নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে www.facebook.com/tanimhh

অশ্রুকারিগর

একজন তীব্রমাত্রায় পাঠক ; স্বল্পমাত্রায় লেখক!!

অশ্রুকারিগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিকৃবির জন্মদিন এবং আমার কিছু স্মৃতি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

একান্ত স্মৃতিচারণঃ আজ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। শাবিপ্রবির ‘স্কুল অফ লাইফ সায়েন্স’ বিভাগের অধীনে সিলেট সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ নামে ১৯৯৫ সালে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল; ২০০৬ সালের ২রা নভেম্বর তার পূর্ণতা পায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে। হিসাবে ২০০৬ সালের ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ হলেও ২০০৭-০৮ সেশনে নিজস্ব ভর্তি পরিক্ষা নিয়ে ৩টা ফ্যাকাল্টিতে(ডিভিএম, কৃষি, মৎস ) ছাত্র ভর্তি করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, এর আগের সকল ভর্তি পরিক্ষাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে সকল ভেটেরিনারী কলেজের একসাথে অনুষ্টিত হত।

তাই ক্যাম্পাসের ১৪তম ব্যাচ হলেও আমরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের সৌভাগ্যবান শিক্ষার্থী :v
আর আমি বোধহয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ছাত্র (প্রথম ভর্তি হওয়া ছাত্র; মেধাতালিকায় ৫ম হয়েছিলাম কিন্তু ১ম ৪জন ভর্তি হয়নি :P :P )

২০০৭ এ ভর্তি পরিক্ষা হয়ে গেলেও বিভিন্ন জটিলতায় ক্লাশ শুরু হয় এপ্রিল’০৮ এ শিক্ষার্থীদের সম্পূর্নরুপে হলে আবাসিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এটাও একটা কৃতিত্বের বিষয় ছিল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যা হয় আরকি , আমার জীবনটাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। সো কল্ড বন্ধু, আড্ডা , গান চুটিয়ে উপভোগ করেছিলাম। উপরি হিসেবে ছিল এডভেঞ্চার। টিলাগড় ইকো পার্কের পাশেই ক্যাম্পাস হওয়ায় আশেপাশের জনবিরল টিলা- পাহাড়- জঙ্গল- চা বাগানে অনেকসময়েই হারিয়ে যেতাম।

স্বভাবে বাঁদরামী থাকায় দুর্ধর্ষ অনেক কাজই করেছিলাম সাধারণ ছাত্ররা যেগুলো থেকে ১০০ হাত দূরে থাকত যেমন শীতের রাতে ফিশারিজের প্রজেক্টের মাছ চুরি করে রাত ৩টায় খিচুড়ি, মাছ ভাজা খাওয়া... আমের সিজনে পাশের ডেইরী ফার্ম, যুব উন্নয়নের গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আম চুরি করে খাওয়া , ইকো পার্কের ভেতর থেকে কাঁঠাল, ডুমুর চুরি করা , তবারকের লোভে রাত ২টায় দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাঁদর টিলায় ওরসে যাওয়া, কর্মচারীদের সবজী ক্ষেত থেকে সবজী চুরি ইত্যাদি। তবে এগুলো সকল দুষ্টু পোলাপানের কাজ, যুগে যুগে সবাই এগুলো করেছে। তবে এমন একটা কাজ আমরা করেছিলাম যেটা সিকৃবি ক্যাম্পাসের কেউ কোনদিন করেছে কিনা সন্দেহ ! আমরা ৪ জন(আমি,জসীম,হাবিব, শাওন) ছাড়া যার কথা কেউ জানত না, আজকে সেটাই সবাইকে বলব ( কারন এখন কেউ জানলেও ক্যারি দিতে পারবেনা B-) )

ডিভিএম এর মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে কয়েকটা খরগোশ ছিল। স্যারের কি এক প্রজেক্টে এগুলো খাচ্ছিল, বড় হচ্ছিল, বাচ্চা দিচ্ছিল আর আমাদের চোখের সামনে দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিল। একদিন কথায় কথায় আমরা ৪ জন জানতে পারলাম খরগোশের মাংশ আমরা কেউ খাইনি কোনদিন, স্বাদ কেমন জিজ্ঞেস করতেই প্রস্তাব উঠল হাতের কাছেই যখন আছে তখন চেখে দেখলেই পারি !
যে প্রস্তাব দিয়েছিল বাকিদের যুক্তিযুক্ত প্রতিউত্তরে সেও চুপসে গেল কারন ক্যাম্পাসের বাহিরে যতই বাঁদরামী করিনা কেন ডিপার্টমেন্টের স্যারের সাথে বাটপারি করার ঘটনা কেউ জানলেই স্যারও জানবে। ফলাফল ক্যারি (এই ডিপার্মেন্টে ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত কোর্স আছে ! ) , ইয়ার লস বা ছাত্রত্বও বাতিল হয়ে যেতে পারে কেননা মাইক্রোবায়োলজির স্যারগুলো খুবই জাঁদরেল ছিলেন।

তখনকার মত চুপসে গেলেও এটা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল কিভাবে একটা খরগোশ হাপিস করা যাবে কাউকে ঘূণাক্ষরেও কিছু সন্দেহ করতে না দিয়ে। প্ল্যান ফাইনাল হল।

