নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরয়ার, কী সান্ত্বনা দেব তোকে?'

২৮ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৭

সে-তো ছিল রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে একাকার দিন, অামরা ঘুরে বেড়াতাম। সে-সময় অামরা উদ্যানে থাকতাম সারাদুপুর, চারুকলায় থাকতাম যেহেতু পড়তাম ওখানে, ধানমণ্ডি বত্রিশ এর একদম শেষে, লেকের ধারের বরইগাছতলায় বসে গল্প করতাম। কী সব গল্প অামাদের! কী সেই তুমুল প্রহরের জীবনচারণা। হয়তো দুজনে নির্জন অাবাহনী মাঠের ঠিক মাঝখানে, ঘাসে শুয়েই সারারাত নক্ষত্রের অাগুন অামরা ঠোঁটে চেখেছি, কয়েকবছর অামরা দুজন হয়তো প্রতিদিনই দিনের কোনো-না-কোনো সময় মিলিত হতাম। তারপর পেটে অাগুন জ্বলে উঠলেও অনেক পরে হয় অাজিজ মার্কেটে গিয়ে 'অন্তরে' খেয়েছি, নয় খেয়েছি নীলক্ষেতের তেহারি। তারপর অাবার অামরা বেরিয়ে পড়েছি, রাস্তায় রাস্তায়, মাঠ কিম্বা চিপা-চাপা গলির দিকে। অামি অার সরয়ার। কখনো অামাদের পুলিশ ধরেছে, ধরেছে কবিতা, সিনেমা, ধরেছে স্বপ্নকল্পের নারী।



অামার মা ঝিনাইদহ থেকে যখনই ঢাকায় অাসেন, সঙ্গে অানেন অনেক খাবার। অামার সব বন্ধুরাই সেই খাবার খেয়ে যায়। এখনও মা ঢাকায় অাসার সময় প্রচুর খাবার অানবে তার একমাত্র ছেলেটির জন্যে। সেই খাবার অামি একা খাই না, অামার বন্ধুরাও খায়। এ-এক জীবন, ভালোলাগা, বেঁচে থাকা।



অামার সম্পর্কে যত অভিযোগ অামার মায়ের, বন্ধুদেরই তা শুনতে হয়, এখনও। সরয়ারকেও সেই অভিযোগ শুনতে হয়।

নাখালপাড়ায় সরয়ারদের বাসায়ও গিয়েছি, সরয়ারের মায়ের রান্না খেয়েছি, তারপর হয়তো অামরা ফের বেরিয়ে পড়েছি। ঢাকায় যে দুএকজন বন্ধুর মায়ের হাতের রান্না খেয়েছি, সরয়ারের মা তাঁদেরই একজন।



তারপর ধীরে ধীরে অামরা অাগের তুলনায় সত্যিই অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। সরয়ার ব্যস্ত ওর বিজ্ঞাপন ও সিনেমা বানানো নিয়ে, অামি ব্যস্ত অামার লেখায়, ছবিতে। এখন অামাদের দেখা হয় নানান অনুষ্ঠানে। অনেকদিন পর দেখা হলেও কোনো গ্যাপ থাকে না, ভালো লাগে। এই হচ্ছে উঠতি বয়সের বন্ধুত্বের সম্পর্ক-তরঙ্গ। ফোনে কথা হলো, সকালে দেখা হবে সরয়ারের সঙ্গে। বললাম, 'খালাম্মাকে কখন কোথায় কি?'

সরয়ার বলল, 'জুমার নামাজের সময় জানাজা হবে, তুই এক ঘণ্টা অাগেই চলে অাসিস।'

'হুম'

মা হারানো কেমন লাগে, অামি জানি না। সরয়ারের গলা শোকার্ত, স্বাভাবিক। বলল, 'শোন, তোর মাকে ফোন করে বলিস...'

'বলব'

অাবার দুএকটি কথা। ফোন রাখার অাগে বললাম, 'অাচ্ছা, সকালে অাসছি অামি'--সরয়ার অাবার বলল, 'তোর মাকে বলিস ...বর্ষাকে বলিস।'

অামার মা-বর্ষা এখন ঝিনাইদহে। গতকাল অামার বন্ধু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মা চিরকালের মতো চলে গেলেন চির-অজানায়। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। তবু খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। চিরকাল।

'সরয়ার...কী সান্ত্বনা দেব তোকে?'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.