নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তার ধারে মূত্র বিসর্জন, অতঃপর আরেকজন ঘাড়ে উঠে বলে \'এবার তুই কই যাবি?\'

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০



রমজান মাসটাই ভালো ছিল। দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন পড়তো না, টয়লেটে যাওয়ারও তেমন দরকার হতো না। সেই মাসে যাদের খাবারের প্রয়োজন পড়তো তাঁরা লম্বা কাপড় দিয়ে ঢাকা দোকান বা হোটেলে ঢুকে খেয়ে নিতেন, যদিও এরকম লোকের সংখ্যা অনেক কম বলেই আমার ধারণা। রমজান শেষ, এবার খাওয়া-দাওয়া শুরু, পানিসহ অন্যান্য খাবার যেমন খাই, টয়লেটও তেমন যাই। এটা প্রাকৃতিক, ডায়াবেটিসের সমস্যা না হলেও রমজানের থেকে বেশিবার টয়লেট যেতে হবে এটাই স্বাভাবিক।

অধিক সময় ধরে যাত্রা করলে কখনও কখনও টয়লেটের চাপ আসতে পারে। এ চাপ প্রাকৃতিক চাপ। বড়টা না আসলেও ছোটটা আসে। আর সেজন্য যেখানে-সেখানে, কাছে-ধারে চিপায় চাপায় সেই প্রাকৃতিক কাজটা সেরে শান্তি লাভ করাটা মোটেও ভালো কাজ নয়। চক্ষুলজ্জা বলেও কিছু বিষয় থাকে।
গতকাল মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় গিয়ে এক হাঁটু পানির মধ্যে আটকে গিয়েছিলাম। শাপলা চত্বর, নটরডেম কলেজ, দিলকুশা, বলাকা, রাজউক সবটাই ছিল পানিতে বন্দী। রিক্সাওয়ালারা ব্যাপক ব্যবসা করেছে; দুই মিনিটে পঞ্চাশ টাকা, কিংবা তারও বেশি, যার কাছে যেমন। যারা আমার মতো এতো অল্প কামে টাকা খরচ করতে চান না, তাঁরা জুতা খুলে হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট উঠিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন, যা দেখলাম এ ধরনের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এ দলে শুধু মানব নয়, অনেক মানবীও ছিলেন।

ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে রাস্তার পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে গিয়ে আমি মারাত্মকভাবে প্রাকৃতিক চাপ অনুভব করতে শুরু করলাম। বড়টা নয়, ছোটটাই। তবে টয়লেট কই পাই? মুশকিল হয়ে গেলো। আমি ইত্তেফাক মোড় হয়ে হাটখোলা যাব, সেখানে যেতে আরও দশ পনেরো মিনিট সময়ের প্রয়োজন, তার উপর সেখানে যাওয়ার বাসও পাওয়া যাচ্ছিলো না। রাস্তায় ঐ পারের হাঁটু পর্যন্ত নোংরা পানির কথা খুব মনে পড়ছিল। যাহোক, দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চিন্তা বাদ দিয়ে দ্রুত টয়লেট সারার সিদ্ধান্ত নিলাম। চাইলেইতো আর সহজে পাওয়া যায় না, আসেপাশে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতেই ব্রীজের উত্তর পাশেই মোবাইল টয়লেটের সন্ধান যেন সহজেই পেয়ে গেলাম।

মোবাইল টয়লেটটি ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার আর গন্ধহীন। তবে ভিতরে পানি বা টিস্যু ছিলোনা। বের হয়ে টাকা দেয়ার সময় অভিযোগ করলে টয়লেট তত্ত্বাবধায়নে থাকা মহিলাটি জানালেন – আপনে পানি কি চাইছিলেন? হুম, ভুলটা আমারই, আমি পানি চাই নাই। আর টয়লেটে টিস্যু রাখার মতো সামর্থ্য তাঁদের নাই কিংবা এখনও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নাই বলে টয়লেট কর্তৃপক্ষ মনে করছেন তাই টিস্যুর ব্যবস্থা নাই। প্রস্থ ঠিক থাকলেও, লম্বায় কমতি আছে বলে মনে হয়েছে। সাড়ে পাঁচ ফুটের অধিক লম্বা লোকের জন্য টয়লেটটি বেশ ছোট। তবে সিটি কর্পোরেশনকে মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করার জন্য জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

