![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঋতু-সংহিতা
টোকন ঠাকুর
ও কবিতা, একবার চোখ খুলে তাকা...
ঋতু এসে ঋতু চলে যায়। ঋতু এসে তাকিয়ে থাকে আমার চোখের দিকে। আমি ঋতুর দিকে তাকিয়ে টের পাই, ঋতু বলছে_ আমি কিন্তু ফিরব না আর। তাই ঋতু আর কখনোই ফেরে না। ঋতু চলে যাওয়ার পর, মনে পড়ে, সংগোপনে কী যেন কী একটা সে বলে গেছে ভোরবেলা, দুপুরে বা সন্ধ্যায়। ফিল করি, কী যেন কী একটা সে ফেলে গেছে প্রতিবেশে। কী যেন কী নিয়েও গেছে ঋতু। এই দিয়ে যাওয়া আর নিয়ে যাওয়ার কথা আমি কাকে বলব? কে শুনবে ঋতুর মহিমা? কার এত ঠ্যাকা?
কবিতাকে বলি। কবিতা গ্রহণ করে নেয় ধরিত্রীর যা কিছু দ্বিধা, সংকোচ, সংশয়, সংগোপন, ঘৃণা-ভালোবাসা কিংবা আর্তিময় উচ্ছ্বাস-বিহ্বলতা। তাই কবিতাকে বলি। বলি, ও কবিতা শোন, ঋতু এসেছিল। ঋতু চলে গেছে। ঋতু কি আবার আসবে?
ঋতু-সংহিতার কবিতাগুলো লেখা হয়ে যায়। দৃশ্যান্তরের ভেতর দিয়ে লিপিবদ্ধ করি মনোজগতের তিন তিল ধুন। ধ্বনি জাগে। শব্দ হয়। শব্দ গড়িয়ে যায়। 'শব্দে শব্দে বিবাহ হয়।' বাক্য দাঁড়িয়ে পড়ে। এবার বাক্যও হাঁটতে থাকে, শাদা, শূন্য পৃষ্ঠায়। একটি বাক্য কিছু দূর হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার তার ফিরে আসার ঝোঁক, সেই ঝোঁক আবার ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটতে থাকে। বাক্য যেন কোথায় যেতে চায়। বাক্য কি চলে যাওয়া ঋতুর দিকে হেঁটে যেতে চায়? তাহলে বাক্য কি চলে যাবে? হারিয়ে যাবে?
বাক্যের চলাফেরা খেয়াল করি। বাক্যের গতিবিধি লক্ষ্য করি। বাক্যের দাঁড়ানো, থমকে দাঁড়ানো, বাক্যের দ্রুত গমন লক্ষ্য করি। বাক্য যায়, বাক্য আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যায়। বাক্য, তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস বোন? নদীপাড়ে, সমুদ্রের ধারে, নির্জন জঙ্গলে? আমাকে নিয়ে যাবি লোকালয়ের চাপা চাপা শব্দময় ঘরবাড়ির দিকে? কী অন্যায় করেছি আমি? কী দোষ আমার? কী ক্ষতি করেছি তোর?
ভোর নেমে আসে। ভোর আস্তে আস্তে রোদে মিলিয়ে যায়। রোদ আস্তে আস্তে টান টান হয়ে দাঁড়ায়। রোদের সঙ্গে আমিও দাঁড়াই। রোদ দুপুর হয়ে দাঁড়ায়। আমিও দুপুর হয়ে দাঁড়াই। এখন, আমাকে দেখলে, কে বলবে, আমিও একজন দুপুর? আমিও একটি দুপুর! আমারই পায়ের নিচে ছায়া পড়ে আছে! আমি দুপুরের সমগ্র ইশতেহার লিখতে পারি। আমি জানি, দুপুর আসলে কী? এ দুপুর কোথায় যাবে? এ দুপুর কোন দিকে হেলে পড়বে? এ দুপুর আমাকে বলে, 'লিখে দে আত্মজীবনী। তুই লিখলেই রোদ হয়ে যাবে।' আমি রোদ লিখতেই, দুপুর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঠায়। আমি রোদ লিখতেই ঘামতে ঘামতে ভেজা, আমি রোদের ভাই।
আরও অনেক কথা আছে। কথাগুলো কবিতা। আর যে সব কথা বলা হয় না, লেখা হয় না, ওগুলোও তো কবিতা। তাহলে কবিতার কথা আমি লিখব কী করে? কবিতা, তুই আমার কাছে কী চাস, খুলে বল। যদ্দুর পারি, আমি তোর কথাই লিখতে লিখতে, লিখতে লিখতে, না লিখতে লিখতে, বলতে বলতে, না বলতে বলতে, চলতে চলতে, না চলতে চলতে, হারাতে হারাতে, পালাতে পালাতে_ শেষ পর্যন্ত কিছু একটা দাঁড়িয়েই যাবে। তুই দাঁড়ালে, আমি দাঁড়াব। তুই ঘুমালে, আমি ঘুমাব। তুই কাঁদলে, আমি কাঁদব। তুই হাসলে, আমি হাসব। কবিতা, তুই বাঁচলে, আমি বাঁচব। তুই মরলে, আমি মরব। আমি তোকে ভালোবাসি। আমি তোকে আদর করি, কবিতা। আয়, আমি তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে, নিজেও ঘুমিয়ে পড়ি তোর পাশে। তোকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে... ঢোকে চোখের মধ্যে মেখে নিয়ে।
ও কবিতা, একবার চোখ তুলে তাকা...
