![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'রাজপুত্তুর ছবির গল্প-১'
সুবীর ব্যানার্জির বয়স এখন প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। চুল-দাড়ি পেকে গেছে। তারপর একদিন কোনো এক সময় সুবীর দাদু মারা যাবেন। আমাদের তখন খারাপ লাগবে। আমরা কষ্ট পাব সুবীর দাদুর মৃত্যুর পর।
কিন্তু অপুর বয়স কত? অপু বলতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পথের পাঁচালী'র অপু। তবে একদিন অপু আর অকালে জ্বরে পড়ে মরে যাওয়া অপুর দিদি দুর্গা শুধু বিভূতিভূষণের লেখা চরিত্র হয়েই থাকল না, তারা সত্যজিৎ রায়ের বানানো ছবি হয়ে উঠল। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র 'পথের পাঁচালী'র অপু-দুর্গার কথা মনে আছে? সেখানে অপু ছিল সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়।
'পথের পাঁচালী' যখন বানানো হচ্ছিল, সেই ১৯৫৫-৫৬ সালে, সে ছবিতে অপুর চরিত্রে অভিনয় করেছিল সেদিনের ছোট্ট বালক-শিশু সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই সুবীর ব্যানার্জিই দাদু হয়ে গেছেন। বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। যে কথা এ লেখার শুরুতেই বলছিলাম।
তার মানে, ছবিতে বয়স ধরা থাকে। ছবির বয়স বাড়ে, ছবির মধ্যে থাকা মানুষ বা কোনো কিছুর বয়স আর বাড়ে না। চলচ্চিত্র বা সিনেমা, আমরা যাই বলি, তা আসলে ছবি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস। আবার সত্যজিৎ রায়ের বানানো 'পথের পাঁচালী' একটি সিনেমা বা ছবি।
আসলে ছবির মজাই আলাদা। ছবি আঁকানো বা ছবি বানানোও ভীষণ মজা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন লিখেছেন 'সে'। 'সে' হচ্ছে পুপেদির সঙ্গে তার গল্প বলা। গল্প বানানো। সেই গল্পের ঘুড়ি উড়ে যায় আকাশে, মেঘের মধ্যে। সেই গল্পের পাখি জঙ্গলে খেলা করে।
সত্যজিৎ রায় মারা গেলেন ১৯৯১ সালে, কলকাতায়। রবীন্দ্রনাথ মারা গেছেন অনেক আগে, ১৯৪১ সালে, কলকাতাতেই। তবে রবীন্দ্রনাথ 'সে' লিখেছেন তার জীবনের প্রায় শেষদিকে এসে, বৃদ্ধ বয়সে, যখন তিনি দাদু। তার পুত্র রথীন্দ্রনাথের পালিত কন্যা পুপে। সেই পুপেদিকে নিয়েই যতসব উড়নচণ্ডী গল্প লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ, 'সে' বইতে। 'সে' বইয়ের দশম অধ্যায়কে 'সুকুমার' নামে গল্প আকারে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুতোষ রচনার সম্ভার 'কৈশোরক' সংকলনে। 'কৈশোরক' বই আকারে প্রকাশিত কবিগুরুর মৃত্যুর পর, লীলা মজুমদারের সম্পাদনায় 'সুকুমার' গল্পের সুকুমারকেই গল্পের দাদু বা কবি নাম দিয়েছেন 'রাজপুত্তুর।' কারণ রামের সঙ্গে যুদ্ধে রাবণ মারা যাওয়ার পরদিন ছোট্ট পুপেদি মনে মনে হরণ হয়ে যায়। তখন তাকে মনে মনেই উদ্ধার করার পালা। গল্পের দাদু বা কবি সুকুমারকে সেই দায়িত্ব দিলেন।
শালবনে ঘুরে বেড়ায় সুকুমার। আমাদের রাজপুত্তুর। সুকুমারের খেলার সাথী পুপেদি। সুকুমার ছবি আঁকে। সুকুমারের বাবা তা পছন্দ করেন না। সুকুমারের বাবা ডাক্তার নিতাই আশা করেন, তার ছেলে বিলেতে গিয়ে আইনবিদ্যা পড়ূক, তাহলে ভালো টাকা-পয়সা রোজগার হবে। কিন্তু সুকুমার পছন্দ করে ছাদে উঠে একা একা ঘুরে বেড়ানো, অকারণে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা, শালবনে ঘুরে বেড়ানো, পুপেদির সঙ্গে খেলা, লুকিয়ে লুকিয়ে শালবনের আরও গভীরে চলে যাওয়া।
