![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবেই নাকি একলা চলতে হয়... একলা পুরুষ মাতৃগর্ভে একলা পুরুষ পিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ চিতায়, আর বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয়...
জীবন থেকে নেয়া গল্পটা ঠিক কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারছিনা,তার উপর আমার মধ্যে সাহিত্য ছিটে ফোটাও নেই,তাই সাধারণ ভাষায় খুব কাছের একজন বন্ধুর বাবার অসহায়ত্বের কথা গুলো বলবো আপনাদের,আমাকে বিষয়টা অবাক করেছে বলে এখানে নাম পরিচয় গোপন করে সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করলো,ইচ্ছে করলো এই জন্য যে আমরা যেন মাতা পিতার বিষয় একটু সচেতন হই, সচেতন হই নিজের পরিবার পরিজনের বেলায়।যেন স্মরণ করি সেই শিশু থেকে শৈশবে কৈশরে বাবার কোলে মায়ের কোলে নিরাপদ ক্ষণ গুলোর কথা।একটু ভাবুনতো আপনি যখন নিজে জায়গা বদল করতে শিখেননি সেই সময়ের কথা, যখন আপনি বলতে পারেননি আপনার পেটে প্রচন্ড ক্ষুধার কথা ঠিক সেই সময় গুলোতে আপনাকে কারা প্রতিটা পলক মুহুর্ত নজরে রেখেছেন, অথবা আপনি যদি বাবা বা মা হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখা পড়তে পড়তে কি হাত বাড়িয়ে আপনার শিশু সন্তানকে ধরে রাখেননি?দুনিয়ার কোন মোহ কি আপনাকে এক বিন্দু মাতা পিতার দায়িত্ব থেকে সরাতে পারছে? জানি পারছেনা,এমনি করেই আমাদের মাতা পিতা আমাদের আগলে রেখে নিরাপদ বয়সে এনে দিয়েছেন।
মন্টু আমার বন্ধু তার পিতা মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান,
বড় ভাই গ্রামের বাড়ি বরিশালে বিশাল খামার আর পরিবার নিয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন,ঢাকা শহরের যানজট নাকি তার ভালো লাগেনা তাই মা বাবা ভাই বোন সবাইকে রেখে সেখানে স্ত্রী সন্তান নিয়ে জীবন সচল রেখেছেন সুন্দর ভাবেই।
মন্টু একটা মেয়েকে ভালোবেসে ছয় বছর প্রেম করে শেষে মা বাবার সিদ্বান্তে এবং বাবার আয়ের টাকা দিয়েই আহামরি রকমেই বিয়ের অনুষ্ঠান বউ তুলে এনে পিতার কাঁধেই আছেন আয়েশি ভঙ্গীতে,কিন্তু নতুন বউয়ের সাথে মায়ের বনিবনা হচ্ছেনা বলে শেষে বাবা কে দায় মুক্ত করে স্ব-সন্মানে শশুড় বাড়ি গিয়ে সন্মানিত ঘর জামাই হয়ে দিব্যি জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছোট এক ভাই ঝন্টু বিয়ে করেছেন প্রেম করে, মেয়ের বাবা মা আমেরিকায় থাকেন একদিন স্বপ্নের দেশে নিজেও পাড়ি দিবেন সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে তিনিও সন্মানের সাথে বউ সমেত শশুড় রেখে যাওয়া ঢাকা শহরে বিলাষ বহুল বাড়িতেই অপেক্ষার দিন গুনচ্ছেন।
অপর ছোট ভাই ঢাকা ব্যাংকে চাকুরী করে কিছু টাকা মা বাবার হাতে তুলে দিয়ে পিতা মাতার ঋন শোধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।
ছোট বোন মা বাবার সেবা করে নারীর অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
মন্টুর পরিবারে যেই সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলাম সেটা আমি আমাদের বন্ধুত্বের দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর জেনেছি।
মালিবাগ শান্তিনগর বেইলে রোডের আনাচে কানাচে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের আড্ডা চলতো,খাওয়া দাওয়া চা নাস্তা সিগারেটের টাকা সবাই সময় মত যার যার সুবিধা অনুযায়ী দিতেন।এসব নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন সমস্যা বা অভিযোগ ছিলোনা।মন্টুর এসবে একটু পিছিয়ে থাকা আমাদের সবার নজর কাড়তো কারণ পোষাক ফ্যশণে মন্টু সবার চেয়ে এগিয়ে থাকে, ধানমন্ডি নুরজাহান মার্কেটে কোন ব্যন্ডের কোন শার্ট প্যান্ট কখন কোন দোকানে আছে সে সব খবর মন্টু সবার আগে পেত,কারণ সেখানে তাকে চেনেনা এমন কোন দোকানদার ছিলোনা।কোন নতুন শার্ট আসলে তারাই তাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিতো, প্রতিদিন মন্টুর নতুন নতুন জামা কাপড় দেখা আর তা নিয়ে আলোচনা আমাদের আড্ডার প্রধান খোরাক।মন্টুর বাবা ঢাকা শহরের একটা গার্মেন্টসের মালিক বলেই আমরা শুনেছি।শান্তি নগরের একটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিংএ নিজেদের ফ্ল্যাট থাকেন বলেই জানতাম।
