নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ, আমাদের বন্ধু শুভ

১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭



জন্ম, বিয়ে ও মৃত্যু এই তিনটি নাকি থাকে মহান শক্তিমান সৃষ্টিকর্তার হাতে। তাইতো জন্মের পর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিতে না দিতেই আর আলো ছড়াতে না ছড়াতেই নিভে গেলো তাঁর প্রদীপ বাতি। হয়েছিলো জন্ম, অতঃপর মৃত্যু! মাঝখানে বিয়ে হয়নি। ভাললাগা তৈরি হয়েছিল যেমনটা সবার হয়, তবে বলার মতো তেমন কিছু নয়, আর সেটা না বললে – শুভ, আমাদের স্রেফ শুভ, শুভাগত সরকার শুভ। অর্থাৎ সে তার নামের মতই ভালো, শুধুই ভালো।

জন্মদিন, নববর্ষ ও বিবাহের দিনটি ভালো হোক বা মঙ্গল হোক এমন কামনা করে শুভ জন্মদিন, শুভ নববর্ষ বা শুভ বিবাহ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু শুভ মৃত্যুদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী বলা হয়না কখনও, কারন মৃত্যু কখনই শুভ হয়না। মৃত্যু শুধু কষ্টের হয়, এটি শুধু কষ্টই দেয়, আর আপনজন ও পরিচিতজনদের কাছে রেখে যায় শুধুই স্মৃতি।

তবে আমাদের প্রিয় বন্ধুরটির ‘শুভ’র মৃত্যুবার্ষিকী’ এমন লেখা পড়তে চোখে ধাঁদা লেগে যায়, মৃত্যুবার্ষিকীটাকেও এই ছেলেটা শুভ করে দিয়ে গেছে! মনের মাঝে এমনি এমনি এক ভাবনা চলে আসে, আর ভাবতে ভাবতে মনের মাঝে এক করুণ ব্যথা জেগে উঠে সেই ‘শুভ’র মৃত্যুবার্ষিকী’ লেখাটা দেখে।

শুভ নামটা যেমন ছোট ওর জীবনটাও তেমনি বড্ড ছোট। ছেলেটি ক্ষণজন্মা। ওর সবথেকে বড় গুন ছিলো – মানুষের সাথে সে খুব মিশতে পারতো। ছোট থেকে বড় সবার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারতো। সেই বন্ধুত্ব সে টিকিয়ে রাখতো বেশ যত্ন করেই। যেন আর যাইহোক বন্ধুত্ব নষ্ট করা যাবে না। বন্ধুত্ব যেন আজীবনের। কিন্তু সে বন্ধুটির অমূল্য জীবনটি কেড়ে নিল একটি সড়ক দুর্ঘটনা। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত আর করুণ ছিল সেই মৃত্যু। সেই মৃত্যু আজো পীড়া দেয় তার পরিবারকে, বন্ধুদেরকে, আশেপাশের পরিচিত সবাইকে।

বেঁচে থাকলে এখন শুভর বয়স হতো মাত্র ৩০ বছর। হয়ে উঠত পূর্ণ যুবক। তারুণ্যের জোয়ারে এগিয়ে যেতে পারতো অনেকটা পথ। সে কিনা ছয় বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে! কতইবা বয়স হয়েছিল তার তখন? ঠিক ধরেছেন, মাত্র ২৪!

ও এতো অল্প বয়সে সে এতো কিছু অর্জন করা শুরু করেছিলো যে তা ছিল অনেকটা ঈর্ষা করার মতো। বাপের সার ও বীজের ব্যবসা সামলানো মোটেও সহজ কাজ ছিলনা। সারাদিন দোকানে থেকে কাস্টমারদের সাথে খাতির বজায় রেখে দোকানের মাল বিক্রি করা, ডিলারশিপ মেইনটেইন করা, বিভিন্ন ইউনয়ন থেকে আসা দোকানদারদের মাল দেয়া টাকা আদায় করা বেশ শক্তই ছিল বটে। বিষয়টা আরেকটু শক্ত ঠেকতো যখন কিনা বিক্রিত মালের টাকা সংগ্রহের জন্য তাঁকে ইউনিয়নে ইউনিয়নে ঘুরতে হতো।

একবার নীলফামারীর ডাকবাংলা পাঁচমাথার মোড় পেরিয়ে সাইফুনের ক্যানেলের স্লুইস গেটে ইফতার পার্টি আয়োজন সম্ভব হয়েছিল শুভর জন্যই। এতো দিনেও তারপর থেকে এতো বড় ইফতার পার্টি আর আয়োজন হয়নি। সেবারে শুভকে একাই অনেক কাজ করতে হয়েছিল, অর্থাৎ অনেক কিছু ম্যানেজ করতে হয়েছিল। কয়েকজন ছাড়া সেবার সবাই যেন গেস্ট হিসেবে ছিল সেই ইফতার পার্টিতে।