৫ দিন পর।ঠিক লাঞ্চ আওয়ারের সময় হতেই ল্যাব থেকে সবাই বের হয়ে গেল।হাবিব ল্যাব এটেন্ড্যান্ট মফিজ ভাইকে কি একটা বিষয় জিজ্ঞেস করার জন্য বাইরে নিয়ে গেল ! আমি ব্যাকপ্যাক খুললাম, জসিম আর শাওন বেছে সবচেয়ে বড়টাই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। চেইন লাগালাম, ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঝুলিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে এলাম ৩জন, হাঁটা ধরলাম হলের দিকে। ইত্যোবসরে ব্যাগের মধ্যে ভূমিকম্প আরম্ভ হয়ে গেল ! ভয় পাচ্ছিলাম হালকা কেউ না আবার জিজ্ঞেস করে বসে কিরে তোর ব্যাগের ভেতরে কি এতো নড়াচড়া করে ?!
হলে পৌছে সোজা ছাদে। লাঞ্চ টাইম, পুলাপাইন সব থালা নিয়ে ডাইনিংয়ে দৌড়াচ্ছিল তাই ছাদে কেউ ছিলনা। ট্যাংকির নিচে একটা বাংকারের মত ছিল ওখানে আগে থেকে রাখা পত্রিকা বিছিয়ে ধারালো জিলেট ব্লেড দিয়ে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ! ( চুরির মাল হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা আরকি ) ছাল ছাড়ানোর পরে সাইজ করে এক ব্যাগে মাংশ নিলাম আরেক ব্যাগে অপরাধের সকল আলামত ! ( আলামত সহ পলিথিন ব্যাগটা ছাদে থেকেই পাশের টিলায় ছুড়ে মারলাম , ব্যাস এখন শুধু খাওয়ার পালা :D )

সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমার রুমে রান্না হবে কারন আমি আর শাওনের সাথে যে রুমমেট থাকত তাকে অন্তত বিশ্বাস করা যায় ঘটনা বুঝতে পারলেও কাউকে বলবেনা ভেবে। রুমে গিয়ে রুমমেটকে বললাম “দোস্ত, শহরে গিয়েছিলাম। সেই একটা লোকাল লড়াইয়ের মুরগি দেখে কিনে নিয়ে আসলাম।৫০০ টাকা দাম হইছে, তোর ভাগে ১০০ টাকা !”

দোস্ত তো খুব খুশি ! সিলেট আসার কয়েক মাসের মধ্যেই সেইরকম একটা জিনিস খাইতে পারব মাত্র ১০০ টাকায়!

তারপর আর কিছু নাই, রান্না হল , খেতে বসলাম, খরগোশের মাংশের স্বাদ বুঝলাম।

আজকের আগ পর্যন্ত এই ঘটনাটা আমরা ৪ জন ছাড়া আর কেউই জানতনা, আজ পাশ করার ১ বছর পরে জানাতে ইচ্ছে হল।

ক্যাম্পাস জীবনটা অনেক মধুর ছিল।

আমাদের ভার্সিটির কিছু ছবিঃ


একটা হল থেকে ক্যাম্পাসের ভিউ।


প্রশাসনিক ভবন থেকে ক্যাম্পাসের ভিউ।



ভেটেরিনারি বিল্ডিং এর সামনে থেকে লেক ভিউ।



ক্যাম্পাসের পাশের টিলা।


ছায়া সুনিবিড় আমার ক্যাম্পাসে স্বাগতম সবাইকে।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০২

মামুন রশিদ বলেছেন: শুভ জন্মদিন সিকৃবি!

কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে ডেইরী ফার্ম পেরিয়ে এই জায়গায় ঘুরতে যেতাম । পুরো জায়গাটা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ, সাপ আর বানরের আবাস । আমার তিনটা বন্ধু ছিল এখানকার । রুনা'র বাবা ছিলেন সরকারী পৌল্ট্রি ফার্মের ডাক্তার । এলিনের বাবা ছিলেন যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে । আর ভেসপা লিটনের বাবা ছিলেন ডেইরী ফার্মের কর্মকর্তা । আর আমি থাকতাম পাশের এমসি কলেজের হোস্টেলে । খুব মনে পড়ে ৮৮-৯০ এর সেই সময়গুলোর কথা ।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩

অশ্রুকারিগর বলেছেন: মামুন ভাই, আমার জন্মই হইছে ৯১ তে ! ২০০৭ এর আগে কখনোই এদিকে যাওয়া হয়নাই। কল্পনাতেই বঝতে পারতেছি তখন কতটা জংগল আর পশুপাখি ছিল !! এখনো অনেক বানর আর সাপ আছে।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেছেন: তোর লেখাটা পাবলিশ করবো কি না বল?

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭

অশ্রুকারিগর বলেছেন: ধন্যবাদ।

থাক, ব্লগেই পড়ে থাকুক !অনেকদিন পরে কেউ কোনদিন হয়তো পড়বে আর অবাক হবে !


লেখাটা কেমন হয়েছে সেটা তো বললি না !

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

মামুন রশিদ বলেছেন: সিকৃবি'র পাশেই কিন্তু থাকি । সময় সুযোগমত একদিন চা পান করা যাক :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২০

অশ্রুকারিগর বলেছেন: যেকোন সময় !

আপনাদের মত ব্লগার কাম বড় ভাইদের সাথে আড্ডা দেওয়াটা অনেক কিছু !

চলে আসবেন একদিন, দাওয়াত !

৪| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৫১

অশ্রুকারিগর বলেছেন: বাঁদরামির স্মৃতিটা ব্লগে রেখেছিলাম। বলেছিলামঃ ব্লগেই পড়ে থাকুক !অনেকদিন পরে কেউ কোনদিন হয়তো পড়বে আর অবাক হবে !

আজকে অনেক জুনিয়র ক্যাম্পাসের একজন খুঁজে বের করে লেখাটা পড়ে ফেসবুকে তার অবাক হওয়াটা জানালো!

নস্টালজিক হয়ে গেলাম !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.