নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে www.facebook.com/tanimhh

অশ্রুকারিগর

একজন তীব্রমাত্রায় পাঠক ; স্বল্পমাত্রায় লেখক!!

অশ্রুকারিগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের এক কালের কুখ্যাত ত্রাস ‘চন্দন দস্যু’ বীরাপ্পন ( সিনেমা এবং ইতিহাস অথবা The story behind Asia’s biggest Man Hunt)

৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:১৪



সিনেমা তো অনেক দেখি। যখন শুনলাম রাম গোপাল ভার্মার নতুন সিনেমার নাম ‘বীরাপ্পন’ তখনই স্মৃতির অতল থেকে একটা নাম বেরিয়ে এল – দস্যু বীরাপ্পন! মনে আছে স্কুলে থাকার সময় নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম আর পত্রিকার পাতায় আলোড়ন তোলা এক নাম ছিল দস্যু বীরাপ্পন। দক্ষিণ ভারত তছনছ করে ফেলা ডাকু এই বীরাপ্পন। সেই আলোড়ন তুলে ফেলা বীরাপ্পনকে নিয়ে সিনেমা ! ইন্টারনেট ঘেঁটে বুঝতে পারলাম এটাকে ক্রাইম, বায়োগ্রাফি জনরাতে ফেলা হলেও এটা আসলে বীরাপ্পনকে হত্যা করার অপারেশনের স্টোরি, বীরাপ্পনের তান্ডবের খুব কমই এতে দেখানো হয়েছে। অবাক হলাম যখন জানলাম চেন্নাইতে এই সিনেমা মুক্তিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে জানানো হয়েছে, এ ছবিতে অনেক ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি ছবিটি মুক্তি পেলে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে! এতটুকু পড়ার পরে আপনি আগ্রহী হয়ে ট্রেলার দেখতে চাইবেন। বিলিভ মি, ট্রেলার দেখলেই আপনার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠবে!

ট্রেলার !

ট্রেলার ত দেখলেন, সিনেমাও দেখবেন তবে তার আগে একটু ইতিহাস জেনে যান।

কে এই বীরাপ্পন ?

কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ুর প্রায় ৬০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছিল এই বীরাপ্পনের রাজত্ব। পেশা ছিল বেআইনিভাবে চন্দনকাঠ ও হাতির দাঁত পাচার। ‘চন্দন দস্যু’ বীরাপ্পন ১০ হাজার টনেরও বেশি চন্দনকাঠ পাচার করেছিল বিদেশে। সেই চন্দনকাঠের সে সময়ের বাজারমূল্য শুনলে মাথা ঘুরে যাবে। দু’কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। প্রায় ১০০০টি হাতি মেরেছিল সে। হাতি চোরাশিকার করে বীরাপ্পন পাচার করে আয় করেছিল ২৬ লক্ষ মার্কিন ডলার। বীরাপ্পনের আগে দক্ষিণের জঙ্গলে দাপট ছিল আর এক দস্যু সেলভি গুন্ডারের। সেলভি ছিল বীরাপ্পনের আত্মীয়। তার হাত ধরেই অপরাধে হাতেখড়ি বীরাপ্পনের। মাত্র ১০ বছর বয়সেই গুলি করে একটি হাতি মেরে ফেলেছিল ‘চন্দন দস্যু’ বীরাপ্পন। ১৭ বছর বয়সে এই দস্যু জীবন শুরু হয়েছিল বীরাপ্পনের। স্রেফ শুকনো পাতায় পায়ের শব্দ শুনেই বীরাপ্পন বুঝতে পারত কোন প্রাণী আসছে। বীরাপ্পনের স্ত্রীর নাম মুথুলক্ষ্মী । বীরাপ্পনকে কেন মুথুলক্ষ্মী বিয়ে করেছিলেন জানেন? স্রেফ দৌরাত্ম্য আর গোঁফের প্রেমে পড়ে। পরপর তিনটি মেয়ে হওয়ায়, তৃতীয়টিকে হত্যা করেছিল বীরাপ্পন। (সিনেমাতে এই দৃশ্য আছে ) কাঠ আর হাতির দাত পাচারের সঙ্গে ছিল হত্যালীলা। ৯৭ জন পুলিশকর্মী ও সরকারি অফিসার খুন হয়েছিলেন তার হাতে। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০০ সাধারণ মানুষ। যাকেই পুলিশের চর বলে সন্দেহ হয়েছে, তাকেই নির্বিচারে খুন করেছে বীরাপ্পন। ২০০০ সালে কন্নড় মেগাস্টার রাজকুমারকে অপহরণ করেছিল বীরাপ্পন। ১০৯ দিন আটকে রেখেছিল। তার পরে ৩০ কোটি টাকা এবং বিপুল সোনার বিনিময়ে তাঁকে মুক্তি দেয়। ২০০২ সালে কর্নাটকের মন্ত্রী এইচ নাগাপ্পাকে অপহরণ করেছিল। মুক্তিপণ নিয়ে দরাদরিতে পোষায়নি বলে তাঁকে হত্যা করে। জানা যায়, মেগাস্টার রজনীকান্ত সহ আরো অনেক ভিআইপিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা ছিল তার। ১৯৯০ থেকেই তাকে জীবিত বা মৃত ধরার চেষ্টা শুরু করে ভারত সরকার। কিন্তু সরকারি মহলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং সাধারণ মানুষের ওপর বীরাপ্পনের ভয়মিশ্রিত প্রভাবের কারণে বারবার ব্যর্থ হতে থাকে বীরাপ্পনকে ধরার অভিযান। অবশেষে, তামিলনাড়ুর স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অপারেশন কোকুনে এক মুখোমুখি লড়াইতে নিহত হয় বীরাপ্পন ও তার তিন সঙ্গী সেথুকুলি গোবিন্দা, চন্দ্রা গৌধা ও সেথুমনি। কিন্তু ততদিনে বীরাপ্পনকে দমন করার জন্য ভারত সরকারের খরচ হয়ে গেছে ৭৩৪ কোটি টাকা! বীরাপ্পনের পাবলিক রিলেশন্‌স বা জনস‌ংযোগের কাছে নামজাদা কোম্পানিও ফেল করবে। সুন্দরী মহিলাদের সে নিয়োগ করেছিল জনসংযোগ রক্ষা করতে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, সকলের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। বিদেশেও জনসংযোগের জন্য লোক নিযুক্ত করেছিল বীরাপ্পন। লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কেও তার লোক ছিল। মৃত্যুর আগে শেষবার বীরাপ্পনকে যখন ঘিরে ফেলেছিলেন স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের জওয়ানরা, তখন রচিত হয়েছিল এক টানটান নাটক। বীরাপ্পনের এক সঙ্গীকে মেরে ফেলেছিল এসটিএফ। বীরাপ্পন সেই সময়ে সঙ্গীর মোবাইল (সেই সময়েও মোবাইল ব্যবহার করত বীরাপ্পন, যা একমাত্র পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর কাছে ছিল) থেকে কোনও এক ভিভিআইপি-কে ফোন করে। তৎক্ষণাৎ নির্দেশ আসে বন্দুক নামানোর। বীরাপ্পন ফসকে যায়। ২০০৪ সালের ১৮ অক্টোবর বীরাপ্পনকে তার তিন সঙ্গী-সহ গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সময়ে তার মাথার দাম ছিল পাঁচ কোটি টাকা। আজকের হিসেবে তা প্রায় ১১ কোটি টাকা!

হ্যাপি সিনেমা ওয়াচিং। আশা করি ভাল লাগবে।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

কল্লোল পথিক বলেছেন:


সুন্দর পোস্ট।
বীরাপ্পন সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।
ধন্যবাদ।

৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০৮

অশ্রুকারিগর বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পুরোটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

২| ৩১ শে মে, ২০১৬ ভোর ৬:০৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বাপরে! এতকিছু তো জানতাম না! পিচ্চির কল্যানে অনেককিছু জানা হলো (মাইন্ড করলেন কি?)!

৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

অশ্রুকারিগর বলেছেন: শুভ সকাল। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।


না, মাইন্ড করিনি বরং আপনি যে অন্য আরেকজনকে আমি ভেবে ভুল করেননি আবার সেজন্য খুশি হইছি। :P ;)

৩| ৩১ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: বীরপ্পন আসলেই বীর ছিল।

ভাল পোস্ট।
++++

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:০৮

অশ্রুকারিগর বলেছেন: বীরাপ্পন বীর ছিল ?! কোন এঙ্গেলে বীরাপ্পনকে বীর মনে হল ? না রবিন হুডের মত ডাকাতি করে মানুষের মাঝে সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিল নাকি তার কোন ওয়ার্ক এথিক্স ছিল ??? আশা করি বলবেন।

যাইহোক, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন।

৪| ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০২

বিজন রয় বলেছেন: তার নামের সাথে বীর শব্দটি আছে তাই সে বীর ছিল।

আর সে "নিজের সীমানায়"[/sb দারুন সক্ষমতা অর্জন করেছিল,যার জন্য পুলিশের চোখকে অনেকদিন ফাঁকি দিতে পেরেছিল।

সে একটা বীরদস্যু ছিল।

৫| ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০৩

বিজন রয় বলেছেন: আশা করি বোঝাতে পারি নাই। :D

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৪

অশ্রুকারিগর বলেছেন: না পারছেন :P

ফাঁকতালে বলে যাই দস্যু নাম থাকায় আমিও ছোটবেলায় 'কিছু' একটা ভাবতাম এনারে ( দস্যু বনহুর পড়ার কুফল ;)

৬| ১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া তুমি ছোটকালে এনারে কিছু একটা ভাবতা আর আমি তো বুইড়া কালেও উনারে কিছু একটাই ভাবছি! মানে বীর টাইপ!!!!


