![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকদিন যাব যাব করে কোথাও যাওয়া হয় না।গতকাল ঠিক করলাম পতেঙ্গা বীচে যাব।সকালে কিছুটা র্নিজন থাকে বলে ১১টায় পৌছেঁ গেলাম। ফুচকা,আইসক্রিম,স্পীডবোটে চড়া,ঘোড়ার পিঠে চড়া ..প্রচন্ড রোদ বালিতে দৌড়াদৌড়ি…….টানা চলতে লাগল। অনেক ক্লান্ত বোধ করায় পাড়ে উঠে একটু প্রাকৃতিক ছায়া খুঁজতে খুজঁতে একটা ছোট্ট বট গাছের নীচে এসে বসলাম।দেখি কিছু ছোটছেলে-মেয়ে সবাই হইহুল্লোড় করছে।গাছের নীচে চার-পাঁচটা নীল প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল ছিল..ওখানে না বসে ঘাসের উপরেই বসলাম।ঘন দূর্বাঘাস গালিচার মত নরম।ছোটছেলে-মেয়ে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলছে বুঝতে পারলাম ওরা আশে পাশের কোথাও থেকে এসেছে।উৎসুক মন নিয়ে জিজ্ষেস করলাম, তোমরা কোত্থেকে আসছ? বলল-বাথুয়া থেকে।বাথুয়া একটি গ্রামের নাম,এটা দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ার-পটিয়া সীমানার অন্তর্গত।ওরা আমাকে বলল, আপনি চেনেন? বললাম,হা চিনি ৭-৮ বছর আগে একবার ঘুরতে গিয়েছিলাম।তো তোমরা কজন আসছ? বলল ১৫ জন আর আছে আমাদের টিচার।তোমাদের স্কুলের নাম কি?বলল,বাথুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।তোমরা সংখ্যায় এত কম কেন? তোমাদের বাকী টিচাররা কোথায়? একজন বলল-আমরা স্যারের কোচিং থেকে আসছি আবার অন্যজন বলল স্কুল থেকে আসছি।আমরা একটু কনফিউজ হয়ে গেলাম ।ভেবে নিলাম ওরা স্কুল থেকে শিক্ষাসফরে আসেনি যে টিচার কোচিং করান সেই টিচারই মূলত তাদেরকে নিয়ে এসেছে।টিচারটা দেখতে তরুণ ।তবে গ্রামের স্কুলের মত সাদাসিধা তবে উনার ভাষাগত সমস্যা প্রকট( চট্টগ্রামের মানুষ শুদ্ধ বাংলায় যখন কথা বলে সেটা কতটা কদর্য হয় এটা শুধু তারাই জানে,বাংলা ভাষা তাদের হাতে মরে যাওয়ার সমান আমি নিজেও চট্টগ্রামের মানুষ বলে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা করিনা)।ওদের সাথে ভাব জমিযে ফেললাম।গ্রামের ছেলেরা একটু গাছগাছালি বেশি পছন্দ করে কয়েকজন বারবার গাছে উঠছে আর নামছে,নামছে আর উঠছে…।ওদেরকে বললাম ,তোমরা গ্রামে উঠতে বসতে গাছে উঠানামা কর তারচে বরং বীচে নাম গোসল কর ,ফুটবল খেল,সবাই মিলে মজা কর।একজন চঞ্চল বালক বলে উঠল-স্যার একটা ফুটবল কিনতে গেছে? আসলে যাব…। আমি বললাম- ও আচ্ছা ।যাই হোক,অবশেষে বল আসছে ওরা সবাই চিৎকার করে হুড়হুড় করে বীচের দিকে দৌড় দিল।মেয়েরা ও যাচ্ছে ..ওরতো আর ফুটবল খেলবে না ওরা হয়ত পানিতে নামবে একটু দাপাদাপি করবে লোনা পানি বলে কথা…..উন্মুক্ত সাগরের প্রতি সবার উৎসুক্য থাকে..