আব্বা কিছুদিন পূর্বেই হজ্জ করে এসেছেন। আর আমিও হয়ে গেছি হাজীর ছেলে। আব্বার সম্মান রক্ষার্থে সবসময় ভদ্রভাবে চলাফেরার চেষ্টা আগে থেকেই ছিল। তবে সকল ধর্মের, সকল শ্রেণীর বন্ধু-বান্ধবের সাথে মেশার জন্য পরিবার থেকে কখনই কোনো বাধা পেতে হয়নি। খুব সম্ভব আমাদের কোনো বন্ধুর পরিবারেই এমন বাধানিষেধ ছিলনা। তাইতো সবাই একসাথে বেরিয়েছি, হয়েছিলাম একে অপরের প্রাণের বন্ধু।

সেবার ঢাকা থেকে বাসে করে শুভ ও আমি ফিরেছিলাম পূজার দাওয়াতের কার্ড নিয়ে। সেগুলো বিতরণের সময়ও আমাকেই থাকতে হলো। আমি ইচ্ছা করেই থাকলাম, প্রধান যুক্তি হলো, সে যদি আমাদের ইফতার আয়োজন করতে পারে, আমি শুধু কার্ড বিতরণ করতে পারবোনা! পরে অবশ্য পূজার সময় তার সাথে বিভিন্ন মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেরিয়েছি।



শুভ, তোকে একান্তই কিছু কথা বলতে চাই, পঙ্কজ উদাসের একটা গানটা নিশ্চয় শুনেছিস! প্রেমের গান, তবুও তোর সাথে একটু মিলে যায়। হাসিস না, আগে একটু মন দিয়ে শোন; যদি আরেকটু সময় পেতাম, কথা রাখবার, পাশে থাকবার, কারণে বা অকারণে, নাম ধরে কাছে ডাকবার, আরেকটু রঙ্গে যদি হৃদয়কে রাঙ্গিয়ে যেতাম, যদি আরেকটু সময় পেতাম...

প্রায় ঢাকায় আসতিস, অবশ্যই তোর ব্যবসার কাজেই। একবার যখন এলি একটা গান খুব গাচ্ছিলি, তোর গলার সুরটাও যেন গানটার সাথে বেশ মানাচ্ছিল, এতোটা যে মানাবে ভাবিনি কখনও। তুই আমাদের কাছে গল্প হয়ে গেলি, কবিতা হয়ে গেলি, চোরাবালিতে হারিয়ে গেলি! মনে পড়ে দোস্ত, অটোগ্রাফ এ্যালবামের ‘বেঁচে থাকার গান’ নামের রুপমের গানটা? তুই গাইতিস; যদি কেড়ে নিতে বলে কবিতা ঠাসা খাতা, জেনো কেড়ে নিতে দেবোনা, যদি ছেড়ে যেতে বলে শহুরে কথকতা, জেনো আমি ছাড়তে দেবোনা, আর আমি আমি জানি জানি চোরাবালি কতখানি গিলেছে আমাদের রোজ, আর আমি আমি জানি প্রতি রাতে হয়রানি, হারানো শব্দের খোঁজ...

কিন্তু দোস্ত তুই চলে যাওয়ার পর শিল্পী সায়ান ‘এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু’ নামের একটা সুন্দর গান উপহার দিয়েছে, গানটা আমাকে খুব কাঁদায়, কাঁদায় গানটার প্রতিটা লাইন। বিচ্ছিন্নভাবে শুনবি গানটির কয়েকটি লাইন; এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে, সকাল-বিকেল বেলা, কত পুরনো-নতুন পরিচিত গান, গাইতাম খুলে গলা। // কত ঝগড়া-বিবাধ, সুখের স্মৃতিতে , ভরে আছে শৈশব, তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে এখনও তো, ভালোবাসছি অসম্ভব! // তুই হয়তো ভালই আছিস, আর আমিও মন্দ নেই! তবু অসময়ে এসে স্মৃতিগুলো বুকে, আঁকিবুকি কাটবেই ! // তুই কতদূরে চলে গেলি, তোকে হারিয়ে ফেলেছি আমি, এই দুঃখটা হয়ে থাক, এই দুঃখটা বড় দামী। //
দুঃখটাই বড় হয়ে থাক বন্ধু - আর তুই থাক আমার বা আমাদের এই হৃদয়ের মাঝারে। তবে যেখানেই থাকিস, ভাল থাকিস বন্ধু।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


মটরসাইকেল এ্যাকসিডেন্ট?

১৩ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫

তৌফিক বলেছেন: জি এক্সিডেন্টে মারা গেছে সে। দোয়া করবেন।

২| ১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:০২

এপিস বলেছেন: দোয়া রইল তার জন্য।

১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৮

তৌফিক বলেছেন: আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

৩| ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ১২:০১

প্রামানিক বলেছেন: তার জন্য দোয়া রইল।

১৪ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৮

তৌফিক বলেছেন: আপনার জন্যও রইলো শুভকামনা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.