তার বউ এর ছবিটাও দেখতে ইচ্ছা করছে তবে তিন নং মেয়ে বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে শুনে কিন্তু রাগ করলাম!:(

১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৬

অশ্রুকারিগর বলেছেন: আপু, এই যে দেখুন সেই বিখ্যাত জুটি, ভীরাপ্পনের বাহারি গোঁফ দেখে যে ভালোবেসেছিলো তাকে সেই মুথুলক্ষী!



অন্ধবিশ্বাস যে কি জিনিস !

মুথুলক্ষী বিশ্বাস করে ভীরাপ্পন তার সন্তানকে মেরে ফেলেনি, ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো !

৭| ১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৭

গেম চেঞ্জার বলেছেন: এত ভয়ানক লোক ছিল!!!!!!! বাপরে!! :||

১১ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৬

অশ্রুকারিগর বলেছেন: কত ভয়ানক সেটা ভাষায় বলে অল্পই বুঝানো যাবে গেম চেঞ্জার ভাই। একজন ডাকাতকে ধরতে এতো কোটি টাকা খরচ আর এতো ট্রেইন্ড ফোর্সের আত্মাহুতি কিছুটা ভয়াবহতা প্রকাশ করতে পারে !

৮| ১১ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬

শায়মা বলেছেন: ইয়া খোদা এইটাকে গোফ বলে নাকি!!!!!!!!!!!

তবে বউটাকে দেখে আমি মুগ্ধ!


সিনেমার নায়িকা হতে পারতো চাইলেই!:)

১১ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯

অশ্রুকারিগর বলেছেন: সিনেমার নায়িকা হতে পারতো চাইলেই!

এটা আপনি ঠিকই বলেছেন আপু।

তবে গতবাধা জীবনের চেয়ে এই মেয়ের জীবনটা কত এডভেঞ্চারাস ছিল এই ব্যাপারটা ভেবে দেখেন !

৯| ১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:২০

শায়মা বলেছেন: ঠিক ঠিক তবে তার মেয়েকে এই শয়তান খুন করার পর নিশ্চয় তার প্রেম উবে গেছিলো!

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩১

অশ্রুকারিগর বলেছেন: নাহ আপু। ভালোবাসা অনেক কঠিন জিনিস।

ভালোবাসায় মত্ত হলে যেকোন কাজের একটা গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা বানিয়ে ফেলে প্রেমিক মন। এই মেয়ের ক্ষেত্রেও এমনি ছিল ব্যাপারটা।

অন্ধ ভালোবাসা অথবা অন্ধ বিশ্বাস !

১০| ১৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৭

জুন বলেছেন: আমরা যখন উটি ভ্রমন শেষে মহীশুরে ফিরে আসছি আবার তখন রাত। সেই বীরাপ্পনের জংগল আর চন্দন বনের মাঝ দিয়ে ফেরার একমাত্র জাতীয় মহা সড়ক । বীরাপ্পন এর তখন দোর্দণ্ড প্রতাপ সেখানে। বাসের চালক আর কন্ডাক্টার আর গাইড প্রথমেই এক মন্দিরে পুজা দিয়ে যাত্রা শুরু করলো। আমাদের যার যার ইষ্যত দেবতার নাম নিতে বল্লো। কি ভয়ংকর সেই জার্নি। এখনো মনে হলে গায়ে কাটা দেয়। রাত তিনটার সময় সেই জংগল পেরিয়ে মহিশুরে ফিরে আসি।
স্মৃতিপট এ ভেসে উঠলো আপনার লেখায় সেই রাত। সুন্দর লিখেছেন।
+

১৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭

অশ্রুকারিগর বলেছেন: কি অবস্থা ! আপনি তো তাহলে চাক্ষুস সাক্ষী বীরাপ্পনের দুর্ধর্ষতার B-)

সময় পেলে সিনেমাটা তাহলে দেখতে পারেন, স্মৃতি মনে পড়বে। এই মহাসড়ক কিন্তু সিনেমায় আছে।

১১| ১৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: জুনের মন্তব্য পড়ে তার অভিজ্ঞতা বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে করছে!
ভয়ানক একজনকে নিয়ে লিখেছেন।
পারলে দেখবো মুভিটা।
দারুন রিভিউ

১৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১

অশ্রুকারিগর বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

জুন আপু তার অভিজ্ঞতা লিখলে আরো একটু বিস্তারিত জানতে পারব!

জুন আপুর প্রতি লেখার অনুরোধ রইলো সবার পক্ষ থেকে :)

ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল ।

১২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.