নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জেমসের \'বাবা\' গানটা যখন আমার সুরে

১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯



‘ছেলে আমার বড় হবে মাকে বলতো সে কথা, হবে মানুষের মত মানুষ এক লেখা ইতিহাসের পাতায়’। ঘটনা সত্য – আমি বড় হয়েছি, লম্বা হয়েছি ছয় ফুট এক ইঞ্চি, আমার পরিবারে কিংবা বংশে এমন লম্বা আর নাই। বেটেরা বলে - লম্বা মানুষ আহাম্মক হয়, আমি অস্বীকার করিনা। লম্বা হিসেবে আমি যে কতটা আহাম্মক সে কথা আর বাড়ালাম না, তবে যখন শুনি রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, সত্যজিৎ দৈহিকভাবেও নাকি অনেক লম্বা ছিলেন তখন মনের মধ্যে এক গোপন সুপ্ত ভাললাগা কাজ করে। হা হা হা! লম্বার জন্য খুব রোদ বা বৃষ্টিতেও রিক্সায় চড়ে হুড ওঠাতে পারিনা, সকল পাবলিক বাসে উঠে ঠিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারিনা, কি যে অসুবিধা – সেসব কি মাকে বলা বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে কিনা জানিনা, তবে ফেসবুক বা ব্লগে অন্তত আমার পাতায় লেখা থাকবে এতোটুকু নিশ্চয়তা বাবা দিবসে আমি বাবাকে দিতে পারি।

‘নিজ হাতে খেতে পারতাম না, বাবা বলতো ও খোকা যখন আমি থাকবনা, কি করবি রে বোকা, এতো রক্তের সাখে রক্তের টান স্বার্থের অনেক উর্ধ্বে’। পিতা-পুত্রের সম্পর্ক স্বর্গীয়, এখানে কোনো স্বার্থ নাই। তবে স্বার্থ থাকলে একটাই স্বার্থ থাকে, তাহলো - কিভাবে সন্তানকে ভাল রাখা যায়! সন্তান নিজে রোজগার না করা পর্যন্ত স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত বাবারা যে কি দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন তা শুধু বাবারাই জানেন। বাবা শুধু চিন্তা করতে থাকেন, এই কম্পিটিশনের যুগে আমার এই বোকা ছেলেটা বা মেয়েটা টিকে থাকতে পারবে তো? আমি যদি না থাকি তাহলে এই সন্তানটার কি হবে?

‘হঠাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়, কেউ বলেনা তোমার মত কোথায়, খোকা ওরে বুকে আয়, বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়, কেউ বলেনা মানিক কোথায় আমার ওরে বুকে আয়’। জীবন খুব ছোটও নয়, আবার বড়ও নয়, তবে বেশ লম্বা! দুই একদিনেই শেষ হয়না এ জীবন, এখানে অনেক দিন-সপ্তাহ-মাস ও বছর থাকে। এসময়টাতে ছোট-বড় অনেক ঝড়বৃষ্টি হয় – আমার বেলাতেও হয়েছে, তবে বাবা তোমাকে হারানোর মতো এখনও এতো বড় ঝড় আসেনি, সে ঝড় আমি চাইনা আসুক, আসলেও আরও কয়েক যুগ পরে আসুক। তবে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দিনটির কথা ভাবেতেই খুব খারাপ লাগে, নিজেকে বড্ড একা লাগতে শুরু করে।

কর্মস্থলের কাজ আর মাসিক ইনকামের জন্য বাবাকে ছেড়ে অনেক দূরে থাকি। দেখা হয় বছরে দুই তিনবার। দিন হিসাব করলে বছরে সর্বোচ্চ ছয় বা সাত দিনের মতো হবে, তার বেশি না। যে সময়টা দেখা হয় বাবার সাথে তখন বুঝতে পারি, তাঁর প্রতিটা কর্মকাণ্ডে-গতিবিধিতে আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা, তাঁর স্নেহ। একটা অকর্মণ্য – অপদার্থ ছেলে হয়েও কি যে কতটা মূল্যবান আমি তাঁর কাছে তা আজও বুঝতে পারলাম না। ছোট বেলার মতো বুকে টেনে আদর করেনা ঠিকি, কিন্তু ওরে মানিক বলে বুকে জড়িয়ে ধরার যে অনুভূতি সেটা মিস হয় না কখনই।

