নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছোট বেলায় মা বলত তুই একটা খাম্বা তোরে দিয়া কিছুই হবে না।

টোকাই রাজা

ঘুমন্ত মানুষ গুলো যদি জেগে উঠে বলতো - আমি আছি

টোকাই রাজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্যের জন্য বাঁচা :D

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭

আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই বলে জানো মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগতো। :((
কিন্তু অনেকটা লটারি পাওয়ার মত একবার বছরের শুরুতেই আমি এক দুজন না তিন তিনজন বড় আপু পেয়ে গেলাম। সেই সাথে কয়েকজন বড় ভাইয়া।
তোমরা হয়তো ভাবতে পারো বড় আপু ভাইয়া কি টাকা পয়সা যে রাস্তায় কুড়িয়ে পেলে। আমি কিন্তু বানিয়ে বলছিনা! সত্যি সত্যিই আমি তিন তিনটা অসম্ভব ভাল আপু এবং কয়েকজন ভাইয়া পেয়েছি। আমি তাদেরকে কুড়িয়ে পাইনি ঠিকই কিন্তু পেয়েছি। ওই আপু তিনজন হলো মীম আপু,নোশিন আপু আর লিজা আপু। আর ভাইয়াদের নাম হলো অন্তু, ফাহিম। স্কুল থেকেই কিনা জানিনা অথবা পরিবার থেকেও হতে পারে ওরা অসাধারণ সব গুণের অধিকারী হয়েছে।
ওই বয়সী ছেলে মেয়েদের সাধারণত ওরকম গুণ থাকেনা। মেয়েদেরতো থাকার কথাই না। কেননা সবাই বলে মেয়েরা নাকি শুধু সাজুগুজু নিয়ে পড়ে থাকে।
হ্যা আমার কথাতো বলাই হয়নি। আমার নাম রাজা। অবশ্য সবাই আমাকে টোকাই রাজা বলে ডাকে।
তোমরা কখনো যদি রাজশাহীতে আসো তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশানে এসে যে কাউকে আমার কথা জিজ্ঞেস করলেই সবাই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। তোমরা কি ভাবছো আমি হয়তো বিখ্যাত কেউ তাই সবাই আমাকে চেনে? আসলে ঠিক তা নয়। আমাকে সবাই চেনে ওই মীম আপুদের জন্য।
আমার জীবনটা কখনোই তোমাদের কারো মত ছিলনা। একটু যখন বড় হয়েছি যখন তখন শুনেছি আমার কোন বাবা মা নেই। বাবা মা শব্দটা আমার কাছে অপরিচিত অপরিচিত লাগে।
এক চাচির কাছে থাকি তার কাছ থেকেই মায়ের আদর পেয়েছি। চাচি রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করেন, অনেক বুড়ো মানুষ।
আমাকেও ভিক্ষা করতে বলতো কিন্তু আমার ভাল লাগতোনা। আমরা যে বস্তিতে থাকতাম সেখানে সিয়াম নামে একটা ছেলে থাকতো। সেই আমার একমাত্র বন্ধু ছিল। সিয়ামকেও সবাই টোকাই বলে ডাকতো। টোকাই কি জিনিষ তা আমার জানা ছিলনা।
শুধু জানতাম সিয়াম এখানে সেখানে ঠোঙ্গা, বোতল আর কাগজ কুড়াতো। তারপর সেটা বিক্রি করতো। ভিক্ষা করার চেয়ে ওটা ভাল ছিল বলে আমি ওর সাথে সত্যি সত্যি টোকাই হয়ে গেলাম। তারপর ধীরে ধীরে টোকাই রাজা।
আমি স্কুলে যেতাম না, যার পেটে খাবার জোটেনা তার আবার স্কুল। তোমরা হয়তো ভাবছো আমি তাহলে এতো শুদ্ধভাবে কথা বলছি কিভাবে?
সেটাইতো শোনাতে চাই তোমাদের!!!!!!
টোকাইয়ের জীবনটা তোমরা যেমন দেখ তার থেকেও অনেক কঠিন। কত মানুষের গালি খেয়েছি, চড় খেয়েছি তার কোন হিসাব নেই।
তারপরও যার জন্মের ঠিক নেই তার এসব সহ্য করে যাওয়াই উচিত। দেখতে দেখতে শীত চলে আসলো এবং বরাবরের মত একটা ছেড়া প্যান্ট আর ছেড়া জামায় গা ঢেকে সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত আমরা এখানে সেখানে কাগজ কুড়াতাম।
এরকম এক শীতের সন্ধ্যায় আমি আর সিয়াম যখন কাজলা গেটের ওখানে কাগজ কুড়াচ্ছিলাম তখন মিষ্টি সুরে কে যেন ডাক দিল এই, এই ছেলে শোন।
প্রথমে কান দেইনি, কারণ টোকাইদের সাথে ওরকম মিষ্টি করে কেউ কথা বলেনা, আমরা ভাবলাম অন্য কাউকে ডাকছে। একটু পরে দেখি তিনটা আপু আর কয়েকটা ভাইয়া আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে। মিষ্টি সুরে কথা বলা সেই আপুটা বললো এই ছেলে তোমাকে ডাকলাম শুনতে পাওনি?
আমি বললাম ‘‘আমগোতো কেউ এরাম করে ডাহেনা, হগ্গলে আমগো তুইতুকারি করে, তাই বাবছি অন্য কাউরে ডাকতিছেন”।