আমার বের হতে দেরি হলে প্রায় মন্টু আমার বাসায় আসতো,মাঝে মাঝে রাতে আমার বাসায় থেকে যেত।সেই সুবাধে একদিন জানলাম সে এখন আর মা বাবার সাথে থাকেনা।না থাকার কারণটাও সেদিন সে জানালো,সেই সাথে জানালো তার বাবা বর্তমানে অসুস্থ্য আছেন,আমি একরকম জোর করেই তার বাবার সকল খবর নিতে লাগলাম,তিনি কি করেন ,কি অসুস্থ্য ,কার চিকিৎসা নিচ্ছে সব কিছু,কিন্তু এসব নিয়ে সে বিশেষ কিছু বলতে চায়না,একটা বিরক্ত ভাব নিয়ে সে সোজা জবাব দিতো আমি জানিনা,আম্মু সব জানে সব করে।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে তাকে বলতাম একজন হার্ট এ্যটাক হওয়া রুগী নিয়ে তিনি একা একা থাকেন সব করেন তোদের কি কোন ভুমিকা নেই? সে রেগে যেত এবং আমাকেই বলতো -তোর যদি এত মায়া লাগে তুই গিয়ে কর',আমি সেই কথার জের ধরে তাকে বললাম চল তোর বাসায় যাবো,আমি ওনাকে দেখবো,অনেকদিন বলার পর একদিন আমাকে তার বাসায় নিতে বাধ্য হলো।
সময় তখন বিকেল,আমি মন্টু থেকে ঠিকানা নিয়ে রামপুরার একটা বাড়ির নিচে গিয়ে মন্টুকে কল দিয়ে তার অবস্থান জানতে চেয়ে জানলাম তার আসতে আর সময় লাগবে, আমি যেন তিন তলায় বাম পাশের দরজায় বেল দিয়ে বাসায় গিয়ে বসি,সে আগেই বাসার সবাইকে আমার আসার কথা বাসার সবাইকে জানিয়েছেন,তাই আমাকে চিনতে তাদের সমস্যা হবেনা।
বাড়িটার বাহিরের দিকটার চাক চিক্যের সাথে মন্টুর বাবার বাসার মিল খুজে পাইনি,পুরোনে একটা সোফা কিছু ফোম কে আকড়ে ধরে টিকে আছে,বিশাল সাইজের ফ্রিজটার দরজা একটা সুতি দিয়ে বেধে রেখে দরজার সাথে ফ্রিজের সম্পর্কে টিকিয়ে রেখেছে, বারান্দায় ইজি চেয়্যারের জৌলশ বলে দেয় মন্টুর বাবার এক সময়ের দাপটের কথা।
সোফায় বসে একটু ঘাড় ফিরে তাকাতেই মন্টুর বাবার থাকার ঘরটা চোখে পড়লো,আন্টি দরজা খুলেই খুব তড়িগড়ি করে ঐ রুমে চলে যায় আমাকে বসতে বলে,বুঝলাম আন্কেলের কোন জরূরী কাজে ওনাকে এভাবে যেতে হলো।ঐ রুম থেকে বের হয়ে এসে তিনি আমার সামনে এসে বললো-তোমার কথা অনেক শুনেছি মন্টুরে মুখে,তুমি আসছো অনেক খুশি হয়েছি কিন্তু তোমার আণ্কেলের এমন অবস্থা যে অতিথি আসলে তেমন কিছু করার সুযোগ হয়না,এসব বলতে বলতে তিনি আমার পাশের চেয়ারটায় বসলেন।
কেমন আছেন আন্টি জানতে চেয়ে ওনার দীর্ঘশ্বাসটা আমাকে নাড়া দিয়ে গেলো,এমন ভাবে বলতে লাগলেন যেন আমি এই সংসারেরি একজন-জানো বাবা আল্লাহ আমাকে চারটা সুস্থ্য সুন্দর ছেলে সন্তান দিয়েও আজ আমি একা,ছেলের মত ছেলে একটা হলেও হয়,মনে কিছু নিওনা বাবা তোমাকে এসব বলার জন্য,কিন্তু না বলেও পারছিনা,ছেলে গুলো কেউ আমার কথা একমিনিট আমার সামনে বসে শুনেনা,তাই যখনি ওদের কোন বন্ধু বাসায় আসে তাদের বলি যেন ওদেরকে একটু বুঝায়,তোমার কথা ওর মুখে শুনেছি অনেক, কথা গুলো বলে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উদাস হয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে কি যেন ভাবছেন।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলামনা,এমন চাই চাপা আগুন কষ্ট গুলোকে চেপে ধরতে হয় নাকি খুলে দেয় আমার জানা নেই।হঠাৎ করে অন্য একটা সংসারে বিষয় শোনা এবং সেই বিষয় ভালো মন্দ মন্তব্য করার মত প্রস্তুত ছিলামনা।তবুও বললাম- আন্টি আমি এক রকম জোর করেই এই বাসায় আসছি আন্কেলকে দেখতে জানতে,ওনার সমস্যা গুলো দেখতে,আমাকে আপনার ছেলের মতই জানবেন আমি চেষ্টা করবো মন্টুকে এই নিয়ে বুঝাতে।আন্কেলের এখন কি অবস্থা ?ওনার চিকিৎসা কি চলছে? কোন ডাক্তার দেখাচ্ছেন।?