‘চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবী তোমার, ইজিচেয়ারটাও আছে, নেই সেখানে অলস দেহ শুধু তোমার’। আমার বাবা বয়সে ষাটের ঘরে, হাঁটাচলা খাওয়া দাওয়া সব স্বাভাবিক, তবে স্বাস্থ্যটা আগের মতো আর নেই, এটা বুঝি যে - সন্তানের জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করাটাই ওনার স্বাস্থ্যহানির মূল কারন। তাই সন্তান হিসেবে চাই উনি চিন্তামুক্ত থাকুক। তিনি চশমা ছাড়াই চলতে পারেন, তবে কোরআন বা পত্রিকা পড়তে গেলেই চশমার প্রয়োজন পড়ে। ইজি চেয়ার আমাদের বাসায় এখনও নেয়া হয়নি, তবে ওনার পরনে প্রায় সময় পাঞ্জাবী থাকে।

‘আযানের ধ্বনি আজো শুনি, ভোরে ভাঙ্গাবেনা ঘুম তুমি জানি, শুধু শুনিনা তোমার সেই দরাজ কন্ঠে পড়া পবিত্র কোরআনের বানী’। যদিও বাবাকে ছেড়ে অনেক দূরে থাকি, তবে তাঁর সান্নিধ্য টের পাই, ফজর থেকে শুরু করে এশা পর্যন্ত প্রতিটি আজানে। মনে পড়ে তখন, আজান দেয়ার সাথে সাথে আব্বার কি ছোটাছুটি বা তড়িঘড়িটাই না শুরু হতো মসজিদ গিয়ে জামায়াতে সাথে নামাজ পড়ার জন্য, সাথে আমারও। অনেক অলসতার কারনে তাঁর সাথে মসজিদে যেতে পারিনি । এখন খারাপ লাগে, ইস একটু চেষ্টা করে তাড়াতাড়ি করলেই আব্বার সাথে নামাজে যেতে পারতাম।

ফজরের নামাজ পড়ে এসে আব্বা যখন কোরআন পাঠ করেন - এ যে কি মধুর সুর! যে সন্তানরা এমনটা শুনেছেন তাঁরা সহজেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। এখন প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকলেও ফজরের আজানের ধ্বনিতে কি করে যেন ঘুম ভেঙ্গে যায়, সেটাও আমি আজও আবিষ্কার করতে পারলাম না। নামাজের পর কোরআন পাঠের ইচ্ছা থাকলেও প্রতিদিন পড়ি না।

তবে আব্বা, আমি তোমাকে ফজরের সেই সময়টা থেকেই অনুভব করা শুরু করি। তোমার মতো আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি, এই বাবা দিবসে তোমাকে জানাই আমার বিশেষ বিনম্র শ্রদ্ধা। দোয়া রেখো আব্বা আমি যেন আমার নামের মতোই সফলতা লাভ করি।

জেমসের ‘বাবা’ গানটি আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি গান। তাই গানটার সাথে ব্যক্তিগত কিছু মিল ও অমিল ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি মাত্র, বাবা দিবস দিবস উপলক্ষে আব্বাসহ সকল পাঠক আমার এ লেখাটা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার বাবার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৯

তৌফিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: পৃথিবীর সব বাবারাই যেন ভাল থাকে। আরেকটু বড় হলে লেখাটা আরো ভাল লাগতো।

১৯ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

তৌফিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। বড় করতে চেয়েছিলাম, করাও যেত, বাবা সমন্ধে কথারতো শেষ নাই। পরে কখনও লিখবো দোয়া করবেন।

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: সকল বাবার জন্য শুভকামনা

১৯ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৪৮

তৌফিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আপনার প্রতিও শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.