম-কাঁঠালের গাছ, কার গাছের ফলের কেমন স্বাদ, কে ঈদে নতুন পাঞ্জাবী পরেছে, ঈদে পাড়ায় মোট কয়টা গরু জবাই হয়েছে আর কার গরুর দাম কত, কি রঙের আর কোন হাঁট থেকে কেনা হয়েছে, কবে থেকে পূজা শুরু হবে, পূজায় কে কে নিয়মিত প্রতিমা দেখতে যায়-সহ আরো কত কি!
একবার ঈদের নামাজ শেষে বড়মামা আমাকে দুটি মাটির ব্যাংক কিনে দিয়েছিলন। একটা আম আর একটা ব্যাঙ। দুটোই দেখতে ছিল আসলের মতো দেখতে। আমি আমার খেলার সাথীদের দেখাতাম আর ঈর্ষা কুড়াতাম। ছোটবেলায় এটাও যেন একটা খেলা ছিল। বাড়িতে আব্বা-আম্মা-দাদীমা সবাই নামাজ পড়তেন সেহেতু আমাকেও আজানের পর আব্বার সাথে মসজিদে নামাজে যাওয়ার জন্য বেশ তাড়া ছিল। কোনো কারনে মসজিদে নামাজে যেতে না পারলে আব্বা অথবা আম্মার পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তাম। দাদীমার সাথে পড়তাম না, কারন তিনি আলাদা উঁচু জলচৌকিতে নামাজ পড়তেন। ওটাতে দাদীমা বসলে আমার বসার জায়গা থাকতোনা। আমি বেশ কয়েকটা সুরা জানতাম তবে নামাজে কখন কোনটা পড়তে হয় জানতাম না। ধীরেধীরে অবশ্য শিখে ফেলেছিলাম।
বছরের শুরুতে খুব সুন্দর সুন্দর দুটো ক্যালেন্ডার আব্বা ব্যাংক থেকে পেতেন। আমি একবার বানান করে বের করে ফেললাম এগুলো জনতা ব্যাংকের ক্যালেন্ডার! বিগত বছরের ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে আমার নতুন বইয়ের মলাট বানানো হতো। আর ঘরের দেয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার ঝুলানোর আগে জিগা গাছের আঠা অথবা গরম ভাত দিয়ে আলাদা কাগজ লাগিয়ে মানুষ বা পশুপাখির ছবি ঢেকে ফেলতাম। কারন ঘরে ছবি থাকলে নামাজ হয়না, ঘরে ফেরেশতা ঢোকেনা, আর ফেরেশতা না ঢুকলে আল্লাহ্র রহমতও ঢুকেনা। নামাজ, ফেরেশতা, আল্লাহ্র রহমত এগুলো শব্দের অর্থ আমার কাছে অজানা ছিল, তবে বিশ্বাস করতাম, এখনও করি। নামাজের সময় আব্বা-আম্মা আমার সুন্দর ব্যাঙটাকে ছোট কাপড় বা কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতেন। একাজটি করতে কখনও তাঁরা ভুলে গেলে আমি দৌড়ে গিয়ে ঢেকে দিয়ে আসতাম।
আব্বা বাইসাইকেল চড়িয়ে আমাকে দুর্গা পূজার সময় হিন্দু পাড়ায় নিয়ে যেতেন, মণ্ডপের কাছে আমি যেতাম, আব্বা যেতেন না, সাইকেল নিয়ে দূরে দাড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য রাখতেন। দেখতে কেমন হয়েছে জানতে চাইতেন। ভাল – তবে আরেকটা না দেখলেতো বলা যাচ্ছেনা কোনটা বেশি ভাল। বাতাসা বা বাদাম নিয়ে খেতেখেতে গল্প করতে করতে অন্য মণ্ডপে যেতাম নয়তো বাড়ি ফিরে আসতাম। খেলনা হিসেবে প্রতিমা নিতে চাইলে আব্বা নিষেধ করতেন, বলতেন – এটা বাড়িতে নিয়ে গেলে আমাদের নামাজ হবেনা। আমিও ভাবতাম, নিয়ে গিয়ে শুধু খেলার সময় বের করা আর নামাজের সময় ঢেকে রাখার মতো ভেজালের চেয়ে না নিয়ে যাওয়াই ভাল। আব্বা, হিন্দুরা নামাজ পড়েনা? না, ওরা মূর্তি পূজা করে। ওরা মূর্তিতে ভগবানের রুপ দিয়ে তাঁদের উপাসনা করে। ছোট্ট আমি এসব কথার তখন কিছুই বুঝিনাই। তবে ছোটবেলায় খুব আনন্দে আমার দিনগুলো কেটেছে, কোনদিন তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।
ধর্ম নিয়ে এখনও তেমন কিছু বুঝিনা। তবে বর্তমানে দেশে যা চলছে তা নিয়ে অল্প কথায় বলা যায় হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বড় একটা ইসলামিক গোষ্ঠী! এদের সামলানো আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু ওই যে গিফ এন্ড টেকের খেলা! বাংলা সিনেমায় আগেতো ঠিকি কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা দাড়িপাল্লা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলাকে দেখতাম, এখন দেখিনা। কয়েকদিন হাইকোর্টের কোনও খবর থাকলে টিভিতে গ্রীক দেবীকে দেখতাম তাও শাড়ি পরা অবস্থায়। যা প্রধানমন্ত্রীর মতো আমারো পছন্দ হয়নি। দেখা যাক আগামীতে কেমন দেখি, কি দেখি.. যেমনি দেখাও তেমনি দেখি, যেমনি নাচাও তেমনি নাচি..এই যে দুনিয়া...
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
"বাতাসা বা বাদাম নিয়ে খেতেখেতে গল্প করতে করতে অন্য মণ্ডপে যেতাম নয়তো বাড়ি ফিরে আসতাম। "
- মন্ডপের বাতাসা খেয়েছেন? সারসেন, এখন আপনাকে গরুর গোবর খেয়ে পরিস্কার হতে হবে।