এই যেমন কোথায় তার তীর, কোথায় তার শেষ,আদৌ কোন শেষ আছে কিনা? ওই যে আকাশটা বোধহয় ওখানে মিশে গেছে………….! একটা ছেলে রয়ে গেছে, বললাম, তুমি রয়ে গেছ যে? বলল, কাপড়-চোপড় গুলো পাহারা দিতে হবে তো স্যার বলে গেছে ।যাক এদিকে আমাদের ও হালকা হালকা পেট চোঁ মারছে..দুপুরের বটডালে অলস কাক অবিরাম ডেকে চলছে।…একটা ছেলেকে ডাক দিলাম,বললাম ২ প্লেট পেয়াঁজু, একলিটার পানি নিয়ে আস…।বলে রাখা ভাল ,ওইগুলো অর্ডার না দিলে চেয়ারে বসার অনুমতি নেই যাই হোক চেয়ারের চেয়ে যে ঘাসের মখমলে বসার আনন্দ কে কাকে বুঝাতে পারে..।গ্রামের ছেলেরা যখন দূরে কোথা ও যায় তারা একটু লাজুক লাজুক ভাব করে .. ছেলেটাকে ডেকে বললাম্, আস চেয়ারে বস,টেবিলের উপরে ওঠে নাচ আর পেয়াঁজু খাও।যাক,সময়টা প্রখর রৌ্দ্রে তারপরও ভালই কাটছে বলে মনে হচ্ছে।পতেঙ্গা বীচের একটা খারাপ দিক হল-অনেক ভিক্ষুক,আর স্থানীয় লোকেরা যারা ওখানে ব্যবসা করে এত মারাত্নক অসভ্য হয়যে এগুলো বলার অপেক্ষা রাখে না।জিনিসত্রের এত দাম আর নোংরা খাবারের ছড়াছড়ি ।ভুলেও ওদের সাথে তর্কে জড়াবেন না কৌশলে সাবধানে কথা বলতে হয়।তা না হলে সবার সামনে একজন মানুষকে ওরা কতটা বিদ্রুপ করে সেটা মুখে ও আনা যায় না আর যদি কোন মেয়ে সঙ্গি থাকে তো আর কথায় নেই ।যাক সেসব কথা…।খররোদ দুপুর আড়াইটার মত বাজে সাগরের হালকা বাতাস ভাললাগাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে… হুম ঘন্টাখানেক পরে ওরা দল বেঁধে ফিরে আসছে…….।আবার সবার সাথে আমাদের দুষ্টুমির পালা শুরু হল।টিচার সাহেব আসলেন হেনতেন অনেক কিছু বললেন …।এবার বলছেন ভাতের পালা …উনি ভাত খুঁজতে গেছেন।দুতিন মিনিট পর উনি ফিরে আসলেন,ঠান্ডা পানি নিয়ে। বললেন,ডিম নাই রুই মাছের খন্ড আছে..কষ্ট করে রুই মাছের খন্ড একটা দিয়ে দুজনকে ভাগ করে খেতে হবে টাকার ব্যাপারটা চিন্তা কতে হবে ….. ।বলল,এই ধর ঠান্ডা পানি খাও ..একজন দুচুমুক এর চেয়ে বেশি খেতে পারবে না।হঠাৎ করে উনি বলে উঠলেন শোন আমরা আজ শিক্ষাসফরে আসছি এবং তোমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার আছে…তিনি শুরু করলেন………………………।
১. বলত এই বড়ই বা কূল গাছে এত পাতা কেন? ছাত্ররা বলল, স্যার জানি না ।ঠিক আছে বলছি…যে সব বৃক্ষ মেয়েজাতি বিশেষ করে ফুল দেয় ,বীজ দেয়,ফল দেয় আল্লাহ তাদেরকে ইজ্জত নিবারণের জন্য এত পাতা দিয়েছেন।এই যেমন মেয়েদেরকে আল্লাহ ইজ্জত রেখে চলাফেরা করতে বলেছেন।(এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার রক্ত এ গতি সঞ্চারিত হতে লাগল,আমি শিউরে উঠলাম..নিজেকে সংযত রেখে শুনতে লাগলাম পরে আর কি বলে ...!)