ঝাঁ ঝাঁ করে গ্রীষ্ম
বালির উপরে ফোটে তরমুজ
তরুণ কবির পকেট ভরা মেঘ
ঘামতে ঘামতে হেঁটে যাচ্ছে দৃশ্য
মাঠের পরে মাঠ
ঘরের পাশে ঘর
উঠোন-বালুচর
পিপাসা আসে ঠোঁটে
রসাল সংকটে
রোদের চেয়ে বোধের মধ্যে
ঝাঁ ঝাঁ করে গ্রীষ্ম
বর্ষা, এখনো ছাত্রী
বর্ষা, আমার বোনের মেয়ে
বর্ষা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী
বর্ষা, ঋতুমতী, ঝিরিঝিরি
বর্ষা, ঘন হলে দিনটাই রাত্রি...
বর্ষা, ভেজা ভেজা শালিখের খোঁজে
ছাপা হচ্ছে মেঘজল, কাগজে কাগজে
বলা যায়, কার মন কে বোঝে?
মাথার মধ্যে কাশবন
আমার মাথার মধ্যে কাশবন
কাশবন আমার মাথার মধ্যে...
কাশবনটা নদীতীরে, নবগঙ্গার
নবগঙ্গা মাথার মধ্যে, বালুচর_
বালুচরে, কারা বাঁধে ঘর?
আমার মাথার মধ্যে শিউলিতলা
শিউলিতলা আমার মাথার মধ্যে...
তুমি শিউলি কুড়োতে এসো, ভোরে
আমার মাথার মধ্যে তুমি এসো_
তোমার মতো ফুলেরও আমি মেসো
তুলো মেঘে, ভুলো মেঘে, ভাবাবেগে
মেসোকে প্রেমিক বলেই যা বাসার বেসো...
হেমন্ত, শ্রী হতশ্রী
ভাববাদী, গৃহছাড়া, তাকে দেখেছ কী না?
আমরাও খুঁজে ফিরি সাধুর ঠিকানা_
যদিও, হেমন্ত ফেরে না, হেমন্ত হারায়
হেমন্তের চলে যাওয়া পথে যেই না দাঁড়াই_
দেখি, ফিরে আসছে হিম, কুয়াশা, তারা
বলে, 'বেঁচে থাকো, কবিতা লেখো, হেমন্ত ছাড়াই...'
শীতসমগ্র ছাপা হচ্ছে
মেঘ নেমে আসে পথের ওপর, কুয়াশার ছদ্মবেশে
কুয়াশাকে শীতকালে 'তুমি' বলে ভুল করে ফেলি
শুকনো খালের সাঁকো পার হয়ে যাই, ওপারেই
শর্ষে লাবণ্যের গল্প, উলে বোনো হলুদের মাঠ
স্বপ্ন, শরীরে মেখে হেঁটে যাই, হাঁটতে হাঁটতে ভোর
শীতসমগ্র ছাপা হচ্ছে, ভেবে, তাকাই চোখের ভেতর
প্লিজ, তুমি ঘুমিও না, প্লিজ তুমি এড়িয়ে যেও না আদর...
বসন্তে রবীন্দ্র-বিরোধিতা
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে ফোন দিতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে মেসেজ পাঠাতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথের কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই
রবীন্দ্রনাথ তোমার হাত-পা ধরতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে চুমু খেতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে আদর করতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে 'জান' বলে ডাকতে পারবে না
রবীন্দ্রনাথ বলতে পারবে না, 'তুমি খুব সুইট'
রবীন্দ্রনাথ তোমার জন্য নির্ঘুম থাকে না একরাতও
রবীন্দ্রনাথ তোমার জন্য আড়ষ্টতা লুকিয়ে ফার্মেসিতে যাবে না
রবীন্দ্রনাথ তোমাকে নিয়ে ছোটগল্প, কবিতাও লিখবে না
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার পার্থক্য হচ্ছে, আমি সব পারব
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আর পারবে না, তবু তাকে দাও প্রেম
এবার বুঝেছ, বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্লাসিক্যাল প্রবলেম?
২| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫৬
সোজা কথা বলেছেন: সব প্রেম টোকন ঠাকুরের জন্য দিলাম! হাহাহা
কিন্তু, বাক্য বোন হলো কি করে??!!
৩| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫৭
সোজা কথা বলেছেন: সব প্রেম টোকন ঠাকুরের জন্য দিলাম! হাহাহা
কিন্তু, বাক্য বোন হলো কি করে??!!
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
ডি মুন বলেছেন: আমি রোদ লিখতেই, দুপুর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ঠায়। আমি রোদ লিখতেই ঘামতে ঘামতে ভেজা, আমি রোদের ভাই।
বাহ, বেশ সুন্দর লিখেছেন।