মিষ্টি করে কথা বলা আপুটা হেসে দিল। শীতে আমরা তখন কাপছিলাম আর ওই আপুদের গায়ে তখন দামী দামি সোয়েটার।
ওনাদের মধ্যে সব থেকে বয়সে বড় যে ভাইয়াটা ছিল তার হাতে একটা বড় ব্যাগ ছিল। তিনি সেই ব্যাগ থেকে দুটো শীতের কাপড় বের করে একটা আমাকে একটা সিয়ামকে দিল। কোন দিন কোন পুরাতন শীতের কাপড়ই কেউ দেয়নি আর ওগুলো ছিল একদম নতুন!
আমাদের দুজনেরই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। কি আশ্চয দেখি ওই ভাইয়া আপুরাও চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে।
মিষ্টি করে কথা বলা আপু আমাকে বুকে জড়িয়ে নিল।
এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো আমি টোকাই না, আমি কোন এক রাজপুত্র যাকে জড়িয়ে ধরেছে তার নিজের বড় বোন! তার পর যা যা হলো সব স্বপ্নের মত।
সেই আপুরা ভাইয়ারা হাটতে হাটতে আমাদের সাথে আমাদের বস্তিতে আসলো। পথে আমাদের শীতের পিঠা খাওয়ালো। অনেক গল্প বললো।
সেদিন তারা অনেক রাত পযর্ন্ত আমাদের সাথে ছিল। পরদিন আবার আসলো, তারপরদিনও আসলো। হঠাৎ একদিন তারা আমাদেরকে পড়ালেখার কথা বললো।
দুবেলা খেতেই পাইনা সেখানে পড়ালেখা করবো কিভাবে? ওই আপুরা হয়তো আল্লাহর কাছ থেকে সোজা আমাদের কাছে এসেছে।
তারা একদিন আমাদের জন্য চক শ্লেট আর বই নিয়ে আসলো। এরপর পালা করে তারা রোজ প্রতিদিন এসে আমাদের হাতে ধরে পড়ালেখা শেখালো।
আমাদের সাথে আমাদের বস্তির অন্য বাচ্চারাও শিখলো। আমরা টোকাই হলেও আমরা পড়াশোনা করি। আমাদের বস্তির সবাই ওই আপুদেরকে ছোটদেরবন্ধু বলে ডাকত।
একদিন অবাক হয়ে খেয়াল করি যে আমি আর অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারিনা! অনবরত আমার মুখ থেকে শুদ্ধ কথা বের হতে থাকল।
হঠাৎ একদিন দেখি সিয়ামের পকেটটা বেশ মোটা। তারপর ও আমাকে বললো চল যাই!
আমি বললাম কোথায় যাবো?
সে বলল মীম আপুদের সাথে দেখা করবো!
আমি জানতে চাইলাম কেন? ও বললো গেলেই বুঝতে পারবি।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওকে নিয়ে মীম আপুদের সাথে দেখা করতে গেলাম।
মীম আপুরা আমাদের দেখে খুব খুশি হলেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম সিয়াম ওর মোটা পকেটে হাত দিয়ে কি যেন বের করছে।
বের করার পর দেখলাম সেখানে অনেক গুলো টাকা! আমি অবাক হয়ে কিছু বলার আগেই ও আমাকে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে মীম আপুকে বললো আপু এবারের শীতে গরীব পথ শিশুদের শীতের কাপড় কেনার জন্য আমি আর রাজা এই টাকা গুলো দিলাম।
আমরা দুজনই কুড়ানো জিনিষ বিক্রি করে কিছু কিছু করে টাকা জামিয়েছি! আমিতো সত্যি সত্যিই অভাব হলাম। আসলে তো আমি কোন টাকা জমাইনি!
তারপরও সিয়াম নিজের সাথে আমার নামটাও বলেছে! আমার মূখে কোন কথা বের হলোনা, সেই সাথে মীম আপুদেরও।
কিছুক্ষণ পর অন্ত ভাইয়া আমাকে আর সিয়ামকে বুকে জড়িয়ে ধরলো, একে একে মীম আপু নোশিন আপুও আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
আমি তখন খেয়াল করলাম আমার চোখ বেয়ে অনবরত শুধু পানি পড়ছে। ঝাপসা চোখে দেখলাম মীম আপুরাও কাঁদছে।
কান্না জড়ানো কন্ঠে মীম আপু বললো তোরা এতো ভাল কেন?
তোরা তো ঠিক মত খেতেই পাসনা অথচ অন্যের জন্য কত কি ভাবিস। কোথা থেকে শিখেছিস এসব?
আমার চেয়ে সিয়াম বয়সে একটু বড় ছিল এবং খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারতো।
তখন সে আপুর চোখ মুছে দিয়ে বললো তোমার মনে আছে গত বছর শীতে গরীব শিশুদের কাপড় দেওয়ার পর ফাহিম ভাইয়া বলেছিল--
“আমাদের জন্ম শুধু নিজে বেচেঁ থাকার জন্য নয়, আমাদের সবাইকে অন্যের জন্য বাঁচতে হবে”। সেই কথা আমি ভূলিনি।
আমিও অন্যের জন্য বাঁচতে চাই ঠিক যেমনটি তোমরা বেঁচে আছ অন্যের জন্য। আসলেই ওনাদের মত সবাই যদি অন্যের জন্য বাঁচতে পারতো তবে কাউকে পথ শিশু হয়ে বাঁচতে হতোনা।

