নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেরানীর চাকরী করি। আর কখনো সময় ও মন দুটোই মিলে গেলে লেখার চেষ্টা করি, এই আর কি!

তৌফিক

আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।

তৌফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বউ পেটানো বুড়ো

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২১

খবরের কাগজে এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ছাপানো হলো- বাংলাদেশে শতকরা ২৫ ভাগ নারী স্বামীর হাতে মার খান। অর্থাৎ বিবাহিত প্রতি চারজন নারীর একজনগদ তাঁর স্বামীর কাছে হেনস্তা। অফিসে কাজকর্ম কম, দেশ ও জাতি নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। বড়বাবু চা খেতে হাক দিলেন, আজকের পেপারটা পড়েছেন তো!

কি সব আবোলতাবোল প্রতিবেদন প্রকাশ যে করে, দেশের স্বনামধন্য পত্রিকা হয়ে বুঝিনা। পুরুষ মানুষ অফিসে আসে ঝাড়ি খাওয়ার জন্য, আর বাড়ি যায় গাল খাওয়ার জন্য। সেই পুরুষ আবার তাঁর বৌয়ের গায়ে হাত তুলবে, ভাবা যায়? যে তোলে সে তো বীরপুরুষ। বাংলাদেশে এখনো ২৫ শতাংশ বীরপুরুষ জীবিত আছে তাহলে।

শুনুন, একটা গল্প বলি, গল্প নয় ঠিক, এটা একটা সত্যি কাহিনী। আমার দাদার চাচা ভাত খেতে বসলে পাশে বসে থাকতেন তাঁর স্ত্রী। গরমের সময় হলে হাতপাখা, আর শীতকালে একটা চাঁদর গায়ে জড়ায় দিতেন । বাড়িতে একডজন ছেলেমেয়ে। নিজেরই ছয়টা। চেঁচামেচিতে বাড়ি সবসময় মাথায় তুলে রাখে। কিন্তু তিনি বাড়ি এলে সব ঠাণ্ডা। খেতে বসেছেন, দেখে সব আছে কিন্তু পানির জগ নাই, উঠে বুড়িকে দেন মাইর। গ্লাসে পানি ঢেলে দেয় নাই, মাইর। পাঁচ পদের তরকারি রান্না হয়েছে, তার একটা দিতে ভুলে গেছে, মাইর। ভাত ঠাণ্ডা ও শক্ত হয়েছে, মাইর। একদিন হলো কি জানেন, তিনি ভাত খেতে বসেছেন, সবকিছুই ঠিক ছিল, বুড়ি পাশে স্বস্তিতে বসেছিলেন। খাওয়া শেষ হলো, বুড়া প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে মারলেন- বল, কয় গ্রাস ভাত খাইছি? এ উত্তর শুনেতো বুড়ি আকাশ থেকে পড়লেন। এবার মাইরের পালা। ভয়ে বুড়ি বাড়ির বাইরে গিয়ে বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলেন। পাড়ার লোকজন জড়ো হতেই, বুড়ি সব কথা খুলে বললেন। পরে বুড়োকে সবাই শাসিয়ে দিলে, আর যদি বুড়ির গায়ে হাত তোলে তো হাত-পা ভেঙে ফেলে রাখবে। এরপর থেকে আর হাত তোলার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শুনেছি, তখন থেকে ভাত খাওয়ার সময় বুড়ো বুড়িকে দরজার হুড়কো লাগানোর নির্দেশ দিতেন।

গল্প শুনে কয়েকজন হো হো করে হেসে উঠলেন। বড়বাবু গুণে দেখলেন, সেখানে ২৫ ভাগ লোকই হাসছে। ৫০ ভাগ থাকলেন চুপচাপ। আর বাকি ২৫ ভাগ করলেন প্রতিবাদ। বলে উঠলেন, আপনার ওই আত্মীয় কাজটা মোটেও ঠিক করেন নাই। অবলা-সরলা নারী পেয়ে বিনা দোষে তাঁর গায়ে হাত তুলতেন। এ ভারি অন্যায়।