যাহোক টয়লেটের কাছ থেকে মাথা ঘুরিয়ে দুই কদম এগুতে না এগুতেই চোখের সামনে পড়লো অতি পরিচিত সেই পুরাতন আমলের দৃশ্য, যা মোবাইল টয়লেট হওয়ার আগে চোখে পড়তো অহরহ – লুঙ্গি উঠিয়ে চলছে প্রাকৃতিক কাজ! সামনে ফুটপাত, পিছনে বড় রাস্তা, প্রাকৃতিক কাজে বসা লোকটার সামনে শুধু একটা বৈদ্যুতিক পিলার। হলফ করেই বলতে পারি, সেই পিলার তার ইজ্জতের পিলার বাঁচাতে পারেনি, তবে ওই লোককে কেউ চিনুক আর নাই চিনুক ওই লোকের মর্যাদার পিলারটা তখন ঠিকই নষ্ট হয়েছে।

সেহেতু সাবধান, ইজ্জতের পিলার নষ্ট হওয়ার আগে কিংবা হটাৎ করে কেউ ঘাড়ে চেপে বসার আগে প্রাকৃতিক কাজ যথাস্থানে করারই চেষ্টা করি। আমার এক বান্ধবী - রাস্তায়, খোলা জায়গায় যেখানে সেখানে নির্লজ্জ/অসভ্য লোকদের মূত্র বিসর্জনকে পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত দৃশ্য বলে উল্লেখ করেছেন। এমন দৃশ্যে সমমনা আরেক বান্ধবী আরেকটু কঠোরভাবেই বলেছেন, আমার তো মাঝে মাঝে লাথি মারতে ইচ্ছে হয়..

শেষ করবো একটা কৌতুক দিয়ে, কারন ওই লোকের প্রাকৃতিক কাজ সারার দৃশ্য মনে করে ব্রিটিশ আমলে গ্রামের এক লোকের প্রথম ট্রেন দেখার কথা মনে পড়ছে। অনেকটা এরকম- লোকটি গ্রামে শুনেছে, শহরে ট্রেন আছে, অনেক বড় আর দ্রুত চলে, উপর দিয়ে ধোয়া বের হয়, আর নিজ দিয়ে পানি। চলন্ত অবস্থায় ওঠা যায় না, থামলে উঠতে হয়। ট্রেনে ওঠার শখ সে মনে মনে রেখে দিল। একদিন শহরে পৌঁছলে সে দেখলো অনেক লম্বা ও মোটা এক লোক তার সামনে দিয়ে বেশ দ্রুত পায়ে হেটে যাচ্ছে, যার উপর দিয়ে ধোয়া উড়ছে, আসলে লোকটি সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছিল যা সে টের পায়নি, লোকটি হটাৎ রাস্তার ধারে গিয়ে বসে পড়লো প্রাকৃতিক পানি ছাড়তে! তা দেখে এবার গ্রামের লোকটি দৌড় দিয়ে গিয়ে ট্রেন ভেবে নির্দ্বিধায় ভদ্রলোকের ঘাড়ে চেপে বসে বললো- এবার তুই কই যাবি?

গল্পের সাথে মিল রেখে মানুষের ছবি না পাওয়ায় জিরাফের ছবি দিয়েছি। কেউ এমন দৃশ্যের ছবি পেলে শেয়ার করতে পারেন। হা হা হা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪৭

রুরু বলেছেন: এটা বাঙালির মজ্জাগত অভ্যাস ভাই।

ভালো লাগলো আপনার লেখার ভঙ্গী।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:৩৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।।
এই বাঙ্গালীই প্রবাসে এলে, ৯০% শুধরে যায়।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.