২. বলত সফর কত প্রকার ? আর আমরা কোন সফরে আসছি?..ছেলে-মেয়ে গুলো হাসাহাসি শুরু করল (..ওরা আমাদেরকে ও খেয়াল করল যে যে দুপুরের রোদ এতক্ষণ মিষ্টান্ন ছড়িয়েছে তা মুহূতেই বিষাদ হয়ে গেল ওদের টিচারের কথায় আমরা বিরক্ত বোধ করছি…) যাক, টিচার বললেন, সফর দু প্রকার ,এক –শিক্ষা সফর ,দুই আনন্দ সফর।আমরা আসছি শিক্ষাসফরে এখানে শিক্ষা ও আছে আনন্দ ও আছে। আরেকটা হল শুধু আনন্দ সফর …এখান আনন্দ আছে কিন্তু কোন শিক্ষা নেই ।এই আনন্দ ডলাডলি ও হতে পারে আবার খারাপ ও হতে পারে …!!!!
৩. বলত সাগরের পানিকে কিভাবে খাওয়া যায়? একজন মেয়ে বলে উঠল-স্যার ফিটকিরি দিয়ে, একটা ছেলে বলে উঠল, ট্যাবলেট দিয়ে ….আরেকজন বলল ফুটিয়ে… ।টিচার বলল, হ্যাঁ এটা একদম ঠিক হয়েছে। এখন আপনারাই বলেন……. এদিকে এই টিচারের কথা শুনে আমরা ধৈর্য্য হারা হয়ে যাচ্ছি…চলরে ভাই খিদা লাগছে খেতে যায় আর সহ্য করতে পারছি না….!!! রাগে দুঃখে কষ্টে আক্ষেপে উঠে হাঁটব… এমন সময় ৪ নং প্রশ্ন …………..
৪. বলত আল্লাহ মেয়েদেরকে………… আর পারলাম না ?? প্রশ্নটা আপনারাই বুঝে নেন কি কর্দয ও নৃশঃস হতে পারে???
এখন আমার কথা হল উনি যদি সরকারী স্কুলের টিচার হয় বা কোচিং শিক্ষক হয় তাহল এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কি করুণ পরিণতি হতে চলেছে।রাষ্ট্র কাদেরকে শিক্ষক বানিয়েছে? তাদের দ্বারা এই জাতির কিভাবে আত্মিক ও মনোজাগতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে? এমনিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে।তার সাথে যোগ হয়েছে এইসব উৎপাত।টিচাররা আজকাল কমবয়সী ছাত্রীদের বিয়ে করা,ধর্ষণ করা,ভিডিও তোলা,চালাকি করে কোচিংএ আটকে ফেলা,কোচিং না করলে নম্বর কম দেয়া,ফেল করে দেয়া,প্রশ্ন উত্তর প্রদান করলে যর্থাথ উত্তরের প্রতি খেয়াল না করে কে কয়পৃষ্ঠা লিখল তার ওপর ভিত্তি করে নম্বর প্রদানা করা,শারীরীক নির্যাতন করা…হেন কোন কাজ নেই শিক্ষকরা করেন না ।এটা শূধু প্রাইমারী বলে কথা নয়,কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পযর্ন্ত এ চর্চ্চা অবাধে চলছে।আমরা জাতি হিসেবে কি কর্দয় হয়ে গেছি,নীতিহীন হয়ে গেছি,অবিবেচক হয়ে গেছি,রুচিবোধ হারিয়ে ফেলেছি, অমানুষ হয়ে গেছি…তা না হলে এই অবস্থা কেন??সবর্ত্র এই হাহাকার কেন? হয়ত সবাই করে না তবে বেশিরভাগই এখন এই টাইপের শিক্ষকে ভরে গেছে বাংলাদেশ।যে নিজে শিক্ষা লাভ করেনি সে অণ্যকে কিভাবে শিক্ষা দেবে?এই টিচারের উদ্ভট কথা শুনে যে ছোটছেলেমেয়েরা হেসে উঠেছিল তাদের থেকে কেউ বড় হয়ে এর জবাব একদিন এই শিক্ষককেই ফিরিয়ে দেবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি-এটাই হল একমাত্র আশাবাদের জায়গা।তিনি যে ভুল,নীচ সে কথা একদিন মনে করিয়ে দেবে……….।ততক্ষনে সে টিচারের ভ্রান্তির ভেতর কত ছেলেমেয়েরা বিভ্রান্তির ভেতর ঘুরপাক খাবে সেটা ভেবে আমার গা গুলিয়ে উঠছে,আমি শিউরে ঊঠছি……….।