আমার কথা গুলোর জবাব দিতে গিয়েও পারছেননা,চোখের পানি বার বার বাধা দিচ্ছে,চোখ মুছতে মুছতে -না বাবা অনেক দিন হলো চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে,ডাক্তারের কাছে আনা নেয়া মেডিসিন খরচ সব মিলিয়ে অনেক টাকা আসে মাস শেষে,এই দিকে বাসা ভাড়া খাওয়া দাওয়া অনেক টাকা খরচ,নিজের ভাই বোনদের থেকে ঋন করে আজকে পাঁচ বছর টানছি এই সংসার আর পারছিনা, ছোট ছেলেটা যা দেয় তাতে খাওয়া খরচ হয়না,মেয়েটা বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তাকে বিয়ে দিতে পারছিনা আবার টাকার অভাবে পড়ালেখাও করতে পারছেনা।ছেলে গুলো একটু খবরও নেয়না,মন্টু গ্রমের বাড়ির একটা জমি বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা এনেছে বিদেশ যাবে বলে,কিন্তু বিদেশে না গিয়ে সেগুলো শশুড় বসে বসে খাচ্ছে উড়াচ্ছে,কত বললাম আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দে আমি বাসা ভাড়া তোর বাবার চিকিৎসা করাই,দিবে দিবে বলে আর দেয়নি,সবাই যার যার সংসার বউ নিয়ে নিজের মত আছে,মন্টুকে বলেছি একটা সিএনজি নিয়ে তার বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে মেডিসিন গুলো পাল্টে আনতে,কে শোনে কার কথা,আজকে একমাস ধরে শুধু আসছি আসছি করছে ।দেখো বাবা তোমার আন্কেল বিছানায় পস্রাব পায়খানা সব করে,এই বয়সে আর পারিনা এই বুড়ো মানুষের এসব প্রতিদিন ধোয়া মুছা,একটা কাজের মেয়ে রাখবো সেই সাধ্য নেই,সারা রাত ঘুমাতে দেয়না, শুধু একটা ঘোংড়ানো শব্দ করে কোন সমস্যা হলেই,এত মানুষ মরে আল্লাহ কেন আমাদেরে বুড়ো বুড়িকে বাচিয়ে রেখেছেন কোন খেলা দেখতে কে জানে..।
আমার কান গুলো অবস হয়ে গেল একজন অসহায় মায়ের এমন শান্ত আর্তনাদের শব্দে,আমি আর বসে থাকতে পারছিলামনা,ইচ্ছে করছে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি,একটা মানুষ এক জীবনে আর কত কষ্ট পেলে তাকে দুঃখ বলে আমি জানিনা।একটা মায়ের চোখ আর কত ভিজলে তাকে কাননা বলে,আর কত দুঃখ পেলে তাকে দুঃখিনী মা বলবে ছেলে গুলো আমি জানিনা।প্রচন্ড ঘৃণা জন্মালো মন্টুর উপর,ওর ভাইদের উপর।অর্ধ মৃত একজন বাবাকে ঘরে রেখে কিভাবে একটা ছেলে প্যন্টের সাথে শার্টএর রং মিলিয়ে কিংবা শার্টের সাথে চশমার ফ্রেম মিলিয়ে জীবন পৃথিবী রঙ্গীন করে আমি জানিনা,শুনিনি দেখিনি।
আমি জানতাম আমি খুব শক্ত মনের মানুষ,মরণকে আমার ভয়ংকর একটা বিষয় মনে হয়,আশে পাশে কারো সেই ভয়ংকর মরণ কষ্টেও কখনো কেঁদেছি কিনা মনে করতে পারছিনা, কিন্তু আজ দেখলাম জীবন মরণের চেয়েও কষ্টের ভয়ংকর যা আমার চোখ ঝাপসা করে দিলো।কোন রকম নিজেকে আড়াল করে সেই মানুষটার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম যিনি পাঁচটা সন্তানের জন্য রাত দিন জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আজ জয়ের দরজায় পরাজয় শায়িত।
(বিরতি)
০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
দ্যা লায়ন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ সাবির ভাই মন্তব্যের জন্য
জি ,পরের ঘটনা গুলো নিয়ে আসছি সহসাই
ভালো থাকবেন
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০০
খেলাঘর বলেছেন:
ভয়ংকর কস্টকর অবস্হা
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:১৮
এহসান সাবির বলেছেন: বেশ...
বিরতির পর??