সুকুমার, মানে আমাদের রাজপুত্তুর শালগাছ হতে চায়। আকাশের সঙ্গে কথা বলতে চায়। সে বলে, 'আকাশের সঙ্গে কথা আছে তাই শালগাছ হতে চাই।' পুপেদি হতে চায় কাবুলিবেড়াল। আর তার দাদু হতে চেয়েছিলেন অনেকখানি জায়গাজুড়ে একটা দৃশ্য। এ ছবির গল্পে সত্যযুগের কথা আসে। সত্যযুগে ইচ্ছাকেই ঘটনা বলে মেনে নেওয়া হতো। 'এ যুগে ইচ্ছাকে ছবিতে বা কবিতায় ফুটিয়ে তোলা যায়' দাদু বলেন।
আমাদের 'রাজপুত্তুর' সিনেমার মধ্যে শালবন একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 'রাজপুত্তুর' বড় হতে হতে হারিয়ে যায়, পুপেদি তাকে আর খুঁজে পায় না। দাদুর সঙ্গে বসে বসে পুপেদি ছেলেবেলাকার সেসব গল্প করতে থাকে। পুপেদি এখন অষ্টাদশী, পুপেদি এখন নন্দিনী। পুপেদিও তাই শালবনে গিয়ে খুঁজতে থাকে ছেলেবেলার সাথী সুকামারকে। এ ছাড়াও অমল, সুধা, দইঅলা, মিনি, কাবুলিওয়ালা, বীরপুরুষ, ডাকাতদলসহ অনেক চরিত্র ঢুকে পড়েছে 'রাজপুত্তুর' ছবিতে।
'রাজপুত্তুর' ছবি বানাতে গিয়ে ডোডো ছিল আমাদের প্রথম রাজপুত্তুর। কিন্তু ডোডো থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ওর বাবা-মার সঙ্গে। ছবিতে অভিনয়ের জন্য একমাস রিহার্সেল করেছি আমরা, ঢাকাতে। রাজশাহী থেকে এসে ঢাকায় একমাস থাকা হয়তো সম্ভব ছিল না ডোডোর পক্ষে। সে জন্য আমরা ঢাকাতেই 'রাজপুত্তুর'-এর সন্ধান করতে থাকি এবং একদিন 'নালন্দা' স্কুলে গিয়ে পেয়েও গেলাম। শুধু কি রাজপুত্তুরকে পেলাম? পেলাম আরও একঝাঁক ছেলেমেয়েকে। তাদেরই একজন ছোট পুপে, অমল, সুধা, বীরপুরুষ, বীরপুরুষের মা, মিনি, রাম, রাবণ বা অন্যান্য চরিত্র। নালন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে, বিশেষ করে এর অধ্যক্ষ আমরা মোমেনা আপার কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ আমরা আরও বহু মানুষের কাছে, নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে।
'রাজপুত্তুর'-এর শুটিং হলো গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় যে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ছিল সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য। রিমি আপাই আমাদের শুটিংয়ের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িটা এক সপ্তাহের জন্য দিয়েছিলেন। মহান নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সংসদ সদস্য রিমি আপাদের বাড়িতেই আমাদের পুরো শুটিং ইউনিট ছিল সপ্তাহখানেক। ছিল ১৬ জন শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবক। রিমি আপাকে কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব? কী কৃতজ্ঞতা জানাব জলের গানের শিল্পী কনক আদিত্যকে? শিল্পী ইশরাত জাহানকে? রাজপুত্তুর ছবিতে ছোট ছেলেমেয়েদের গায়ে যত পোশাক-আশাক, তার ডিজাইন করেছেন শিল্পী জেসমিন জাহান ঝুমা এবং সব পোশাকই তৈরি হয়ে এসেছে 'দেশাল' থেকে। দেশালকে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যনির্দেশক রেজা আরিফকে আমার ভালোবাসা। তার মাধ্যমেই বড় পুপে-রূপী সিনথীকে পেয়েছি আমরা। নাট্যনির্দেশক-অধ্যাপক কামালউদ্দিন কবিরকে ধন্যবাদ জানানোর শেষ নেই। একটা ফিল্ম বা ছবি মানেই অনেক লোক-লোকজন। শিল্পী ধ্রুব এষ জড়িত 'রাজপুত্তুর' নির্মাণ টিমে। তাকে আমি কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব, বলো ঘাসফড়িং বন্ধুরা?
