নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই অলস

লিখে খাই, সবার ভাল চাই

তিতাসপুত্র

খুবই অলস

তিতাসপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

নানিকে রেখে এলাম মার পাশে

২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১:০৮



নানিকে রেখে এলাম মার পাশে

নানির মুখ দেখে আর স্থির থাকতে পারলাম না। শত শত মানুষ নানিকে ঘিরে। আমার চোখে পানি। নিরব নিথর নানি। অন্যরকম সাজে। সাদা ধবধবে কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে নানিকে। গত বছর এই মার্চ মাসেই মাকে এমন ভাবে সাজিয়েছিলাম আমরা। আকাশে মেঘ। বাতাসও বইছে। আর নানিকে রাখা যাবে না। সবাই উপস্থিত। দেরি হচ্ছিল আমার জন্যই। আমি অনেক দূর থেকে গিয়েছিলাম বলেই সবার শেষে গিয়ে পৌঁছি । আমাকে দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এখন নানির নিজ ঘরে যাওয়ার পালা। যেখানে থাকতে হবে অনন্তকাল। পাশেই মা শুয়ে আছেন। এর পাশে নানিকেও শুইয়ে এলাম। গত একটি বছর মার অভাব কি বুঝতে দেননি নানি। নানিকে দেখতে গেলে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন। চিৎকার করে নিজের সন্তানের জন্য কাঁদতেন। বলতেন, আল্লাহ কেন আমার আগে আমার মেয়েকে নিয়ে গেল? আমি কেন বেঁচে রইলাম। আমি ছোট মামা, বড় মামা, সেজ মামা কিংবা বশির মামার ঘরে গেলে নানিও পেছন পেছন যেতেন। আর চোখ কান খোলা রাখতেন। দেখতেন মামিরা আমাকে কি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। আদর ঠিকভাবে করছেন কিনা। কিছু বলতেন না। মামিদের আপ্যায়নে আমরা ভাগিনা ভাগ্নি যারা আছি সবাই খুশি। কিন্তু নানি খুশি হতে পারতেন না। নানি মনে করতেন তার পুত্র বধূরা আমাদের সেভাবে আদর করেননি। মাঝে মাঝে বলতেন, গাছ থেকে ডাব পেড়ে দাওনা। কখনও বলতেন, দুধ গরম করে দাও। নানি বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার সময় নানি আঁচলের নিচ থেকে হাতে তুলে দিতেন একটি বেদানা কিংবা পেয়ারা। সবই নানির গাছের। কখনও কখনও ছোট মামিকে বলতেন, আধামন পোলওর চাল দিয়ে দাও। মামিতো আগেই সব রেডি করে রেখেছেন। মামি বলতেন, আম্মা শুধু পোলাওর চাল দিলে চলবে? আরও অনেক কিছু দিয়েছি। নানিকে কবর দিয়ে রাতে নানি বাড়িতেই ঘুমালাম। কিসের ঘুম। চোখের সামনে ভেসে ওঠছে নানির চেহারা, মার চেহারা। সকালে বিদায় নেয়ার সময় ছোট মামি কাঁদতে কাঁদতে একটি বস্তা সামনে নিয়ে এলেন-এতে রয়েছে আতপ চাল, জমির ডাল, গাছের নারকেল আরও অনেক কিছু। মামি বললেন, তোমার নানি নেই। নানিকে দেখতে আসতে। এখন আমাদের দেখতে এসো আব্বা। ছোট মামি আমাকে আব্বা বলে ডাকে। মামি কেঁদে দিলেন। আমার চোখেও পানি। সবাই জড়ো হলেন। সবাই কাঁদছেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলাম। গতকাল ছিল নানির কুলখানি। যেতে পারিনি। মামা, মামিরা অসংখ্যবার ফোন করেছে যাওয়ার জন্য। আমি যাইনি। মন চায়নি। কোথায় যাব? কাকে গিয়ে দেখব? মামা, মামিদের আদর কি- মা আর নানির মতো হয়। মার মৃত্যুর সময় আমরা ভাই বোন সবাই মার কাছে। মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে নানির দিকে তাকিয়ে মা বললেন, মাই তুমি আমারে মাফ কইরা দিও। দিন যায়, রাত যায়। মাস যায়। এভাবে বছর কেটে গেলো। মা ছাড়া থাকব কিভাবে? এ প্রশ্ন সব সময় ছিল মনে। কই থাকছিতো। আমিও মরে যাব। আমার সন্তানরাও এভাবে থাকবে। হয়তো কখনো মনে করবে। কখনো না। এখন আমরা যেমন করছি। মা আমাকে আদর করে পুত বলে ডাকতেন। এ পুত ডাক গত একটি বছর শুনিনা। মনে এটাই দুঃখ। একটা অপূর্ণতা নিয়েই দিন পার করছি। এ অপূর্ণতা নিয়েই আমাকে চলে যেতে হবে। আজ সকালে হঠাৎ আমার ছোট মেয়ে এসে বলল, আব্বু তোমার নানি আর আমার দাদু আল্লার কাছে চলে গেছে। চলনা আব্বু আল্লার কাছ থেকে গিয়ে দাদুকে নিয়ে আসি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১:১৬

মাহমূদ হাসান বলেছেন: কিছুদিন আগে আমার নানা মরণাপন্ন ছিলেন, হসপিটালে ভর্তি, আমি তো পুরা পাগল হয়েছিলাম, আল্লাহ রহীম উনাকে সুস্থ করে তুলেছেন, এখনো ভাবি উনি চলে গেলে কী করতাম, মনে পড়ে ছোটবেলায় দাদু মারা যাওয়ার সময় কেমন যে হয়েছিলাম, এখনো দাদুর কথা মনে পড়লে কী যে খারাপ লাগে, আমি ছোটবেলায় আমার নানাবাড়ীতে বড় হয়েছি, কত যে আদরে বড় হয়েছি বড় নাতি হিসাবে, জানি না উনারা চলে গেলে কীভাবে সহ্য করব, উফ! ভাবতেই কষ্ট লাগে, আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন আমীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.