বড়বাবু চেয়ে দেখলেন, এদের মধ্যে দুজনের বউ মাস দুয়েক আগেও তাঁর কাছে অভিযোগ করে গেছেন, তাঁদের স্বামীরা অফিসে কি এমন কাজ করেন যে, বাড়ি গেলে মাথা গরম হয়ে যায়, একথায় ওকথায় রাগারাগি করে তাঁদের গায়ে হাত তোলেন। তিনি এখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি। কারণ অফিসে আগের মতো ঘুষের পরিবেশ নেই। কি এক নয়-ছয় কেলেঙ্কারিতে উপরের নির্দেশে তিন-চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস থেকে সোজা বাড়ি যাননা, তাঁদের বাজারো যেতে হয়। জিনিসপত্রের যা দাম চড়া, তাতে স্ত্রীর আবদার পূরণ ও ঘ্যানর ঘ্যানর সহ্য করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বড়বাবু নিজেও স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার পক্ষে নয়। তিনি তাঁর বউকে যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। এক ধরনের কৃতজ্ঞতাবোধও তাঁর মধ্যে আছে। ওনার শ্বশুর পড়াশুনা খরচ বহন করে পরে উপযুক্ত সময়ে মেয়েকে হাতে তুলে দিয়েছেন। এখন তাঁর ছেলে বিদেশে, আর মেয়ে বিবাহযোগ্যা। এমবিএ শেষ করে চাকরি করছে। তবু সৎপাত্রের দুশ্চিন্তা। যেভাবে ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়েছে। ভাবা যায় না।

সুযোগ পেয়ে এবার কথাটা পাড়লেন বড়বাবু। আমাদের এখানে কেউ বউকে পেটায় নাতো? এবার সবাই একবাক্যে ছি ছি করে উঠলেন। রুমটায় বিশজন মাত্র মানুষ। ছয়জন নারী। প্রথমে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের স্বামী কি আপনাদের মারে? দুজন দেখতে পাপিয়ার মতো, তাঁদের গায়ে কেন কাপড়ে হাত দেয়ারও সাহস কারো নেই। তবে একজন একটু লাজুগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি বঞ্চনার শিকার হন। তবে বলতে গেলেই কেঁদে ফেলবেন। বাকিরা প্রশ্ন শুনে হাসছেন। এবার সরাসরি ওই দুই অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন বড়বাবু। উত্তরে তাঁরা বললেন, কেন খামোখা পার্সোনাল প্রশ্ন করছেন স্যার?

হ্যা ও না এর মাঝামাঝি উত্তর পেয়ে বড়বাবু বললেন, তা ঠিক। এরকম পার্সোনাল বিষয় নিয়েই দেশজুড়ে জরিপ হয়েছে। আমরা অফিসে বসে চা খেতে খেতে নিজেদের ফ্যামিলি বলে পরিচয় দেই, বাচ্চার অসুখের কথা বলে ছুটি নেই, ভাইবোনের চাকরির সুপারিশ করি, একে অন্যকে টাকা ধার দেই, এসব কি পার্সোনাল বিষয় নয়? নিশ্চয় ব্যক্তিগত বিষয়, তবে এটা এখন জাতীয় ইস্যু। আমি চাইনা এ অফিসে এমনটি ঘটুক। যদি ঘটে তাহলে আমি দোষীকে পার্সোনালি কারাভোগের ব্যবস্থার জন্য আইনের দ্বারস্থ হবো।

নয়তো গণপিটুনি দিয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলে রাখা হবে। প্রয়োজনে অফিস থেকে চিকিৎসা করানো হবে। কিন্তু এ কথাটা বলতে গিয়েও বললেন না বড়বাবু।
(ছবি সংগ্রহীত)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৬

যারীন তাসনীম আরিশা বলেছেন: বউ পেটানো কোন বাহাদুরী নয় ইহা দূর্বলচিত্তের মানুষের কাজ।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ হেফাজত করুন

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: অভদ্র লোকদের এই এক সুবিধা, ভদ্রলোকেরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না। তারা নিজেরাই সহ্য করে যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.