রবীন্দ্র গবেষক, লেখক আহমদ রফিক, চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মানযারে হাসীন মুরাদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখক-অভিনেতা হারুন রশীদকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই_ 'রাজপুত্তুর' সিনেমার নানান সময় তাদের সাপোর্ট পাওয়ার জন্য। কবি কামাল চৌধুরী এবং লেখক রণজিৎ কুমার বিশ্বাসকে আমার কৃতজ্ঞতা। আসলে, কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম হারুন 'রাজপুত্তুর' সিনেমার টিম মেম্বার। সাহিত্যিক-সংগঠক বাদল চৌধুরীর প্রতিও 'রাজপুত্তুর' টিম গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এডিটর সামির আহমেদ, মাজহার রনিও টিম মেম্বার। মিউজিক ডিরেক্টর বুনো এবং অ্যানিমেটর আহা চঞ্চল ছবির টিম মেম্বার। ছবির টাইটেল টাইপোগ্রাফি করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। শব্দ সংযোজনা করেছেন রতন পাল।
আশা করছি, খুব শিগগিরই 'রাজপুত্তুর' ছবির কাজ শেষ হবে এবং সবার সামনে ছবিটি প্রদর্শন করা যাবে।
বিশেষ ভাবে আমরা কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, রিয়াজউদ্দীন এবং প্রিন্টিং হাউস পুনশ্চকে আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা।
একটা ভালো সিনেমা হওয়ার জন্য অনেক মানুষ, অনেক পরিশ্রম, অনেক টাকা-পয়সা, অনেক সুযোগ-সুবিধা লাগে। ক্যামেরা-লাইট লাগে। পাত্র-পাত্রী লাগে। কত কী যে লাগে। তবে সবচেয়ে বেশি লাগে একজন মানুষের দেখা স্বপ্ন। সেই মানুষটার নাম পরিচালক। ছবি হচ্ছে পরিচালকের স্বপ্ন। তার স্বপ্নের গাছ। স্বপ্নের পাখি। তার স্বপ্নের মানুষ। সব তো আর পাওয়া যায় না, যা পেয়েছি তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে 'রাজপুত্তুর'। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিস্ময় সরকার মুগ্ধ, সামাহ তৌফিক তাপসী, কাশ্বকীয়া নাহরীন সিনথী, চঞ্চল সৈকত, কামালউদ্দিন কবির, বর্ষা বিভাবরী, প্রশান্ত অধিকারী, রেজা ঘটক, জয়তু, জয়েত কল্যাণ, ঋভু রৌদ্দুর, এ্যাপোলো নওরোজ, গুপু ত্রিবেদী, বিপ্লব সবকার, অসীম গোস্বামী, ইলি, প্রপা, মেধা, আনন্দিতা, করবী, আদিম জাহিদ, শরদিন্দু চক্রবর্তী, মানহা, স্বপি্নল সাহা, নৈঋত, পার্থিব, পুষ্পসহ অনেকে।
'রাজপুত্তুর' শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি চলচ্চিত্র। তবে বড়রাও এ ছবি দেখে মজা পাবেন_ এই বিশ্বাস আমাদের মনে বাজে। তবে ছবিটি সবার ভালো লাগলেই আমাদের পরিশ্রম, আমাদের স্বপ্ন দেখা স্বার্থক হবে। ভালো লাগবে। 'রাজপুত্তুর' ছবির ছোট ছেলেমেয়েরাও একদিন বড় হয়ে যাবে। 'পথের পাঁচালী'র সুবীর ব্যানার্জির মতো, তাই না ঘাসফড়িং বন্ধুরা? এই শীতেই তোমরা সবাই দেখতে পাবে রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে বানানো আমাদের ছবি_ 'রাজপুত্তুর'।
ঘাসফড়িং, সমকাল
১১.১১.২০১৪
২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৫
সরদার হারুন বলেছেন: আসলে ভাল লেগেছে ।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
মামুন রশিদ বলেছেন: শুভেচ্ছা!
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: "ঘাসফড়িং" এর জন্য শুভেচ্ছা ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৬
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: শুভেচ্ছা