![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাইয়ূম স্যারকে নিয়ে স্মৃতি-টুকরো
দেখা হলেই কাইয়ূম স্যার বলতেন, 'তোমার কবিতায় অলঙ্করণ করতে অামার ভাল্লাগে। কিন্তু তুমি কি অামার কভার পছন্দ করো না?' অামি কাচুমাচু হয়ে সেদিন বললাম, 'স্যার, অাপনার কাজ সবসময় অামার জন্যে শিক্ষণীয়, মনোযোগ দিয়ে দেখার। ভালো লাগে।'
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক-কৃষাণীর গ্রাম-বাংলা রঙে-রেখায় তিনি ক্যানভাসে ধরেছেন। অাঁকায় নিজের একটা স্টাইল দাঁড় করিয়েছেন শক্তভাবে। বাংলাদেশের গ্রাফিক ডিজাইন-বুক কভারে বলা যায় কাইয়ূম স্যারই পথিকৃৎ। পন্চাশের দশক থেকে এক্কেবারে গতসপ্তাহ পর্যন্ত কাজ করেছেন। প্রচুর কাজ করেছেন শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। ব্যবহারিক শিল্পকলা তাঁর হাতেই সর্বোচ্চ বিকশিত-বিস্তৃত, বলতে পারি স্যারের একজন ছাত্র হিসেবে। তো একদিন বললাম, 'স্যার, অামার প্রধম বইটাই কিন্তু অাপনার করা প্রচ্ছদ।'
স্যার বললেন, 'এরপর তো সব ধ্রুব করে যাচ্ছে, অামি দেখি কিন্তু।'
বললাম, 'স্যার ধ্রুব দা হয়তো বেশি, কিন্তু শিশির ভট্ট, মাসুক হেলাল, উত্তম সেন, সব্য'ও অামার বইয়ের কভার করেছেন।' বললাম, 'স্যার, অাপনি অামার একটা কালেকশনে কভার করে দেবেন।'
স্যার খুশি হয়েই বললেন, 'একদিন ফোন করে বাসায় এসো। শোনো, তোমার কবিতা অামার খুব ভাল্লাগে।'
'অাপনার কবিতাও পড়তিছি স্যার...'
'কই, বলো-টলো না তো কিছু।'
.........
সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষীয়ান শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীর কবিতা অামরা পড়ছিলাম, বিশেষ করে 'কালি ও কলম' এবং 'প্রথম অালো'তে। কয়দিন স্যার, অামার ও ইমরান মাঝির কবিতা একসঙ্গে ছাপা হলো প্রথম অালোতে। সেখানে স্যারের করা একটা সুন্দর ইলাস্ট্রেশনও ছিল। এবার বেঙ্গল শাস্ত্রীয় উৎসবে, সম্ভবত উৎসবের দ্বিতীয় রাতে, অার্মি স্টেডিয়ামের মাঠে বুনো, মীর রাব্বি-অামি নানান বিষয়ের অাড্ডায় কী কারণে যেন তরুণ কবি কাইয়ূম চৌধুরীর কবিতা নিয়ে কথায় মেতে উঠলাম। সে রাতে মন্চে উঠে কোনো এক শিল্পীর বাদন শেষে তাঁকে অানুষ্ঠানিক ক্রেস্ট দিলেন কাইয়ূম স্যার। তারপর, পরদিন সন্ধ্যপার হয়ে যাওয়া রাতেই, প্রিয় শিল্পীদের একজন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পাওয়া একজন প্রিয় শিক্ষক, গুণী মানুষ চলে গেলেন। বর্ণাঢ্য স্যারের রঙ-রেখার কর্মময় জীবন, মৃত্যুও কম বর্ণাঢ্য নয়।
মনে পড়ল, গতবছর সৈয়দ হকের ৭৯ তম জন্মদিনের উৎসবে বক্তা হিসেবে অন্যদের মতোই কাইয়ূম চৌধুরীর জন্যে নির্ধারিত ছিল ৫ মিনিট। কাইয়ূম স্যার তাঁর জিগিরি-ইয়ার সৈয়ক হককে নিয়ে বললেন ৪৪ মিনিট। অামাদের অনুষ্ঠানের টাইম-ডিজাইন ভেঙে যাচ্ছিল প্রায়। স্যার এসে তাঁর জন্যে নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন। পরবর্তী বক্তার নাম ঘোষণা হলো। সম্ভবত তিনি সেলিনা হোসেন। সেলিনা হোসেন চেয়ার থেকে উঠে ডায়াসের দিকে যাচ্চেন, এর মধ্যে অঅমার ডানপাশের চেয়ারে বসা কাইয়ূম স্যার অামাকে বললেন (অামি ছিলাম হকের ৭৯ জন্মবার্ষিকীর কনভেনর, শিল্পকলা একাডেমি এবং ডিজি লাকী ভাই সাপোর্ট দিয়েছেন), 'অামি অার একটা কথা বলতে চাই।'
বললাম, 'জি স্যার'
এবারও, সঙ্গীত উৎসব মন্চে তিনি নিজের নির্ধারিত বক্তব্য শেষ করে পরের বক্তা অানিসুজ্জামান স্যার যখন কথা বলতে উঠছেন, তখন ৮২ বছর বয়সী সৃজনমুখর শিল্পী কাইয়ূম স্যার অারো একটি না বলা কথা বলতে ঢের ডায়াসের কাছাকাছি গেলেন এবং তিনি একটি বাক্য নয়, শুধু, 'অামি অার একটা কথা বলতে' পর্যন্ত বলেই ঢলে পড়লেন সুর-মূছনার মন্চে।
কী মিল-অমিল একটা ঘটনার!
শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীর কাছে অামাদের অনেক ঋণ থেকে গেল...
অারেকটা কথা, স্যারের মৃত্যু নিয়ে কোনোপ্রকার তর্ক-বিতর্কে অামার সায় নেই। ওরে পাগল, মানুষ তো জন্মায়ই মরার জন্যে। যা দেবার, ঢের দিয়েছেন কাইয়ূম চৌধুরী। এরকম শিল্পী-মানুষের মৃত্যু হয় নাকি? নিজের অাঁকিবুকির খাতায় যেমন, শতসহস্র বাংলাভাষার প্রচ্ছদেই তো অমর হয়ে থাকবেন। শিল্পী না? শিল্পীই তো স্রষ্ঠা, স্রষ্ঠারা অমর...
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো ভ্রাতা ।
তা ঠিক । মানুষ জন্মেই মৃত্যুর জন্য । শিল্পীদেরও মৃত্যু নাই। কিন্তু আমার মনে হয় , আমরা কাইয়ুম চৌধুরীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি নি ।
শুভকামনা ।।
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৪
দাম বলেছেন: তার মুচকি হাসিটা মিস করছি।
৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: ভালো লাগলো। কাইউম চৌধুরীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
স্যারের সাথে আপনার স্মৃতিচারণ ও ভাবনা ভালো লাগলো।