বিঃদ্রঃ এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র, নাম, স্থান কাল্পনিক ও সম্পুর্ন আমার মনের কাল্পনিক ভাবনা থেকে লেখা, যদি গল্পের কাহিনীর সাথে কেউ কিছু মিল পান বা কারো সাথে গল্পের লেখার সাথে কিছু মিলে যায়, তবে সেটা একান্তই Co-Incidence. আশা করি গল্পটি ভালো লাগবে !!!!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

কল্লোল পথিক বলেছেন: ‘‘আমগোতো কেউ এরাম করে ডাহেনা, হগ্গলে আমগো তুইতুকারি করে, তাই বাবছি অন্য কাউরে
চমৎকার লিখেছেন।
অনিঃশেষ শুভ কামনা জানবেন।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৬

টোকাই রাজা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৮

মানুষ হতে চাই বলেছেন: “আমাদের জন্ম শুধু নিজে বেচেঁ থাকার জন্য নয়, আমাদের সবাইকে অন্যের জন্য বাঁচতে হবে”।
চমৎকার লেখনী। ;)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

টোকাই রাজা বলেছেন: ধন্যবাদ মানুষ হতে চাই। :)

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: গল্পের মতো মনে হয় নি তবে থিম এতোটাই স্ট্রং যে ভালো লেগেছে। একেবারে ভেতরে আঘাত করেছে।
ম্যাসেজটা অনেক ভালো দিয়েছেন।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

টোকাই রাজা বলেছেন: ধন্যবাদ সমালোচনার জন্য। :)

৪| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: গল্পের কাহিনী এবং মাঝে মাঝে কিছু কথার্ খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

টোকাই রাজা বলেছেন: ভাল লাগার ধন্যবাদ। :)

৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

সুমন কর বলেছেন: মুগ্ধ !!

ভালো লাগা রইলো।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৮

টোকাই রাজা বলেছেন: ভাই আপনাকে মুগ্ধ করতে পেরেছি ধন্য। ধন্যবাদ :)

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী বলবো? অাবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম! নিখুঁত লেখা!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৬

টোকাই রাজা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। :)

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেলো ভাই।

আমার শুভকামনা অনিঃশেষ জানবেন।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৮

টোকাই রাজা বলেছেন: আপনাকে ভাল লাগাতে পেরেছি, তাই নিজেকে ধন্য মনে করছি। আপনিও ভাল থাকবেন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.