হায় শিক্ষক,হায় শিক্ষাব্যবস্থা,হায় ছাত্র….!! তোমাদের কি করে বুঝায় একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ,দুটো গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরেও একজন সংস্কৃতি মনামনা মানুষ হয়ে আমার এই কষ্ট কি করে বোঝায় তোমাদের …….।।.ইচ্ছে হয়েছিল কোন শঙ্খচিলের মত তোমাদের ছোঁ মেরে এই টিচারের কাছ থেকে নিয়ে যায়… আমি তোমাদের শুধরে দিই …….. পৃথিবী এতটা সংকীর্ণ নয়,এতটা কদর্য নয়,এতটা ভ্রান্তি নয়,এতটা কুসংস্কারে ভরা নয়।এতটা বিশালতার পৃথিবী,এখানে প্রতি পরতে পরতে রয়েছে জ্ঞান,রহস্য,উদারতার জানা-অজানা ইতিহাস … তোমার চোখের সামনে।। কিন্তু কে ফুটিয়ে দেবে তোমর দুচোখ,কাও ওপর নির্ভর করবে তোমদের স্বপ্ন দেখা…নাকি প্রতি পদে পদে হন্তারকরা বসে আছে আর ছিঁড়ে খুড়েঁ খাচ্ছে দেশ,সমাজ,ধর্ম,নীতি ও নৈতিকতা !!!!
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪
তাওিহদ অিদ্র বলেছেন: ধন্যবাদ কমেন্ট লেখার জন্য...।
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
টেকনিসিয়ান বলেছেন: টিচাররা আজকাল কমবয়সী ছাত্রীদের বিয়ে করা,ধর্ষণ করা,ভিডিও তোলা,চালাকি করে কোচিংএ আটকে ফেলা,কোচিং না করলে নম্বর কম দেয়া,ফেল করে দেয়া,প্রশ্ন উত্তর প্রদান করলে যর্থাথ উত্তরের প্রতি খেয়াল না করে কে কয়পৃষ্ঠা লিখল তার ওপর ভিত্তি করে নম্বর প্রদানা করা,শারীরীক নির্যাতন করা…হেন কোন কাজ নেই শিক্ষকরা করেন না ।এটা শূধু প্রাইমারী বলে কথা নয়,কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পযর্ন্ত এ চর্চ্চা অবাধে চলছে।
-সহমত।
৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
সুমন কর বলেছেন: নাকি প্রতি পদে পদে হন্তারকরা বসে আছে আর ছিঁড়ে খুড়েঁ খাচ্ছে দেশ,সমাজ,ধর্ম,নীতি ও নৈতিকতা !!!!
শেষকথাটুকু সুন্দর।
৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৫
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাটা এতই খারাপ বলার মতো না । বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যে মানুষগুলো অন্য কোন ক্ষেত্রে সফল হতে পারে না তারাই শিক্ষকতা করতে যায় ।
ব্যাতিক্রম অবশ্যই অবশ্যই আছে । অসাধারণ কিছু শিক্ষক পেয়েছি জীবনে । তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো । কিন্তু সংখ্যায় তারা নিতান্তই নগণ্য ।
ভালো থাকবেন অনেক
৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৪
কলমের কালি শেষ বলেছেন: আস্তে আস্তে ভাল শিক্ষক ও মর্যাদা দুটোই হারিয়ে যাচ্ছে । দুঃখজনক ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০০
বাংলাদেশ এক্সপ্লোরার বলেছেন: পদে পদে হন্তারকরা বসে আছে আর ছিঁড়ে খুড়েঁ খাচ্ছে দেশ,সমাজ,ধর্ম,নীতি ও নৈতিকতা !!!!
ঠিক ই বলেছেন ভাই, সাবলীল ভাষায় লেখা টা অসাধারন ।।